আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিজ্ঞানের খাতা [পর্ব-৪৩] :: মানুষের গায়ের রঙ কালো হয় কেন?

আমার ছোট ভাই ফিরোজ। আমার থেকে পাঁচ বছরের ছোট। কৈশোরে আমরা দুই ভাই প্রচন্ড ঝগড়া করতাম। একে অন্যকে দেখতে পারতাম না। আব্বু বলত, “আমার দুই ছেলেকে দুই দেশে বাড়ী করে দিতে হবে।

”। সেসময় ওকে আমার শত্রু বলে মনে হত। মনে হত আব্বু আম্মু ওকেই বেশী ভালোবাসে। আমাকে একদম দেখতে পারে না। শুধু পড়পড় করে আর না কথা না শুনলেই পিটানি মাস্ট।

আব্বুকে আমি জমের মত ভয় করতাম। সেই সময় চলে গেছে। শৈশব গেছে, কৈশোর গেছে। অনেক কিছু বদলে গেছে। আমরা দুই ভাই আর আগের মত ঝগড়া করিনা।

একে অন্যের পিছে লেগে থাকিনা। শৈশবের সেই সম্পর্কের মাঝে যে কি পরিমান ভালোবাসা লুকানো ছিলো তা এখন বুঝতে পারি। ছোট বেলার ভাইয়ে ভাইয়ে, ভাইয়ে বোনে, বোনে বোনে ঝগড়া জীবনের মধুর স্মৃতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাবার শাসনের পেছনেও যে প্রচ্ছন্ন ভালোবাসা ছিলো সেটা তখন বুঝি নাই। অনেকটা নস্টালজিক বোধ কাজ করছে আজ।

একবার ফিরোজ আর আমার ঝগড়া হয়েছিলো কে বেশী ফরসা তা নিয়ে। আমি যে খুব ফরসা তা কিন্তু নয়। উজ্জ্বল শ্যামলার পর্যায়ে পড়ি। ফিরোজের গায়ের রঙ আমার থেকে একটু চাপা। আমি ওকে কালো বলে খেপাতাম।

ও রেগে যেত। হাতের তালু দেখিয়ে বলত , দেখ তোর থেকে আমার হাত বেশী পরিষ্কার। হা হা হা। আজ আমি লিখতে বসেছি গায়ের রঙ মানুষ থেকে মানুষে ভিন্ন হয় কেন সেটা নিয়ে। লিখতে বসে পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে গেলো।

ফিরোজ তখন স্কুলে পড়ত। এখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। পুরোনো কথা বলে দিলাম বলে সে কি ভাবছে জানিনা।
আমের দুইটা ত্বক থাকে। বহিঃত্বককে আমরা খোসা বলি।

আমের আঁটি আর বহিঃত্বকের মাঝের সুস্বাদু অংশের জন্যই আম ভূবনজয়ের খ্যাতি লাভ করেছে। মানুষের চামড়ারও দুটি স্তর আছে। বাইরের আবরণকে বলা হয় বহিঃত্বক বা এপিডার্মিস এবং ভেতরের ত্বককে বলা হয় এন্ডোডার্মিস। এপিডার্মিসকে আবার কয়েকটি উপস্তরে ভাগ করা হয়েছে। এপিডার্মিসের সবথেকে ভেতরের স্তরকে বলা হয় স্ট্যাটাম ব্যাসাল।

স্ট্যাটাম ব্যাসালে মেলানোসাইট নামে বিশেষ এক ধরনের কোষ আছে। স্ট্যাটাম ব্যাসালে প্রতি বর্গ মিলিমিটারে ১০০০-৩০০০ মেলানোসাইট থাকে। মেলানোসাইটে মেলানিন নামে রঞ্জক কনা বিদ্যমান যা ত্বকের কালো রঙের জন্য দায়ী। পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত মেলানোসাইট স্টিমুলেটিং হরমোন মেলানিন তৈরী করে। সব মানুষের ত্বকেই মেলানিন থাকে।

তবে যাদের ত্বকে মেলানিনের পরিমান বেশী তারা কালো হয় এবং যাদের ত্বকে মেলানিনের পরিমান কম তারা ফর্সা হয়। নিগ্রোদের ত্বকে মেলানিনের আধিক্য সব থেকে বেশী। আমাদের বাংলাদেশীদের ত্বকে মেলানিনের পরিমান মিশ্র। ত্বকে মেলানিন কম থাকবে নাকি তা নির্ভর করে বংশগত বৈশিষ্ট, ভৌগলিক অবস্থান, সূর্যের আলোর প্রখরতা ইত্যাদি বিষয়ের উপর।
প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের ফর্সা রঙের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা কাজ করায় সাদা কালো নামক বর্ণবাদী বিতর্কের সূচনা হয়েছে যা মানবসভ্যতার জন্য কলংক স্বরূপ।

বর্ণবাদী আন্দোলনের জন্য নেলসন মেন্ডেলা বিখ্যাত হয়েছেন। শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। বিখ্যাত পপ সংগীত তারকা মাইকেল জ্যাকসন নিজের চামড়ার রঙটাই বদলে ফেলেছিলেন।
মাইকেল জ্যাকসন
সত্যেন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত কবিতা দিয়ে আজকের লেখা শেষ করছি, কালো আর ধলো বাহিরে কেবল, ভিতরে সবারি সমান রাঙা।


সোর্স: http://www.techtunes.com.bd/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.