”শৈশব,কৈশরের হারিয়ে যাওয়া সব স্মৃতি কালের ধারায় প্রবাহিত হতে চায় নিরবধী। ”৭১এর মুক্তিযুদ্ধ আমি দেখিনি,সবার মুখে শুনেছি আমি তার ইতিকথা। যুদ্ধ করতে পারিনি বলে আমার বুকে আছে বড় ব্যথা। বুকের ব্যথা কিছুটা হলেও লাঘব করে দিচ্ছে কাজী আবেদ হোসেনকে নিয়ে আমার এ লেখা। আমি বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তার কর্মকান্ড নিয়ে অনেক লেখা পড়েছি আর ভেবেছি তিনি একজন মানুষ হয়ে যদি মানুষের জন্য এত কিছু নিঃস্বার্থভাবে করতে পারেন তবে আমিও পারব।
তাকে নিয়ে লেখা পড়ে আমি তাকে নিয়ে লিখতে আগ্রহী হয়েছি এই ভেবে যে,আমার লেখনীর দ্বারা তার কর্মকান্ড যদি তুলে ধরি তাহলে প্রত্যক্ষভাবে না হোক অন্তত্য পরোক্ষভাবে দেশের সেবা করা হবে। যাকে নিয়ে আমি লিখছি সেই কাজী আবেদ হোসেন নিজেই হয়তো জানেন না নিজ উদ্যোগে দেশের প্রতি গভীর ভালবাসা থেকে তার মহৎ কর্মকান্ডের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে অচেনা কেউ বহুদূর থেকে তাকে নিয়ে লিখছে। আমি জানি না তিনি আমার লেখাগুলো পড়েছেন কি না?সবার দোয়া নিয়ে দেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ আর মমত্ব বোধ থেকে শুরু করছি তাকে নিয়ে লেখা আমার লেখণীর ৬ষ্ঠ পর্ব। কাজী আবেদ হোসেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধা না হলেও তাকে আমি বলব তিনি সময়ের মুক্তিযুদ্ধা। শুধু সময়েরই নন তিনি কালেরও মুক্তিযুদ্ধা বটে যার প্রমান মেলে তার মোহনগঞ্জ উপজেলার “শিয়ালজানি খালের “ কর্মকান্ডের দিকে আলোকপাত করলে।
পাঠক গত পর্বে আমি বলেছি তিনি মোহনগঞ্জে যোগদান করার পর নিজ পরিচয় গোপন করে পুরো শহর ঘুরে দেখেন আর এ সময় একজন লোকের সঙ্গে তার সাক্ষাত হয় আর সেই লোকের কাছ থেকে তিনি শহর সম্পর্কে জানতে লাগলেন । মজার ব্যাপার হলো প্রকৃতি তাকে সব সময় হাত ছানি দিয়ে ডাকে আর সেই ডাকে তিনি দেখতে পেলেন একটি খাল। আনন্দে তার বুক ভরে উঠল। অনেকটা আপন মনে তিনি লোকটিকে বললেন চাচা “খালটিতো বেশ পুরো মোহনগঞ্জ শহরকে সাপের মত ঘিরে রেখেছে । তার উল্লাস দেখে লোকাট বললেন খালটির নাম” শিয়াল জানি”।
নিজ আগ্রহে তিনি জানলেন খালটির উৎস কংস নদীতে আর এটি শেষ হয়েছে সাপমারা নদীতে। আর ডিঙ্গাপোতা হাওড়ের মাঝখান দিয়ে প্রবেশ করেছে মোহনগঞ্জ শহরে। তিনি লোকটিকে জিগেস করলেন চাচা খালটির কি আবস্থা?খালে নিশ্চয়ই প্রচুর মাছ আছে?তার একথা শুনে লোকটি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন “কি কমু বাবা হেইডা মেলা বড় ইতিহাস”। কাজী আবেদ হোসেন তার কথায় রহস্যের গন্ধ পেলেন এবং বললেন বলুনতো চাচা আপনার ইতিহাসটা একটু শুনি। লোকটি বলল “স্বাধীনতার আগে এই খালে অনেক মাছ আছিল,সব থেইকা বেশী আছিল চিতল মাছ”।
এতটুকু বলে লোকটি চলে গেলেন। লোকটি চলে যাওয়ার পর তিনি বুঝলেন লোকটি তাকে কিছু একটা আড়াল করেছেন। পরে তিনি নিজ উদ্যেগে স্বেচ্ছায় খালটি সম্পর্কে জানতে গিয়ে বেশ বিষ্মিত হলেন। বিস্ময়ের প্রধান কারণ কথা শিল্পী হুমায়ূন আহমেদ,ড.জাফর ইকবাল আর বিশ্ব বরেণ্য জনপ্রিয় উন্মাদের কার্টুনীষ্ট আহসান হাবীবের নানা বাড়ি এই “শিয়ালজানি খাল”এর তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। এটি হুমায়ূন আহমেদের শৈশব স্মৃতি বিজড়িত খাল।
তিনি আরও জানলেন খালটি ৯০ফুট চওড়া আর ৬ কি.মি.দীর্ঘ। এই খালটি দেখার লোভে নিজেকে সংবরং করতে না পেরে ছুটে গেলেন খালটির উৎস মুখে। বিষাদে ভরে গেল মন ভাবলেন এই কি সেই খাল?যেখানে হুমায়ূন আহমেদ,ড.জাফর ইকবাল আর আহসান হাবীবের শৈশব কেটেছে?তারা ৩ ভাই কলার ভেলা বানিয়ে রোদেলা দুপুরে সাঁতার কাটত,তাদের সাঁতার কাটার সাথে যোগ দিত রূপালি চিতল মাছ,মাঝে মাঝে তারা লেজ দিয়ে উথাল-পাতাল করত খালের পানি। কাজী আবেদ হোসেন ভাবলেন “এসব কিছু কি স্মৃতির পাতা থেকে হারিয়ে যাওয়া বিস্মৃতি?”তিনি ভাবলেন হারিয়ে যাওয়া বিস্মৃতিকে পুনরুদ্ধার করতে হবে পুরো মোহনগঞ্জ বাসীর স্বার্থে সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। দীপ্ত চিত্তে তার কন্ঠে বেজে ওঠে,”শিয়ালজানি দুঃখ পাব আমি ততবার তোমায় ছেড়ে যাব আমি যতবার,তুমি যতবার জননী হবে আমি হব ততবার পিতা,কত সন্তান আঘাত করে জ্বালাবে তোমার আমার চিতা,তবুও তুমি আমি ছাড়ব না মোহনগঞ্জের মাটির এতটুকু কণা”।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।