shamseerbd@yahoo.com
মামা -প্রতিদিনের সব চেয়ে বেশী ব্যবহৃত সব্দ গুলোর একটি হয়ে গেছে সেই কবে থেকে। অফিসের বস বাদে বাদবাকি সবাইরে মোটামুটি এই এক সম্বোধনেই সব কাজ সারা।
মামা একটা সিগারেট, মামা এক কাপ চা -ভাল কইরা বানাইয়েন , এই মামা যাবেন, মামা আলু কত, মামা..। মোটামুটি প্রয়োজনের সব যোগানদাতকে এক মামা ডাকেই সারা।
মাঝেমাঝে ভাবি আচ্ছা চাচা কেন বলা হয়না ।
মামাতে সম্ভবত এক ধরনের অযাচিত অধিকার বোধ কাজ করে, আব্দারটাও মনে হয় একটু বেশী খাটে- মামা পটল আজকে দুই টাকা কম রাখেন
কখন যে বাপেরে ভুল করে মামা বলে ফেলি এই ভয়ে থাকি। ছোট ভাই কম্পুর এজিপি কেবল লাগাতে না পারায় একবার বলে ফেলেছিলাম- মাম্মা এটা তোমারে দিয়া হইবোনা, সর আমি লাগাইয়া দিই । পাশের রুম থেকে আম্মু জানতে চাইল কিরে তোর মামা আসছে কখন
প্রিয় মামাদের তালিকায় আছে ভার্সিটির ক্যান্টিন বয় (মামা একটা চা আর একটা বিড়ি লইয়া আস) , পাড়ার টং দোকানের চা ওয়ালা, অফিসের সামনের সিগারেট বিক্রেতা ..........................।
মামা শব্দটা যেন সবসময় জিহ্বার আগায় কিলবিল করে । মাঝেমাঝে তৈরী করে বেগতিক দশার।
শেরাটনে একটা পার্টি ডিনার শেষে চা পরিবেশন করছে ওয়েটার। ওনারা আবার দুধ চিনি আগে মিশাইয়া দেননা । যা দিছে তাতে তেমন একটা মিষ্টি না হওয়ায় এক বন্ধুতো সাজুগুজো করে থাকা ওয়েটাররে হাতের ইশারায় কাছে ডাকল, আসার পর বলে বলল- মামা চিনি কম হইছে, আরও দুইটা চিনির প্যাকেট নিয়া আসেন। এই সম্বোধনে অনভ্যস্ত ওয়েটার কিছুক্ষন তাকাইয়া থেকে (কিন্চিৎ অপমান ও ফিল করতে পারে) চিনি আনার জন্য হাঁটা ধরল। পাশের আরেক বন্ধু ওরে দিল ঝারি- এই শালা এইখানে ওয়েটাররে তুই মামা ডাকলি , ওতো ভাবব তুই জঙগল থেইকা আইসস।
নির্বিকার বন্ধুর উত্তর অফিসের সামনে টং দোকানে দিনে পাঁচ বার কই মামা দুধ চিনি বাড়াইয়া দেন , আর এখানে কইলে সমস্যা। ও যা ভাববো ভাবুকগা ।
এই মামা ডাক নিয়া ব্যাপক ঝামেলা পাকাইছিলো আমার আসল বড় মামা। কোরবানীর আগে ছোট খালার বাড়ীতে ওনি খাসী নিয়া যাবেন। বহুত জোরাজুরি কইরা আমারে বাধ্য করলেন সাথে যাইতে হবে।
গরু ছাগলের হাঁটে আমি ঢুকুমনা , ট্যাক্সীতে আপনে খাসী ধইরা বসে থাকবেন, আমি শুধু সাথে যামু, এই শর্তে রাজী থাকলে আছি। উপায় না পাইয়া তিনিও রাজী হইলেন। সত্যিসত্যি আমি হাঁটে না ঢুকে সামনের একটা চার দোকানে দাঁড়াইয়া গেলাম। অগত্যা তিনি একা গেলেন। আমি বসে বসে চা সিগারেট খাইলাম।
চল্লিশ-পঞ্চাশ মিনিট পর ওনি এসে হাজির। নারে কোন সুবিধা করতে পারলমনা। চল চা খাই- চলেন।
দোকানে ব্যাপক ভীড় । বয় বেয়ারারা আমাদের দিকে তাকানোর ও টাইম পাইতাছেনা।
আমি কয়েকবার বেয়ারাকে এই মামা এডিকে আহ, শুন- টাইপ হুঙ্কার দিলাম। তারা তাকায়ওনা দেখছি। আরও কয়েক দফা ট্রাই এর পর পর বড় মামা গেলেন ক্ষেপে । কি মামা মামা কইরা চিল্লায়তাছিস কতক্ষন ধরে। ও তোর মামা হইল কবে থেইকা ।
কটমট কইরা তিনি জোরে হাঁক দিলেন এক বেয়ারার দিকে তাকাইয়া- এই এদিকে শুন ! চা সিঙ্গারা নিয়া আই। বেয়ারা কথা এবার গায়ে লাগাল। অর্ডার নিতে আসল। মামা আমার দিকে তকাইয়া ভাবলেশহীন মুডে বলল আর কিছু খাবি নাকি।
বুঝলাম আসল মামার সামনে যারেতারে মামা ডাকাই তার খুব গায়ে লাগছে।
আমি মনে মনে ভাবি তোমারে একবার ভার্সিটি নিয়া ছাইরা দিতে পারলে ভাল হইত, বুঝতা মামা ,মামা কত প্রকার ও কে কে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।