আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওরফে মাইকেল জ্যাকসন...

দিলের দরজা ২৪/৭ খুইলা রাখি মাছি বসে মানুষ বসে না। মানুষ খালি উড়াল পারে! এক দিন আমি ও দিমু উড়াল, নিজের পায়ে নিজে মাইরা কুড়াল...
আমার ইন্টারনেটের লাইনটা কখনো কখনো রাত বারোটা থেকে পর দিন সকাল পর্য্যন্ত হাওয়া হয়ে যায়। নিদ্রাহীন নিঃসঙ্গ রাতে ঢাকা শহরের মত এমন এমন একটা শহরে আর কারো কি হয় জানি না আমার দম বন্ধ হয়ে যেতে চায়! টিভি তে মাইকেল জ্যাকসনের শেষ কৃত্য দেখাচ্ছিল কাল রাতে। মাইকেলের মৃত্যু সংবাদটি সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই পাই রাঙ্গামাটির এক হোটেল কক্ষে। তার পর থেকে টিভি বা পত্রিকায় মাইকেল সম্পর্কিত কোন কিছুতেই আমি ইচ্ছে করেই চোখ দিই নি আর।

আমার ভালো লাগে নি। কাল রাতে রিমোট হাতে ঢাকার যে চ্যানেলেই ঘোরাই দেখি সবাই স্টেপেল সেন্টারের মাইকেলের শেষ বিদায় অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখিয়ে যাচ্ছে। বিটিভি থেকে শুরু করে দেশের প্রায় সব গুলো চ্যানেলই। নিঃসঙ্গ এপার্টমেন্টে কেমন যেন লাগতে শুরু করল আমার। কাবার্ড খুলে লিথুনিয়ান ষ্ট্রং ভদকা বেশ খানিকটা গ্লাশে ঢেলে পানি দিয়ে গ্লাশ ভর্তি করে বার বার নেটের লাইনের জন্য বৃথা চেষ্টা করতে লাগলাম।

অগত্যা রীমোট টিপি। ভারতীয় সিনেমা চ্যানেলে সিনেমা দেখাচ্ছে, গানের চ্যানেলে গান, যেখানে যা চলার তাই চলছে। আমেরিকান টকশো গুলোতে মাইকেল প্রসঙ্গ হয়ত আসছে কিন্তু বাংলাদেশের চ্যানেল গুলোর মত এমন দেখিনি কোথাও! তেজগাও পলিটেকনিক স্কুলের সাথে একটা গোলাপী বিল্ডিং এর চার তলায় আমার এক বন্ধুর বাসা। ১৯৮৩ সালের সামারের কথা। আমি তখন ইন্টারমিডিয়েট পড়ি।

ভিসিয়ারে থ্রীলার এর ভিএইচএস টেপ ভাড়া করে এনে সেই ব্ন্ধুর বাসায় এক দিন আমরা দেখি। এর আগে মাইকেল জ্যাকসনের নাচ গান কোন দিন দেখাশোনার ভাগ্য হয় নাই। সেই প্রথম শোনা। সেই প্রথম জানা। ইংরেজী লিরিক্স তখনও বুঝি না কিছুই অথচ মনের ভেতর বসে গিয়ে ছিল দূর্দন্ত সে যাদু ছন্দ।

কাল রাতে খুব মনে হচ্ছিল ব্লগ খুলে কিছু লিখি। কি লিখব জানি না অথচ ইচ্ছে হচ্ছিল কি ভীষন! আজ অনেক দিন বাদে নেট ঘেটে মাইকেল জ্যাকসনের অনেক কটা গান শুনলাম। থ্রীলারের সেই কালো লিকলিকে মাইকেল জ্যাকসন গলির ধারের কালো ছেলেটি থেকে তরকা মহা তারকা হয়ে ওঠার সময়ে আমি ও আমাদের বেড়ে ওঠা। অল্লার কসম কোন ভনিতা করবো না একটা সত্য কথা স্বীকার করি। আমার কাচা যৌবনে কোন দিন মন দিয়া রবীন্দ্র সংগীত শুনি নাই, শুনছিলাম মাইকেলের গান।

জিনাত বরকতউল্লা আর হাসান ইমাম থেকে শিবলী আর নীপা এদের নাচ দেখলে আমার জীবনেও কোন আনন্দ বেদনা কখনো কিছুই অনুভব হয় নাই। অথচ মাইকেলের ছন্দের দুলনে নাচে আমার হৃদয় সীমানাহীন এক জীবন আনন্দে। আল্লাহর কসম! ১৯৮৮ এর শীত কাল। ভাগ্য অহ্নেষনে কানাডার হিম শীতল শহরে এক জোড়া কেড্স একটা জিন কাপড়ের প্যান্ট আর শার্টের ওপর একটা পাতলা সেয়েটার পড়ে মাইনাস কুড়ি/আঠাশ তাপমাত্রায় হেটে হেটে কাজ খুজছি। রাত তখন এগারোটা কন কনে বাতাসে উড়ে আসে হীম বরফের ঝাপ্টা, হাটতে হাটতে জমে আসে পা।

মেট্রো পি ন্যাফ থেকে বেশ অনেকটা পথ হেটে গেলে অলিম্পিক রেষ্টুরেন্ট। ঐ রেষ্টুরেন্টে একটা ডিশ ওয়াশারের চাকরী পাওয়া যাবে। আমার অজো স্পষ্ট মনে পড়ে গ্রীক রেস্তোরার মালিক কোন ভাবেই আমার নামটা উচ্চারন করতে পারলেন না। আমাকে বললেন, চাকুরীটা আমি তোমাকে দেব থালা বাসন ধোবা আলু পেয়াজ কাটবা, হাড়ি পাতিল ধোবা কাজ শেষে সমস্ত রেষ্টুরেন্টের কার্পেট ঝুড়ু দিবা রান্না ঘরের ফ্লোর ধোবা টয়লেট গুলা মুসবা। প্রতিদিন বারো ঘন্টা করে কাজ।

রাজি থাকলে এখন থেকে লেগে পড়ো। আর ভালো কথা তোমার ঐ বিদঘুটে নাম আমি উচ্চারন করতে পারবো না। আমি তোমাকে মাইকেল জ্যকসন বলে ডাকবো। আমার দাস জীবনের সেই সব কথা আজ আবার মনে পড়ে গেল! এক জন বৃদ্ধ মালিক ছিলেন নাম লুকাস, খুব দূর্ব্যাবহার করতেন। তূর্কী ডিশওয়াশার মোহাম্মদ ছিল দারুন ধূর্ত, কষ্টের কাজ গুলো সব আমাকে দিয়ে করিয়ে নিজে হালকা কাজ গুলো করত।

মনে পড়ে গেল সব মনে পড়ে গেল...
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.