আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবজাব লেখা

তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে।

স্কুল পড়ুয়াদের আজকে শেষ দিন। আজ রেজাল্ট দিবে। হয়তো আজকেই অনেকে ক্যাম্পিং অথবা অন্য কোথাও ঘুরতে বের হয়ে যাবে। সবার চোখে-মুখে অনেক আনন্দ।

কারো কারো আযাবের শুরু। কিছু কিছু স্টেটে আগেই ছুটি শুরু হয়েছে। রাস্তাঘাটে কয়েকদিন থেকে পিচ্চিদের দেখা পাই। হয়ত অন্য জায়গা থেকে এসেছে। গত কয়েকদিন থেকে ছোটবোন মোটামুটি দৌড়ের উপর রাখতেছে।

ছুটিতে কোথায় যাওয়া যায় সেই চিন্তায় উনার ঘুম হারাম। এদিকে বাসার সবাই দায়িত্ব আমার উপর দিয়ে উদাও। আমিও চান্সে ভাবের উপর আছি। বেশি কিছু বল্লে বলি অফিসের কাজে খুব ব্যস্ত। মাঝে মাঝে উনাদের সামনে স্পেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডে ফোন করে জিঞ্জেস করি ছুটিতে আসবো না কি? আত্মীয়, বন্ধুরা আসতে বলে।

কিন্তু যখনই জিঞ্জেস করি দেখার কি আছে। বলে সেটা তো আসলে একসাথে দেখবো। মনে মনে বলি, আমার ছুটি ২/৩দিনের। আর আমি আসলে তো নিজেই খুজে বিভিন্ন জায়গা দেখতে পারবো। তাহলে তোমাদের বলার দরকার কি? আত্মীয়স্বজন থাকে এইসব জায়গায় ঘুরতে যেতে আমার পছন্দ না।

নিজের ইচ্ছেমতো কিছু করা যাবে না। আত্মীয়ের বাসায় উঠলে না ঘুমিয়ে শান্তি, না খেয়ে শান্তি, না টয়লেটে শান্তি । কোথাও ঘুরতে গেলে হোটেলে থাকাটাই আমার পছন্দ। নিজের ইচ্ছেমতো ঘুরাঘুরি করা, ঘুমানো, খাওয়া সবই হয়। খরচ যদিও একটু বেশী পড়ে স্কুল বন্ধ হলে রাতের ঘুম মোটামুটি কষ্টের।

গরমে জানালা খুলে ঘুমানো দায়। টিনএজাররা যারা কোথাও বেড়াতে যায় নাই অনেক রাত পর্যন্ত রাস্তায় আড্ডা, গান শোনা চালিয়ে যান। পরের দিনের স্কুলের চিন্তা নেই। এদিকে চাকরীজীবিদের অবস্হা কাহিল দেশে স্কুলে গ্রীষ্মের বন্ধ রমযানের সাথেই পেয়েছিলাম। অবশ্য খুব একটা বেশী পাইনি।

তারপরও একটু একটু মনে আছে একবার স্কুল ছুটির শেষদিন টাকা তুলে শিক্ষকদের মিষ্টি খাইয়েছিলাম। গতকাল থেকে ছোটবোন কানের কাছে আওয়াজ দিতেছিলেন উনার স্কুলে পার্টি আছে। আমি অফিসে যাওয়ার আগে উনাকে স্কুলে নামিয়ে দিতে। আমার অফিস আর উনার স্কুল বিপরীতমুখী অবস্হানে। উনিও সাধারনত বলেন না।

আমি অফিসের উদ্যেশ্যে অনেক সকালে বের হই। তখন উনাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিয়ে যাই। না হলে উনি স্কুল ফাকি দিবেন। আজ উনার সাথে অনেকগুলো কোলা, ড্রিংস , আরো কিসব হাবিজাবি জিনিস আছে। সকাল হলেই কিভাবে যতো তাড়াতাড়ি অফিসে আসা যায় সেই চিন্তায় মোটামুটি দৌড়ের উপর।

কিছু করার নেই দেখে বল্লাম ঠিক আছে। সাথে সাথে উনার আরেকটি রিকোয়েস্ট, সাথে কি আমার বান্ধবী (পাশের বিল্ডিংয়ের) যেতে পারবে? বল্লাম কি আর করার। পারলে আরো কয়েকজনকে বলো। গাড়িতে তো জায়গা আছেই। বল্লাম, তবে যদি সাজতে গিয়ে দেরী করো তাহলে আমি চলে যাবো।

এইটা মনে হয় জেনেটিকেল। এই পিচ্চি বয়সে সাজতে যে সময় লাগায়। ভবিষ্যত তো পুরো ফকফকা। ঝাড়ি দেওয়ায় কাজ হয়েছে। আজ উনাকে ঘুম থেকে জাগাতে হয়নি।

নিজে নিজে উঠে ড্রেসআপ করে নাস্তার টেবিলে এসে উনার হাজিরা দিলেন। বল্লেন, দেখেছো আজ আমি নিজে নিজে উঠেছি। মনে মনে বলি সেইটা তো আমি জানতাম। প্রত্যেকদিন যে মা ৩/৪বার ডাকে। তারপর আমি ডাকি।

তখন তো কানে ঢুকে না। মুখে কিছু বল্লাম না। সকালে ঝগড়া করার কোন মানে নাই (আমাদের ঝগড়া হয় নিয়োমিত )। মুখে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে বল্লাম ভালো। উনার পাল্টা প্রশ্ন, শুধু ভালো বল্লাম কেনো? খুব ভালো বলতে হবে।

কি আর করার। খুব ভালো বল্লাম। আর সাথে সাথে আরেকটি হুমকি দিলাম। কাল থেকে ফজরের নামায সময়মতো পড়তে হবে। না হলে ইন্টারনেট বন্ধ।

লে হালুয়া স্কুল ছুটি হলে কিছু সুবিধা আছে। সকালে ঘুম থেকে জাগানোর ঝামেলা নাই। যতো খুশি ঘুমাও। অসুবিধা সুবিধার চেয়ে অনেক বেশী। মা-বাবারা ছুটি হলে খুব টেনশনে থাকেন বাচ্চাদের নিয়ে।

সবচে ভালো উপায় কোথাও ঘুরতে চলে যাওয়া। এবার হয়ত শীপে করে নরওয়ে অথবা স্কান্ডিনেভিয়ার কোন দেশে ঘুরতে যাবো। সপ্তাহান্তে শহর থেকে বেশ দুরে একটি গ্রামে গিয়েছিলাম। বড় এক ভাই মোটামুটি নতুন একটি BMW কিনেছেন। উনি নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স করেছেন।

আমি পুরনো পাপী তাই গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে আসতে বলেছেন। ছোটখাটো কিছু কাজ ফেলে চলে গেলাম। ট্রেন থেকে নেমে দেখা গেলো বাস আসবে অনেক দেরী করে। পাশেই ছিলো পার্কের মতো জায়গা। বল্লাম চলেন পার্কে ঘুরে আসি।

হয়তো কিছু ফলের দেখা পাবো (পুর্ব অভিক্ষতার আলোকে। গ্রামে বড়ো হয়েছি। কতো লতা পাতা, নাম না জানা গাছের ফল খেয়েছি )। একটু হাঠতেই দেখা পেলাম সারি সারি চেরী ফলের। কিন্তু গাছের নীচে কাঠা জাতীয় অন্য ফল গাছ (ব্রামবলস)।

একটু পর দেখা হলো বরইয়ের মতো একটি ফলের। একটা খেয়ে দেখলাম বেশ মজার। আমাদের দেশের বরইয়ের মতো। গাছ ভর্তি ফল। কি আর করার।

দুজনে মিলে প্রায় ৫/৬ কিলো পাড়া হলো। যদিও আরো ৫/৬ কিলো সহজেই পাড়া যেতো। কিন্তু খাবে কে এই চিন্তায় আর নিয়ে আসা হয়নি। কাছেই আপেলের গাছ। কাচা আপেল দিয়ে নাকি ডাল রান্না করলে খুব ভালো টেষ্ট হয়।

কিন্তু খাওয়ার ভাগ্য হয়নি। তারপরও কাচা ৩/৪টা আপেল পাড়লাম। আরো কিছুক্ষন ঘুরলে হয়তো আরো কিছু ফলগাছ পাওয়া যেতো। কিন্তু বাস চলে আসবে বিধায় ফিরে এলাম। ভালো গাড়ি চালানোর মজাই আলাদা।

তবে জার্মান গাড়ি বিশেষ করে BMW/Mercedes/Audi যে পরিমান তেল খায় তাতে পটেক খালি হলে আমার মতো লোকজনের সময় লাগবে না। এদিক দিয়ে জাপানী গাড়ি বেশ ভালো। হাইওয়েতে ১৩০/১৪০ কিমি তে দৌড়ালাম (আনলিমিটেড স্কিড এরিয়াতে যাইনি )। তেলের দাম রোজ ৫ বার উঠানামা করে। বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে বিভিন্ন দাম।

ছুটি শুরু হলে দাম বাড়বে বিধায় গতকাল ট্যাংক ফুল করেছিলাম। আজ সকালে দেখি দাম আরো কমেছে। মেজাজ পুরো হট । এই দেশে গাড়ির দাম নাগালের মধ্যে কিন্তু তেল কিনে মোটামুটি ফতুর। বাংলাদেশে অনেকেই অনেক দামী গাড়ি কিনে।

কিন্তু গাড়ি চালায় ড্রাইভার। সেটা আমার কাছে অদ্ভুত মনে হয়। এতো দামী গাড়ি কিনে নিজে না চালালে মজা কোথায়?? বছরের অর্ধেক চলে গেছে। প্রতি মাসেই কাজের অগ্রগতি নিয়ে গ্রুপ মিটিং হয়। আজ ম্যানেজারের সাথে ষাম্মাসিক মিটিং হলো।

সবকিছু পজিটিভ। তারপরও কাজ করতে মন চায় না। কাজ না করে উপায়ও নাই। স্কুলের মতো যদি ৬/৭ সপ্তাহের একটি বিরাট ছুটি পাওয়া যেতো!! সামান্য সময়ে ছুটি খুব একটা উপভোগ্য না । কক্সবাজার অথবা সেন্টমার্টিনে কয়েক সপ্তাহের জন্য যেতে পারলে মজা হতো।

ইউরোপে ঘুরে মজা নাই। সবই মোটামুটি একই। আর ট্যুরিষ্টের ভীড় লেগে থাকে সব সময়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।