আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আব্দুল মালেকের শাহাদাত, আমরা কি শিক্ষা নিলাম?

কোন একদিন.. এদেশের আকাশে... কালেমার পতাকা দুলবে, সেদিন সবাই ... খোদায়ী বিধান পেয়ে দু:খ বেদনা ভুলবে..

আব্দুল মালেকের জন্ম ১৯৪৭ সালে। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই নিজেকে অত্যন্ত উজ্জ্বল ছাত্র হিসেবে মেলে ধরেছেন। পেয়েছেন জুনিয়র বৃত্তি, যাকে আমাদের দেশের প্রথম প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষা বলা হয়ে থাকে। এস এস সি পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ডে একাদশতম স্থান অর্জন করেন আর এইচ এস সিতে চতুর্থ স্থানকে জয় করে নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রি বিষয়ে ভর্তি হয়ে সেখানেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।

১৯৬৯ সালে গঠিত পাকিস্তানের সর্বশেষ শিক্ষা গঠিত হয়। সেই শিক্ষা কমিশনের নতুন শিক্ষানীতি গঠনের অংশ হিসেবে ২রা আগস্ট ১৯৬৯ সালে আয়োজন করা একটি আলোচনা অনুষ্ঠান। সেই আলোচনা অনুষ্ঠানে আব্দুল মালেক পাঁচ মিনিট বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পান। আর সেই বক্তব্য অনুষ্ঠানের শ্রোতাদের হৃদয় হতে বামপন্থী আলোচকদের দীর্ঘ আলোচনার তাসের ঘরকে ভেঙ্গে দেয়। তিনি তাঁর বক্তব্যে উপস্থিত সকলের সামনে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব শক্তভাবে তুলে ধরেন।

ফলে ব্যর্থ হয় অসাম্প্রদায়িকতার বুলি আওড়ানো কথিত বুদ্ধিজীবিদের নৈতিকতাবিহীন শিক্ষাব্যবস্থা গঠনের প্রচেষ্টা। সেই ব্যর্থতাকে সফলতায় রূপ দিতে ও নতুন করে জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে বামপন্থী ও মস্কোপন্থী ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজন করে আরেকটি সভা। সেই সভায়ও বায়োকেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আব্দুল মালেক বক্তব্য দেবার অনুমতি চেয়ে আবেদন জানালে তা নাকচ করে দেয় কুচক্রী শিক্ষকেরা। তারা এতেই ক্ষান্ত হয়নি, তিনি যাতে সভাস্থলে উপস্থিত হতে না পারেন সেজন্যে ব্যপক পাহারার ব্যবস্থাও করে। কিন্তু ইসলামের এই সৈনিক সকল বাধা অতিক্রম করে সেখানে উপস্থিত হলে ঐসব বেজন্মা তাঁকে ও তাঁর সঙ্গীদের উপর সশস্ত্র অবস্থায় চড়াও হয়।

তিনি তাঁর সঙ্গীদেরকে সেখান থেকে রক্ষা করে নিজেকে বিলিয়ে দেন শুধুমাত্র ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা কায়েমের জন্য। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে তাঁকে মস্কোপন্থী ও অসাম্প্রদায়িক শক্তি প্রচন্ড আক্রমনের মাধ্যমে ব্যাপক আঘাতের মাধ্যমে আহত করে। প্রচন্ড মুমুর্ষু অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে ১৫ই আগস্ট তিনি শাহাদাতের স্বাদ গ্রহন করেন। শহীদ আব্দুল মালেক আমাদের কি শিখিয়েছেন? তিনি শিখিয়েছেন কিভাবে সত্যের পথে জীবন দিতে হয়। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করার প্রেরণা রেখে গেছেন।

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছেন জটিল ও বিশাল এ মহাবিশ্বের একটি গ্রহ পৃথিবীতে। দিয়েছেন অসংখ্য নেয়ামত ও তা ব্যবহারের বিভিন্ন পন্থা। মানুষ চাইলে তা যেকোন ভাবে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু শুধুমাত্র একটি পন্থাই হলো আল্লাহর কাছে পছন্দের। সেই পছন্দের পথকে তিনি মানুষের মাঝে শিক্ষা দিয়েছেন বিভিন্ন গ্রন্থের মাধ্যমে তার মধ্যে সর্বশেষ হলো পবিত্র আল কোরআন।

প্রত্যেকটি গ্রন্থকে মানুষের মাঝে শিক্ষা দেয়ার জন্য পাঠিয়েছেন তাঁর পছন্দের প্রতিনিধি যাদের আমরা নবী-রাসুল বলে চিনি। মুহাম্মদ (স) কে পাঠিয়েছেন সর্বশেষ গ্রন্থ কুরআন দিয়ে এবং তাঁর উপর প্রথম নাজিলকৃত শব্দটি ছিল “পড়”। অর্থাৎ আল্লাহর কাছে শিক্ষার মূল্য সবচে বেশী। তিনি জ্ঞানার্জনকে অন্যান্য ইবাদতের চেয়েও বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। আল্লাহ মুসলমানদেরকে কুরআনের মাধ্যমে জ্ঞানী করে তুলেছেন।

হীন একেকজন মানুষ কুরআনের ছোঁয়ায় পরশ পাথরে পরিণত হয়েছেন। তাঁদের হাতে তৈরী হয়েছে সভ্যতার নতুন ধারা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যপক উন্নয়ন। বিশাল এক গৌরবময় জাতির এগিয়ে যাওয়ার মূল শক্তিই ছিল এই জ্ঞান, যে জ্ঞান কুরআন হতে উৎসরিত। আমরা জ্ঞানার্জনকে ত্যাগ করেছি, অলস হয়েছি, কুরআন ত্যাগ করেছি এবং হারিয়েছি গৌরব। আজ আমরা পিছিয়ে পড়া এক জাতিতে পরিণত হয়েছি।

১৯৬৯ সালের ১৫ই আগস্টে শাহাদাত বরণকারী আব্দুল মালেক জানতেন সমাজ-সভ্যতার অবক্ষয়ের মূল কারন হলো মুসলমানদের পিছিয়ে পড়া। আর মুসলমানদের পিছিয়ে পড়ার কারন হলো তাদের জ্ঞানার্জনের প্রতি অনীহা এবং জ্ঞানীদের জ্ঞানে কুরআনের ছোঁয়াহীনতা। তিনি সেই শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য জীবন দিয়েছেন যেই শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে হতে পারত নতুন এক অভ্যুদয়। আর তাইইতো তিনি জীবন দিয়ে হলেও চেষ্টা করেছিলেন সেই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার জন্য। তিনি আমাদের জন্য চিরদিন একজন অনুকরনীয় ও অনুসরনীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে থাকবেন।

আব্দুল মালেকের শাহাদাতকে বৃথা যেতে দিলে এ হবে চরম স্বার্থপরতা। সেই স্বার্থপরতার গ্লানী হতে মুক্তি পেতে চাইলে একটাই উপায়, তা হল তাঁর স্বপ্নের শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। রাষ্ট্রীয় ভাবে এ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবার ধারাবাহিক কার্যক্রম হিসেবে আমরা যা করতে পারি: . পবিত্র কুরআনকে বেশি বেশি করে আত্নস্থ করা ও অর্জিত শিক্ষাকে নিজেদের জীবনে অনুসরন করা। . রাসূলের (স) কথা ও কাজগুলো সম্বন্ধে জ্ঞানার্জন ও তা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করা। . একাডেমিক পাঠ্যক্রমের পাঠ্যকে বুঝে আত্নস্থ করা।

. এর পাশাপাশি আধুনিক সমাজ ও সংস্কৃতির সম্বন্ধে জানার জন্যে অন্যান্য বই অধ্যয়ন করা। . বিভিন্ন দেশ তাদের সমাজ ব্যবস্থা ও ইতিহাস সম্বন্ধে জ্ঞানার্জন করা। . অর্জিত ইসলামী আদর্শিক জ্ঞানের সাথে বাতিলের তুলনার মাধ্যমে লব্ধ ব্যবহারিক জ্ঞানকে সাধারন মানুষের কাছে সহজভাবে উপস্থাপন করা। তাহলেই হয়তো শিক্ষা ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবার পূর্বেই সমাজে একটা অংশ গড়ে উঠবে যারা আগামীর পৃথিবীকে নের্তৃত্ব দেবে। আর সেই দিন তো খুব বেশি দুরে নয় যেদিন মানুষ ইসলামের সোনালী আলোকে খালি চোখেই দেখতে পারবে এবং অনুভব করতে পারবে।

সেদিন সত্যি হবে শহীদ আব্দুল মালেক স্বপ্ন, শান্ত হবে তাঁর আত্না। আর আমরাও মাথা উঁচু করে আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে বলতে পারব, “হে খোদা, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। “

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.