পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি
১। ব্লগে দিনটা শুরু হলো রোমানিয়ার গায়ক লিভিউ মিতিতেলুর গান চুরি পোস্ট পড়ে । ছেলেটা গান গায় ভালো । কিন্তু বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত গান " ভ্রমর কইয়ো গিয়া" এর সুর একেবারে রীতিমত "এস্তেমাল" করে ফেলার বছর খানেকের ভিতরেও কেউ মামলা করেনি কপিরাইট আইনে কিংবা প্রতিবাদও হয়নি তেমন। উল্লেখ্য এলবামটা ২০০৮ সালে প্রকাশিত।
বাংলাদেশে সাধারনত এই রকমই হয়। চুরি ডাকাতি খুন সব শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ঠুটো জগন্নাথ ফুলিশ এসে বলে আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না । আমাদের মাটির উপরে পানি, বিদ্যুৎ, টাকা , রেমিটেন্স , ফসল চুরি যায়। মাটির তলা থেকে গ্যাস , তেল, কয়লা চুরি যায়। আমাদের স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশের রাস্তা থেকে মাত্র দুই তিনটা সি আই এ কিংবা এফ বি আই এর হাতে বাংলাদেশী ছেলে চুরি যায়।
আমাদের আইন আদালত থেকে হর হামেশা দলিল চুরি যায়। দালালদের হাতে পড়ে দেশের সম্পদ , টাকা পয়সা চুরি যায়। মাসে মাসে গরীব শ্রমিকের লাশ থেকে দু মুঠো ভাতের স্বপ্ন চুরি যায় । বার্মা ভারতের জাহাজ এসে আমাদের সাগরের মাছ চুরি যায় । এক সময় আমরা বুকের ভিতর অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে দেখি ভোটের যুদ্ধে আমাদের সকল আশা, আকাঙ্ক্ষার সাথে সাথে আমাদের প্রিয় পতাকাটাও চুরি যায় ।
আমরা প্রতিবাদ করেও করি না । মাঝে মাঝে অক্ষম ভিক্ষুকের মত ঢিল ছুড়ে রাগ প্রকাশ করি । আমরা ন্যাংটা , গরীব , অভুক্ত , বার বার প্রতারিত --- তারপর ও আমরা অন্যেরটা চুরি করে , ডাকাতি করে খাই না । আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেই না ।
সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার পরেই কেবল জ্বলে উঠি মনে হয় ।
নইলে শত শত বার প্রতারিত হওয়ার পরেও আমরা এত দয়া, এত ক্ষমা, এত অসীম ধৈর্য্য ধারন করি কি করে?
শালার বাঙ্গাল ! ব্যড়া ঘাউরা চিজ হ্যায় না?
২। সিনেমার শেষ দৃশ্যে পুলিশের আগমনের অপেক্ষায় থাকা শ্লার বাঙ্গাল ইদানিং কেন যে টিপাই এর পিছে লাগলো! বহুত মুশিকল হো রাহা হ্যায়! যা বাবা, কোথায় নালা নর্দমা মারা মারি কাটাকাটি করে আর ভাত খুঁজে মরবি , তানা ! আসলেই, বাঙ্গাল হঠাৎ ঘর পোড়া গরুর মত ফারাক্কা , টিপাই নিয়ে মাতলো কেন , এইটা নিয়ে অনেকেই নাখোশ। আসলে, অনেকেই না, সকলেই নাখোশ।
আমরা তো এই দুনিয়ায় পুরাই একা এখন। আগে আমেরিকা পিছে লাগলে আমরা রাশিয়ার লুঙ্গি ধরে কেঁদে পড়তাম।
এখন সেই রাশিয়া নাই। একলা আমেরিকা তান্ডব নৃত্য করে বেড়াচ্ছে । নতুন শত্রু হলো চীন। চায়না ঠেকাও লড়াই এ আমেরিকা মিত্র বানিয়েছে ভারতকে। কারন ভারতের ১০০ কোটি ক্রেতার বাজার।
আবার ভারত যাতে বেশি বাড় না বাড়ে তাই পাকিস্তানকে নিউক্লিয়ার পাওয়ার বানিয়ে রেখে দাও। মনে পড়ে যায় ইরাক ইরান যুদ্ধের কথা যখন আমেরিকা দুই দেশের কাছেই অস্ত্র বেচতো আর যুদ্ধটা যাতে শেষ হয়ে না যায় , তার চেষ্টা চালিয়ে যেত। এই অস্ত্র বেচে নিজেরা বড়লোক হওয়ার ফরেন নীতিতেই আজকে সারা পৃথিবীতে যুদ্ধাবস্থা জিইয়ে আছে । আরবে ঈজরায়েল। পূবে নর্থ কোরিয়া ।
আফ্রিকার তেল আর ডায়মন্ড ব্যবসা তো বলাই বাহুল্য। দক্ষিণ আমেরিকার ড্রাগ লর্ডস । যত ঝামেলা তত লাভ। যত যুদ্ধ তত লাভ। ডিভাইড এন্ড রুল ।
তো এই দুনিয়া জুড়ে সম্পদ দখল আর দেশ দখলের কবলে আমরা হইলাম ফাতরা আতরাফ জাতীয় এতিম। আমাদের কোন বন্ধু নাই। আমরা কোন দিক দিয়েই খুব বেশি লোভনীয় বস্তু না যে অন্য কোন দেশ নিজেদের স্বার্থে আমাদের বন্ধু হবে , যেমন আমেরিকা হয়েছে ভারতের। আমাদের পশ্চিমে আমেরিকা - ভারত জোট। পূবে চায়না ।
আমেরিকা ভারতকে ডার্লিং বানানোতে আমরা ভারতের সাথে জোরে পারি না । চায়না বার্মাকে এক রকম কিনে রেখেছে , সুতরাং এই দিক দিয়ে সাগর তথা নৌ পথের জন্য চীনের চট্টগ্রাম কিংবা খুলনাকে দরকার নাই। অতএব আমরা চীনের বন্ধু নই, স্রেফ বাজার। তাদের চরম সস্তা জিনিস্পত্রের গরীব বুরবক ক্রেতা।
উত্তরে হিমালয় , নেপাল , ভূটান সবই ভারতের দখলে।
দক্ষিণে সাগর।
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হচ্ছে , এই রাজা হলো আমেরিকা আর চায়না। উলুখাগড়া বাংলাদেশের প্রাণ যায় যায় । ভারত নেপো হয়ে দই মারছে । এখন আমরা কি করবো ? বাঙ্গাল রাশিয়ার ধামা ধরবে না, পাকিস্তান চিরশত্রু, দাদাদের ঘটি সাফ করতেও নারাজ।
শালার বাঙ্গাল ! ব্যাড়ে ঘাউরা চীজ হ্যায় না?
৩। আগেই বলেছি বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশ নিজে দুর্বল, আবার কোন শক্তিশালী বন্ধুও নেই। এক অর্থে আমরা এতিম। কিন্তু আবার অন্য কোন দেশের চাকর, বাকর , মেথর হয়ে তাদের গু সাফ করতেও রাজি না । তাইলে কি করা ? বড় বড় দেশ গুলো মিলে তাই হতচ্ছাড়া বাঙ্গালের কোমর ভেঙ্গে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে নেমেছে।
এটা সেই ম্যাট্রিক্সের ঘুমন্ত মানুষদের মত। যারা একটা ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে বসবাস করে , যেটা বিশ্বাসযোগ্য রকমের ইম্পার্ফেক্ট । কিন্তু তারা কেউ জানে না তারা আসলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কৃত্রিম মেশিনদের শক্তি বা তাপের যোগান দিচ্ছে । আমেরিকা, ভারত , চীন কিংবা অন্যান্য দেশ আমাদেরকে ঐ রকম তাদের শক্তি যোগান দেওয়া ঘুমন্ত চাকর করে রাখতে চায়। মুশকিল হইলো , আমরা চাকর হইতে চাই না।
ঘুমাইতেও চাই না ।
ঠিক এই কারনেই টিপাইমুখী বাঁধ হবেই । ভারত তার নিজের স্বার্থে বানাবে । কিন্তু অন্য কোন দেশ প্রতিবাদ করবে না । কিংবা ইরাক যুদ্ধের মত নিন্দা জানিয়েই দায়সারা কাজ সারবে।
বাংলাদেশ যতদিন পর্যন্ত কোন মতে দু চারটা খেয়ে পরে স্বাধীন থাকবে , ততদিন পর্যন্ত এই ঘাড় ত্যাড়া ন্যাংটা গুলাকে চাকর বাকর বানানো যাবে না । এই কারনেই বাংলাদেশকে মরুভূমি বানানো দরকার । কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের প্রাণ ভ্রমরা নদী গুলা শুকানো দরকার । চাষ বাস এর , ফসলের সম্ভাবনা শেষ করে দেওয়া দরকার । এই হারামী জাতটা কেন যে একটু খাইতে পাইলেই আর কিছু চায় না !
শালার বাঙ্গাল! ব্যাড়া ঘাউরা চীজ হ্যায় না?
৪।
তাইলে আমরা কি করবো ? এতিম এবং অসহায় অবস্থায় জিতবো না , সে তো বুঝতেই পারছি । কিন্তু তাই বলে কি হাল ছেড়ে দেব? কখনোই না । লড়াই না করার মানে হলো অন্য কোন দেশের হয়ে গু সাফ করা । সুতরাং কমরেড , লড়াইটাই শ্রেয়তর পথ।
আমরা কি জানি আমাদের শক্তি গুলো কি কি ?
আমাদের ভিতর ধর্ম , জাত, ইত্যাদি নিয়ে কোন ভেদাভেদ নেই ।
তাই আফ্রিকার মত হুটু টুটসি আর ভারতের মত হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করেও লাভ হয় নাই। তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ আমাদের সবাই মোটামুটি একই রকম খাই, একই রকম কাপড় পরি, একই ভাষা বুঝি, একই রকম রীতি নীতি মেনে চলি । জাতিগত ভাবে আমরা হাসি খুশি, অতিথি পরায়ন, বন্ধু বৎসল এবং নানা রকম উস্কানি আর চুলকানির পরেও শান্তিপ্রিয় । এমন কি ইরাকে মুসলমান মুসলমান যুদ্ধ বাধানোর জন্য যেই কুর্দি কিংবা শিয়া সুন্নী বিভেদ, এই ধরনের বিভেদ ও বাংলাদেশে প্রবল নয়। আমরা ধর্ম মানি, কিন্তু ধর্মের দোহাই দিয়ে কাউকে মেরে ফেলা পছন্দ করি না ।
---- এই সমস্ত কারনেই বাংলাদেশ এক অদ্ভুত জাতি । এই সমস্ত কারনেই বাংলাদেশ নিয়ে করা নানা রকম ষড়যন্ত্র সফল হইতে হইতেও এখনো হয় নাই ।
রাজনৈতিক দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা চললো। ধর্মীয় দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা চললো। সিপাহী বনাম সিভিল দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা চললো ।
কত রকম ঝামেলাই যে দেশের ভিতর চলছে, সামনে আরো আসছে ! কিন্তু এই গরীব , অশিক্ষিত কিন্তু অকল্পনীয় পরিশ্রমী আর স্বাধীনচেতা জাতিটা কিছুতেই পোষ মানলো না । আমরা নিজে দু মুঠো খেতে পেলেই অন্য কারো পাতে হাত বাড়াই না । তাই আমাদের লোভী করে তোলার চেষ্টা চলছে অবিরত । আমেরিকার মত বাংলাদেশেও একটা " বিবেকহীন- অচেতন- চরমভোগী" শ্রেনী তৈরী করা হয়েছে । ঘুষ ঢেলে ঢেলে ঘুষখোর করা হয়েছে ।
আমরা কথায় কথায় মুসলমানী জোশে কাউকে খুন করি না বলে আমাদেরকে নতুন করে মুসলমানিত্ব শেখানো হচ্ছে । গ্রামে , গঞ্জে , শহরে তাই বোরখার ছড়াছড়ি । আমরা এক ভাষায় কথা বলি বলে আমাদের ইশকুলে ইশকুলে ইংরেজি আর বাসায় বাসায় হিন্দীর শিকড় গজানো হচ্ছে । খুব সুক্ষ ভাবে আমাদের অসহিষ্ণু করে তোলা হচ্ছে ।
আমরা ভাবি , বাংলাদেশে নিউক্লিয়ার পাওয়ার নেই, বাংলাদেশে পেট্রো ডলার নেই, বাংলাদেশে সোনা হীরার খনি নেই , বাংলাদেশের পাশে আমেরিকা -রাশিয়া-চীন নেই ।
তাই বুঝি আমরা দুর্বল । তাই আমাদের লড়াই করা সাজে না ।
কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত ভুলে যাই , জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয় , আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য , আমাদের জাতিগত চরিত্রটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি । জ্বলে, পুড়ে , মরে ছারখার হয়ে যাব তবু মাথা নোয়াবো না - এই প্রতিজ্ঞাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি । হাড় জির জিরে বালক ও যখন মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে হুংকার দেয়- " ভয় না পেলে ভয় দেখাবি কাকে?" ঐ মুষ্ঠিবদ্ধ কোটি কোটি হাতই আমাদের শক্তি !
আমাদের বেঁচে থাকাটাই আমাদের লড়াই ।
চাইলে আমরা পূবে ভারতের সেভেন সিস্টারকে স্বাধীন করে দিতে পারি, সেটা কূটচাল। চাইলে আমরা বার্মার মত সামরিক শোষককে বন্ধু বানাতে পারি, সেটা রণকৌশল । চাইলে আমরা দিনের পর দিন সংলাপে বসতে পারি , সে রাষ্ট্রনীতি । চাইলে আমরা ভারতীয় খাবার, পোশাক, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস , বিনোদনকে বর্জন করতে পারি । সে অর্থনীতি ।
কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না , জাতি হিসেবে বাঙ্গালীত্বকে ধরে রাখতে পারাটাই আমাদেরকে শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারে , লড়াই করার অশেষ সঞ্জীবনী যোগাতে পারে । আর তার জন্য রক্ষা করা চাই আমাদের প্রান ভোমরা নদী গুলোকে ।
ভারত সরকারকে বুঝতে হবে,
শালার বাঙ্গাল! ব্যড়া ঘাউরা চীজ হ্যায়। না?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।