হে খোদা! রাজনৈতিক প্রশ্নে জাতি আজ শতধা বিভক্ত। সামান্য কিছু মতপার্থক্য থাকলেও একাত্তুরের মত জাতিকে আবার এক করে দাও। বিরিয়ানি সুস্বাদু বলেই যে এটা প্রতিদিন খেতে হবে এর কোন মানে নেই। ৪১ বৎসর একই কথা শুনে আসছি "যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই"। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং বিপক্ষের শক্তি, খামোখা জাতিকে বিভক্ত করার এ স্লোগান কেউ আর শুনতে চায় কিনা জানি না।
কথাগুলো ভাল, কিন্তু ভাল কথার দোহাই দিয়ে প্রতিদিন চর্বিত চর্বণ জাতিকে গেলানো হয়। বিরিয়ানি খুব সুস্বাদু বলে প্রতিদিন কি খেতে হবে? এতে স্বাদ বিস্বাদে রূপ নেয়। স্বাদের ও একটা সময় সীমাবদ্ধতা আছে। বনফুলের রসমালাই দু' চার দশটা খেয়ে তৃপ্তি আসে নি বলে সুযোগ বুঝে তিন কেজি কিনে নিয়ে আসি। খাই আর খাই।
এক পর্যায়ে ঢেকুর আসে তৃপ্তির। আর পারি না। স্ত্রী বলে,
: নাদান রাক্ষস কোথাকার! ডাইবেটিস হবে আম্মার মত।
: নারে সোনা, ডাইবেটিস হবে না। মিষ্টি খেলে ডাইবেটিস হয় না, তবে ডাইবেটিস হলে মিষ্টি খাওয়া যায় না।
: এরকম নাদান মানুষের খাদ্যে কারো না কারো নজর পড়ে।
: নজর তো পড়বেই, নজর কাড়তে পারা একটা বড় ব্যাপার।
: সে নজর নয়, কু-নজর এর কথাই বলছি।
: একটা বেশী কিছু করতে পারলে পরশ্রীকাতর লোকেরাই কু-নজর দেয়। দিক কু-নজর।
কু-নজর, কুসমালোচনা সহ্য করতে পারাটা বড় গুন।
: আমি বলি কি, আর এই মানুষটা বলে কি?
: রাজনীতি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে একটা শিক্ষা নেয়া যায়, তা হল নিজের চামড়াকে গণ্ডারের চামড়া করা।
: মানে?
: মানে সহজ, যে কেউ সংসদীয় বাক্য (গালি গালাজ) ব্যবহার করলে ও সহ্য করা। এই যে তুমি আমাকে নাদান, রাক্ষস বলেছ এই শব্দগুলো আমার চামড়া ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে নাই। তুমি আমাকে বলেছ 'নাদান' আর আমি তোমাকে বলেছি 'সোনা'।
: আরো কিছু বলার বাকী আছে।
: তুমি বল আর আমি হাসি। একেই বলে সবর এখতিয়ার করা। রাজনীতিকদের কাছে এই অভ্যাসটা রপ্ত করেছি। চক্ষুলজ্জা, শরম এসব জীবনে চলার পথে বাধা।
তাই চোর, ডাকু, লম্পট, জোচ্চর, শয়তান, জারোয়া, অসভ্য, কুত্তা যাই ব্যবহার কর না কেন, হাসব। কি বলার আছে বললে যেন।
: তুমি পেটুক, কু-নজর মানে বুঝতে পেরেছ?
: কি এমন শক্ত কথা হল। কুত্তা শব্দের চাইতে পেটুক শব্দটা বেশ মজার। কথা কি জান, আমাকে আর কোন বিশেষনে ভুষিত করতে হলে বদমাইশ, বেতমিজ ব্যবহার করতে পার।
অথবা অভিধান তালাশ করে দেখতে পার।
গণ্ডারের চামড়া করতে পারার এটাই কৃতিত্ব। কু-নজর মানে খারাপ নজরে দেখা।
: না ভোদাই। কু-নজর মানে যা তুমি খাচ্ছ, তাতে অন্যজনের খাওয়ার ইচ্ছা যোগ হলে তোমার পেট কামড়াবে, বমি হবে।
এটাই কু-নজর।
: এতক্ষনে অরিন্দম কহিলা বিষাদে। বুঝেছি, বুঝেছি। না খেয়ে উপায় নেই। এরকম করে রস মালাই খাওয়ার ইচ্ছা অনেকদিনের।
দেল যেন আর কোনদিন রসমালাই না চায়, তাই একসাথে এত খাওয়া।
স্ত্রী তার কাজে চলে গেল। আর এদিকে আমার গলা থেকে টক ঢেকুর আসতে লাগল। অন্ততঃ বেশকিছু দিন মিষ্টির প্রতি আমার কোন আকর্ষণ ছিল না। বলতে চাচ্ছিলাম যখন পুরা ফেব্রুয়ারী জুড়ে টিভিতে প্রতিদিন বাংলাভাষার উপর মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি দেখি, বেশী মিষ্টি খাওয়ার কথা মনে পড়ে যায়।
পুরা ফেব্রুয়ারী ভাষার মাস, পুরা মার্চ স্বাধীনতার মাস, পুরা আগষ্ট শোকের মাস, পুরা ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। এই দিনগুলিকে শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমরা পালন করব ২১শে ফেব্রুয়ারী, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ভাষন দিবস, ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৫ই আগষ্ট শোকদিবস, ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস। যা মর্যাদার তা একদিনের পরিবর্তে তিন দিন পালন করা হোক, কিন্তু সারা মাস জুড়ে পালন করার কোন মানে আছে কিন জানি না। মাসব্যাপি দিন পালন একপ্রকার অতি মাত্রায় বিরয়ানী বা মিষ্টি খাওয়ার মত। একসময় মজাদার হলেও থ' দিয়ে রাখতে হয়।
রাজনীতি ছাড়া কি বাঙ্গালীদের কি আর কোন কাজ নেই? এইভাবে অতি মাত্রায় দিন পালন করে কে বা কারা আমাদেরকে কি স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বানাতে চায়? আমরা চাই, এই সব গৌরবের দিনগুলিও আমরা পালন করব, আমাদের মনন মেধা অন্যদিকেও ফেরাব। আমাদের অনেক কাজ। শুধু অতিমাত্রায় দিন পালন করে কি মুক্তিযুদ্ধের ধারক, বাহক হওয়া যায়? পৃথিবীর অনেক দেশ স্বাধীন হয়েছে। এত বাড়াবাড়ি কোথাও আছে বলে মনে হয় না। ভিয়েতনামের যুদ্ধ ১৯৫৫ থেকে শুরু করে ১৯৭৫ পর্যন্ত চলে।
২০ লক্ষ ভিয়েতনামি নিহত হয়। কেউ কেউ বলতে পারেন আমাদের শহীদের সংখ্যা ৩০ লক্ষ। ভিয়েতনাম থেকে ১০ লাখ বেশী।
ঐ সময় ভিয়েতনামের লোকসংখ্যা ছিল ৩ কোঠি ৪০ লক্ষ আর আমাদের সাড়ে সাত কোঠি। আনুপাতিক হারে ওখানে বেশী নিহত হয়েছিল।
এরা যুদ্ধ করেছিল পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর দেশ আমেরিকার বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধের ভয়াবহতা মানব সভ্যতার কপালে এক কালো তিলক।
ভিয়েতনামীদের সাথে চীনের মদদপুষ্ট খেমাররুজ বাহিনী যোগ দেয় এই যুদ্ধে। চলে শক্তির পরীক্ষা। ২০ বছর চলে এই যুদ্ধ।
৬০ হাজার আমেরিকান সৈন্য নিহত হয়। অবশেষে বিশ্বের এই শাসক দেশটি পরিপূর্ণ পরাস্ত হয়। এতকাল যুদ্ধের পরও ভিয়েতনাম তৃতীয় বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোর প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। দুর্নীতির পিন কোড অনেক নীচে। চাউল রপ্তানিতে নাম ডাক আছে।
আর আমরা? বিবি তালাকের ফতোয়া নিয়ে ভীষন ব্যস্থ। রাজনীতির লড়াই চলছে এ দেশে। শাসন ক্ষমতায় যায় শক্তিধর ব্যক্তিরা, আর আমরা দুর্বল লোকগুলো ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত খেয়ে, না খেয়ে অপর দুই দুধ পাওয়া বাচ্চার সাথে লাফাতে থাকি। গৌরবে লজ্জিত হই, অগৌরবে বেশ মজা পাই। বঙ্গবন্ধুর মত আমাদের ঘুম জাগানিয়া আর এক নেতার দরকার।
কে সে নেতা, ভবিতব্যই জানে।
হ্যাঁ, আমরা অনেক রক্ত ঝরিয়েছি এই স্বাধীনতার জন্য। ত্রিশ লক্ষ লোক শহীদ হয়েছে, দু'লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের বইগুলি প্রতি ক্লাশে পড়ানো হোক। এই দিনগুলি নিয়ে আজকাল রাজনীতি করা হচ্ছে।
যেন পুরা বছরটাই স্বাধীনতার দিন। এইসব সত্যই বড় বাড়াবাড়ি। এইসব নিয়ে কিছু বললেই স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি হয়ে যায়। সেলুকাস!
আমাদের খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই। রাজনীতি আর রাজনীতি।
ছাত্র রাজনীতি, শ্রমিক রাজনীতি, ওলামা মাশায়েখ রাজনীতি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক রাজনীতি, বার সমিতির রাজনীতি এইভাবে সব মানুষই রাজনীতি প্রেমী। রাজনীতির আলাপ আমাদের কাছে খুব প্রিয়। চায়ের দোকানে, বাসে, বিয়ের আসরে, টিভি টক শোতে সব জায়গায় রাজনীতির আদ্যপান্ত চর্চা হয়। বাঙ্গালীর মত রাজনীতি পৃথিবীর কোন জাতি বুঝে না। আমাদের কি শুধু রাজনীতি করার জন্য দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছিল?
যারা রাজনীতি করে করুক।
কিন্তু এ পেশার পেছনে গরীব জনগণকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে একটা আধটা পান চিবুই। সামান্য জর্দা খাই বলে বাড়িশুদ্ধ আমার পেছনে উঠে পড়ে লাগে। ছোট মেয়েটাকে আগে পানের জন্য পাঠানো হত। সে ও বিরোধিতা শুরু করে দিয়েছে।
সে জর্দাবিহীন পান নিয়ে আসে। পিচ্ছিটাও জর্দার বিপক্ষে অনেক কথা শিখে ফেলেছে। তাই পান বাদ দিয়ে এবার সিগারেট। দৈনিক দু' একটা মাত্র। ঘরব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
লুকিয়ে খাই, এবার আর কাউকে জবাব দিতে হয় না। তবে একটি জিনিষ শিখেছি, অনিয়ম ও মন্দ সব সময় নিয়ম ও ভাল এর কাছে হার মানতে বাধ্য। আমি সিগারেট ও জর্দার স্বপক্ষে অনেক যুক্তি খাড়া করেছি, কিন্তু সব চেষ্টা, উপচেষ্টা ভেস্তে গেল। জিততে পারি নি।
আল্লাহ্র কাছেও চাই, আমি যেন সত্য ও সুন্দরের ন্যুনতম ধারক হতে পারি।
এই লেখায় যেন সত্য ও সুন্দরের প্রতিফলন থাকে। কারো সেন্টিমেন্টে আঘাত করতে এ লেখা নয়। রাজনীতির কালো লাইন মুছে দিয়ে দল, জাত, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল পেশার, সকল শ্রেণীর মানুষ আবার এক কাতারে দাঁড়াবে, সেই স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকব। সত্তুরে এক হতে পারলে কেন আবার জাতীয় প্রশ্নে আমরা এক হতে পারব না?
প্রসঙ্গ রাজনীতিটাই। আমরা রাজনীতি-প্রেমী।
পানের কেচ্ছাটা বলার অন্য কারনও আছে। পান দোকানীর নাম বশর। বেচারা শুধু পান সিগারেট বিক্রি করে। বয়স আঠার কি বিশ। একদিন দোকানে গিয়ে দেখি, দোকান বন্ধ।
পাশের দোকানীকে জিগ্যেস করি-
- বশর কই।
- আজকে রোড মার্চ, ওখানে গিয়েছে।
- নিজের ব্যবসা পাতি ছেড়ে ওখানে কি কাজ?
- আপনি বুঝলেন না। পান সিগারেট বিক্রি করে গোঠা দিনে পাবে ষাট সত্তর টাকা। আর দলের শো ডাউনে মাথা পিছু এক শত টাকা আর পেট ভরে খাওয়া, কম কি?
হিসাবটা আপাদমস্তক বুঝলাম।
রাজনীতির মহৌৎসব চলছে আমাদের দেশে। গরীব দেশের লোকেরা রাজনীতি কোথা হতে শিখে, ভাবতে ভাবতে আমার পান খাওয়ার খায়েসটা মরে গেল।
মোট কথা আমাদের দারিদ্রকে পুঁজি করে আমাদেরকে রাজনীতির বড়ি গেলানো হচ্ছে। তাই আমরা প্রতিটি ছোট বড় লোক ক্ষুদে অথবা বড় রাজনীতিবিদ। তর্ক চলবেই না বা কেন? ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শো ডাউন করে পাকিস্থানীদের বলেছিলেন, 'এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম'।
আর এখন শো ডাউন করি কি জন্য? কাকে মারার জন্য? এতকাল পর চিহ্নিত রাজাকার কয়জন হবে? হাতে গোনা দুই হাজার? নাকি আরো বেশী? যারা শো ডাউন করে তারা হয়ত বলতে পারবে।
Abraham Lincoln এর "Democracy of the people, by the people, for the people' সুত্রটি আমাদের দেশে নাকি প্রযোজ্য নয়।
দুষ্ট লোকের তাই বলে, 'Democracy off the people, buy the people, far the people'. এমন ব্যাখ্যা শুনে আমাদের দেশে গণতন্ত্রকে সন্দেহ হয়, আসলে কি যা চলছে তা গণতন্ত্র?
বুশের আমলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী Rumsfeld ২০০৪ সালের জুন মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা আমন্ত্রণে বাংলাদেশে আসেন। নানাদিক থেকে নানা আয়োজন, কি করে এই মুনিব দেশের কর্তাব্যক্তিটিকে খুশী করা যায়। বুঝিয়ে দেয়া হল, আমেরিকা আছে যেখানে আমরা আছি সেখানে।
Rumsfeld বাঙ্গালীর আতিথেয়তা দেখে মুগ্ধ হন। লোকটি এবার এক নূতন আবদার করে বসেন, শক্ত আবদার যেটার জন্য আমরা প্রস্তুত নই। Rumsfeld বলে বসেন-
- আমি রিক্সায় চড়ব।
সুন্দর নয়া রিক্সা জোগাড় হল। ব্রান্ড নিউ রিক্সা।
রিক্সা চালক ও জোগাড় হল। এই মুহূর্তে রিক্সাচালকের নামটি আমার মনে নাই। একটু একটু ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজী বলতে পারত। Rumsfeld প্রশ্ন করে -
- তোমার নামটি কি?
- স্যার আমার নাম ক ।
- কয় বছর রিক্সা চালাও?
- সাত বছর।
- দৈনিক আয় কত হয়?
- তিন শত টাকা। এই পাঁচ ডলারের মত স্যার।
- আর কি কর?
- স্যার রাজনীতি করি। বিভিন্ন মিটিং মিছিলে যাই। এই যেমন আপনাকে রিক্সায় তোলার চান্স পেয়েছি।
পলিটিকেল ভিত্তি না থাকলে এতদুর আসা কি সম্ভব স্যার?
সাংবাদিকের Rumsfeld কে জিগ্যাসা করে-
: What is your feeling riding on a Rikshaw?
(রিক্সায় চড়ে আপনার অনুভুতি কি)?
: Excellent. ( চমৎকার)
: What did you talk to Rakshawpuller?
(রিকশাচালকের সাথে কি কথা বলেছিলেন)?
: Amazing. I came to a conclusion that here everybody is concerned about politics.
(বেশ আনন্দদায়ক। আমি এই উপসংহারে এসেছি যে এখানে (এই দেশে)
প্রত্যেকে রাজনীতি সম্বন্ধে সজাগ)।
এই দেশের রিক্সাওয়ালা ভাল রাজনীতি করে বা বুঝে, এটা রামস্ফেল্ড বুঝতে পেরেছিলেন।
আমরা বাঙ্গালীরা সবাই রাজনীতিতে বেশ পটু। রাজনীতির তর্ক আমাদের বেশ পছন্দ।
হাতাহাতি, মারামারি প্রয়োজনে হত্যা আমাদের রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়েছে আমার। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রম মন্ত্রণালয়ে ভিসা প্রসেসিং এর কাজে নিয়োজিত ছিলাম। সেই সুবাদে পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষের সাথে কথা বলতে হয়েছে।
এক জার্মান এর সাথে আমার ভাল সম্পর্ক ছিল।
কথায় কথায় প্রসঙ্গ পলিটিক্স।
- গুড আফটারনুন মিঃ এলেন?
- গুড আফটারনুন, কেসেম (কাসেম)
- Is there any political party in your country?
- Why not. Five parties exist in our country. Democratic countries must have political parties.
- Is there any confrontation, I mean, is there any conflict among the parties?
- Hard effort to get the office, no conflict.
- In election if any party loses, do they adhere to their defeat? Do the loser welcome the winner?
- Ya, assume two teams in the field. Every team leaves no stone unturned to win. But every game has its two dimension, losing and winning. Whenever both teams fight in the field, no compromise there. When the match comes to an end, the players of both team join together in marketing, playing at cards, gosip. The criteria of political players is as same as soccer players.
কিন্তু আমাদের রাজনীতির বাড়াবাড়ি এত দুর গড়িয়েছে যে, সরকারের মন্ত্রীরা বলতে শুরু করেছে, জিয়াউর রহমান নাকি রাজাকার, কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রম এবং কাদের সিদ্দিকির মত বীর উত্তমেরা নাকি মুক্তিযোদ্ধা নয়।
বিচার কেন হয় নি যখন বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় ছিলেন? ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদরের বয়স কত ছিল? এখন বয়স কত হয়েছে? কেউ মরে গেছে, জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে গেছে অনেকে। অনেকে মজা করে বলে, " শালার রাজাকারেরা কোনদিন বুড়ো হয় না"। যাই হোক, এরা সমাজে এক বিশাল স্থান দখল করে আছে।
যেমন ছেলেমেয়ে, নাতি নাতনী, পৌত্র পৌত্রী নিয়ে একজনের ঔরশে হাজার জন হয়েছে। জনসমষ্টির এক উল্লেখযোগ্য অংশ এদের আত্মীয়। এদের মধ্য অনেক মেধাবী গর্বিত নাগরিক ও আছেন যারা দেশকে সর্বোত্তম সেবা দিয়ে আসছেন। অপরাধীকে সমর্থন করছি না। স্বাধীনতার শত্রুদের ঘৃণাই প্রাপ্য।
তাই বলে জাতীকে শতধা বিভক্ত করে লাভ কি? কেউ অন্ধ আওয়ামী লীগার, কেঊ অন্ধ বি এন পি কর্মী, কেঊ স্বাধীনতাবিরোধীদের সেই জামাত নামটি এখনো বুকে ধারন করে আছে। তেল, পানি, লোহা, কারো সাথে কারো মিল নাই। এভাবে দেশ চলতে পারে না। আর দশ বছর পর বয়সের ভারে হয়তঃ একটা রাজাকারও বেঁচে থাকবে না। রাজাকারেরাও তো বুড়ো হয়।
রাজাকার বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ, বি এন পি এর মধ্যে তো অন্তত হিংসাত্বক রাজনীতি পরিহার করা উচিৎ। তাও সুদুর পরাহত। অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের উপর দলগুলির আগ্রহ অত্যন্ত বেশী। প্রয়োজন বলতে য আছে তা হল নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা। নজরুলের কবিতাটুকু মনে পড়ে –
বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে তখনো আমরা রয়েছি বসে,
বিবি তালাকের ফতোয়া খুজি ফিকাহ ও হাদিস চষে।
সত্যই আমরা আসল সমস্যা বাদ দিয়ে বিবি তালাকের ফতোয়া নিয়ে ভীষণ ব্যস্থ। সত্যই অভাগা জাতি আমরা। আমরা বড়ই উগ্র জাত। বেশী বাড়াবাড়ি করতে ওস্তাদ। তিলকে তাল করি।
কাউকে কেউ সহ্য করতে পারি না। হিংসার রাজনীতিতে আমরা বড় বেশী পটু। বিরোধী দলের খুন ঝরাতে পারলে নিজেকে সফল মনে করি। কেউ কেউ বলেন, যারা নাকি মাছ খায়, তাদের স্বভাব চরিত্র নাকি হিংসুটে হয়। মাছ নাকি মাছ খেয়ে বাঁচে।
স্বজাতিই নাকি তাদের খাদ্য। বাঙ্গালি এই হিংসুটে চীজটিকে খায় বলে বাঙ্গালি ও হিংসুটে। কথাটি কটটুকু সত্য তা আমার জানা নেই। তবে জানি আমরা বড়ই হিংসুটে। বোধ হয় এজন্যই এ দেশ বরাবরই পরাধীন ছিল।
মোঘলেরা শাসন করেছে এ দেশকে। তারপর চলে গেল ইংরেজদের হাতে। তারপর গেল পাকিস্তানীদের হাতে। আর এখন? আপন ঘরে বন্দী। কই স্বাধীন হলাম? একটি পতাকা আর একখন্ড জমি পেলেই কি স্বাধীন হওয়া বুঝায়? আগে শত্রু ছিল বাইরে, আর এখন সবাই ঘরেই পরস্পরের বিভীষণ।
পাকিস্থানিরা আমাদের ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে। দুই লাখ মা বোনের শ্লীলতা হানি করেছে। বুক ভারী হয় সে কথায়, বুকের ঘা আবার যন্ত্রনা দেয়। আর স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর যদি নুতন হিসাব করি, জ্বালা আরো বেড়ে যায়। চল্লিশ বছরে আমরা নিজেরা কি নিজেদের লোককে কম হত্যা করেছি? জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরও ছাড়ি নাই।
এই জাতিই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। জেলের অভ্যান্তরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে। এই জাতিই মুক্তি যুদ্ধের অগ্রসৈনিক জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছে। আমরা নিজেরা নিজেদের সাথে লড়াই করে চল্লিশ বছরে কত লক্ষ হত্যা করেছি, তার পরিসংখ্যান কে দেবে? বিরোধী দলের হলে রাজপথে সাপ কুকুরের মত পিঠিয়ে হত্যা করতে আমাদের বুক কাঁপে না। প্রাচীনকালের ডাইনোসোর আর আমাদের মধ্যে তফাৎ কোথায়?
আর সংসদ? ওখানে তর্কের নামে যা হয়, মাথা হেট হয়ে আসে।
স্পীকার ও একদিন বলেছিলেন, "সংসদের বাইরে যাও, ওখানে শুরু কর"। জিয়া, কর্নেল অলি, কাদের সিদ্দিকি এরা যদি রাজাকার হয়, মুক্তিযোদ্ধা কে আছে আমারা জানি না।
খালেদা জিয়া সোনারগাঁও হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে গাইডিং বাজেট ঘোষনা করলে তার বিরুদ্ধে সরকারের শীর্ষ মহল থেকে যা মন্তব্য করা হয় তা সর্বকালের শেষ্ঠ গালিকেও হার মানায়। আমরা দুর্ভাগা জাতি। স্বাধীনতার স্বাদ আমরা নিতে জানি না।
বি এন পি যখন ক্ষমতায় তারা ও কথায় কাজে আওয়ামী লীগকে কম আঁচড় দেয় নাই। সংসদে তর্ক বিতর্ক চলবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তর্ককে ছাড়িয়ে যখন অশ্লীলতায় রূপ নেয়, তখন জাতি হিসাবে এ লজ্জা কোথায় রাখি?
প্রসঙ্গ যখন এসেছে, বলার লোভ সামলাতে পারছি না। শুনুন তাহলে -
আমি মধ্যপ্রাচ্যে জীবিকার তাগিদে অনেক বছর কাটিয়েছি। আবু ধাবীতে ছিলাম।
সেখানে বড় কোম্পানিতে যখনই একজন ইন্ডিয়ান উচ্চ পদ পায়, সে তদবির করে যেন অনেক ভারতীয় সে কোম্পানিতে চাকরী পায় এবং সফল ও হয়। তাদের বিশ্রী দেশপ্রেম দেখে হিংসে হয় আমার।
একজন Human Resourch Officer কে আমি ব্যক্তিগতভাবে জানতাম। যারা চাকুরীর জন্য আবেদন করত, সি ভি তে ভারতীয় থাকলেই হল। ভারতীয়দের সি ভি গুলো রেখে বাকী আবেদনপ্ত্রগুলে ছিঁড়ে ফেলত।
সে এক বিশ্রী দেশপ্রেম। তবে সুশ্রী দেশপ্রেমের ও অন্ত ছিল না তাদের।
আর আমাদের বাঙ্গালি যদি কোন কোম্পানীতে একটি ভাল পদ পায়, তার অহংকার দেখে কে? সেখানে যদি আর যারা ভাল পদে থাকে, সেসব বাঙ্গালিদের চাকুরীচুত করা যেন তার প্রধান কাজ হয়ে দাড়ায়। সে অন্য বাংগালীদের প্রতিদ্বন্ধি ভাবতে শুরু করে দেয়। অবশ্য কারন ও আছে।
কেউ যদি ছুটিতে আসে এবং তার পরিবর্তে সাময়িকভাবে সাহায্যকারী হিসেবে অন্য কোন বাঙ্গালীকে নিয়োগ দিয়ে আসে, ছুটি থেকে ফেরত এসে দেখবে তার চাকুরী শেষ। যাকে সাহায্য করেছে, সেই তার চাকুরী খতম করেছে। সে অনেক কাহিনী।
সেই কাঁকড়া বাঙ্গালীর কেচ্ছাটা মনে পড়ে যায়। বালতিতে দশ বারোটা জ্যন্ত কাঁকড়া রাখে এক জেলে।
কষ্ট করে এক কাঁকড়া বালতি বেয়ে উপরে উঠতে যায়, অমনি নীচের কাঁকড়া তাকে সব পা দিয়ে জড়িয়ে ধরে। খানিকটা উপরে উঠতেই ৩ নং কাঁকড়া ২ নং কাঁকড়াকে জড়িয়ে ধরে। অমনি ঝপ করে সব কাঁকড়াই বালতিতে পড়ে যায়। কেউ কাউকে ছাড়ে না। কেউ কাউকে উঠতে দেয় না।
অবশ্য এ কেচ্ছাটা আমার নয়, কোন এক বইতে পড়েছিলাম। আমরা ও সেই কাঁকড়া বাঙ্গালি, কেউ কাউকে উঠতে দিইনা।
আর শত্রু হলেই তো কথাই নাই। তার সবটাই দোষ। তার গুন বলতে কিছুই নেই।
দুঃখিত, না বলে পারছি না। ডঃ ইউনুচকে সারা দুনিয়া সম্মান করলেও আমরা অনেক পরনিন্দুক আছি, তাকে সুদখোর বলে আনন্দ পাই। দুনিয়া তাকে নোবেল শান্তি পুরুষ্কার দিলেও আমরা মামলা করে তার পরিশ্রমলব্ধ গ্রামীন ব্যাংক কেড়ে নিয়েছি। বাঙ্গালি নামটা একসময় গৌরবের ছিল। এখন কেন জানি এই নামটাতে পরশ্রীকাতরতার গন্ধ পাই।
আমরা সামনের স্বপ্ন দেখি না বলেই অতীতকে ধরে বাঁচতে চাই। বছরে চার পাঁচ দিন মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করলে চলে। কিন্তু তা নয়। পুরা মার্চ মাস জুড়ে টিভি চ্যানেলগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের উপর কসরত চলে। আগষ্ট মাস এলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ে।
পুরা মাস শোকগাঁথা শুনি। যা চার পাঁচ দিন হলেই হত। আর ডিসেম্বর মাস! বিজয়ের মাস। মুক্তিযুদ্ধের শ্রাদ্ধ করে ছাড়ে সব মিডিয়া। মুক্তিযুদ্ধকে কে শ্রদ্ধা না করে? বঙ্গবন্ধুকে কে অস্বীকার করে? স্বাধীনতার মহান সোপান রচনা করেছেন এই অকুতোভয়, হাজার বছরেরে শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী শেখ মুজিব।
৭ই মার্চের সেই ভাষণ যেন কাব্য। মন্ত্রমুগ্ধের মত মানুষ বেরিয়ে পড়েছে সেই ভাষণে। এই হ্যামিলনের বংশীবাদককে কে ইজ্জত না করে?
পাকিস্তানী হায়েনাদের বুলেটে ত্রিশ লক্ষ মানুষ প্রান দিয়েছে। পৃথিবীর অন্য জাতীর চেয়ে স্বাধীনতার জন্য আমরা বেশী মুল্য দিয়েছি। সবটাই ঠিক।
প্রশ্ন সেখনে নয়। কেন আমরা চার মাস (ফেব্রুয়ারী, মার্চ, আগষ্ট, ডিসেম্বর) মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে লাগাতার স্মরণ করব। শুরুতেই বলেছিলাম বিরিয়ানি সুস্বাদু বলেই যে এটা প্রতিদিন খেতে হবে এর কোন মানে নেই।
আমার এ লেখায় কেউ গোস্বা করলে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কোন দলের হয়ে লিখা বা কারো সাফাই গাওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়।
বঙ্গবন্ধুকে এখন আওয়ামী লীগ মনে করে তাদেরই একজন। মুক্তিযুদ্ধকে মনে করে তাদের বিজয়। এখানেই বিরোধটা। বঙ্গবন্ধু জাতির স্থপতি, ইসলামের নামে কয়েকটি দল ছাড়া স্বাধীনতার সময় দল মত নির্বিশেষে সকলেই তাকে সমর্থন করেছিল। বঙ্গবন্ধু সকল দলের কাছে প্রিয়ভাজন ছিলেন।
এইজন্যই তো কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, কুলি মজুর, জাতি উপজাতি, এ দল, সে দল সকলেই এই মহান বাঙ্গালিটির ভক্ত ছিল। বঙ্গবন্ধু আপন ঘরে যুদ্ধ করেন নাই। বর্তমান আওয়ামী লীগ তার ধারে কাছে ও নাই। এ দলটি শুধু বঙ্গবন্ধুকে ব্যবহার করে। আপন ঘরে সে সংগ্রাম করতে বেশী ভালবাসে।
শিকারী তার নিজের গোয়ালের গরু শিকার করে যেন নিজেকে পাহলোয়ান দাবী করছে। নিজের ঘরে বীর হয়ে কোন লাভ নেই। পারলে ফেলানী হত্যার প্রতিবাদ করে বীর হও। জাতীয় ইস্যুতে এই জাতিকে অবশ্যই এক হতে হবে। এক করার দায়িত্ব বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর।
তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। বঙ্গবন্ধু উদার ও সংগ্রামী ছিলেন। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামকে নিয়েছেন, উদারতাকে কতটুকু নিয়েছেন তা তিনিই ভাল বলতে পারবেন। তাকে বিরোধী দল কাবু করার সংগ্রাম বাদ দিয়ে জাতি গড়ার সংগ্রাম করতে হবে।
মুশকিলটা অন্য জায়গায়।
কেউ যদি আওয়ামী লীগের গঠনমূলক সমালোচনা করে, সে হয় রাজাকার, নাহয় স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি। এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একটু বেশী হলে সে রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ মানে বেদ, বাইবেল, হাদিস নয় যে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে বললেই গুরুতর অপরাধ হয়ে গেল। আওয়ামী লীগের গঠনমূলক সমালোচনা মানে সালমান রুশদীর 'স্যাটানিক ভারসাস' নয় যে অপরাধটা অমার্জনীয়।
এদেশ হিন্দু মসলমান সম্প্রীতির দেশ। এদেশে ভারতের গুজরাট ও আহমেদাবাদের মত দাঙ্গা হয় না। আমার ও অনেক হিন্দু বন্ধু আছে, যারা আমার বাড়িতে আসে। ছাত্রাবাস্থায় অনেক হিন্দু সহপাঠীর সাথে পুজা পার্বণে গিয়েছি। নজরুল আমার প্রিয় কবি, তার অসাম্প্রদায়িক উক্তিগুলি আমার হৃদয়ের একতারায় টুনটুন করে বাজে।
যেমন -
জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত জালিয়াত খেলছে জুয়া।
ছুঁলেই তোর জাত যাবে, জাত ছেলের হাতের নয়তো মোয়া।
তাই অন্য ধর্মালম্বিদের ছুঁলে আমার জাত যায় না। বলতে গেলে বেশ সখ্যতা আছে অনেকের সাথে। আমার শিক্ষকতা জীবনের কয়েকটা সহশিক্ষকের সাথে এখনো আলাপ হয়, বেশ মজা করি।
তাই আলবৎ আমি রাজাকার নই। আমি মনে প্রাণে বাঙ্গালি, সব সরকারের সমালোচক। বলছিলাম এদেশ সম্প্রীতির দেশ। আওয়ামি লীগে কিছু টিকি আছে, বিরোধী দলে কিছু 'দাড়ি' আছে। টিকিরা আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দল করবে না।
'দাড়ি' রা ধর্মীয় দল ছাড়া অন্য দল করবে না। এখানে সমস্যাটা জটলা পাকায়। বলছি যখন বিদ্রোহী কবি নজরুলের আর একটি উক্তি বলি -
"নারায়নের গদা ও আল্লাহ্র তরবারিতে টুকাটুকি হয় না, টুকাটুকি হয় দাড়ি ও টিকির মধ্যে"।
এদেশ কখনো ভারত হবে না এটা কট্টর টিকিদের কাছে দুঃসংবাদ, এদেশ কখনো পাকিস্তান হবে না এটা কট্টর দাড়িদের কাছে ও দুঃসংবাদ। তাই শান্তিপূর্ণভাবে জাতি ধর্ম, দল এক কাতারে এসে এদেশকে আমাদের গড়তে হবে।
শুধু বঙ্গবন্ধুর মত একজন নেতা চাই।
ধর্ম বললেই অনেকের গায়ে জ্বালা ধরে। ধর্ম মানুষকে আদর্শবান হতে শিখায়। তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের অনুকরণ করে অনেকে মিনি-বুদ্ধিজীবি সাজে। ব্যস, হয়ে গেল, আধুনিক মানুষ হয়ে গেল।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কথা অনেকেই বলে। কি হয়েছে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে? ভারতের বিজেপি, জার্মানির ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি, মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড, জায়োনিষ্ট ইসরায়েলের জুয়িশ ন্যাশনাল ফ্রন্ট, ন্যাশনাল রিলিজিয়াস পার্টি, দ্য জুয়িশ হোম। ভারতের শিব সেনা,অল ইন্ডিয়া ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি, জামাতে ইসলামী হিন্দ, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ, অল ইন্ডিয়া মুসলিম মজলিস এ সবই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। ওই সব দেশে সিক্যুলার দলগুলি ধর্মভিত্তিক ডানপন্থী দলগুলোকে মেনে নিয়েছে। আর আমরা? ইসলামী দল বললেই অনেকের গাত্রদাহ হয়।
ইসলামের নামে সন্ত্রাসকে আমরা দমন করব, তাতে দোষ নেই। ইসলামের নামে ডজন ডজন দল কেন তাতেও আমাদের প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক। ইসলামের নামে এই দেশে কোন মডারেট দল থাকলে দোষের কি তা ভেবে পাই না।
ইউরোপে যে দলগুলোর নামের পাশে ডেমোক্রেট আছে তারা অঘোষিত ধর্মাশ্রিত দল। তারা কমিউনিষ্ট নয়, নাস্থিক নয়, খাটি খৃষ্টান।
নির্বাচনের আগে পরে তারা ভাটিক্যান সিটিতে গিয়ে সাক্ষাৎ ধর্মপ্রভু পোপের আশীর্বাদপুষ্ট হন। বুশ জুনিয়র রোমে গিয়ে পোপ জন পলের সাথে দেখা করে খাটি খৃষ্টান হওয়ার কঠোর দীক্ষা নেন। ওবামা ভেনেডিক্ট সিক্সটিন এর দোয়া নেন।
আমাদের দেশের ধর্মীয় দলগুলোর উপর বামপন্থী, তথাকথিত কিছু সুশীল সমাজ, বুর্জোয়া কিছু রাজনীতিজীবিদের শ্যেন দৃষ্টি পড়েছে। তাদের দেখাদেখি আমাদের যুবসমাজের অনেকেই পথভ্রষ্ট হচ্ছে।
কথায় মনে হচ্ছে, ধর্মীয় দল যেন নোংরা, অস্পৃশ্য, বংকিম চন্দ্রের যবন। ইনু, রাশেদ খান মেনন, দিলীপ বড়ুয়ার বামঘেষা, কমিউনিজম মিশ্রিত দলগুলো কি ইসলামী দলের চেয়ে বেশ ভাল? দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে এই দলগুলো নিষিদ্ধ ছিল। দেশদ্রোহিতার অভিযোগে কয়েক হাজার কট্টর কমিউনিস্ট বান্দার শাস্থিও হয়েছিল।
কম্যুনিস্ট থেকে কি ইসলামী দল ভাল নয়? ইসলামের প্রচার ও প্রসার তরবারি দিয়ে হয় নাই। শান্তির সুশীতল ছায়া মধুময় বলে লোকে দলে দলে ইসলাম কবুল করেছে এবং আজো করছে।
মাত্র ১৪০০ বছরের এই ধর্ম আজ বিশ্বের দুই শত কোঠি মানুষের ধর্ম। সুতরাং এই ধর্মের নামে দল থাকতেই পারে। ইসলামের নামে দল থাকবে তবে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।