একজন অলস মানুষ আমি
সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দরে বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে ৭৪ গুণ বেশি কাজ হবে। এ দাবি করেছেন গভীর সমুদ্র বন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপিত হলে ২০২০ সাল নাগাদ বছরে ৭ কোটি ৪১ লাখ টন কনটেইনার ওঠানামা করা যাবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন কনটেইনার ওঠানামা হয়। জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক কনসালটেন্টস ইন্টারন্যাশনালের সমন্বয়ক কে এম আহমেদ বুধবার বিডিনিউজকে এ কথা বলেন।
সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দরের মূল পরিকল্পনা অনুসারে, ২০৫৫ সাল নাগাদ এ বন্দরে ৩২ কোটি ৫২ লাখ মেট্রিক টন কনটেইনার ওঠানামা করা যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিয়কায়ন করলেও বছরে মাত্র ২০ লাখ মেট্রিক টন কনটেইনার ওঠানামা করা যাবে বলে মনে করেন কে এম আহমেদ। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে বিশ্বের মাত্র ১৮ ভাগ জাহাজ ঢুকতে পারে। কারণ কর্ণফুলী নদীর গভীরতা তেমন বেশি নয়। তবে সোনাদিয়ায় বিশ্বের ৮০ থেকে ৯০ ভাগ জাহাজই ভিড়তে পারবে।
কারণ এখানে গভীরতা কোনও সমস্যা নয়। সোনাদিয়া বন্দর নির্মাণ সম্পন্ন হলে পণ্য আমদানি-রপ্তানির খরচও কমে আসবে দাবি করে কে এম আহমেদ বলেন, বর্তমানে আমাদের সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার পোর্ট কালাং ব্যবহার করতে হয়। সেখান থেকে ফিডার ভ্যাসেলে করে পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে আনতে বা পাঠাতে হয়। এ কারণে পোশাক শিল্পের ৪০ শতাংশ পণ্য বিমানে পাঠানো হয়। এতে রপ্তানি ব্যয়ও বেড়ে যায়।
গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের জন্য সোনাদিয়া দ্বীপকে বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে কে আহমেদ বলেন, প্রথমে আটটি স্থানের কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি কারণে সোনাদিয়াকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পানির গভীরতা। এখানকার ৮০ ভাগ জমি খাস। মাত্র ৫৫টি বাড়ি স্থানান্তর করতে হবে, জনবসতি কম। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের তেমন ক্ষতি হবে না।
সমুদ্র বন্দর স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনাদিয়ায় ২২ হেক্টর জমিতে এ বন্দর নির্মাণ করা হবে। মোট তিনটি মেয়াদে নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যায়ে পাঁচটি আন্তর্জাতিক ও চারটি সাধারণ কার্গো জেটি নির্মাণ করে বন্দরে কনটেইনার ওঠানামার কাজ শুরু হয়ে যাবে। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ৯টি আন্তর্জাতিক ও ৬টি সাধারণ কার্গো জেটি নির্মাণ করা হবে।
ভবিষ্য চাহিদা বিবেচনা করে মূল পরিকল্পনা অনুসারে ২০৫৫ সাল নাগাদ আরও জেটি নির্মাণ করা হবে। ২০৫৫ সাল পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ করতে মোট ব্যয় হয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ে ব্যয় করা হবে ১৩ হাজার কোটি। দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যয় হবে ২৬ হাজার কোটি টাকা। এ বন্দরে ১৪ থেকে ১৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোস্ত ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ঢুকতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ৪০ কিলোমিটার সড়কপথ ও ৪০ কিলোমিটার রেল পথ স্থাপন করতে হবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২ কোটি ডলার ব্যয়ে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হবে। এ বন্দরের বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১০০ মেগাওয়াট।
এ জন্য বিদ্যু কেন্দ্র স্থ্পনে ব্যয় হবে ১৬ কোটি ডলার। সোনাদিয়া ছাড়াও বাগেরহাটের পশুর নদীর আকরাম পয়েন্ট, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, কক্সবাজারের এলিফ্যান্ট পয়েন্ট, মহেশখালী চ্যানেল, কুতুবদিয়া চ্যানেল, কুতুবদিয়া পয়েন্ট ও চট্টগ্রামের মিডল দ্বীপে সমুদ্রবন্দর স্থাপনের বিবেচনা করা হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনাদিয়ায় সমুদ্র বন্দর স্থাপন করা হলে এটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গেটওয়ে হিসাবে কাজ করবে। বন্দর স্থাপনে পরিবেশের ওপর প্রভাব সম্পর্কে বলা হয়েছে সমুদ্রের পানি ছাড়া ভৌত সম্পদের তেমন ক্ষতি হবে না। মাছ ও পাখি আশপাশের এলাকায় চলে যাবে।
অন্য স্থানে বনায়ন করে ম্যানগ্রোভ বনের ক্ষতি মিটিয়ে নেওয়া হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।