"A little knowledge of science makes man an atheist, but an in-depth study of science makes him a believer in God." Francis Bacon.
আমাদের দেশে বিকৃত ইতিহাস পরিবেশনের জন্য ইংরেজদের দোষ দেওয়া হলেও তাঁদের কূটনৈতিক জ্ঞান ও সুদূরপ্রসারী চিন্তাধারার কথা অস্বীকার করা যায় না । তাঁরা বুঝেছিলেন, ইতিহাসে ভেজাল দিয়েই ভারতবাসীকে অন্ধকারে রাখা সম্ভব, এবং এই ইতিহাসের মাধ্যমেই হিন্দু-মুসলমানের বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে । সেই উদ্দেশ্যে ইতিহাস-স্রষ্টা মুসলিম জাতির অক্লান্ত পরিশ্রমের রচনা-সম্ভার আরবী, ফারসী ও উর্দু ইতিহাস বইগুলোর প্রায় প্রত্যেকটি অধ্যয়ন, গবেষণা ও অনুবাদ করতে তাঁরা যে অধ্যবসায় ও পরিশ্রমশীলতার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা অনস্বীকার্য এবং উল্লেখযোগ্য ।
উদাহরণ হিসেবে কয়েকটা উল্লেখ করা হলোঃ
১. আবুল ফজলের আকবর নামার তৃতীয় খন্ডের অনুবাদ করেছেন মিঃ হেনরী বেভারীজ ।
২. আইন-ই-আকবরীর দ্বিতীয় ও তৃতীয় খন্ডের অনুবাদ করেছেন মিঃ এইচ এস জারেট এবং প্রথম খন্ড অনুবাদ করেছেন মিঃ এইচ ব্লকম্যান ।
৩. আল-বেরুনীর কিতাবুল হিন্দ অনুবাদ করেছেন মিঃ ই.সি সাচান ।
৪. মুসলিম মহিলা ঐতিহাসিক গুলবদন বেগম লিখিত হুমায়ুন নামার ইংরেজী অনুবাদ করেছেন মিসেস বেভারিজ ।
৫. জনাব মির্জা হায়দারের লেখা রশীদীর ইংরেজী করেছেন মিঃ ই.ডি রস ।
৬. পর্যটক ইবেনে বতুতার পর্যটনের কাহিনী লিখিত গ্রন্হের ইংরেজী অনুবাদ করেছেন মিঃ এইচ. এ. আর. গিবন
- প্রভৃতি । খুব অল্প কয়েকটি নাম উল্লেখ করা হলো ।
মূল তথ্যের সঙ্গে কোন কায়দায় কোন ভেজাল কিভাবে সংমিশ্রণ করতে হয় এ বিষয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনুবাদকগণ নিপূণ শিল্পীর পরিচয় দিয়েছেন । কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো- মূল গ্রন্হের ভাষা আরবী, উর্দু, ফারসী না জানার জন্য ইংরেজীতে অনূদিত বিভিন্ন পুস্তকের সহায়তা নিয়েই এবং শুধু সেগুলোকে কেন্দ্র করেই ভারতের অধিকাংশ সরকারী ইতিহাস রচিত হয়েছে বা হচ্ছে ।
এ প্রসঙ্গে ভারতের ইতিহাসের দিকপাল শ্রীমতি রোমিলা থাপার বলেনঃ
'স্কুল কলেজের পাঠ্য ইতিহাসের বই সত্যিই সেকেলে এবং অজস্র ভূল তত্ত্ব ও তথ্যে ভরা । কিন্তু পাঠ্যপুস্তকের অনুমোদন সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার কিংবা শিক্ষা পর্ষদের এখতিয়ার । অথচ ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইতিহাসের লোক নন- হয় আমলা, নয় রাজনীতিবিদ; যাঁরা কখনও ইতিহাস পড়েন নি অথবা ৬০/৭০ বছর আগেকার দু একটা বই নামোঃ নামোঃ করে পড়েছেন ।
রাজনীতিবিদদের ইতিহাস-চেতনার কথা আর নাই বললাম ; ইতিহাসের মধ্যে নিজের দল, গোষ্ঠীর বা সম্প্রদায়ের স্বার্থ খোঁজাই এদের কাজ । "
মনীষী রবীন্দ্রনাথ বলেছেনঃ "ভারতবর্ষের যে ইতিহাস আমরা পড়ি এবং মুখস্হ করিয়া পরীক্ষা দেই, তাহা ভারতবর্ষের ইতিহাসের এক দুঃস্বপ্নের কাহিনীমাত্র । "
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, আমাদের দেশের প্রচলিত ইতিহাসকে সর্বাংশে সঠিক বলে মনে করা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছু নয় ।
ভারতবর্ষের ক্যানসারের মত সবচেয়ে বড় ব্যাধি হলো সাম্প্রদায়িকতা । আর এই সাম্প্রদায়িকতার তিক্ততা অন্যান্য সম্প্রদায়ের চেয়ে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বেশি প্রকট ।
এটাকে নির্মূল করতে হলে, আমাদের ধারণায়, সর্বাগ্রে সঠিক ইতিহাস পরিবেশন অবশ্য কর্তব্য । তাছাড়া এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক জানাজানির , আদান-প্রদানেরও বিশেষ প্রয়োজন আছে ।
তবে সঠিক ইতিহাস পরিবেশনের পূর্বাহ্নে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার উচ্ছেদ সাধনে ইসলাম , কুরআন ও মুসলমান সম্পর্কে কিছু ধারণা দেওয়া আবশ্যক ।
ইসলাম, কুরআন ও মুসলমানঃ
আদি মানব হযরত আদম (আঃ) ছিলেন ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক । এই ইসলাম একটি ধর্ম ও ইজম -এর নাম ।
যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই ইসলাম আরো পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত হয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করে হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) এর সময় । তাঁর ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দে বিশ্বাগমন এবং ৬৩২ খ্রীষ্টাব্দে হয় পরলোকগমন । কুরআন হলো মহানবী (সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ আসমানী কিতাব, যা আজো বিশুদ্ধ ও অবিকৃত রয়েছে । আর শেষ নবীর বাণী, কাজ এবং সমর্থিত মতামতগুলো হাদীসের মধ্যে গণ্য । যারা কুরআন ও হাদীসের উপর বিশ্বাস রাখেন তারাই মুসলমান ।
পরিতাপের বিষয়, নানা পুস্তক, প্রবন্ধ, নাটক প্রভৃতির মাধ্যমে ভারত জনমানসে দেখানো হয়েছে এই মুসলমান জাতি বিদেশী, বাকি সব স্বদেশী; অতএব তারা আমাদের মিত্র নয় । সারা ভারতবাসীই যে এ চক্রান্তের শিকার হয়েছে তা অবশ্যই নয় । সর্ষের মত একটি বটের বীজের মধ্যে লুকিয়ে থাকে যেমন বিশাল বপু বৃহৎ একটি বট গাছ, তেমনি এই ভেদটুকুর ভেতর লুকিয়ে আছে বিরাট অকল্যাণ । এর সংক্ষেপ সমাধান হচ্ছে , মুসলমান স্বদেশী না বিদেশী এই নিয়ে বিষমন্হন না করে মনে রাখা ভালো, ভারতে মুসলমান আগমন এবং আর্য আগমন অভিন্নভাবে বিচার্য ।
(চলবে )
সূত্রঃ-চেপে রাখা ইতিহাস, গোলাম আহমদ মোর্তজা ।
মদীনা পাবলিকেশন্স ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।