ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে গতকাল পর্যন্ত ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশুদের মৃতের সংখ্যা মোট ২৫ এ দাঁড়ালো। গত দুই মাসে প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে অসুস্থ চিকিৎসাধীন শুধু শিশু হাসপাতালেই ১৮ জন শিশু মারা গেছে বলে জানা গেছে।
এর আগেও ১৯৯২ সালে প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ৩৩৯ জন শিশুর মৃত্যু ঘটনা ঘটে (যদিও প্রকৃত আরো বহু মৃত্যু আড়ালেই রয়ে যায়)। কিন্তু কি কারণে প্যারাসিটামলে বিষক্রিয়া ঘটছে? জানা যায়, অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা মুনাফার জন্য ট্যানারির কেমিক্যাল ব্যবহার করে প্যারাসিটামল তৈরি করে।
প্যারাসিটামল ওষুধ খেয়ে হাজার হাজার শিশুর মৃত্যুর পরও ট্যানারির বিষাক্ত কেমিক্যাল সংমিশ্রণে ওষুধ তৈরি বন্ধ হয়নি।
জানা যায়, বিষাক্ত ওষুধ তৈরি করে বাজারজাত করায় ১৯৯২ সালে জড়িত ৫টি ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। শুধুমাত্র কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল ও মালিককে লঘুদণ্ড দেয়া হয়। এর মধ্যে একটি কোম্পানির নাম ও মালিক পরিবর্তন করে পুনরায় ওষুধ তৈরির অনুমোদন পেয়েছে।
১৯৯২ সালে ক্ষতিকর প্যারাসিটামল সিরাপের পরীক্ষায় ট্যানারিতে ব্যবহৃত বিষাক্ত কেমিক্যাল ( ইথালিন ও ডাই-ইথালিন গ্লাইকোল থাকার প্রমাণ পায়। এবার প্যারাসিটামল ও ভিটামিন সিরাপের মধ্যে একই ধরনের বিষাক্ত ইথালিন ও ডাই-ইথালিন গ্লাইকোল রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন।
চিকিৎসকদের মতে দুইটি হাসপাতালে প্যারাসিটামল খেয়ে অসুস্থ হয়ে আসা শিশুদের মধ্যে ২৩ জনের প্রাণহানির ঘটনা ধরা পড়লেও এই সিরাপ খেয়ে আরো অসংখ্য শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ঐ সকল শিশুকে হাসপাতাল পর্যন্ত নেয়ার সুযোগ অভিভাবকরা পাননি বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান। বিষাক্ত, নিম্নমান ও ভেজাল ওষুধ খেয়ে এ দেশে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাটি সহজ বিষয় হয়ে পড়েছে। বিষাক্ত ওষুধের মার্কেট মূলত গ্রামাঞ্চল। যেখানে মানুষের সচেতনতা দূর্বল।
ফলে নিম্নমানের ওষুধের কারণে মৃত্যু ঘটলেও সেসব ঘটনা আড়ালেই রয়ে যায়।
ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রীড ফার্মার উৎপাদিত প্যারাসিটামল ও ভিটামিন সিরাপ মহাখালী ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে কখনও গুণগত মান পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়নি। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, উক্ত কোম্পানির ওষুধ তিনি কখনও এই ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করছেন কিনা তাও তার মনে পড়ে না।
বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণ
জানা যায়, প্যারাসিটামল কিংবা অন্যান্য সিরাপ ও সাসপেনশন কেমিক্যাল প্রোপাইলিন গ্লাইকোল দ্রবীভূত করার জন্য ব্যবহার করার কথা। এই কেমিক্যাল স্বাস্থ্যের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়।
প্রোপাইলিন গ্লাইকোল এক লিটারের দাম ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা। তবে এর বিকল্প হিসেবে ট্যানারি ডাই-ইথালিন গ্লাইকোল ব্যবহার করা হয়। যার দাম ২০০ টাকা লিটার। নিম্নমান ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা অধিক মুনাফার লোভে কমদামের এ বিষাক্ত উপাদান ওষুধে মেশাচ্ছে। যার প্রতিক্রিয়ায় শিশুদের মৃত্যু হচ্ছে বলে জানা যায়।
বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ
প্যারাসিটামল সিরাপ তৈরিসহ নিম্নমানের ওষুধ তৈরির অভিযোগে গত বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নন্দনপুরস্থ রীড ফার্মা লি.-এর কারখানা সীলগালা করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একটি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্যারাসিটামলের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত দায়ী কাউকে গ্রেপ্তার করার খবর জানা যায়নি।
চীনের উদাহরণ
চীনে কিছুদিন আগে গুড়োদুধে বিষা্ক্ত উপাদান ধরা পড়ে।
এ কারণে চীনে ৬ জন শিশু মারা যায়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, আমেরিকা সহ পৃথিবীর বহু দেশ চীন থেকে দুধ ও দুগ্ধজাত সামগ্রী আমদানি বন্ধ করে দেয়। চীন সরকার সে সময় নিম্নমানের খাবারের কারণ অনুসন্ধানে নামে। চীন সরকার সে সময় সরকারের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ বিভাগের প্রধান সহ আরো কয়েকজনকে দায়ী করে। বিচারে ফুড অ্যান্ড ড্রাগের প্রধান ব্যক্তির যাবজ্জীবন সহ দুজনের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
বাকি ১৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
বিবিসির সংবাদটি দেখুন এখানে:
Click This Link
আরো দেখুন
http://www.msnbc.msn.com/id/28787126/
Click This Link
--------------------------------------------------------------------------------
১৯৯২ সালে আমাদের দেশে ৩৩৯ জন শিশু মৃত্যুর কারণ বিষাক্ত প্যারাসিটামল ওষুধ খেয়ে হয়েছিল বলে জানা যায়। যদিও সে সময় প্রকৃত মৃত্যুর পরিমাণ নিশ্চিতভাবে অনেক বেশী ছিল। যারা এজন্য দায়ী তাদের বিচার হয়নি বললেই চলে। সে সময় দায়ীদের সঠিক বিচার করা হলে এখন নিশ্চয়ই আর এ ঘটনা ঘটতো না।
--------------------------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক সহ বিভিন্ন পত্রিকা ও ওয়েবসাইট
ছবি: চীনে বিষাক্ত গুড়ো দুধের জন্য বিচারের সম্মুখিন ব্যক্তি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।