আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কলঙ্ক মুছে ফেলতে চাই

একটি বানানভুলসর্বস্ব ব্লগ শাহবাগের আলো আমাদের ক্যাম্পাসে পৌছাতে দেরী হয়নি। শিবির ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত রাবি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ আন্দোলনের সমর্থনে রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছে। ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্ত্বরে কর্মসূচির সূচনা করে গণমঞ্চ। গত কয়েক দিন থেকেই গণমঞ্চ শ্লোগান, গান আর পথনাট্যে টুকিটাকি চত্ত্বর সরগরম করে রেখেছে। এছাড়াও দৈনিক মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি তো চলছেই।

মাত্র অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থীর উদ্যোগে রাবি শাহবাগের সাথে সহমত প্রকাশ শুরু করে। কিন্তু প্রতিদিনই আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। আজ গণমঞ্চ, চারুকলা বিভাগ ও গণযোগাযোগ বিভাগের সম্মিলিত পতাকা মিছিল পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। শিবিরের আস্তানা হিসেবে খ্যাত ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে জামাত-শিবির বিরোধী শ্লোগানে বিনোদপুর এলাকা গমগম করে ওঠে। কিন্তু রাবির আন্দোলন এখনো শাহবাগের মত পরিপূর্ণতা পায়নি।

রাবির প্রায় ছাব্বিশ হাজার শিক্ষার্থীর অধিকাংশই এখনো নিজেদেরকে আন্দোলনের বাহিরে রেখেছে। টুকিটাকি চত্ত্বরের কর্মসূচিতে প্রতিদিন অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা হাজারে পৌছায় টেনেটুনে। রাতের কর্মসূচিতে সে সংখ্যা আরো নিচে নেমে যায়। পরিচিত অনেককে আন্দোলনে অংশ নেবার অনুরোধ করলে তারা ক্লাস ও পড়া-শোনার দোহাই দিয়ে পার পেতে চান। টুকিটাকি চত্ত্বর রাবির কেন্দ্র হওয়ায় সেখানে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা থাকে সবসময়ই।

কিন্তু এই আন্দোলন শুরু হবার পর থেকে দেখছি যারা আগে আড্ডা দিতে চত্ত্বরে জমায়েত হতেন তারা অনেকেই এখন জায়গাটা এড়িয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে এই প্রশ্ন করছেন যে আন্দোলন করে কি হবে, রায় তো একবার হয়েই গেছে, সেটা বদলানোর আর কোনো উপায় নেই। সুতরাং বৃথা কাজে সম্পৃক্ত হয়ে নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট করতে তারা চাননা। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একটি বড় অংশ আমার নিজের বিভাগ থেকে, যদিও তার সংখ্যা শাহবাগের দিকে তাকালে নিজেই লজ্জা পাবে। সভ্যতা ও ভদ্রতা- এই দুয়ের জটিলতার কারণে নিজের ক্লাসের কাউকে জোর করতে পারি না।

খুব কাছের পরিচিত কাউকে আহ্বান জানালে অত্যন্ত তিক্ততার সাথে তারা তা খারিজ করে দেন। আমাদের বিভাগে ক্লাসে উপস্থিতির ব্যাপারে খুব কড়াকড়ি থাকায় ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করতে যেতে বলতে নিজেরেই খারাপ লাগে। তবু আমরা কয়েকজন তো যাই, এমন তো না যে আমরা ক্লাস করিনা। ক্লাসের ফাঁকে যে সময়টা সবাই আড্ডা দেয় সেই সময়টুকু একটা ভাল কাজে দিতে তো কারো সমস্যা থাকার কথা না। আর পড়া-শোনার ক্ষতি হবে এই কথাটাও তো অবান্তর।

আন্দোলন করছে এরকম অনেকেই তাদের নিজেদের বিভাগে কৃতী ছাত্র। এত পড়া-শোনা করে যদি কেউ ভাল একটা কাজে একতা প্রকাশ করতে না পারে তাহলে পড়া-শোনা করে কিইবা শেখা হলো? বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় মুক্ত শিক্ষার কেন্দ্র, যদিও আমাদের সম্মানিত শিক্ষকদের চেষ্টায় কথাটা হাস্যকর পর্যায়ে চলে গেছে। আগে যখন বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত শিক্ষার কেন্দ্র ছিল তখন শিক্ষকরা ছিলেন কেন্দ্রে চারপাশের দৈবিক বলয়। কিন্তু আজকের শিক্ষকদের দেখলে জোহা স্যার নিজেকে শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা পেতেন। আমাদের আজকের শিক্ষকরা নিজেদের আখের গুছাতেই ব্যস্ত থাকেন।

শিক্ষার্থীরা ভাল কিছু করতে চাইলে নিজেদের দলীয় অবস্থান অক্ষুন্ন রাখতে শিক্ষকরা তাদের নিচে টেনে নামান। শিক্ষার্থীরা মহৎ উদেশ্যে আন্দোলনে যোগ দিতে চাইলে তারা তো তাতে যোগ দেনই না বরং ক্লাস উপস্থিতি ও রেজাল্টের সতর্কতা বাণী দিয়ে তাদের আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেন। জাফর ইকবাল স্যারের মত শিক্ষকরা যখন শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সহমত ব্যক্ত করে সারাদিন তাদের উৎসাহ দেন, আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাদের সময় নষ্ট করতে অনুৎসাহিত করেন। আমাদের সামনে ভাল চাকুরির মুলো ঝুলিয়ে তারা চলে যান তাদের পার্টি অফিসে অযোগ্য পার্টি কর্মীদের জন্য চাকুরির তদবির করতে। শিক্ষকদের আড্ডাখানা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট থেকে খুব কাছেই।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যখন প্রতিদিন সন্ধ্যায় কাজলা গেটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে স্লোগান দেয় তারা তখন তাদের জুবিরী ভবনে দেশের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাদের একবারও মনে হয়না তাদেরই শিক্ষার্থীরা সারাদিন কষ্ট করে আন্দোলন করছে, তাদেরকে একটু দেখে আসি, একটু উৎসাহ দিয়ে আসি। অথচ এই শিক্ষকরাই তাদের প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে একটুকু দ্বিধা করেন না। তখন শিক্ষার্থীদের যতই কাজ থাকুক শিক্ষাগুরুর প্রয়োজনই তাদের জন্য সবকিছু হয়ে যায়। আজকে রাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শাহবাগে উপস্থিত শিক্ষকদের দিকে মুখ তুলে তাকায়।

তাদের শিক্ষকরা তাদেরকে বর্জন করেছে। স্বার্থান্বেষী, মেরুদন্ডহীন শিক্ষকরা আমাদেরকে শিক্ষাদান করার যোগ্যতা রাখেন না। শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণেই আজকে রাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা এত কম। শিক্ষকরা উৎসাহ দিলে আমরাও শাহবাগের সাথে সমুচ্চরে আন্দোলন করতে পারতাম। শিক্ষকদের কাছে আমাদের সবার অনুরোধ আপনারা সামনাসামনি আমাদের সাথে সহমত প্রকাশ করতে না পারলেও পরোক্ষভাবে করুন।

আপনারা সমর্থন করলেই আমাদের আন্দোলন আরো জোরালো হবে। জামাত-শিবিরকে এখনই রুখে দিতে না পারলে তার সবচেয়ে বড় শিকার হবেন আপনারাই। আমরা তো পাঁচ বছর পর ক্যাম্পাস থেকে চলে যাব। কিন্তু জামাত যদি পরবর্তী সরকারের সাথে ক্ষমতায় আসে তাহলে শিবিরের অপমান আপনাদেরকেই সহ্য করতে হবে। বিভাগীয় শিক্ষকরা যদি একবার করেও আমাদের আন্দোলনে এসে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যান তাহলে আমাদের আন্দোলন আর শক্ত হবে।

নিজেদেরকে গুটিয়ে রেখে আমাদের সামনে আর নিজেদেরকে ছোট করবেন না। বাহিরের কেঊ যখন রাবি ক্যাম্পাসে কথা শুনে তখন তার প্রথম অভিব্যক্তি হয় “শিবিরের ঘাঁটি”। নিজের ক্যাম্পাস বলে খুব স্বাভাবিকভাবেই সেই কথার প্রতিবাদ করি। কিন্তু আজকে মনে হচ্ছে সত্যিই আমাদের ক্যাম্পাস ভর্তি শিবির। সাধারণ ছাত্ররা যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে গলা না তুলে মুখ লুকিয়ে পালাতে চায় তখন বুঝতে হবে ক্ষমতায় না থেকেও শিবিরের প্রতিপত্তি কতখানি।

যারা নিজেদের বন্ধুদের দেখেও শিবিরের ভয়ে আন্দোলনে আসতে ভয় পাচ্ছে তাদেরকে বন্ধু ভাবতে সত্যিই ঘৃণা হয়। নিজেদের পরিচিত মেয়েদেরকে আন্দোলন করতে দেখেও যেসব ছেলে পড়া-শোনার দোহাই দিয়ে পালাতে চায় তাদের খোঁজাকরণ আজকে আবশ্যক হয়ে পড়েছে। আমরা আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাসের এই কলঙ্ক মুছে ফেলতে চাই। সবাই মিলে একসাথে চেষ্টা করলেই তা সত্যিই সম্ভব। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।