আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবনটা খুব অনিশ্চিত...

সত্য অথবা মিথ্যা দুটোই হতে পারে। বিশ্বাস করা আর না করা আপনার ব্যপার।

অনেক টা সময় লাগল এই রোড টা খুজে পেতে। এত গলি-ঘুপচি যে ঠিক রোড খুজে পেতে দুপুর হয়ে গেছে। এমনিতেই গরম সহ্য হয় না শিপার।

তারপর এভাবে একা একা একটা নতুন এলাকায় এসে একটা বাসা খুজে বের করতে হচ্ছে। আসলে অবস্থাটা এমন যে কাউকে জিজ্ঞেস করতেও ভঁয় করছে। কাউকে নিয়ে আসার উপায়ও ছিল না। সোমা ঠিকানা টা ঠিক ভাবে বলতেও পারেনি। শুধু বলেছে এই রোডে একটা ৫ তলা নীল রঙের বিল্ডিং এ থাকে ইমু।

এর বেশি সোমা নিজেও জানেনা। এই রোডে আসার পর দেখা গেল নীল রং করা বিল্ডিং ২ টা। এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না শিপা। ভাবছে, না আসলেই হতো। কিন্তু আসব না আসব না করেও শেষ পর্যন্ত শিপা এসেছে।

এখন দেখা না করেই চলে যেতে হয় কিনা কে জানে?? ইমুর সব নাম্বার বন্ধ। আধা ঘণ্টার মত আশে পাশে ঘুরে শেষে ঠিক করে চলেই যাবে। এভাবে একটা মানুষকে খুজে বের করা যাবে না। সোমা আগেই বলেছে কাউকে ইমুর নাম না বলতে। কেন এসেছে ভেবে নিজের উপর রাগ লাগছে শিপার।

ইমু যেখানে যায় যাক, যা ইচ্ছা করে করুক। শিপা ঘুরে চলে যাবে এমন সময় একটা ছেলে পিছন থেকে ডাক দেয় শিপাকে। - আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?? - না। না তো। - বেশ কিছুক্ষণ থেকে আপনাকে দেখছিলাম এখানে হাঁটছেন।

- এমনি। মানে আসলে একটু কাজ ছিল। বলেই ঘুরে হাটা শুরু করে শিপা। ছিঃ... মানুষ না জানি কি ভাবছে। এমন ভঁয় আর কখনো লাগেনি শিপার।

পিছনে একবার তাকিয়ে দেখে ছেলেটা পিছন পিছন আসছে। শিপা মনে মনে নিশ্চিত হয়ে যায় কোন একটা বিপদে পরতে হবে আজ। ছেলেটা কাছে এসে বলে, - আপনি কি ইমুর সাথে দেখা করতে এসেছেন?? - আপনি কেমন করে জানেন?? - আসুন আমার সাথে। - আমি আপনাকে চিনিনা। কোথায় যাব আপনার সাথে?? - তাও ঠিক।

আচ্ছা এক মিনিট। বলেই হাতের মোবাইল দিয়ে কোথাও ফোন করে ছেলেটা। তারপর একটু কথা বলে শিপার দিকে বাড়িয়ে দেয় মোবাইলটা। শিপা কানে নিতেই ওপাশ থেকে ইমুর কণ্ঠ শোনা যায়। - তোর সাথের ছেলেটার নাম রাসেল।

ওর সাথ আয়। - ইমু তুই?? কই তুই?? তুই আসতে পারিস না?? - কথা পরে বলিস। আগে আয় তারপর কথা হবে। - আচ্ছা। ওপাশ থেকে লাইন কেটে দেয় ইমু।

রাসেল শিপা কে একটা বাড়ির ৩ তলায় নিয়ে যায়। ভিতরে ঢুকেই শিপা বুঝতে পারে এখানে যারা থাকে তাদের আর যাই হোক সুস্থ মানুষ বলা যায় না। ভিতরের একটা ঘরে রাসেল শিপা কে ঢুকতে বলে চলে যায় বাইরে। শিপা ঢুকেই দেখে ইমু একটা চেয়ারে বসে আছে। শিপা কে দেখে উঠে দাড়ায়।

দৌড়ে গিয়ে ইমুকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছাটা অনেক কষ্টে চেপে রাখে শিপা। - কেমন আছিস ইমু?? - অনেক ভাল। - এই রকম একটা পরিবেশে মানুষ ভাল থাকে?? - আমি তো এই রকমই হয়ে গেছি। দেখতে পাচ্ছিস না?? - আমার এখনো বিশ্বাস হয় না। - বাদ দে এসব।

আগে আমার কাছে এসে বস। অনেকদিন পর দেখলাম তোকে। - ৩ মাস পর। - হ্যা। আমার কাছে মনে হচ্ছিল ৩ বছর হয়ে গেছে।

কি খাবি বল। চায়ের কথা বলে আসি। ইমু চলে যেতেই ঘরের চারপাশে চোখ বুলায় শিপা। একটা খাট, একটা ছোট টেবিল আর একটা চেয়ার। দরজার একটা স্ট্যান্ডে কিছু কাপড় ঝুলছে।

পানির বোতল, খাবারের ছোট ছোট প্যাকেট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ইমু এমন একটা জায়গায় থাকে?? খুব ভাল স্টুডেন্ট না হলেও খারাপ ছিল না ইমু। বন্ধু হিসেবে ছিল সবার সেরা। শিপা আর ইমুর কথা সবাই জানত। একজন আরেকজনের খুব ভাল বন্ধু।

একসাথেই দেখা যেত সবসময়। হঠাৎ করেই ইমু রাজনীতিতে জড়িয়ে পরে। বড় ভাইদের সাথে থাকতে থাকতে এখন এই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। তবে শিপার সাথে যোগাযোগ ছিল সবসময়ই। গত ৩ মাস আগে থেকে ইমুর নাম্বার বন্ধ পায় শিপা।

ইমুর বাসায় ও কেউ জানেনা ইমু কোথায়। কোথাও খুজতে বাকি রাখে নি শিপা। এমন সময় সোমা কোথা থেকে যেন এই ঠিকানা এনে দেয় শিপাকে। আর বলে ইমু ও তাঁর সাথের কয়েকজনের নামে মামলা হয়েছে। ওরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

তারপর শিপা অনেক ভেবে এখানে আসে। ইমু চা নিয়ে ঘরে ঢুকে। - কি ভাবিস?? এই যে চা। - কতদিন থাকবি এখানে?? - যতদিন থাকতে বলবে। - এভাবে পালিয়ে থাকবি?? এভাবে মানুষ থাকে?? - না।

মানুষ না এভাবে পশুরা থাকে। আমিও পশু হয়ে গেছি। বড় মানুষ হতে গিয়ে একেবারে পশু হয়ে গেছি। ইমুর হাতের ফোনটা বেজে ওঠে। রিসিভ করে পাশের রুমে চলে যায় ইমু।

শিপা ওঠে গিয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাড়ায়। ইমু অনেক গম্ভীর হয়ে গেছে। আগের ইমুর সাথে মিল খুব কম। আগের মত কোন পাগলামি করছে না। এমন ইমু কে তো চিনত না শিপা।

- জানালার সামনে থেকে সরে যা। - কেন?? - এখানে কোন মেয়েকে দেখলে মানুষ সন্দেহ করবে। - একটা কথার উত্তর দিবি?? - না। - প্লিজ?? - দেখ শিপা, আমি তোকে কিছুই বলব না। শুধু জেনে রাখ আমি কিছু করি নাই।

আমি এক প্রকার ফেঁসে গেছি বলতে পারিস। - সবাই যে বলছে... - জানি। যে যা ইচ্ছা বলুক। তুই বিশ্বাস কর তাহলেই চলবে। - আমি বিশ্বাস করি।

কিন্তু এভাবে তোকে দেখে বিশ্বাস হচ্ছে না যে তুই এমন একটা পরিবেশে থাকতে পারিস। তুই কেমন হয়ে গেছিস। - কেমন?? - একদম শান্ত। কোন পাগলামি না, কোন কিছু না। এমন মানুষ তো আমি চিনতাম না।

- পাগল আমি না তুই। তুই একটা গাধা। নাহলে এত কিছু শুনেও কেউ আসে?? আর তো কেউ আসে না। - আমিও আসতাম না। কিন্তু কি ভেবে যে আসলাম জানিনা।

- এজন্যই তুই পাগল। এভাবে আর আসিস না। - কেন?? - তোর জন্য ঠিক না। আবার বলছি, এভাবে আসিস না। আমি তোকে মাঝে মাঝে কল দিব।

- সত্যি দিবি?? - হুম দিব। দুপুরে খাবি তো?? পোলাও মাংশ খাওয়াতে পারব না আগেই বললাম। - ডাল-ভাত হলেই চলবে। - ওকে। তুই বস।

আমি আসছি একটু পর। বেশ অনেকদিন পর একসাথে দুপুরে খেতে বসে শিপা আর ইমু। ভার্সিটিতে থাকতে প্রায়ই একসাথে বসা হত ওদের। ইমু কখনো কখনো বলত, - দেখ মেয়ে বলে সুবিধা নিবি সেটা হবে না। আজ তুই বিল দিবি।

টাকা না থাকলে আমারে জামানত রেখে গিয়ে টাকা নিয়ে আয়। - তোকে রেখে গিয়েই কি হবে?? তোরে দিয়ে তো হাড়ি-পাতিলও মাজাতে পারবে না। - আরে ধুর!! আমারে মেয়ের জামাই বানাবে। সারাজিবন আর খাওয়ার কষ্ট করতে হবে না। - ঐ লোকের মেয়ে বেশি হলে টুতে বা থ্রি তে পরে।

তোরে বানাবে জামাই?? - আরে মেয়ে বড় হবে না একসময়। আগের কথাগুলো মনে করে দুজনেই হেসে ওঠে। বিকেল হয়ে আসে। শিপার ইচ্ছা করছিল না তবুও একসময় বলে, - যেতে হবে। - সত্যি চলে যাবি?? ইস!! তোকে রেখে দিতে পারতাম।

- আবার আসব। - না আর আসবি না। তুই কথা দিয়ে যা যে আর এখানে আসবি না। - আচ্ছা। কিন্তু... - কোন কিন্তু নাই।

আমিই তোর সাথে যোগাযোগ করব। তুই কোন চেষ্টা করবি না দেখা করার। - হুম। - এখন যা। দেরি হয়ে যাচ্ছে।

রাসেল বাইরে আছে। তোকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আসবে। শিপা ঘুরতেই ইমু শিপার হাতটা ধরে। কেন যে ধরল হয়তো নিজেই জানেনা। হয়ত প্রিয় বন্ধু চলে যাবে তাই।

হয়তো কাছের মানুষ দূরে যাচ্ছে সেজন্য। নাকি অন্য কিছু দুজনের কারো কাছেই ঠিক পরিষ্কার না। শিপা একসময় হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যায়। শিপার চলে যাওয়া দেখতে থাকে ইমু। একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস।

আর কিছু না। রাসেল এসে একসময় জানায় শিপাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে এসেছে। ইমু রাসেলকে বলে, - বাসাটা চেঞ্জ করার ব্যবস্থা কর। শিপা যেন আর জানতে না পারে। - আপনিই তো জানাতে বলেছিলেন।

- আর দরকার নেই। মেয়েটার কিছু হোক সেটা চাই না। ওকে এসব থেকে দুরেই রাখব। - ওকে তাই হবে। শিপার সাথে হয়ত আর দেখা হবে না ইমুর।

অনেক অনেক দিন হয়ত কথাও হবে না । কিংবা কে জানে হয়ত আবার গিয়ে দেখা করবে শিপার সাথে। আগে থেকে কিছুই বলা যায় না। জীবনটা খুব অনিশ্চিত।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।