আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবনটা বড্ড বদ

আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!

জীবনটা বড় সুন্দর - এই কথাডা যে কইছে তারে যদি একবার পাইতাম তাইলে যে কি করতাম, অখনো ঠাহর করবার পারবো না কেউ? এত চেতলাম কেন এইডা বুঝাইতে একটা ছুটোখাটো গল্প করন লাগবো। আমার কাকার ছোট শালা, আমারে দেখলে 'মামা' 'মামা' কয়, তার সাথে আমার মোটামোটি একটা সম্পর্ক আছিলো। সে আমারে যখন "বস" বইলা ডাকতো তখন মনে সন্দেহ থাকলেও আমি তার স্নেহময় দৃস্টিতে তাকাইতাম। একদিন পাশের দোকানে কি মনে কইরা সমুচা খাইতে গেলাম।

একটা সমুচা আরেকটা কুক। খাইয়া পিচকিরে কইলাম," ঐ টাকা নিয়া যা। " - ১৫ টাকা দেন কেন? আপনের মোট বিল হইছে ২৪৮ টাকা (পিচকি টাকা হাতে নিয়া হিটকাইতে হিটকাইতে) - আব্বে, এইটা সোনার বাংলার শেরাটন নাকি? এত বিল? তখন পিচকা নাচতে নাচতে ক্যাশে গিয়া কি জানি কইলো একটা টাকলা লোকের কাছে। লোকটা আমারে দেখলো, দেইখাই ফিচকি একটা হাসি। আমি ভ্যাবলার মতো সব দেখতাছি।

সে খাড়াইলো, লুঙ্গী ঠিক করলো, তারপর কলম ঢুকানো খাতাটা নিয়ে আমার কাছে হাসতে হাসতে আসলো। সামনের চেয়ারটায় বসে আমার মুখোমুখি বইলো,এমুন ভাবে দুইজন দুইজনার দিকে তাকাইলাম যে আমাদের মাঝে একখান পানিশূন্য গ্লাস টেবিলের উপর ক্রুশফায়ারে মরনের লিগা খারায় আছে। : ভাইজান, আপনের নামে একখান বাকির খাতা খুলা হইছে। এই যে দেখেন খানেওয়ালার সিগন্যাচার। আমি তাকাইয়া দেখি জীবন মিয়ার সিগন্যাচার।

বেটা আমার নামে বাকীর খাতা খুলছে! তাইলে আগেই কইতাছি জীবন কি আসলেই সুন্দর ?পুরাই ফাউল! আরেকখান উদাহরন দেই। আমিনবাজারের পরে অনেক ইটের ভাটা হইছে। ছুটির দিনে কাজ নাইতো খৈ ভাজা স্টাইলে ঘুরবার যাই হানিফে কইরা। যাইয়া দেখি কঠিন রোইদে কিছু কংকাল সার লোক মাথায় ইটের গাদা নিয়ে হেটে যাচ্ছে। প্রতিটা ইট যদি ৩ কেজির হয় তাহলে মাথায় রাখা কড়াইতে ৭ টার মতো ইট থাকে।

সর্বমোট ২১ কেজি ইট নিয়া তারা পুরা ভাটা হাইটা ট্রাক বোঝাই করে যার ক্ষমতা সমগ্র বাংলাদেশ ৫ টন। ২৭ মনে যদি ১ টন হয় তাইলে ২৫ জন লেবার প্রতিদিন কত কেজি বোঝা বইতে পারে? প্রতি ট্রাকের জন্য ২১৬ কেজি। আর দিনে যদি ৩-৪ টা ট্রাক হয় তাহইলে তো কথাই নাই! এসব আউল ফাউল চিন্তা বাদ দিয়া পল ওকেনফল্ডের বুংকা এলবামটা শুনায় মনোযোগ দিলাম মাগার একটু দূরে যাইতেই দেখি কিছু লাল পাহাড় মানে ঐখানে ইট গুলোকে গুড়ো করার জন্য কিছু মহিলা নোংরা ছেড়া কালো শরীফ ছাতার নীচে হাতুড়ি চালাই যাইতাছে সমানে। দেখে বিশ্বাস হয় না একজন মহিলা ইট ভেঙ্গে এত বড় পাহাড় গড়েছে আর সেই পাহাড়ের উপর তার পাশে বাচ্চাকে ফেলে রেখেছে। একটু অবাক হলাম।

আমাকে আমার মা কখনোই মাটিতে শুতে দেননি জন্মের দু'বছর পরও। ধূলো ময়লা লাগবে বলে আমাকে বাইরে নিলেও নাকে মাস্ক ব্যাবহার করতেন, পানি খাওয়াতেন বোতলের। তখন ওগুলো খুব দামী ছিলো। আর এরা কিভাবে বড় হচ্ছে? ভাবলাম কারো লগে কথা কই। পরে ভাবলাম আমার সাথে মনে হয় না কথা কইবো।

তবু চেস্টা চালাই গেলাম। জানতে পারলাম একটা তথ্য সেটা হলো যারা ইট বয়ে নিয়ে যায় তারা দিনে ২০০-২৫০ টাকা পায়। আমি জিজ্ঞেস করতেই বলে মাঝে মাঝে মহাজন কাইটা রাখে, বা ট্রাক দুয়েকটা কম বেশি হলে। আর মহিলারা পায় ৯০-১১০ টাকা। এইডা কনস্ট্যান্ট।

চিন্তা করলাম কাজ কে বেশী কে কম করে? ছেলেরা দিনে ৫০০-৬০০ কেজি উঠায় মাথার উপর, পরে তা বয়ে নিয়ে যায় অসমতল পথে। আর মেয়েরা প্রতি দিন আঘাত করে শক্ত ইট ভেঙ্গেই চলেছে, গড়েছে ইটের পাহাড়। কার কস্ট কম কার কস্ট বেশী? আরেকটা উদাহরন দেই, ইদানিং মেয়েদের সাথে মিশতে খুব শখ লাগে। খালি শখ না জব্বর শখ! তাই যখনই কোনো অফিসে যাই প্রথমে শুরু করি রিসিপশনিস্ট তার পর অফিসের কর্মকর্তা। মাগার আফসোস, সবাই প্রফেশনাল।

এইখানে একটা পিচকি আইনা রাইখা দিলেও সে প্রফেশনালিজম শিইখা যাইবো। অনেকদইন ধইরা একুশে বাসে চলতে চলতে একটা মাইয়ার লগে পরিচয় হইছে। লেডিস সীট খালি না পাইলে সামনের যেকোনো খালি সীটে পুরুষদের পাশেই বসে। তার চেহারা সুন্দর বইলা লুলপুরুষরা তার জন্য নিজের সীট ছাইড়া দেয় আর এইটা ঘটতো প্রথম দিকের দ্বিতীয় সারির বায়ের দিকের সীটে। আমি আবার মাইপা ঝুইকা জানালার পাশে বসি আর জীবনেও কোনো মাইয়ারে নিজের সীট গিফট করি নাই।

যাই হোউক লুলপুরুষ সেক্রিফাইস করে আর লাভ হয় আমার। খাতির কইরা ফেলাইছি মামু! মাইয়াটা একটা ভেন্ডরে চাকরি করে। একদিন মন খারাপ কইরা বইসা ছিলো আর হাতের মোবাইলটার দিকে বার বার তাকাচ্ছিলো। আমি তখন শুরু কইরা দিলাম আমার মারফতী লাইন : মনে হয় ব্যালেন্স নাই তাই ফোন করতে পারছে না। : (সে আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃস্টিতে তাকালো, দেখলাম চোখ দুটো লাল) সে এরিকসনে চাকরি করে।

তার বিল নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। : হুমমম....তাইলে মনে হয় আজকে ছুটির দিন তাই ঘুম থিকা উঠে নাই। : না আপনি কিছুই জানেন না, ও আরেক জনের সাথে ঘুরছে। : কেনো যে ভুল বুঝি, এর কোনো মানে নাই। দেখেন আমরা সব সময়ই একুশের ড্রাইভরের পিন্ডি চটকাই কিন্তু এরা যে কি অমানবিক পরিশ্রম করে আমাদেরকে আমাদের গন্তব্যে পৌছানোর চেস্টা করে সেটা কি ভাবি? : কিছু দিন আগে দুপুর বেলা অফিস থেকে যখন পিজ্জা হাটে গেলাম তখন ওকে দেখেছি আরেকজনের সাথে বসে পিজ্জা খাচ্ছে।

আপনি কেন যে এত বেশি বলেন বুঝি না! আমি চুপ হয়ে যাই। কিছু দিন আগে মিরপুর ১ মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে মাউন্টেন ডিউ খুজছিলাম। হঠাৎ দেখি সেই মেয়েটা হাতে কয়েকটা ব্যাগ নিয়ে বের হচ্ছে। আমি দেখতেই "হায়" বলে এগিয়ে গেলাম। সে আমাকে দেখে চিন্তে পারলো আর বিশাল খুশী হয়ে গেলো।

: ভাইয়া একটা সুসংবাদ দেই। আমার বিয়ে হয়ে গেছে গত সপ্তাহে। আমি ইউএস চলে যাচ্ছি। গতকাল ভিসা হয়ে গেছে। ও ইউ এস থাকে।

: গুড নিউজ। তো ঐ এরিকসন বাদ, তাই না? দ্যাটস গ্রেট! : এসব কথা আমি মনে রাখতে চাই না, এখন আমার জীবনটাকে গুছাতে হবে। : তা উনি কি করে? : ওর রেস্টুরেন্ট বিজনেস আছে। : ও বাপস! এতো বিশাল ব্যাপার। তা যাকে জীবনসাথী করলেন নিশ্চয়ই সে খুব ভালো তাই না, নাকি ঝোকের মাথায় করলেন? সরি একটু ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করলাম! : (চোখে সান গ্লাসটা টেনে নিয়ে, তখন আরো সুন্দর দেখালো আর গালটা লাল হয়ে গেলো, মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেলো) জানি না, তবে এটা জানি ও অনেক ভালো ছিলো।

ওর দেয়া ধাক্কাটা আমার সইতে বেশ কস্ট হচ্ছিলো। : তাই বলে নদীর ঢেউ থেকে বাচবার জন্য সাগরের ঢেউ কে আপন করে নিলেন। : ভাইয়া আমি যাই। আপনার সাথে আর দেখা হবে না। কালকে আমার অফিসে শেষ দিন।

একটু দোয়া করবেন আমার জন্য! : খোদা হাফেজ! আমি খালি ভাবি আসলেই জীবনটা মারাত্নক তয় জীবন পোলাটা বেশী বদ!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।