কাজী আবেদ হোসেন[এ.ডি.সি রেভিনিউ,কিশোরগঞ্জ] যিনি অন্তরের অন্তস্থ থেকে গভীর মমত্ববোধের সাথে মিতালী করেছেন মোহনগঞ্জ উপজেলার “শিয়ালজানি”খালের সাথে। খালটিকে পুনরুদ্ধার কল্পে তিনি খালটিকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তিনি দিনের কর্মব্যস্ত সময় অতিবাহিত করে ছুটলেন তার বন্ধু”শিয়ালজানির” মুখ দর্শনে। ”শিয়ালজানির” নিকটে পৌঁছে তিনি শিয়ালজানিকে এই বলে আস্বস্ত করলেন,”ভয় নেই বন্ধু আমি তোমার পাশে আছি সবসময়”। তার কথায় স্মিত হেসে “শিয়ালজানি”জবাব দেয়-”তোমার প্রতি আমার আছে অগাধ বিশ্বাস আর অগাধ আস্থা”। তিনি তার উত্তর দিয়ে বলেন-”উল্টে গেছে সময়ের বিধান ,নিথর আজ তুমি “শিয়ালজানি”খাল,মিথ্যে দিয়ে ঢাকা তোমার বুক,তাইতো দেখতে পাই না তোমার যৌবন ভরা মুখ,নিশ্চিন্তে থাক “শিয়ালজানি”নব যৌবনে অম্লান করব তোমায় আমি”।
শিয়ালজানিকে উদ্দেশ্য করে এই কথাগুলি আপন মনে বলতে বলতে তিনি হাঁটতে লাগলেন শিয়ালজানি খালের পেছন দিকের পাড় ধরে । যেখান দিয়ে কখনো কোন মানুষের পদচারণ হয় না। দিনের পর দিন অজস্র নোংরা আর দুর্গন্ধ ভেদ করে তিনি ছুটে চললেন অবিরাম গতিতে। তার এই পদচারণা মাঝে মাঝে কিছু মানুষের দৃষ্টিগোচর হত। অপরিচিত পথিককে দেখে কেউ কেউ উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাত আর যে যার মত করে চলে যেত।
এভাবে পদচারণার সময় একদিন তার পায়ের উপর দিয়ে একটি সাপ অতিক্রম করল তাতেও তিনি থামলেন না । তার জন্ম যেন শিয়ালজানিকে উদ্ধার করার জন্য। তিনি ভাবলেন “দেশকে কিছুই দিতে পারিনি বরং দেশের আলো বাতাসের মাঝে সর্বক্ষণ বিচরণ করছি স্বার্থপরের মত”। খাল দেশের সম্পদ,জনগণের সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষা কল্পে হাসি মুখে মরণে নেই কোন ভয় এই ভাবনাকে মনে গেঁথে তিনি আবারো ছুটে চললেন,খালের পাড় ধরে।
অন্ধকারে পথ চলতে গিয়ে ঘটল এক বিপত্তি । যেহেতু খালটির পাড় ছিল চলার অনুপযোগী তাই চলার সময় তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন। পড়ার সাথে সাথে নিজের অজান্তে অতলে তিনি তলিয়ে গেলেন কোমর পর্যন্ত,মুখ থেকে বেরিয়ে এল চাপা কন্ঠের এক চিৎকার। সেই চিৎকারে ছুটে এল আশে-পাশের লোকজন্। তাদের সাহায্যে নিজেকে তিনি মুক্ত করলেন,বেরিয়ে এলেন নোংরার স্তুপ থেকে।
কেউ কেউ অবাক কন্ঠে সজোরে বলল “আরে উনাকে তো এই নোংরার ভেতর দিয়ে মাঝে মাঝে হাঁটতে দেখেছি,আবার কেউ কেউ বলল মাঝে মাঝে নয় বেশ কিছু দিন যাবৎ সবসময় সন্ধ্যার পর উনাকে এখান দিয়ে হাঁটতে দেখি,কেউ কেউ জানতে চাইল -এখান দিয়ে চলার কথা আমরা কেউ ভাবি না ,আপনি কেন এই নোংরার মধ্য দিয়ে হাঁটেন ?কেনই বা হাঁটেন?কাজী আবেদ হোসেন এবার আর নিজের পরিচয় গোপন করতে পারলেন না। তিনি তার পরিচয় তাদেরকে দিলেন এবং বললেন,আপনাদের সহযোগীতায় এই খালটি আমি পুনঃখনন করে তাকে তার পূর্বের রূপে উদ্ভাসিত করতে চাই!তার এ কথা শুনে সবাই বেশ অবাক হলো। কেউ কেউ বলল,খাল খনন কর্মসূচির কথা অনেক শুনেছি বাস্তবে এর দেখা মেলেনি। ”স্বাধীনতার পর থেকে অহন পর্যন্ত দেখতাছি আমাগো খাল হুদাই তরাট হইতাছে”। এই কথায় কাজী আবেদ হোসেন ফিরে তাকালেন দেখলেন সেই প্রথম পরিচয়ের বুড়ো চাচা।
তিনি চাচার মাথায় হাত রেখে বললেন আপনি এখানে?চাচা অশ্রুসিক্ত নয়নে অনুরাগে তার দিকে তাকিয়ে বললেন “ভিন গ্রামের মানুষ হইয়া যদি তুমি আমাগো গ্রামের কথা ভাব তয় সেহানে আমি থাকতে পারুম না কেন?কাজী আবেদ হোসেনের চোখেও জল চলে এল। তার পড়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে ঘটে গেল মোহনগঞ্জ বাসীর সাথে তার হৃদয়ের গভীর টানের ,গভীর মমত্ববোধের আর সহমর্মিতার এক অনবদ্য সেতু বন্ধন।
(চলবে)
বিঃদ্রঃলেখণীর তথ্যসূত্র শেষপর্বে প্রকাশিত হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।