ফেসবুক আইডি:নাই
নারীর সমঅধিকার নিয়ে আন্দোলন চলে এসেছে, চলছে এবং চলবে। Gender Equality নিয়ে বাংলাদেশের নারীবাদীরা সোচ্চার। কিন্তু তাদের সোচ্চার কণ্ঠের সরব বাণী গন্ডীর ভেতর সীমিত, এ ধারণা হয়তো অযৌক্তিক নয়। কারণ তাদের সোচ্চার ধ্বনি সর্বস্তরে পৌঁছে কিনা সে সম্পর্কে আবার জরিপ করার প্রশ্ন দেখা দেবে। তবে এই মুহূর্তে তাদের জন্যে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী সংবাদ খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে।
সে খবরের প্রেক্ষিতে মনে হয়, আন্দোলন ছাড়াই নারীকে সারাবিশ্বে একাধিপত্য স্থাপন করতে হবে। ‘পুরুষ বিলুপ্ত হবে, পৃথিবী একদিন হবে শুধু নারীর’ শিরোনামে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটির মূল চরিত্রে রয়েছে একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী। তাঁর নাম জেনিফার গ্রেভস। নাম থেকে বোঝা যায় তিনি নারী বিজ্ঞানী এবং নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার একজন অগ্রণী বিজ্ঞানী। তবে এই অধিকার লাভের জন্যে নারীদের হয়তো পঞ্চাশ লাখ বছর অপেক্ষা করতে হবে।
তিনি গবেষণা করে বের করেছেন যে, পুরুষের জীন ক্রমে ক্রমে সংকুচিত হচ্ছে। এর ফলে একদিন তা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বিজ্ঞানের জটিল গবেষণার অভ্যন্তরে গিয়ে লেখাটিকে জটিলতর করে লাভ নেই। পুরুষের এক্স ক্রোমোজেন বিলুপ্ত হয়ে গেলে আর পুত্র সন্তান জন্মাবে না, তার বদলে জন্ম নেবে কেবল কন্যা সন্তান। তিনি হিসেব-নিকেশ করে বলেছেন এই বদলের পালা সম্পন্ন হতে সময় লাগবে পঞ্চাশ লাখ বছর।
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে নারীবাদী আন্দোলনের খুবই প্রয়োজন, তবে অতি আধুনিকতা অবশ্যই পরিত্যজ্য। অধিকারের ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে অশালীনতা কিংবা সমাজের নিয়মাচার ভঙ্গ করা হবে দুর্বিনীত কাজ। ওটা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়। নারী স্বাধীনতা মানে তাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্ব প্রকার কাজকর্মে সমান অধিকার। ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন, হিউম্যান রাইটস থেকে নারীদের বঞ্চিত রাখা যাবে না।
মূল কথা, চাই নারীর ক্ষমতায়ন। একবিংশ শতাব্দীর দুটো লক্ষণীয় বিষয় হলো বিশ্বায়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন। পৃথিবী আজ বড় নেই। প্রযুক্তির বিকাশ ও উন্নতির সাথে সাথে পৃথিবীর দূরত্বও কমে গেছে। ঘরে বসেই কম্পিউটারের মাধ্যমে সব খবরাখবর দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে।
স্যাটেলাইটের বদৌলতে পৃথিবীর তাবৎ সংস্কৃতি ঘরের ভেতর টেলিভিশনে বন্দী হয়ে গেছে। মুক্ত বাজার অর্থনীতি বিশ্বের সব দেশকে একসূত্রে গেঁথে দিয়েছে। ফলে ধনী ও দরিদ্র দেশের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন হয়ে গেছে।
বিশ্বায়নের সাথে নারীর ক্ষমতায়নের সূত্রটা বাঁধা। পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত নারী জাগরণের এক উত্তাল তরঙ্গের ধ্বনি অনুরণিত হচ্ছে।
পুরুষশাসিত বিশ্বে নারী তার যথাযোগ্য মর্যাদার জন্য লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয়ভাবে নারীর সমান অধিকার স্বীকৃত থাকলেও সামাজিকভাবে তা প্রতিফলিত হচ্ছে না। নারীকে অসম আচরণের শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর সাক্ষী পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিদিনের খবরা-খবর। এর সাক্ষী নারীসমাজ স্বয়ং।
এই বিভেদের বেড়া ভাঙতে না পারলে নারীর ক্ষমতায়ন খাতা-কলমেই নীরবে লিপিবদ্ধ হয়েই থাকবে। কিন্তু বিশ্বে যেখানে নারীর সংখ্যা পুরুষের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে, নারীদের মধ্যে শিক্ষার হারের গতিও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে নারীকে অবহেলিত মানুষ হিসেবে গণ্য করে অবজ্ঞার দলে ফেলে রাখার দিনও গত। কিন্তু তা সত্ত্বেও অবহেলা-অবজ্ঞার সত্যটা, সত্যই থেকে যাচ্ছে। নির্যাতিত, নিপীড়িত, অত্যাচারিত নারীকে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যে তাদেরকেই যুদ্ধ করতে হবে। আদায় করে নিতে হবে তাদের ন্যায্য পাওনা।
নারী তো আর অবলা নয়, তারা সারাবিশ্বের জাগ্রত এক জনগোষ্ঠী। তাদের সমবেত শক্তিকে দাবিয়ে রাখা আজ কল্পনার অতীত। তাই জাগ্রত নারী সমাজকে নিজেদের জন্যে নিজেদেরই লড়াই করতে হবে।
একবিংশ শতাব্দী পার হতে আরো দীর্ঘসময় পাড়ি দিতে হবে। আজকের নারীসমাজ তাদের সংগ্রামের ভেতর দিয়ে তাদেরই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে রেখে যাবে দিক-নির্দেশনা, যা অনুসরণ করেই ক্ষমতায়নের যুদ্ধে বিজয়ের বরমাল্য ছিনিয়ে আনতে পারে নতুন প্রজন্ম।
বিজ্ঞানী জেনিফার গ্রেভস প্রসঙ্গে ফিরে দেখা যেতে পারে। যদি পঞ্চাশ লাখ বছর পর সারা পৃথিবী নারীময় হয়ে যায়, তাহলে একটা লঙ্কাকাণ্ড ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। নারীদের মধ্যে কলহ বাধলে তা সংবরণের জন্যে কোনো পন্থা থাকবে না। প্রতিবেশী দুই গৃহিণী মহিলার কলহের তীব্রতা দেখে এই আশংকা। তাই বিজ্ঞানী জেনিফার বলেছেন, এই সময় (পঞ্চাশ লাখ বছর) অনেক ব্যাপক।
তাই নারী কিংবা পুরুষের সঙ্গীহারা হবার ভয় নেই। তিনি আরো বলেছেন, তবে কি সুদূর ভবিষ্যতে পৃথিবী সত্যই পুরুষশূন্য হয়ে যাবে? ভবিষ্যতে বিবর্তনের মাধ্যমে পুরুষের শরীরে পুত্র সন্তান জন্মদানের ক্রমোজম পুনরুৎপাদনও হতে পারে। সুতরাং পুরুষ বা নারী জাতির কোনো ভয় নেই। বিশ্বে পুরুষ যেমন থাকবে নারীও থাকবে। তবে নারীর ক্ষমতায়নে সংগ্রাম অব্যাহত থাকতেই হবে।
শুধু প্রতীকী ক্ষমতায়নে নারী জাতির কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
সবশেষের কথা, পুরুষ ও নারী জাতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য না থাকলে, শুধু নারী সকল ক্ষমতার অধিকারী হয়ে গেলে, সেই ক্ষমতা ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের রূপ ধারণ করতে পারে। সেটা নিশ্চয়ই কারো কাম্য নয়। নারীরা ক্ষমতায়ন সংগ্রাম জয়যুক্ত হোক এবং পুরুষ ও নারী সমান অধিকারের ক্ষমতা ভাগাভাগি করে একটা নতুন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলুক সেটা হবে মানবজাতির জন্যে মঙ্গলজনক ও কল্যাণকর। এটাই চিরসত্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।