সময় গুলো কতো তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায় .........। কত তাড়াতাড়ি বদলে যাই আমরা। সবার মত আমিও তো কিছুটা হলেও বদলেছি। আসলে বদলে যাওয়াটাই সময়ের ধর্ম। কিন্তু ফেলে আসা শৈসব - সেই নানা বাড়ির মেঠো পথ-সেই নাম না জানা পাখির গান আজো পিছু ডাকে বাড়ে বাড়ে।
কোথায় আজ সব? এখন সেই গ্রামও নেই- নেই সেই মেঠো পথ। - সাবাস উন্নয়ন! সাবাস! এখন নস্টালজিয়ায় ভুগি- মাঝে মাঝে বাপ-দাদাদের শৈসব simulate করি, নয়তো সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে অজানা কোন গ্রামের উদ্দ্যেশে বেড়িয়ে পড়ি। এই তো কিছু দিন আগে কৈশোরের চৌকাঠ পেরুলাম(এইটার ভাবার্থ ধইরেন)- এখন তারুন্যের দেউরিতে দাঁড়িয়ে নিজের কৈশোরকে মন ভোরে দেখছি। অনেকেই কৈশোরকে নানা ভাবে সংঙ্গায়িত করেছেন তবে আমার কাছে ফিরাখ গোরখপুরির দেয়া সংঙ্গাটাই সবচেয়ে ভালো লাগে-
اب بھی لراکھپں بھی ہے و صبر بھی ہے
حیاء کی پردہ مے و نقاب بھی ہے
"আবভি লারাখপান ভি হ্যায় বো শাবার ভি হ্যায়
হায়া কি পারদেমে বো নেকাব ভি হ্যায়"
যা হোক - কৈশোরের দিন গুলো ছিল স্বপ্ন দেখার আর দেখানোর দিন. দিনগুলো ছিলো শপথের- ছিল মেইনস্টিম ভেংঙ্গে অ্যাভান গাড হবার- শেকল ভাংঙ্গার জন্য যুদ্ধ করার। নচিকেতার গানের সাথে মিশে যেত জোয়ান বায়েজ আর বব ডিলান।
কখনো ফ্রসোয়া ট্রুফোর ছবি, নয়তো বুনুয়েল বা গোদার মিলে মিশে একাকার হয়ে যেত। ভাল লাগত চে গুয়েভারা অথচ ব্রুক শিল্ডকেও খারাপ লাগত না(কি করব শত হলেও পুরুষ তো। চে'র লেখা "গেরিলা যুদ্ধ", "সমাজতন্ত্রের পথে"; লেনিনের "What we want and for why and how", "What is to be done"; এম. এন. রায়ের "World is my state"; মাও যে দং এর "On Contradiction"; চারু মজুমদারের "ভারতীয় জনতার গন-বিপ্লব"; কানু সান্যালের "জনযুদ্ধ"; সিরাজ সিকদারের " গনযুদ্ধের পটভূমি"- এগুলো ছিল যক্ষের ধনের মত। প্রগতি প্রকাশন থেকে বের হওয়া মার্ক্স-এঙ্গেলস আর লেনিনের লেখার আনুবাদ গুলো ছিল মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতই। তখন প্রতিক্রিয়াশীল বলে গন্য হবার ভয় থাকলেও জেমস জয়েস বা ডি এইচ লরেন্স পড়তাম।
সবাই ভাবছেন ব্যাটা কী সব ফ্যাদরা প্যাচাল পারতেছে। হালায় কেডা? - নচিকেতার ভাষায়ই বলছি-
আমার পরিচয় - বেকার যুবক আমি, সম্বল একটাই দৈন্য
ডিগ্রির ভাঁড়ারেতে তবু কিছু মাল আছে, পকেটের ভাঁড়ারটা শুন্য।
যেদিকেই তাকাই না দেখি জন-অরণ্য, সে অরণ্যেই দেখি মানুষেরা পণ্য,
বধূকে পোড়ানো হয়, অধর্ম জয়ী হয়, মানুষের রক্তে দিনলিপি সই হয় ।
হাসপাতালের বেডে টিবি রোগীর সাথে খেলা করে শুয়োরের বাচ্চা।
তবু রেডিওটা টিভিটার সাথে সুর ধরে - সারে যাহাঁ সে আচ্ছা।
লাঞ্ছনা গঞ্জনা মাখা অভিযোজনে রপ্ত করেছি নিজেকে
অসৎ হবার বহু বহু প্রচেষ্টায় ব্যর্থ করেছি নিজেকে।
চাকরির সন্ধানে সুখতলা খয়ে যায়, গঙ্গার জল তবু একই ভাবে বয়ে যায়।
ঘুষ, ঘুষ, ঘুষের এক ঘুস-ঘুসে জ্বরে গোটা দেশ চিত্কার করে ডাকে 'ডাক্তার'
ডাক্তার উড়ে আসে ঋণের অষুধ নিয়ে গঙ্গার, পূঁজো হয় গঙ্গার জল দিয়ে।
বছরের অন্তে বাজেটের যন্ত্রে পিশে দেই জীবনটা গচ্চা।
তবু রেডিওটা টিভিটার সাথে সুর ধরে - সারে যাহাঁ সে আচ্ছা।
প্রার্থির যোগ্যতা অথবা অভিজ্ঞতা, এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের দীনতা
কোনো কিছুই, কোনো কিছুকেই ঢাকে না।
আর "লোক"'অথবা "বিধান" যে দিকেই তাকান, রাজনীতিজ্ঞ হতে যোগ্যতা লাগে না।
হাজার প্রতিশ্রুতি বাতাসেই বয়ে যায় , 'চলছে না চলবে না' তবু তাই হয়ে যায়।
কত শত শয়তান হতে চায় ভগবান, আল্লা না বড় রাম- এই চলে অবিরাম।
খুনোখুনি লাঠালাঠি অবিরাম অনুক্ষণ, এদিকে তোমার আমার পেটেতে ছুঁচোর ডন।
সমাজ বিরোধী কিছু, করে বলে মাথা উঁচু সমাজবাদের পথই সাচ্চা।
তবু রেডিওটা টিভিটার সাথে সুর ধরে - সারে যাহাঁ সে আচ্ছা।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ কূপমুন্ডুক- কাজেই কূয়ো ছেড়ে বাইরে আসাটা তার পক্ষে ততটা সহজ না। আমি মনে করি গোটা পৃথিবীটাই আমার স্বদেশ। আরে ভাই বাংলা আমার ভাল কথা উর্দু কেন আমার না? আমি বাংলায় কথা বলি এটা আমার অপারগতা, উর্দু আমার প্রেম- এই কথাটা বললেই আমি রাজাকার- অদ্ভুত! ভারত আমার, পাকিস্তান আমার, আরব আমার, ইংল্যান্ড আমার, রাশিয়া আমার - আরে ভাই সমস্যা কোথায়? জন্মগত ভাবে আমি তাতারী-পাঠান (হালাকু তাতার খান এর অধঃস্তন)
আমার দাদার চাচারা কেউ ছিলেন ভারতে কেউ পাকিস্তানে. দেশ ভগের পর আমাদের জায়গির কৃত সম্পত্তি তো গেলই (জমিদারির গুয়ামারা হইছে তো ১৮৫৭ র বিদ্রোহে অংশ নিয়া) পরিবারও ভাংঙ্গল. সম্পত্তির মায়ায় হোক আর অন্য কারনে হোক নবাব ইসমাঈল খান থাকলেন ভারতে, আর নবাব মেহের খান তার জায়গির নিয়ে পূর্ব-পাকিস্তানে থেকে গেলেন ছোট ভাই নিয়াদ খান তার সাথে ছিলেন আর সেজ ভাই জওহর খান ছিলেন করাচিতে. আমার দাদা আলাউদ্দিন খান পাকিস্তানের এম.এল.এ থাকাকালীন(১ বার) এবং রাজনৈতিক জীবনে করাচীতেই থাকতেন. দাদা পাকিস্তানের দ্বিখন্ডতা কখনো চান নি এবং ঘটনাক্রমে বাংলাদেশে থাকতে হলে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান(বজ্জাতের আছারি) তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।
উল্ল্যেখ্য যে আমার আব্বু-চাচারা এবং ফুফুরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশে ছিলেন. এসব বলার কারন সত্যকে তুলে ধরা। আমি ভাই ঘর ভাঙ্গা লোক আমার মনের কথা বলতেছি। বাংলাদেশ আমার না, পাকিস্তান আমার না, ভারতও আমার না। তোমারা কি কেউ আমার হিন্দুস্তান ফিরিয়ে দিতে পার। .........plz plz plzzzzzzzzzz.......
পুরা পৃথিবী না হোক আমার হিন্দুস্তান হলেই চলবে(নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল)।
सारे जाहाँ से आच्छा हिन् हन्दुस्तान हामारा
हाम बुलबुल हे इहाका ए गुलिस्तान हासारा
বহুত প্যাচাইলাম তাই না- মাফ চেয়ে নিচ্ছি ক্ষমা করে দিও।
সব স্বপ্ন যেমন ভেঙ্গে যায় আমারটাও ভাঙ্গল। কিসসু হয় না হবেও না মিছে মিছি কেবল স্বপ্ন দেখা। কিন্তু তারপরও স্বপ্ন দেখতে হয়। নচিকেতার ভাষায়-
স্বপ্নের শহর-স্বপ্নের শহর
এখানে জীবন হাসে মৃত্যুর নাগপাশে- মনের গভীরে বাধেঁ খেলাঘর
ভেঙ্গে যায় বিশ্বাস- আবার আবার গড়ে খেলাঘর নিরন্তর
বাতাসের ফিসফিস কথা শোনে ইট, কাঠ, কনক্রিট আর পাথর।
আর এর মধ্যে মানুষ নামক দু পেয়ে জীব সদৃশ কিছু জানোয়ার দের অবাধ বিচরনে মন শঙ্কিত হয়ে ওঠে-
দু নয়নে ভয় আছে, মনে সংশয় আছে,
ঐ ধর্মের বাঘ হেসে আবার উঠোনে এসে
আশ্রয় চেয়ে যায় মানুষেরই কাছে।
তাই ভয় আছে
দু নয়নে ভয় আছে, মনে সংশয় আছে।
ভেঙে গেলে জোড়া যায় মন্দির মসজিদ
ভাঙা কাঁচ ভাঙা মন যায় না
রাম আছে, শ্যাম আছে, কোরাণী সেলাম আছে
রক্তলোলুপ কিছু হয় না।
এদেশ টা ফাঁকা আছে, বিদেশের টাকা আছে
ধর্ম না গ্রাস করে আমাদের পাছে
তাই ভয় আছে
দু নয়নে ভয় আছে, মনে সংশয় আছে।
তাই বলতে চাই - ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়- লাখো ইনসান ভূখা হ্যায়
আসলে বাংলাদেশের অনেক মার্ক্সবাদী তাত্তীক কথায় কথায় পোস্ট-মর্ডানিজমের(উত্তর আধুনিকতার) গুষ্টি উদ্ধার করেন।
কিন্তু আমাদের কে মুক্ত চিন্তার প্রসার ঘটাতে হবে। এই জন্য পোস্ট-মর্ডানিজমের "সব কিছুই ব্যক্তি নির্ভর" এবং "প্রত্যেকেই কোন না কোন ভাবে যুগপৎ শাসক-শোষিত" কথা দু টো বুঝতে হবে। একটার মানে সবই আপেক্ষিক আর অপরটির মানে হচ্ছে- কেউ একজন হয়তো হিন্দু বলে শোষিত অথচ কারখানার মালিক হিসাবে সে শাসক, ঘরে নারী হিসাবে আবার সেই শোষিত। বিষয়টা এড়িয়ে গেলে চলবে না। তাই আমি সব রকম শোষণের বিপক্ষে।
আরবের খ্রীষ্টানের দুঃখ- ফিলিস্তিনের মুসলমানের দুঃখ-কুয়েতের হেরেমে বন্দি নারীদের দুঃখ-ভারতের কৃষকের দুঃখ-আফ্রিকার ভূমি দাসদের দুঃখ-এক দুঃখ।
এ জন্যই কলম ধরতে হয়, এ জন্যই কবিতা, গল্প আর উপন্যাস সৃষ্টি করি। সে সবের কথা না হয় পরে এক দিন বলব। আমি স্বাধীনতা চাই না- মুক্তি চাই-মুক্তি! কিন্তু বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট- জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ-মুক্তি সেখানে অসম্ভব।
তাই আসুন আগে বুদ্ধির মুক্তি আনি - আত্মার মুক্তি তাহলে এমনিতেই ঘটব।
সবশেষে একটা কথা- Here we are not came to divide but to unit- Jalaluddun Rumi
আপাতত বিদায়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।