আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বজুড়ে ধেয়ে আসছে পানির সমস্যা, বাংলাদেশও বিপাকে.....

বিবর্ণ জীবনে কয়েক ফোটা রং......
ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, মানব সভ্যতার বড় বড় চ্যালেঞ্জের সঙ্গে জড়িত ছিল পানি৷ প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে এটি অনন্য৷ পরিবেশ সংরক্ষণ, জীবিকার উন্নয়ন, সর্বোপরি জীবনের প্রয়োজনে পানির প্রয়োজনীয়তা বলে শেষ করা সম্ভব নয়৷ এতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ পানিই মানুষের বিপদ ও নিরাপত্তাহীনতার কারণ হতে পারে৷ বিশেষ করে একুশ শতকের প্রথম পর্যায়ে এসে বিশ্বব্যাপী পানি সমস্যার কারণে হুমকিতে রয়েছে মানব উন্নয়নের ভবিষ্যৎ৷ দারিদ্র্য, অশিক্ষা এবং শক্তি ও সম্পদ বণ্টনে অসাম্যই এ সমস্যার মূল কারণ৷ পানিকে সব ধরনের রাহুমুক্ত করার জন্য বিশ্বব্যাপী এখনই চাই সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস... পানি চাই পানি পানির অপর নাম জীবন৷ বেচে থাকার জন্য দরকার পানি৷ কিন্তু এ পানি আবার মৃত্যুরও কারণ হয়ে দাড়ায়৷ বিশুদ্ধ পানির অপর নাম যেমন জীবন তেমনি যথাযথ পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনার অভাবে পানিই হয়ে ওঠে মৃত্যুর কারণ৷ এমনকি পারস্পরিক বৈরিতা থেকে ভয়াবহ যুদ্ধ পর্যন্ত বেধে যাওয়ার নজির রয়েছে পানিকে কেন্দ্র করে। বর্তমান বিশ্বে পানি সমস্যা এতোটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, এ জন্য এখন আর একটি বা দুটি দেশ নয়, পুরো অঞ্চল অস্থির হয়ে উঠেছে৷ এশিয়ার পূর্ব প্রান্ত থেকে শুরু করে, সাউথ এশিয়া, মিডল ইস্ট, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, লতিন আমেরিকা আজ পানি নিয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি৷ আফৃকায় এ সমস্যাটি রীতিমত ভয়াবহ৷ সেখানে পানি যেন দুর্লভ৷ সেখানকার কোনো কোনো দেশে প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত পানিও জনগণকে কিনে পান করতে হচ্ছে। আর এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফের মতো বিশ্ব দাপিয়ে বেড়ানো আর্থিক সংগঠনগুলো৷ তাদের দেয়া শর্তসাপেক্ষ ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে ঘানা সরকার এক সময় দেশের হতদরিদ্র মানুষের কাছে তাদের নিজস্ব উত্সের প্রাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের ওপরও ট্যাক্স বসিয়েছিল৷আবার, পানি নিয়ে বিশ্বব্যাপী আন্তঃসীমান্ত সমস্যাও কম নয়৷ শুধু আফৃকা নয়, মিডল ইস্ট, এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলেও প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের মধ্যে অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টন নিয়ে সমস্যা রয়েছে৷ পানির জন্য একেকটি দেশ নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে অন্য দেশকে ঠেকিয়ে রাখছে৷ পানির ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ যেন খর্ব না হয় সে জন্য অনেক দেশ নিজেদের পারমাণবিক শক্তিধর করে তোলার দিকেও নজর দিয়েছে৷ অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে হাজার হাজার সৈন্য সর্বক্ষণ পাহারা দিয়ে যাচ্ছে বিরোধপূর্ণ নদীর পানি৷ আবার অপেক্ষাকৃত কম শক্তির প্রতিবেশী দেশকে অভিন্ন নদীর পানি থেকে সুকৌশলে বঞ্চিত করছে অনেক দেশ৷ অভিন্ন এই নদ-নদীগুলো নিজ ভূখণ্ডে অবস্থিত অংশে তারা বাধ তৈরি করে নদীর পানির গতিপথ পরিবর্তন করে দিচ্ছে৷ এর মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশকে তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে শোষণ করা হচ্ছে অত্যন্ত সূক্ষ্ম বুদ্ধির কূটচালে৷ তবে এ ধরনের শোষণনীতি আবার অন্যান্য সুিবধা আদায়ের চাবিকাঠি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷ পানি না পাওয়ায় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে নিজেদের প্রয়োজনীয় পানির জন্য চুক্তি করে বঞ্চিত দেশ৷ এ সময় তাদের ওপর বাজার দখলের মতো কঠিন শর্তসহ অন্যান্য স্পর্শকাতর বিষয়ে শর্তারোপ করা হয়৷ এর ফলে বিভিন্নভাবে শোষিত হতে থাকে একেকটি দেশ৷ এসব বঞ্চিত দেশের মানুষের তাই ক্ষোভ কম নয়৷ মাঝে-মধ্যেই তারা বিভিন্ন জায়গায় ফুসে উঠছে৷ এমনকি একই দেশের অভ্যন্তরেও বিভিন্ন প্রদেশ বা রাজ্যের মধ্যে পানি নিয়ে বিরোধের নজির রয়েছে৷ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ইনডিয়া এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷ কাবেরী নদীর পানি বণ্টন নিয়ে সেখানকার কর্নাটক এবং তামিলনাড়– রাজ্যের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিরোধ সম্প্রতি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ এই বিরোধের জের ধরে অতীতে সেখানে বড় ধরনের দাঙ্গা পর্যন্ত সংগঠিত হয়েছিল এভাবেই বিশ্বজুড়ে পানি সমস্যা অত্যন্ত প্রকট৷ বিশ্বের সবাই পানির ওপর নিজেদের দখল রাখতে চায়৷ এ জন্য সবারই রয়েছে অক্লান্ত চেষ্টা৷ কারণ সবাই জানে পানি হাতে থাকলেই কেবল আগামী দিনে বিশ্বে টিকে থাকা সম্ভব৷ তাই বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসন্ন৷ আর এই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইসু হতে যাচ্ছে পানি৷ একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী পানি চ্যালেঞ্জ একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের এই স্বর্ণযুগে পানির প্রাপ্তি এবং তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়ে উঠেছে নতুন চ্যালেঞ্জ৷ বিশ্বের মোট তিনভাগ জল আর একভাগ স্থল হলেও ব্যবহার উপযোগী পানির পরিমাণ কিন্তু অত্যন্ত স্বল্প৷ পৃথিবীর তিন ভাগ পানির মধ্যে ৯৭ ভাগ হচ্ছে সাগরের লবণাক্ত পানি এবং ২ ভাগ রয়েছে বরফ আকারে৷ এগুলো পৃথিবীর মেরুবৃত্তে এর আশেপাশে জমাট বেধে আছে৷ কিন্তু পরিবেশ দূষণের ফলে বিশ্ব উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় এসব বরফও এখন গলতে শুরু করেছে৷ এর ফলে বরফগলা পানি গিয়ে মিশছে সাগরের নোনা পানির সঙ্গে৷ বরফগলা পানি সাগরে পড়ার ফলে বিশ্বব্যাপী সাগরের পানির উচ্চতা বাড়তে শুরু করেছে৷ যার প্রভাব হয়েছে আরো মারাত্মক৷ সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সরাসরি হুমকির মুখে পড়েছে মালদ্বীপসহ বিশ্বের অন্যান্য দ্বীপাঞ্চল এবং নিচু দেশগুলো৷ এমনকি আমাদের বাংলাদেশও এই হুমকির বাইরে নয়৷ বরফগলা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই হয়তো বিশ্বের অনেক দেশকে তলিয়ে যেতে হবে সাগরের নিচে৷ বিশ্ব মানচিত্রে সমুদ্রের আকার তখন আরেকটু বাড়বে আর কমবে পৃথিবীর বুকে স্থান পাওয়া দেশের সংখ্যা৷ ৯৭ ভাগ লবণাক্ত এবং ২ ভাগ বরফের পর বাকি যে মাত্র এক ভাগ পানি অবশিষ্ট থাকে তাই হচ্ছে জীবন৷ আগের ৯৯ ভাগ পানি ব্যবহারের অনুপযোগী৷ কিন্তু মাত্র এই ১ ভাগ পানি রয়েছে বিশ্বের সব মানুষের ব্যবহারের জন্য৷ এই পানির উত্স হচ্ছে, বিভিন্ন খাল-বিল, নদ-নদী, পুকুর, জলাশয়, কূপ, ঝরনা, জলপ্রপাত এবং বৃষ্টি৷ কিন্তু এই সামান্য পরিমাণ পানিও কি আমরা ব্যবহার উপযোগী রাখতে পারছি? পানির ব্যবহার সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানের স্বল্পতা এবং পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অদূরদর্শিতার জন্য এই সামান্য পরিমাণ মহামূল্যবান পানিও আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সামান্য পরিমাণ ব্যবহার উপযোগী পানিকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার অনুপযোগী করে তোলা হচ্ছে৷শিল্পোন্নত দেশগুলো নিজেদের উত্পাদিত পণ্য বর্জ্য পানিতে ফেলে পানি দূষিত করছে৷ সারা বিশ্বের ওষুধ এবং চামড়া শিল্পের বিষাক্ত বর্জ্যের শেষ ঠিকানা হচ্ছে বিভিন্ন জলাশয়ের পানি৷ এর ফলে বিশুদ্ধ পানির হাতের কাছে থাকা উত্সগুলো মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে যাচ্ছে৷ অন্যদিকে স্বল্পোন্নত এবং অনুন্নত দেশগুলোর মানুষের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার অভাব৷ পানি ব্যবহারের ওপর তাদের যথাযথ জ্ঞান না থাকায় তারা নিজেদের খেয়াল খুশিমতো পানির উত্সগুলো ব্যবহার করছে৷ ইনডিয়া এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে যথেচ্ছভাবে পানির এসব উত্স ব্যবহার করা হয়৷ গরু-ছাগলকে পানিতে গোসল করানো থেকে শুরু করে এমন কোনো কাজ নেই যেগুলো এ অঞ্চলের মানুষ পানিতে করে না৷ তাই আগামী দিনে বেচে থাকার জন্য পানির যথাযথ জ্ঞানসম্পন্ন ব্যবহার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে৷ বাংলাদেশে পানি সমস্যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পানি সমস্যা রয়েছে৷ ছোট এই দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে পানির চাহিদা এমনিতেই বেশি৷ দেশের সর্বত্র নদ-নদী জালের মতো বিস্তৃত থাকলেও সবগুলোর উত্সই দেশের বাইরে থাকায় সঠিক পরিমাণে পানি প্রাপ্তির বিষয়টি প্রশ্নসাপেক্ষ৷ তার ওপর দেশের অভ্যন্তরে যে সামান্য কিছু বিশুদ্ধ পানির উত্স রয়েছে সেগুলোরও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না দেশের জনগণের শিক্ষার অভাবে৷ দেশের ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার পর সারফেস ওয়াটারের ওপর চাপ বেড়ে যায়৷ কিন্তু বাংলাদেশে নদী, পুকুরসহ অন্যান্য জলাশয়ের পানি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দূষিত৷ গ্রামাঞ্চলে অনুন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং কৃষিতে অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিকের ব্যবহার এসব পানিকে ব্যবহার অনুপযোগী করে তুলছে৷ অন্যদিকে দেশের নীতিনির্ধারক মহলও এ ব্যাপারে খুব সতর্ক নয়৷ পানি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব এখনো দেশের কর্তাব্যক্তিরা সঠিকভাবে অনুধাবন করতে না পারায় প্রতিনিয়ত দেশের মূল্যবান পানিসম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ সবার জন্য পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এবং পানির যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে পানি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা এখনো সেভাবে কার্যকর করা হয়নি৷ অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ইনডিয়ার সঙ্গে বিস্তৃত সীমানায় মোট ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে৷ বাংলাদেশ ভাটির দেশ হওয়ায় এ নদীগুলোর মধ্যে ৫৩টি ইনডিয়া থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷ এর মধ্যে মাত্র একটি নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে ইনডিয়ার সঙ্গে চুক্তি রয়েছে৷ বাকি ৫২টি নদীর ক্ষেত্রেই কোনো ধরনের চুক্তি নেই৷ যে একটি নদীর ব্যাপারে চুক্তি রয়েছে সেই গঙ্গা-পদ্মার পানির হিস্যা নিয়েও দু’দেশের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে৷ বাংলাদেশ তাদের ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না বলে বরাবরই অভিযোগ করে আসছে৷ অন্যদিকে ইনডিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করে তাদের বিশাল আয়তন বেশি জনসংখ্যার দোহাই দিয়ে তাদের বেশি পরিমাণ পানির প্রয়োজন বলে দাবি করে আসছে৷ আবার বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দূরে ফারাক্কায় বাধ নির্মাণ করে নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন৷ এদিকে আরো কিছু স্থানে ইনডিয়ার বাধ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে৷ এর মধ্যে সিলেট সীমান্তের টিপাইমুখ বাধ অন্যতম৷ এভাবে বাধ নির্মাণের ফলে দু’দেশের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত পানি সমস্যা বেড়েই চলছে৷ তাই পানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইসুতে সঠিকভাবে পদক্ষেপ নেয়া এবং যথাযথ পানি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন বাংলাদেশের জন্য এখন অতি জরুরি৷ পানি সঙ্কট মোকাবেলায় প্রয়োজন গুড গভর্ন্যান্স পরিবর্তীত এ বিশ্ব প্রেক্ষাপটে পানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়ে সঠিক এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য৷ মেধাদীপ্ত উদ্যোগই পারে এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায় খুজে বের করতে৷ জীবন এবং সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে পানির প্রয়োজনীয়তা যেহেতু ব্যাপক তাই এর যথাযথ মূল্যায়ন করাও প্রয়োজন৷ এ জন্য বিশেষজ্ঞরা বিশ্বনেতাদের নিজ নিজ দেশে গুড গভর্ন্যান্স চালুর কথা বলেছেন৷ কেননা গুড গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে এ সঙ্কট উত্তরণের পথগুলো দ্রুত পরিষ্কার করা সম্ভব৷পানি কি, কোথায়, কখন, কি কারণে প্রয়োজন ও কিভাবে তা পাওয়া সম্ভব - এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে গুড গভর্ন্যান্সের গুরুত্ব অপরিসীম৷ পানি সম্পদের সঠিক প্রাপ্যতা ও পানি সেবা প্রদান, বিতরণ, যথাযথ পানি প্রশাসন আত্তীকরণ, বর্ধিত পানির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পানি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, আর্থ-সামাজিক কার্যক্রম এবং ইকসিস্টেমের মধ্যে পানির ব্যবহারে ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক নীতি প্রণয়নে কোনো বিকল্প নেই৷ ওয়াটার পলিসির এ গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং বৈধকরণ মূলত নির্ভর করে দেশের সরকারের ভূমিকা, সিভিল সোসাইটি এবং প্রাইভেট সেক্টরের দূরদর্শিতার ওপর৷ এ জন্য সরকারকে যে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হতে হয়৷ দুর্নীতি রোধে সরকারকে কোন পথে, কি ধরনের ভূমিকা নেয়া, কি ধরনের ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম কার্যকর করা উচিত তা নির্ভর করে গুড গভর্ন্যান্সের ওপর৷ পানির উত্স, পানি সেবা প্রদান এবং সরবরাহ সিস্টেম বিশ্বব্যাপী যে দুর্নীতির বেড়াজালে আটকে আছে তা থেকে দ্রুত পরিত্রাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে গুড গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠা করা জরুরি৷ কেননা বিভিন্ন কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, এসব দুর্নীতির ফলে সাধারণত গরিব মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ কিন্তু আশা করা হয়, এ ব্যাপক দুর্নীতি কমানো সম্ভব হলে তা গরিব মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি এবং নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে গ্রেটার গ্লোবাল একসেস তৈরি করতে সমর্থ হবে৷ এর ফলে সরকারকে দেয়া জনগণের ঘামঝরানো ট্যাক্সের টাকার অন্তত একটি উপযুক্ত ব্যবহার হবে৷এছাড়া পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা পানি প্রাপ্যতা আরো সহজ করে তুলতে পারে৷ পানি দূষণ এবং ইকলজিকাল ব্যালান্স প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সেফগার্ড হিসেবে কাজ করতে হবে৷পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, পানি নিয়ে একেক দেশে একেক রকম আইন বিদ্যমান রয়েছে৷ এক দেশের আইনের সঙ্গে সাধারণত অন্য দেশের আইনের সাদৃশ্য খুব একটা খুজে পাওয়া যায় না৷ কারণ বিভিন্ন দেশের আইনগুলো তৈরি করা হয় সে দেশের প্রয়োজন, ভৌগলিক অবস্থান, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং নিজ স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখে৷ এ ফ্যাক্টরগুলো সব দেশে একই রকম না থাকার কারণে একই বিষয়ের ওপর বিভিন্ন দেশের আইন ভিন্ন রকম হয়ে থাকে৷ এ কারণে অভিন্ন নদ-নদী এবং পানির উত্সগুলোর পানি ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সমঝোতা অনেক ক্ষেত্রেই বাধার সম্মুখীন হয়৷ তাই এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন থাকা জরুরি৷ যদিও বর্তমানে কিছু আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে৷ সেগুলো আন্তঃসীমান্ত পানিবিরোধ মেটাতে পারছে না৷ কেননা প্রত্যেক দেশই নিজের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে এতোটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে, এ কাজ করতে গিয়ে তারা অন্যের অধিকার খর্ব করলেও সে ব্যাপারে তাদের কোনো মাথা ব্যথা থাকে না৷ কিন্তু পানি যেহেতু নির্দিষ্ট কোনো দেশের ভৌগলিক অঞ্চলের একক সম্পদ নয় তাই এর ব্যবহারের অধিকার, এর গতিপথের আশপাশের এলাকায় বসবাসকারী প্রতিটি মানুষেরই রয়েছে৷ এ জন্য প্রতিটি দেশেরই উচিত, যেসব দেশের সঙ্গে তাদের পানি নিয়ে সঙ্কট রয়েছে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান করা৷ এ জন্য আন্তর্জাতিক আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করা বর্তমানে অত্যন্ত জরুরি বলে বিশ্লেষকরা মত প্রকাশ করেছেন৷এদিকে বিভিন্ন দেশের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও রীতিনীতি ভিন্ন হওয়ার কারণে পানি বিতরণ বা সরবরাহ প্রক্রিয়ায় বৈষম্য দেখা যায়৷ ফলে প্রয়োজনীয় পানিপ্রাপ্যতার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেকে৷ পানিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য আমাদের এ অঞ্চলে একটি নতুন বিষয় হলেও একেবারেই যে হচ্ছে না তা কিন্তু নয়৷ অন্যদিকে আফৃকার দেশগুলোতে পানি বিতরণের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে৷ এসব অঞ্চলে প্রয়োজনীয় স্বাদু পানির উত্স ও পরিমাণ কম থাকায় মানুষের মধ্যে সব সময় পানির চাহিদা অত্যাধিক থাকে৷ আফৃকায় পানি অনেকটা দুর্লভ এবং মূল্যবান পদার্থ৷ তাই এর উত্সস্থলে পানি বিতরণের ক্ষেত্রে নারীদের বৈষম্যের শিকার হতে দেখা যায়৷ একই ধরনের সমস্যা সামান্য পরিমাণে হলেও ইনডিয়ার রাজস্থানসহ কিছু এলাকায় দেখা যাচ্ছে৷কৃষির সঠিক সম্প্রসারণ খাদ্য উত্পাদন বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান শর্ত৷ আর পানি ছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অসম্ভব৷ বিশ্বের বর্ধিত জনসংখ্যার বড় আকারের খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য কৃষিকে সময়োপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে৷ এ ক্ষেত্রে কৃষিতে পানির প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে৷ আগামী প্রজন্মের খাদ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভূ-উপরস্থ পানির উত্স যেমন নদ-নদী, লেক, পুকুর, জলাশয়ের পানি কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহারের মাত্রা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকবে৷ তাই বর্তমান বিশ্বে স্বল্প পরিমাণ কৃষকের হাতে বেচে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কৃষিকে টিকিয়ে রাখতে কৃষিক্ষেত্রে পানির যথাযথ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি৷ মিলিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি)-র এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য কৃষি এবং স্যানিটেশন সেক্টরে পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা অন্তত প্রয়োজন৷এদিকে সঠিক পানি ব্যবস্থাপনার অভাবে বিশ্বব্যাপী হুমকির মুখে পড়েছে ইকোসিস্টেম৷ ইকসিস্টেম হচ্ছে পরিবেশের সঙ্গে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর খাপওয়ানোর একমাত্র সিস্টেম৷ কিন্তু পানি স্বল্পতার কারণে ইকসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ এর ফলে জীব সম্প্রদায়ের জীবনধারণ হুমকির মুখে পড়েছে৷ বাস্তুতন্ত্রেরও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে শুধু সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা৷ বিশ্বের ইকসিস্টেমকে টিকিয়ে রাখতে এবং আগামী প্রজন্মের কাছে একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়ার জন্য তাই এখনই সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন৷ এ জন্য গুড গভর্ন্যান্সের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন পানি বিশেষজ্ঞরা৷
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.