ফোন ধরল শহীদ। নোয়াখালীর ছেলে। কদিন হল ঢাকায় এসেছে। অতটা ধাতস্থ হয়ে উঠতে পারেনি নতুন জীবনটাতে। এলাকায় তার যথেষ্ট নাম ডাক ছিল মাস্তানীতে।
সর্বশেষ একটি ফুটবল খেলায় গোলকারীর ভুড়ি নামিয়ে সে এখন ঢাকায়। তার বসেরা সব মার্ডার কেসের আসামী। শুনেছে তাদেরও বস আছে যাকে নাকি মাঝে মাঝে টেলিভিশনেও দেখা যায়। এই অপারেশনের পর থেকে তার বসদের দেখে সে বুঝতে পেরেছে তারা ভীষণ সমস্যায় পড়েছে। তার আপাতত কাজ ফোন ডিল করা।
সোবহান: হ্যালো, আপনে কেডা ভাই?
শহীদ: হ্যালো, আন্নে কন?
সোবহান: ভাই, মেমসাবের পাসপুট আমার ভাইগনায় কুড়ায়া পাইছে। আপনে কই থাকেন? আপনের ঝামেলা বুইঝ্যা লন। আমরা গরীব মানুষ। দুই চাইর পয়সা দিলে গরীব মানুষ খুশি অয়। এই আর কি!
শহীদ: অ্যাঁ, তোয়ারে কইছে! এক্ক থাবড়ে কানের লতি হাডাইয়ালাইউম।
সোজামতন জিনিস দি যাইবা। ঠিকানা কইয়ের। বরাবর চলি আইবা।
সোবহান নড়েচড়ে বসল। বুঝতে পারল সতর্ক হতে হবে।
ঘটনার এ পর্যায়ে শহীদের কাছ থেকে ফোন নিয়ে নিল তার বস।
বস: আপনি এখন কোথায়?
সোবহান: স্যার, আমি ছোডো মানুষ। মাফ কইরা দিয়েন, কি কইতে কি কই! আমি জানি এই পাসপুটের দাম বহুত। এইডা সহ আমার ভাইগনা যদি পুলিশের কাছে যায়, তয় বুঝতেই পারতাছেন।
বস: আপনাকে যা বলি শোনার চেষ্টা করুন।
নিজেকে বিপদে ফেলবেন না। আপনি কোথায় আছেন বলেন। আমার গাড়ী যাবে। জিনিসটা দিয়ে দিবেন। আর একটা কথা আপনার ভাইগনাকে সাবধান থাকতে বলবেন।
পুলিশের আশেপাশে যেন না ঘেঁষে, তাহলে কিন্তু...
সব ঠিক ঠাক এগুচ্ছিল। সুন্দর একটা ডিল হয়ে যেতে পারত। হঠাৎ মহিলাটির চিৎকার শোনা গেল। সাথে সাথে পলক পড়ল সাবিনার। সে বলল সোবহান ভাই, 'ফুন কাডেন'।
সোবহান মিয়ার হাত থেকে পাসপোর্ট নিয়ে সে হাঁটতে শুরু করল। টুনুও এল তার সাথে সাথে। সোবহান মিয়াও এল ছুটে। সে বারবার বোঝাতে চেষ্টা করল পাসপোর্টটা তাকে দিয়ে দিতে।
সাবিনা বলল সে পুলিশের কাছে যাবে এবং সবিস্তারে সব খুলে বলবে।
ওই মহিলাকে পুলিশ উদ্ধার করুক। ওই মহিলাটির নিশ্চয়ই তার দেশে বাচ্চা আছে, স্বামী আছে। হয়ত এ দেশেই আছে। তাদের জন্য তার মন কেমন করে উঠল। সোবহান বোঝাতে চেষ্টা করছে, পুলিশ খুবই খারাপ জিনিস।
বড়জোর এই পাসপোর্ট পুলিশ নেবে এবং তখনই তা আবার বিক্রি করে দেবে ওই দলের কাছে। শুধু শুধু মাঝখান থেকে কিছু টাকা পাওয়ার যে সম্ভাবনাটুকু তৈ্রী হয়েছিল তা নষ্ট হয়ে যাবে।
সাবিনা নিজেও জানে, পুলিশ কতটা খারাপ। বহুবার হেনস্থা হতে হয়েছে এদের কাছে, একবার তো...থাক মনে করবে না সে এখন ওসব। সে তার বিবেকের সাথে যুদ্ধ করে কোনমতেই সোবহানের সাথে একমত হতে পারল না।
সে ছুটল পুলিশ স্টেশনের দিকে।
তারা তিনজনই বসে আছে থানার সামনে, ফ্লোরে। টুনু কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে সোবহান লোকটা অতটা খারাপ নয়, তাই এখন তার সাথে ঘেঁষে আছে।
টুনু: বু, ক্ষুধা লাগছে।
সাবিনা: আহারে! ক্ষুধা লাগছে? এত ক্ষুধা লাগে কেন? আমি বাঁচি না মাইনষে্র দুঃখে আর হের খালি খাই খাই।
তারপর সে গিয়ে তিনজনের জন্য তিন কোণকে করে চানাচুর মুড়ি নিয়ে এলো। বেশ মজা করে চানাচুর মুড়ি খাচ্ছে। তাদের দেখে এখন কেউ বুঝতে পারবে না তারা একটি আন্তর্জাতিক কিডন্যাপিং এর ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছে।
অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখার পর তাদের ডাকা হল। থানার দারোগা মকবুল সাহেব ওদের দেখেই ভ্রু কুঁচকালেন।
মকবুল: কি চাই?
সবিনা: আপনের লগে একটু কথা কইতাম।
মকবুল মিয়া ভীষণ পান খান। তিনি ঘরোয়া আড্ডায় খুবই আমুদে।
সাবিনার কাছে ঘটনা শোনার সাথে সাথেই সোজা হয়ে বসলেন। এই খবরটি তার জানা।
শুধু তার নয়, প্রায় সব পুলিশ অফিসারই এইটা জানে। উপরওয়ালাদের তেরটা বেজে গেছে এই ঘটনার পর। তিনি তার পানের কেস বের করে একটা পান নিলেন। অমনি সোবহান মিয়া পান চেয়ে বসলেন। কিছুক্ষণ ইতস্তত করার পর মকবুল সাহেব একটি পান দিলেন।
তিনি তাদের দিয়ে জিডি করালেন এবং পাসপোর্টসহ সব নিলেন। পিয়নকে বললেন অদের জন্য নাস্তা আনতে আর সোবহান মিয়াকে বললেন তার মোবাইল থেকে ওদের কল করতে। সোবহান মিয়া এবার বেশ ঘাঁবড়ে গেল।
ঠিক তখনই সাবিনা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।