আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শালার রাজনীতি

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! শালার রাজনীতি আমি গফুর, একজন অতি সাধারন মানুষ। আমার শালা জনি একজন ডাকসাইটে রাজনীতিবিদ। আমি একটি প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতা করি। প্রাইভেট স্কুলটির মালিক চান্দু। একসময় লোকালে হাইজ্যাক করত এই কালু।

হাইজ্যাকিং-য়ে প্রচন্ড শুনাম করায় রাজনৈতিক দলে তার ডাক পড়ল। দলের একটি সম্মানজনক পদ পেয়ে গেল: ক্যাডার। লোকে যখন তাকে প্রশ্ন করত ভাই কি করেন? সগর্ব উত্তর দিত চান্দু, "ক্যাডার"। এলাকার পরহেজগার মিনহাজ মুরুব্বী অবশ্য ভিন্ন কথা বলত, "একসময় ওগো মতো লোকেরে গুন্ডা কইত, সবাই থুথু দিত, এহন কয় ক্যাডার। সবাই সমীহ করে"।

ঐ মুরুব্বীর কথায় অবশ্য কেউ কান দিতনা। ব্যাকডেটেড বুড়া মানুষ, কথার আগা-মাথা আছে কোন? সেই চান্দু কালক্রমে নেতা হয়ে চাঁন মিয়া উপাধী পেল। রাজনীতির আশ্চর্য্য প্রদীপ পেয়ে, রাতারাতি বড়লোক হয়ে গেল। ব্যাস অন্যান্য ব্যবসার পাশাপাশি কিছু টাকা ইনভেস্ট করে ফেলল প্রাইভেট স্কুলে। নেতার পাশাপাশি চাঁন মিয়া স্কুলেরও তিনি সভাপতি।

ভালো ছাত্র বলে এলাকায় একসময় শুনাম ছিল আমার। তাই চাঁন মিয়ার ছোট ভাই সুরুয মিয়া হেডমাস্টার আমাকে শিক্ষকতার চাকরীটা দিয়েই ফেলল। তবে শুরুতেই শর্ত দিয়ে ফেলল, "সৎভাবে শিক্ষকতা করেবেন, যাতে ভাইজানের সম্মান রক্ষা হয়"। মাথা ঝুঁকিয়ে সা্ঁয জানিয়েছিলাম, " অবশ্যই আপনার ভাই মানী ব্যক্তি, তার শুনাম রক্ষা করা তো আমাদের সবার দায়িত্ব"। একটি চাকরী, চাকরীর বাঁধা বেতন, আর বৌ-এর অসন্তোষ, এই হল আমার সারা জীবনের শ্রম-সাধনার পুরষ্কার।

আমার শালা জনি কিন্তু আমার মত বোকা ছিল না। কথায় কথায় বলত, "পড়ালেখা করলে তো দুলাভাইয়ের মত অবস্থা হবে। আমি চাঁন মিয়ার মত রাজনীতিবিদ হব। " তাই হলো, প্রথমে ছিনতাই, তারপর চাঁদাবাজি, তারপর ক্যাডার, এরপর নেতা। আমাকে বলে, "দুলাভাই বোকা, বোকাই রয়ে গেলেন।

যদি রাজনীতি করতেন, তবে তো আপনার এই করুণ অবস্থা হতোনা। এই দেখেন, আমার কি নাই? টাকা, ক্ষমতা, সম্মান সবই আছে। আমি জনপ্রতিনীধি" আমি বললাম, "তোমাদের রাজনীতির গুরুত্ব আমি বুঝিনা শ্যালক। " ঃ আরে বলেন কি? এই পৃথিবীর সবই তো রাজনীতি। ঃ যেমন? ঃ এই যে আপনি শ্রেণীকক্ষে যখন পড়ান এটা রাজনীতি।

সেখানে আপনি নেতা আর ছাত্ররা কর্মী। ঃ তারপর? ঃ বাজারে যখন আপনি কেনাকাটা করতে যান, সেটাও রাজনীতি। ঃ কি রকম? ঃ ঐ যে কেনাকাটা করতে গিয়ে আপনাকে দর কষাকষি করতে হয়, এই দর কষাকষি-ই তো রাজনীতির বৈশিষ্ট্য। ঃ আরও কিছু উদাহরণ দাও। ঃ এই যে ঘরে টাকা-পয়সা নেই বলে আপা আপনার উপর সবসময় রেগে টং হয়ে থাকে।

তখন আপনাকে নানাভাবে তাকে শান্ত করতে হয়। এটাও রাজনীতি। হঠাৎ করে দুটি কুকুরকে আদিম ক্রীড়ায় মত্ত হতে দেখলাম। একেবারে ভরা ভাদ্রের আবেগ। আমি প্রশ্ন করাম, ঃ ঐ ক্রীড়াটিও তো রাজনীতি, তাইনা? ঃ ঠিক ধরেছেন দুলাভাই।

ওটা রাজনীতির একটা বড় বৈশিষ্ট্য। ঃ ও আচ্ছা আচ্ছা, এতদিনে বুঝলাম। তা তোমাকে একটা পুরাতন কৌতুক বলি শোন। ঃ বলেন দুলাভাই, শিক্ষকরা আর কিছু না পারুক, কথা গুছিয়ে বলতে পারে। শুনতে ভালোই লাগে।

আমি শুরু করলাম। ঃ এক গ্রামে একবার এক লোকের আগমন হলো। বিরাট বড় চালাক। গ্রামে সে একটা টাওয়ার তৈরী করল, অনেক অনেক উঁচু। সবাইকে বলল, "ভাইসব আপনারা গরীব মানুষ আজমীর শরীফ যাওয়ার সামর্থ্য আপনাদের নাই, তাই আপনাদের জন্য আমার এই উপহার।

এই টাওয়ারের উপর উঠলে, আজমীর শরীফ দেখা যায়। আপনারা এখন উপর উঠে দেখুন। তবে একটা কথা, যে টাওয়ারের উপর উঠে, আজমীর শরীফ দেখতে পারবে না, তার জন্মের দোষ আছে। " প্রথমেই টাওয়ার বেয়ে উঠল গ্রামের মাতব্বর, উপরে উঠে দেখে সুদূর দিগন্ত পর্যন্ত ধান ক্ষেত ছাড়া আর কিছুই দেখা যায়না। তার নিজের জন্ম বৃত্তান্ত বুঝতে পেরে তার খুবই খারাপ লাগলো।

কিন্তু এই কথা তো আর সবাইকে বলা যাবেনা। তাহলে তার মাতব্বরীও চলে যেতে পারে। তাই নীচে নেমে সবাইকে বলল যে, উপরে উঠে জমকালো আজমীর শরীফ সে দেখেছে। এরপর উঠল কালু ব্যাপারী। তারও একই অবস্থা, ধানক্ষেত ছাড়া সে আর কিছুই দেখতে পেলনা।

কিন্তু নীচে নেমে সে ঠিকই বলল যে, মাতব্বর সাহেবের মত সেও আজমীর শরীফ দেখেছে। এরপর জোয়ান করিম, কৃষক রহিম, মুদি সেন্টু, এক এক করে সবাই উঠছে আর নামছে। আর অকপটে সবাই বলে যাচ্ছে আজমীর শরীফ দেখার কাহীনি। এই ওঠানামা আর মিথ্যে বলা এখনও চলছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।