হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই
৯০ এর গনআন্দোলন
৯০ এর গন আন্দোলন চলছিলো আমি তখন সবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা এসেছি কোথাও ভর্তি হবার নিমিত্তে, ঢাকা ভার্সিটির হলে উঠেছি বড় ভাইদের ছত্রছায়ায়। সারা দেশে তখন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল, মফস্বলের ছেলে হয়েও নিরাপদ আশ্রয়ে ঘরে বসে থাকতে পারিনি বুজে হোক না বুজে হোক নেমে গেলাম রাস্তায়। ভয়াবহ তখনকার পরিস্থিতি, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই পুলিশের সাথে আমাদের শুরু হয়ে যেত চোর পুলিশের খেলা, রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে দিতাম যেন পুলিশ না আসতে পারে, ফ্রন্ট লাইনে ছিল তখনকার এক ঝাক রাগী যুবক যাদের প্রতিচ্ছায়া আমি আজকে খুজে পাই আমার শাহাবাগের ভাইদের মধ্যে।
এর মধ্যে ছাত্র নামধারী কিছু দূর্বৃত্তের হাতে নিহত হল ডাঃ মিলন। তখনকার প্রেক্ষাপটে সেই সব দূর্বৃত্তরা ছিল ভয়ানক ক্ষমতা শালী। কিন্তু কি হল? ইতিহাস কখনো অন্যায়কে ক্ষমা করে না। সেই অভি আজ কে কোথায়? আর অখ্যাত ডাঃ মিলন আজকে যে কোন আন্দোলনের প্রতিভূ। আপনাদের অবস্থান কিন্তু মিলন চত্বরের পাশেই।
আমায় ক্ষমা কর
সেই ৯০ থেকে আজ ২০১৩। ২৩ বছরের ব্যাবধান। জীবনের ডাকে আজ দেশ ছেড়ে অনেক দূরে জীবিকার কারনে। কিন্ত যে মুহুর্তে রাজাকার কাদেরের ফাসি দাবীতে আমার ব্লগীয় ভাই বোনেরা ( রক্ত সম্পর্ক ছাড়াও যে ভাই বোন হতে পারে সেটা আন্দোলন আর বিপদকালীন মূহুর্ত ছাড়া বুজা যায় না। ) শাহাবাগ মিছিল করা শুরু করছে সেই মূহুর্তে আমি চলে গেলাম শাহবাগে, আত্মিক ভাবে।
আমায় ক্ষমা কর তোমরা আজ আমি তোমাদের পাশে শারীরিক ভাবে দাড়াতে পারছি না, আমি জানি কি কষ্ট তোমরা করছ। কেন জানবনা আমিও যে ’৯০ আন্দোলনে ছিলাম। তবে মনে রেখ তোমাদের দায়িত্ব কিন্তু অনেক বেশী আমরা তখন যুদ্ধ করছিলাম স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, আর তোমারা সমগ্র জাতির দায়মুক্তির সাথে নতুন বাংলার রূপকার হিসাবে।
কেন আমি ব্লগে আসলাম
অনেকটা কিছু না জেনেই আমার ব্লগে আসা। কিছুই যে জা্নতাম না তা কিন্ত না, আরব বসন্ত শুরুই হয়েছিল ফেবু আর বিভিন্ন সামাজিক ইলেকট্রিক মিডিয়ার মাধ্যমে, পেপার পত্রিকায় তখন থেকেই ব্লগ নামটার সাথে পরিচিত হই।
আমি আমার দেশকে ভালবাসি, কিন্ত ভেবে পাচ্ছিলাম না কি ভাবে আমার চিন্তা চেতনা গুলো অন্যকে নিয়ে শেয়ার করব ফেসবুকে অনেক আগে থেকেই আছি কিন্ত ওখানে সব পরিচিত মানূষগুলো যাদের আমি চিনি তারাও আমাকে চেনে তাই তাদের সাথে মনের ভাব প্রকাশের খুব বেশি অবকাশ নেই আর আমি চাচ্ছিলাম এক ঝাক রাগী মানুষ যারা সমাজকে ভেঙ্গে নতুন ভাবে তৈরী করতে চায় নকশালদের মত। আবার নকশালদের চরমপন্থাও পছন্দ করিনা (অবশ্য ক্ষেত্র বিশেষ চরমপন্থাও কাজ দেয়, নকশালদের পাশাপাশি সরকারি সংস্থা RAB), এই সময় আমার ব্লগের খোজ পাওয়া। এখানে এসে দেখলাম একঝাক ঝা চকচকে ছেলেমেয়ে অসাধারন কিছু কথা বলতে আছে। মনে ধরে গেল। থেকে গেলাম।
ভাল লাগা শুরু হল।
কি চাই আমি ব্লগ থেকে?
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসার কারনে আমি কিছুটা স্বার্থপর মানুষ, বেচে থাকার তাগিদেই। সব কিছু থেকেই লাভ বের করার এক মানসিকতা। তাই ব্লগ থেকেও আমি স্বার্থ খুজি, দেশ আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, আওয়ামীলিগ আসলে আমরা বলি ভারতীয় দালাল আর বিএনপি আসলে বলি পাকিস্তানি দালাল অথচ এই দুই দল এর পরিবারতন্ত্র আমাদের নিয়ন্ত্রন করছে, বিএনপি সমর্থিত যুব সমাজ শ্লোগান ধরছে তারেক জিয়াকে চাই আবার আওয়ামী সমর্থক যুব সমাজ আকুল আবেদন ধরছে জয়কে চাই। কেন এ রকম হবে? আমরা কি কোন রাজতান্ত্রিক সমাজে বাস করছি গনতন্ত্রের আড়ালে? বিএনপি আওয়ামিলীগ নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই আমি চাই প্রগতিশিল নেতৃত্ব আসুক, এখানেই আমি ব্লগ থেকে স্বার্থ হাসিল করতে চাই।
আমি বিশ্বাস করি
আমি বিশ্বাস করি শুধু রাজাকারের ফাঁসি না, গত ৪২ বছর এই দেশে যত নোংরামী হয়েছে সব কিছুর জবাব এই প্রজন্মের কাছে দিতে হবে। তরুন প্রজন্ম অনেক বেশী বুদ্ধি ধরে তারা একটা যুদ্ধ শুরু করেছে এমন একটা ইস্যুতে তারা ডাক দিয়েছে যেখানে সমস্ত জাতি একমত। এরা কিন্তু এখানেই থেমে যাবে না। কেউ যদি তৃপ্তির ঢেকুর তোলে আর ভাবে এটা তাদের সংকীর্ন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যাবহৃত হবে তাহলে কিন্তু তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। এ দেশে রাজনীতি করতে হলে এরপর এদের কাছে জবাবদিহী করতে হবে।
অতীত অন্যায়ের দায় থেকে কেউ মুক্তি পাবে না। পাই পাই হিসাব দিতে হবে। পৌঢ় নেতারা ভুলে যান যে মাইক এখন আর তাদের হাতে নেই। মাইক এখন জনতার হাতে। ১৫ বছর আগে পর্যন্ত আপনারা একখানা মাইক মুখের সামনে ধরে যা খুশি তাই বলতেন, আর জনতা তাই বিশ্বাস করত।
দুনিয়া অনেক পরিবর্তিত। মাইক কিন্তু এখন চলে গেছে গ্রামে কাজ করা কৃষকের হাতে, রিকসাওয়ালার হাতে, ছাত্রদের হাতে, নিপিড়িতের হাতে। প্রস্তুত হন অতীত অন্যায়ের জবাব দিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করছে, এই প্রজন্ম গঠন করবে। কোন দল লাগবে না এদের।
যা এরা ইতিমধ্যে প্রমান করে দিয়েছে।
আমার শাহবাগের বন্ধুরা
শোন তোমরা, তোমাদের প্রথম অর্জন কি তোমরা কি জান? তোমরা স্বাধীনতার স্লোগানকে আবার সার্বজনীন করে তুলছ। কোন দলীয় আবরন থেকে তোমরা মুক্তি দিয়েছ সেই বিখ্যাত স্লোগান কে, যে স্লোগান কোন দলের হতে পারে না এ স্লোগান আমার, আমার দেশের, যে স্লোগানে জীবন দিয়েছিল ৩০ লক্ষ শহীদ। রাজনীতি হতে পারে দেশের উন্নয়ন নিয়ে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ বা যোদ্ধদের নিয়ে কোন রাজনীতি চলবে না। তোমরা থেমনা, তোমরা এমন অবস্থা তৈরী কর যাতে ভবিষ্যত পৃথিবীর সামনে তোমরা হতে পার এক আদর্শ।
আমি বিশ্বাস করি তোমরা সেই আদর্শ প্রজ্জ্বলিত করে যাবে। আজ এই সাগরের মধ্যে থেকে আমি বলে উঠলাম অনেক আগে আমার হৃদয়ে গুমড়ে ওঠা চিৎকার যা এত দিন বন্দী ছিল দলীয় সংকীর্নতায়।
জয় বাংলা।
"লাখো শহীদ ডাক পাঠালো,সব সাথীদের খবর দে, সারা বাংলা ঘেরাও করে, রাজাকারের কবর দে "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।