"নব্য রাজাকার গোষ্ঠির প্রবেশ নিষেধ"
টার্ম ফাইনাল শেষ হলে ঘুরতে বের হব আগেই প্ল্যান করে রেখেছিলাম এক বন্ধুর সাথে। তবে অনেক তো প্ল্যান করা হয় কিন্তু বাস্তবে সেটা করা হয়ে উঠেনা। যাই হোক প্রথমে ঠিক করলাম বগুড়া যাব এবং ওখানে একদিন থাকব। মহাস্থান গড়,ওয়ানডারল্যান্ড আর শহরটা ঘুরে দেখব বলে ঠিক করলাম। তারপরের গন্তব্য দিনাজপুর।
দিনাজপুরে দেখার জায়গা ঠিক করলাম কান্তজীর মন্দির,স্বপ্নপুরী,রাম সাগর। এবং দিনাজপুর থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম হোম টাওনে।
তাহলে বগুড়া থেকে শুর করি।
বগুড়া স্টেশনে নামলাম বিকাল ৩টার দিকে। ওখানে আমাদের একফ্রেন্ডের বাসা।
তার কথা মত সাতমাথায় এক হোটলে উঠলাম। ওর প্রাইভেট কারে হোটেল পর্যন্ত যেতে তেমন সমস্যা হয়নি। স্টেশন থেকে সাতমাথা প্রায় তিন কিলোমিটার। গলাপট্টিতে হোটেল নিলাম। ভাড়া ৪০০।
ডাবল বেড। বেশ ভালোই বলতে হবে হোটেলটার মান, পরিস্কার পরিছন্ন ছিল।
সেই দিন বাংলাদেশ আর জিম্বাবুয়ের খেলা ছিল। তো খেলা দেখতে দেখতেই ঐদিন কাটিয়ে দিলাম। খাওয়া দাওয়া করলাম আকবরিয়া হোটলে, ওখানে খাওয়ার মান ভালোই।
দাম একটু বেশী আরকি। সেটা সাতমাথাতেই।
বগুড়া আর দিনাজপুরে কি কি দেখার আছে সেটা জানার জন্য একটা পোস্ট দিয়ে ছিলাম। অনেকে মন্তব্য দিয়ে সাহায্য করেছেন, ধন্যবাদ তাদেরকে।
Click This Link
বগুড়া তে যে জিনিসটা দেখলাম,সেটা হল মাথা!!!
সাতমাথা, তিনমাথা,চার মাথা......
আর পট্টি......
সব জায়গার শেষে পট্টি থাকবেই...
সকালে গন্তব্য মহাস্থানগড়ে।
সাতমাথার কাছেই একটা জায়গা দত্তবাড়ি থেকে সিএনজি তে উঠলাম,ভাড়া সম্ভবত ছিল ১০ টাকা। প্রথমে মনে করেছিলাম অনেক কাছে হবে মহাস্থাগড়, প্রায় ২৫ মিনিট লেগেছিল ওখানে যেতে সিএনজি থেকে নেমে আবার রিক্সা নেয়া লাগে। প্রায় ১৫ মিনিটের পথ রিক্সাতে।
মহাস্থানগড়ের ছবি দিলাম ....
পাশেই মহাস্থানগড় জাদুঘর...
মহাস্থানগড় থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে গোকুলে বেহুলা লক্ষিনধরের বাসর ঘর দেখতে গেলাম ভ্যানে চড়ে।
ভালোই লাগল জায়গাটা।
ভ্যান চালক থেকে এর ইতিহাস শুনতে চাইলাম, উনি কি বলল না বলল কিছুই বুঝিনাই, শুধু হুম,হুম করে গেলাম। তবে সাপে কাটার একটা ব্যাপার ছিল। আপনারা কেউ ঐ ইতিহাসটা জানলে শেয়ার করুন। আমি ঠিক মত বুঝিনি,তাই আর লিখছি না।
সাতমাথায় গলাপট্টিতে আবার ফিরে এলাম হোটেল আমের এ।
ওয়ান্ডারল্যান্ডে যাওয়ার প্ল্যান বাদ দেয়া হল। দুপুরে হোটেল ছেড়ে দিলাম। ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে দুপুরে খাওয়ার জন্য বের হলাম এর পর।
খাওয়া দাওয়া শেষে গন্তব্য তিনমাথা। লোকজন বলল দিনাজপুরের যাওয়ার জন্য ওখান থেকে ভালো বাস পাওয়া যাবে।
তো গেলাম তিন মাথা। গিয়ে পড়লাম সমস্যাতে, প্রায় এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে ভালো কোন বাস পাওয়া গেল না। শেষে গেলাম চারমাথায়।
চারমাথাও তেমন কোন ভালো বাস পাওয়া গেল না। শেষমেষ চোখ বন্ধ করে উঠে পড়লাম এক বাসে।
ঐ বাসে প্রায় ৪ ঘন্টা লাগল দিনাজপুর যেতে। ফুলবাড়ী বাস স্ট্যান্ডে নামলাম। দিনাজপুরে আমাদের বন্ধুর বন্ধুর বন্ধু রিসিভ করল। উনি খুব সাহায্য করলেন । উনার কথা মত গেলাম হোটেল ডায়মন্ডে।
সেটা মালদহপট্টিতে। হোটেল টা ছিল জঘন্য। কি আর করা, এসেই যখন পড়েছি থাকতে তো হবেই। সাধারন রুম ৩৫০, এসি রুম ৮৫০ টাকা। সাধারন রুমেই উঠলাম।
তখন খুব টায়ার্ড ছিলাম, রুমে ব্যাগ ট্যাগ রেখে গেলাম খেতে। কই খাব ঠিক করতে করতে,আমার বন্ধুটি বলল চল চায়নিজে যায়। টাকা পয়সার অবস্থা এমনিতে খারাপ। তার উপর চায়নিজে যদি যায় ...
যাহোক গেলাম চায়নিজে...ফুড গার্ডেনে।
অর্ডার দেয়া হল স্পেশাল থাই সূপ।
সাথে ফ্রাইড রাইস আর ভেজিটেবল, প্রন। আমরা আসলে চিন্তাই করতে পারিনি ফুড গার্ডেন রেস্টুরেন্ট এত ভালোমানের হবে। এই লেখা লিখতে গিয়ে এখনো সেই সূপের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে...
চট্টগ্রামে আসার জন্য টিকেটও করে ফেললাম ঐ দিন। দিনাজপুর থেকে চট্টগ্রাম ৬০০ টাকা ভাড়া। বিশাল জার্নি...
বিশ্বাস না করলে এই ছবিটা দেখেন ....
খাওয়া দাওয়া করে রুমে চলে আসলাম।
ল্যাপটপ নিয়ে গিয়েছিলাম সাথে, ব্লগ আর পেপার পড়ছিলাম ।
রাত প্রায় ১২.৫০
তখন ঘটে সেই অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি।
পুলিশের জেরা .....!
এটা নিয়ে লিখছি না আর কারন এই নিয়ে একটা পোস্ট ই দিলাম!!!
ঘটনাটা চলার সময় ই পোস্ট দিয়েছিলাম।
মূল ঘটনাটা ছিল "রংপুর থেকে দশজনের মত ঐ হোটেল এ উঠেছিল হাজবেন্ড এন্ড ওয়াইফ পরিচয় দিয়ে। রাতে পুলিশ ধরে ফেলল তাদের সবাইকে।
ঐ ফ্লোরে শুধু আমরা বেঁচে গেলাম....."
পরের দিন সকালে বৃষ্টি আর বৃষ্টি। দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। বৃষ্টিতে ঘুরব কিভাবে? তার উপর ঐদিনই দিনাজপুর থেকে চলে যাব।
কি আর করা.. বৃষ্টিতেই বের হলাম। রিক্সা নিলাম হোটেলের সামনে থেকে।
এই রিক্সাওয়ালা ছিল আমাদের গাইড। উনাকে পাওয়া না গেলে বিশাল সমস্যাতে পড়তাম। সকালের নাস্তা করে আবার উঠলাম সেই রিক্সাতে। গন্তব্য রামসাগর।
প্রথমে মনে করেছিলাম কাছে কোথায় হবে।
কিন্তু অতটা কাছে ছিল না শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরের পথ রামসাগর। সময় লাগল অনেক ওখানে পৌছাতে, তো আবার ইতিহাস...
রামসাগর আসলেই কি সাগর?
জানতে চাইলাম রিক্সাওয়াল কাছে,আবার সেই ধুয়াসা,কি বলল আগামাথা কিছুই বুঝিনি।
তবে একটা ব্যাপার খুবই ইন্টারেস্টিং লাগল, সেটা মন্দির নিয়ে।
সে বলল রামসাগর দীঘির মাঝখানে একটা মন্দির আছে, পানি কমে গেলে সেটা দেখা যায়, সাথে জ্বিনের কাহিনী।
সাধারন মানুষের মুখে এই সব কাহিনী শুনতে আমার জটিল লাগে।
কিন্তু সমস্যা হল তারা স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেনা।
রামসাগরের কাহীনিটি এখানে কেউ বলে দিলে ভালো হয়....
ওখানে উদ্যানের মত একটা পার্ক আছে । ভালোই লাগল। রিক্সা নিয়ে ভিতরে ঢুকা যায়। দিঘীর চারপাশটা ঘুরলাম।
এর পরের গন্তব্য কান্তজীর মন্দির।
সমস্যা হল কান্তজীর মন্দির আর রামসাগর শহরের ঠিক বিপরীত পাশে।
আমাদের গাইড থেকে জানলাম কিভাবে যেতে হবে কান্তজীর মন্দিরে।
প্রথমে যেতে হবে দিনাজপুরের বাস টার্মিনালে। সেখান থেকে লোকাল বাসে রামপুরে।
বাসে প্রায় ২৫-৩০ মিনিট লাগে রামপুরে পৌছাতে। ভাড়া ২০ টাকা। রামপুর থেকে ভ্যান সরাসরি কান্তজীর মন্দিরে নিয়ে যায়।
রিক্সওয়ালা আমাদের দিনাজপুর বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত পৌছিয়ে দিল। ও হ্যাঁ
ওখানে দুপুরের খাবার খেলাম,রেস্টুরেন্টা দেখতে অস্বাস্থ্যকর মনে হলেও,খাওয়া দাওয়া তেমন খারাপ লাগেনি।
গাইডের কথামত জায়গা মত পৌছাতে কোন সমস্যাই হয়নি।
এবার বলি কান্তজীর মন্দিরে কথা।
এক কথায় অসাধারন যাকে বুঝায়। অবিশ্বাস্য সুক্ষ্ম কারুকাজে ভরা কান্তজীর মন্দিরের দেয়াল। আপাত দৃষ্টিতে এলোমেলো মনে হলেও,টেরাকোটার ফলক গুলো তো লুকিয়ে আছে রামায়ন এবং বিভিন্ন পৌরানিক কাহিনী।
এর ডিজাইন এত নিখুন চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার কথা না।
আমার মনে হয় একটা স্পেসশীপ বানানো কান্তজীর মন্দিরের তুলনায় অনেক সহজ। অনেক ছবি নিলাম সেখানে। আকাশ মেঘলা থাকতে তেমন ভালো ছবি উঠেনি। সাতটার দিকে বাসের টিকেট তাই বেশীক্ষন থাকা হয়নি।
তারপর চলে এলাম কান্তজীর মন্দির থেকে। আসতে আসতে প্রায় চারটা বেজেছিল। রুমে ফিরে এসে ফ্রেশ হলাম। ৫ টায় রুম ছেড়ে দিই। তখন হাতে আরো ২ ঘন্টা সময়।
আসে পাশে যাওয়ার জায়গা খুঁজছিলাম। সে জন্য গেলাম রাজবাড়ীতে। খুব বেশি দূরে না শহর থেকে
এই হল উত্তরবঙ্গের ভ্রমন ।
সন্ধ্যা ৭.০০ উঠি হানিফের বাসে,সেটা চট্টগ্রাম পৌছায় পরের দিন দুপুর ১২.৩০ সে।
এত টুকু যার কষ্ট করে পড়লেন তাদের ধন্যবাদ।
আর কোন তথ্য দেয়ার থাকলে সেটা কমেন্টে এড করুন।
...................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।