আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুখোমুখি যখন গুরু-শিষ্য

একটু পেছনে ফিরে তাকালে উঠে আসছে দারুণ এক গল্প। ২০০২ সাল। হল্যান্ডে বসল উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্স কোচিং কোর্স। শিক্ষক উইমস কোভারম্যান। অনেক ছাত্রের অন্যতম একজন লোডভিক ডি ক্রুইফ।


ফুটবলের মনোযোগী পাঠক নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন কাদের নিয়ে কথা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের দুই কোচ। দুজনই ডাচ, কাকতালীয়ভাবে এটা হতেই পারে। তবে একটা তথ্য দুজনের সম্পর্ক নিয়ে আলাদা তাৎপর্য তুলে ধরছেই। আজ বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়ে দুই ডাগআউটে থাকছেন গুরু-শিষ্য!
গুরু-শিষ্য শব্দ দুটি শুনতেও ভালো লাগে।

আর দুজন যখন লড়াইয়ে নামবেন, সেটি ভিন্নভাবে মনোযোগ কাড়বেই। বাংলাদেশ-ভারত এই ফুটবল লড়াই তাই শুধু দুই দলের মধ্যেই সীমানাপ্রাচীর তুলছে না, এটির সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে দুই কোচের মর্যাদার ব্যাপারও। দুই কোচ সেটিকে যতই ‘নিছক দুদলের একটা ম্যাচ’ বলতে চান, মিডিয়া কিন্তু এখানে খুঁজে নিচ্ছে অন্য রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ, যা কিনা কাঠমান্ডুতে দুই শিবিরে আলোচনার বড় বিষয়।
সারাক্ষণ হোটেলে দেখা হচ্ছে দুই কোচের। কথা বলছেন একান্তে।

নিশ্চয়ই নিজ নিজ দলের রণকৌশল গোপনই থাকছে দুজনের আলাপনে। সেটি থাকারই কথা। কিন্তু আজ দুই কোচের শরীরী ভাষায় যুদ্ধের আবহই ফুটে বেরোচ্ছে। ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’ হাবভাবে তা পরিষ্কারই বুঝিয়ে দিচ্ছেন উৎসাহীদের।
ডি ক্রুইফকে নিয়ে দুই দিন আগে কোভারম্যান কয়েকটা প্রশ্ন শুনেছেন ভারতীয় দলের অনুশীলনের শুরুতে।

১৯৮৮ সালে ইউরোজয়ী ডাচ দলের স্কোয়াডে ছিলেন ডিফেন্ডার কোভারম্যান। বদলি হিসেবে খেলেছেন একটি ম্যাচ। ইউরোজয়ী দলের সদস্য মানে বড় মাপের খেলোয়াড়। সেই আভিজাত্য চোখমুখে ফুটিয়ে সেদিন কোভারম্যান বলছিলেন, ‘হ্যাঁ, কোচিং কোর্সে ও আমার ছাত্র ছিল। ওকে ভালোভাবেই জানি আমি।


বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়ের আগের দিনও সাংবাদিকেরা স্টোরির প্রয়োজনে আবারও অনুশীলন মাঠে কোভারম্যানের সামনে তুললেন ডি ক্রুইফের প্রসঙ্গ। ‘এটি গুরু-শিষ্যের লড়াই, আপনি কীভাবে দেখছেন...’ প্রশ্নটা শুনে হো হো করে হেসে ভারতীয় কোচ হাঁটা দিলেন অনুশীলনে। তবে একই প্রশ্ন শুনে পরশু চূড়ান্ত পেশাদারের মতো উত্তর দিলেন, ‘হতে পারে সে আমার ছাত্র। কিন্তু মাঠে আমরা শত্রু। মাঠে নামলে ভুলে যাব কে শিক্ষক, কে ছাত্র।


একইভাবে কাঠমান্ডুতে আসার পর থেকেই কোভারম্যানকে নিয়ে প্রশ্ন শুনে যাচ্ছেন ডি ক্রুইফ। গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় কালও যখন অনুশীলন শুরুর আগে দলের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলার ফাঁকে আবার একই প্রসঙ্গ উঠল, প্রশ্নটা ব্যাকভলি করে মাঠের বাইরে পাঠালেন, ‘আমরা ভাই সাফ খেলতে এসেছি। এটা দুই দেশের ম্যাচ। ব্যক্তিগতভাবে দুই কোচের নয়। হ্যাঁ, তাঁর অধীনে আমি কোচিং কোর্স করেছি।

সে দিক থেকে তিনি আমার শিক্ষক। কিন্তু এটা নিয়ে আপনারা বেশি মাতামাতি করবেন না। আমার যাবতীয় মনোযোগ খেলার দিকেই। ’
দুজনের মধ্যে যেখানে সবচেয়ে বড় মিল থাকার কথা, সেটিতে কিন্তু একটু ব্যতিক্রম আছে। দুজনের খেলার ছক প্রথাগত ডাচ ধারার নয়।

ডি ক্রুইফ নিচে থেকে বিল্ডআপ ফুটবল পছন্দ করেন, প্রেসিং চান, ছক সাজান ৪-২-৩-১। কোভারম্যানের ছক ৪-৪-২। অঙ্কের চেয়ে আক্রমণাত্মক ফুটবলই তাঁর বেশি পছন্দ। তবে দুজনই পাসিং ফুটবলের পূজারি। ভারতীয় দল এখন যেটা করছে, ৪-৪-২-তে শুরু করে গোল পেয়ে গেলে ৪-৫-১ হয়ে যায়।

মানে, এক স্ট্রাইকারে চলে যান কোভারম্যান।
একটা তথ্য লিখতেই হচ্ছে। এই ভারতীয় দলে লেফট উইংয়ে কোনো খেলোয়াড় আনেননি কোভারম্যান। স্ট্রাইকার জেজেকে খেলাচ্ছেন লেফট উইংয়ে। জেজেকে দেখার জন্যই এটা করেছেন।

তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ভালোবাসেন। এখানে মিল আছে ডি ক্রুইফের সঙ্গে।
গত অক্টোবরে নেহরু কাপ জয় দিয়ে ভারতীয় দলে দারুণ অভিষেক হয়েছিল কোভারম্যানের। তবে এর পর থেকে দলটার পারফরম্যান্সের গ্রাফ নামছে। এই সাফের জন্য খেলা একমাত্র অনুশীলন ম্যাচে ভারত সর্বশেষ ৩-০ গোলে হেরেছে তাজিকিস্তানের কাছে।


প্রতিপক্ষ কোচের, মানে ‘গুরু’র খেরো খাতায় থাকা এসব তথ্য-পরিসংখ্যান একেবারেই পাত্তা দেন না ডি ক্রুইফ। ‘কোভারম্যান টেকনিক্যালি ও ট্যাকটিক্যালি খুবই উঁচু মানের’ বলতে তাঁর কোনো দ্বিধা নেই। ‘শিক্ষক’ও ছাত্রের প্রশংসায় উদার, ‘ক্রুইফ কোচ হিসেবে বেশ ভালো। ’
গুরু? না শিষ্য? আজ কার মুখে হাসি থাকবে? দেখাই যাক!।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।