আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শোষণের অবসান

সৃষ্টিকর্তার সকল অপূর্ব সৃষ্টির মাঝে একমাত্র খুঁত সম্ভবত তাঁর সেরা সৃষ্টি ...

ভালোমানুষের মতো সৌমিত্র বিছানায় শুয়ে ছিল। কথা নেই, বার্তা নেই হঠাৎ তড়াক করে লাফিয়ে উঠল "আমি আর সহ্য করব না। " আমি আর আমার অন্য রুমমেট অম্লান খুব একটা চমকালাম না। আমরা জানতাম অনেক দিন ধরেই তার মাঝে ক্ষোভ পুঞ্জীভুত হচ্ছিল। কে জানতো যে সেই পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আজই কোন বিপদ সংকেত ছাড়াই ভিসুভিয়াসের মতো বিস্ফোরিত হবে? "ওদের শোষণ আমরা অনেকদিন ধরে মুখ বুজে সহ্য করেছি, আর নয়।

" উদভ্রান্তের মতো রুমে পায়চারী করতে করতে উত্তেজিত সৌমিত্র এ নিশ্বাসে বলে ফেলল "এটা ভগবানের কেমন বিচার হলো? চিরকালই আমরা এদের দ্বারা নির্যাতিত হবো?" "আমাদের আর কি করার আছে বল। " আমি শান্ত স্বরে বললাম "এটাই জগতের নিয়ম। একদল শোষণ করবে আর আরেকদল শোষিত হবে। সত্যি কথা বলতে কি ওদের জন্মই হয়েছে শোষণ করবার জন্য। " "কিন্তু- কিন্তু তাই বলে সব অত্যাচার মাথা পেতে মেনে নেব, এটা হতে পারে না।

" সৌমিত্র পায়চারী থামিয়ে কড়া দৃষ্টিতে তাকালো "সৌমিত্র সরকার কি চিজ সেটা আমি বুঝিয়ে ছাড়বো ওদের। সব জ্বালিয়ে দেবো। " "কোন কাজ হবে না। " অম্লান অম্লানবদনে বলল "জ্বালাও পোড়াও তোর ইউনিক আইডিয়া নয়। আগেও অনেকে চেষ্টা করেছে, কিন্তু কোন কাজ হয় নি।

সময়মতো ওরা ঠিকই আবার ফিরে আসবে। " "হ্যা। " আমিও সায় দিলাম "ওরাতো এখানে নতুন এমন নয়। ওদের শিকড় অনেক গভীরে। এই ভার্সিটির প্রাচীনতম বান্দাদের থেকেও পুরনো এখানে ওদের ইতিহাস।

আর শুধু তই প্রথম নয়, যুগে যুগে অনেকেই চেষ্টা করে গেছে ওদেরকে এখান থেকে বিতাড়িত করার। হয়তো সফলও হয়েছিল দু একবার, কিন্তু পরে বোঝা গেছে যে ঐ বিদায় ছিল কেবলই সাময়িক। " "হ্যা। ওদের লুকিয়ে থাকার গুণের কথা আজ আর কারো অজানা নয়। " অম্লান বিরসবদনে যোগ করল।

আমি জানি চট্টগ্রামে থাকাকালে ও নিজেও কম অত্যাচার সহ্য করে নি। বাসায় থেকে পড়াশোনা করবার সুবাদে কেবল আমিই ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আগে ওদের দৌরাত্ম্য টের পাই নি। "আমি আজ এর একটা বিহিত করে ছাড়বই। " সৌমিত্রের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ চেহারা দেখে আমরাও একটু ভরসা ফিরে পেলাম। সরাসরি রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার কারণে ওর চট করে এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভ্যাস আছে।

"তোরা শুধু বল আমার সাথে আছিস কিনা। " আমরা দুজনেই মাথা নাড়লাম, আমরাও প্রায় সহ্যেল শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত সৌমিত্রই যে উদ্যোগ নেবে তা-ইবা কে ভেবেছিল। যাহোক এরপর কথাবার্তা আর না বাড়িয়ে আমি আর অম্লান দুজনেই ক্লাসে চলে গেলাম, আর সৌমিত্র গালে হাত দিয়ে চিন্তা করতে লাগল। কে জানে কি ফন্দী খেলছে তার মাথায়।

ক্লাস শেষে রুমে ফিরে আসার পর দেখলাম রুমের খাটপালঙ বাইরে বের করে রাখা। বাইরে সৌমিত্র দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগ্রেট ফুঁকছে। আমি বললাম"কিরে ব্যাপার কি?" "কি আর। যুদ্ধের সিদ্ধান্ত যখন নিয়েই ফেলেছি তখন অস্ত্র কেনায় বাঁধা কিসের?" সৌমিত্র মিটিমিটি হেসে বলল "সমুদ্রে পেতেছি শয্যা শিশিরে কিসের ভয় বন্ধূ। " আমি ভয়ে ভয়ে রুমে ঢুকেতো স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।

খালি রুমের মেঝেতে একটা পলিথিনের ওপর রাখা .... আমি এক ছুটে বাইরে বের হয়ে এলাম, ততক্ষণে অম্লানও হাজির। "তুই নিজে এসবের ব্যবস্থা করেছিস?" আমি সৌমিত্রকে জিজ্ঞেস করলাম, এখনো আমার অবাকভাব কাটেনি। "অবশ্যই। " সৌমিত্র যুদ্ধজয়ের হাসি দিল "তো, তোরা আছিস কিনা বল। " "অবশ্যই!" আমরা সমস্বরে জবাব দিলাম।

"তাহলে চল। " সৌমিত্র ভেতরে ঢুকল, পেছন পেছন আমরা। তার হাতে একটা গরম পানির বালতি, তার ভেতর নিমপাতা ভাসছে। অম্লানের হাতে ফিনিশের বোতল, আর আমার হাতে কেরোসিন। ছারপোকা নিধন অভিযান এভাবেই শুরু হল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.