প্রান্তিক জনগোষ্ঠিগুলোর ভাষা ও জাতিগত অস্তিত্বের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও সমমর্যাদা দাবী করছি
সন্ধ্যে হলে দলংদের বাঁশঝাড়ের ফাঁক দিয়ে মিটমিট আলো জ্বেলে উড়ে যায় আশ্চর্য জোনাকির দল। কয়েকটাকে ধরে বোতলে ভরতে যাবে এমন সময় মা বলে উঠে, এটা পাপ বাবা। জোনাকি ধরলে রাতে খারাপ স্বপ্ন দেখবি। মার কথা গ্রাহ্য করেনা দলং। বোতলের জোনাকি ধানের গোলার আড়ালে লুকিয়ে রেখে ভাবতে বসে, জোনাকি কোথা থেকে কিভাবে ঐ আলো পায়।
ছেড়ে দিতে হতে পারে এই ভয়ে মাকেও জিজ্ঞেস করা হয়না। আবার মায়ের বলা স্বপ্নের আশংকার কথাও ফেলে দেয়া যায় না।
ভাবতে ভাবতে সে বিছানায় যায়, শুয়ে পড়ে। একটু পরেই স্বপ্নে দেখা যায় বোতলের জোনাকিরা ছেড়ে দেবার জন্য আকুলি বিকুলি করছে। দলং রাজী হয় না।
তারপর ঘটে যায় কান্ড। ঝাঁক ঝাঁক জোনাকি এসে বোতলের চারপাশে জড়ো হয় ঝলমলে আলো নিয়ে। তারা বোতলের চারপাশে একবার চক্কর দেয়, তারপর উড়ে যায় আকাশের দিকে, দুগ্ধধারার মতো।
তারা দেবতাদের রাজার কাছে গিয়ে বোতলবন্দি জোনাকিদের মুক্তি দাবী করে। খানিকক্ষন পরেই দেখা যায় রাজা বৃষ্টির দেবতাকে দিয়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামাচ্ছেন।
শীত শীত লাগে দলং এর। কোনদিন যা হয়নি, সেই অভিজ্ঞতা হয় তার। কেমন একটা উষ্ণ ভেজা ভেজা ভাব জাগে শরীরে।
চমকে উঠে সে ঘুম ছেড়ে বিছানায় উঠে বসে। মাকে জাগিয়ে বলে, মা জোনাকির দল বিছানা ভিজিয়ে দিয়েছে।
মা উঠে দেখে গায়ে চাদর নেই। পরনের কাপড় আর চাদর ভিজে গেছে। মা মুচকি হেসে বলে, তোকে না বলেছি জোনাকিপোকা ধরতে নেই. দেবতাদের অভিশাপ লাগে।
এবার উঠে পড়ে সে। ধীরে ধীরে বোতলটা বের করে মুখ খুলে দেয়।
একটার পর একটা বের হতে থাকে জোনাকির দল । দলং চেয়ে থাকে অপলক।
________________________________________________
সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতিঃ শ্রীকান্ত সিংহ একই সঙ্গে একজন চিত্রশিল্পী, কবি ও গল্পকার। জন্ম ১৯৫৭ সালে করিমগঞ্জের শিংলায়। প্যারবল বা অণুগল্প লিখে থাকেন।
চিত্রকল্পের দিকেই তার মনোযোগ বেশী। মিথ নিয়ে কাজ করেন এবং গল্পের মধ্যে কবিতা ও চিত্রকল্পের মোটিফ ব্যবহার করেন। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলী - নংকুপীর জুরন(১৯৮৬), জঙা বেলী(১৯৯৫)।
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় মুল গল্পটির নাম 'জিনজিনি'।
সূত্র: মণিপুরী সাহিত্য সংগ্রহ / শুভাশিস সিনহা
অনুলিখন: কুঙ্গ থাঙ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।