হাঁটা পথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে হে সভ্যতা। আমরা সাত ভাই চম্পা মাতৃকাচিহ্ন কপালে দঁড়িয়েছি এসে _এই বিপাকে, পরিণামে। আমরা কথা বলি আর আমাদের মা আজো লতাপাতা খায়।
আমার সচল পাট অবেশেষে ফুরালো। ওই বৃত্তের সঙ্গে মানসিক সংযোগ আগেই নিঃশেষ হয়ে আছে, এখন তার সৎকারটুকু ঘোষণা দিয়ে করবার প্রয়োজন হলো।
অথচ আমার ইচ্ছা ছিল কাজটা নীরবে করা। কিন্তু বিধাতা নীরবেই কটাক্ষ করেন এবং বুঝবার আগেই বিপরীত চাবিটি ঘুরিয়ে দিলেন। সেই সুযোগ সচলায়তনের কর্তারাও রাখেননি। তাই ঠিক যখন খিড়কি দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলাম, দেখা গেল ঘটনার ফেরে পড়ে সদর দরজা দিয়ে অশান্তির মধ্যে ক্ষোভ নিয়ে চলে আসতে হচ্ছে। আমারও উপলব্ধি হওয়া দরকার ছিল, সেটা এখন হলো।
আমার সঙ্গে ফ্যাসিস্ট আচরণের প্রতিবাদ ছাড়াও সাধারণ ভাবে কেন আমার পক্ষে সচলায়তনে থাকা সম্ভব নয় সেটা বলা এখানে প্রাসঙ্গিক। একজন সচল সদস্য হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল অন্যায়, অসদাচরণ, এলিটিসিজম, গোষ্ঠীতন্ত্রের মতো ব্যাধির প্রতিবাদ করা। যে পাতে খাই, সে পাতকে পরিষ্কার রাখা সহজাত দায়িত্ব। সেই দায়িত্বই বিভিন্ন সময় পালন করার চেষ্টা করেছি। সেকারণে, চরম অপমানজনক পরিস্থিতির মধ্যেও সচলের বাইরে কোনো কথা বলিনি তাদের নিয়ে।
সচল নিষিদ্ধ হওয়ার (ঘটনাকে এখন আমার কাছে রহস্যই মনে হয়) সময়, কিংবা কমিউনিটিটির সবরকম অবস্থায় আন্তরিকতা ও উদ্যমের সঙ্গে সামিল হয়েছি। সেসবকে ভুল বলি না, কিন্তু সেই আচরণ আজ করবার মতো হেতু সেখানে আর খুঁজে পাচ্ছি না। যেহেতু ঘৃণা প্রকাশ আমার উদ্দেশ্য নয় সেহেতু ক্ষোভ অনুযোগে যাব না।
সংক্ষেপে আমার অবস্থানটা হলো এই:
১. ব্লগ লেখক-পাঠকের যৌথতার ফল। সেখানে মডারেশনের নামে মালিকসুলভ একচেটিয়া ক্ষমতাচর্চা চলতে পারে না।
২. সকল ব্লগার সমান এবং তাদের শ্রম ও চিন্তার ফসল হিসেবে ব্লগসম্পদের ওপর নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার অধিকার সবারই রয়েছে।
৩. প্রতিটি ব্লগার, তা তিনি অতিথি, সদস্য, পাঠক যেই হোন, তাদের সকলের ব্যক্তিগত উপস্থিতিকে হেয়, দলন, কটাক্ষ কিংবা আঘাত করার অধিকার কারোরই নেই। এই আচরণ কেবল ঘৃণিতই নয় প্রতিরোধযোগ্য।
ওপরের তিনটি অপরাধই সচল মডুরা প্রায়শই করে থাকেন। অন্য ব্লগেও এর বেশকম আছে।
কিন্তু যেহেতু আমি সেসবের সরাসরি অংশ বা ভুক্তভোগী নই, সেহেতু তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত টানা আমার পক্ষে এখন সম্ভব নয়।
এই অবস্থান থেকে একজন সক্রিয় ব্লগার ও সচল সদস্য হিসেবে আমার দাবি:
১. সচলে ওপরে বলা তিনটি অভিযোগের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও প্রতিকার করতে হবে।
২. আমার সঙ্গে যে অসদাচরণ করা হয়েছে তার জন্য দায়ি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। এরকম আচরণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ছোট পরিসরে করা হলেও বৃহত পরিসরে এর ফল ভয়াবহ। এর পেছনের প্রবণতাটি ভয়ঙ্কর অধিপতিসুলভ ও বিকারগ্রস্থ।
অংকুরেই এসবের বিহিত না হলে, তা আখেরে ব্লগচর্চার জন্য শুভ হবে না।
৩. ভবিষ্যতে কারো প্রতি কোনোরকম অন্যায় আচরণ, অগণতান্ত্রিকতা, ইরিটেটিং, চরিত্রহনন ইত্যাদি বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সেই ব্যবস্থাদির স্থায়ী অংশ নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪. আমার এই লেখার কমেন্টে অরুপ যে অসূয়াজনিত বিকারের ছাপ রেখেছে সেটা রেস্ট্রিক্টেড না রেখে সকলের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করতে হবে। (অন্যায় আচরণ বা সীমা লংঘন যদি আমিই করি তাহলে তা প্রকাশে ভয় থাকবে কেন? সেই নৈতিক সাহস তাদের থাকা উচিত)
এসব দাবি পূরণ না হলে, আমার পক্ষে সচলের সদস্যপদ প্রত্যাহার এবং ব্লগের কর্তাপক্ষকে বর্জনের আহ্বান জানানো ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। কিন্তু এটাও মনে রাখছি যে, ব্লগ কেবল মডারেটরদের ব্যক্তিত্ব, রুচি ও সংস্কৃতিই প্রকাশ করে না, তা সেখানকার আমব্লগারদের মানসিকতারও ছবি।
এবং সচলে একটা যদি আপত্তিকর হয়ে থাকে অন্যটা আন্তরিক।
এখানে বলা দরকার যে, একটি মেইলের মাধ্যমে সচল থেকে আমার সদস্যপদ স্থগিত করে অতিথি স্ট্যাটাস দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। তখন থেকে সচলে লগ ইন করা বন্ধ রেখেছি এবং দুঃখের মধ্যেও অর্বাচীনদের অবিমৃশ্যকারিতা দেখে হেসেছি। সচলের বিকাশের বাধা আর কেউ নয়, এর কর্তারা। তাঁদের মতি ফিরুক।
সচলকে দীর্ঘসময় আমার ত্বকবৎ গণ্য করেছি, যেকারণে এর কোনো ক্ষতি চাইনি। এখন সম্পর্কবিযুক্ত হওয়ায় সেই দায় থেকে আমি মুক্তি নিলাম। কিন্তু সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, অতীতে তারা সচলত্যাগকারী অন্যান্য ব্লগারদের প্রতি যে ঘৃণা, চরিত্রহনন ও কুৎসতি মনোভাবে প্রকাশ রেখেছে, আমার প্রতিও সেরকম ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছি। সেসব ক্ষেত্রে, আমার নীরবতাকেই প্রতিবাদ বলে গণ্য করতে হবে।
......................................................................................................
এ অবস্থান ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আমি সচল ব্লগার পরিবারের সবার কাছ থেকে সচল সদস্য হিসেবে বিদায় চাইছি।
কোনোভাবে রাজনৈতিক বা মতাদর্শিক বিতর্কের বাইরে কাউকে হেয় বা আঘাত করে থাকলে ক্ষমা চাইছি। একইসঙ্গে সেখানে রক্ষিত আমার ব্লগ, লেখাগুলো এবং সমস্ত কমেন্ট হারিয়ে ফেলার মনোকষ্ট প্রকাশ করছি। আবেদন জানাচ্ছি, কোনোভাবে কেউ যদি সেসব আমার কাছে গচ্ছিত রাখার কোনো উপায় বাতলে দেন বা সুযোগ করে দেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি তাঁর বা তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। কেননা, ভবিষ্যতে লেখাগুলোর মূল্য থাকুক বা থাকুক, সহব্লগারদের কমেন্টের মালা আমার মণিহার হয়ে উঠবে সন্দেহ নাই। সেই স্মৃতির সৌরভ থেকে বঞ্চিত হওয়া খুবই বেদনার।
ব্লগপরিসরে আমি নতুন। এসময়ের মধ্যে যে প্রাণাবেগ, উদ্দীপনা ও আলোচনা আমি পেয়েছি তা আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এসবের কারণে আমার মানসিক শান্তি, ব্যক্তিগত নির্জনতার যে ক্ষতি হয়েছে, তার কারণে আমি বিপন্ন বোধ করছি। পরস্পর পরস্পরের প্রতি যে অশ্রদ্ধা এখানে আমরা হরহামেশাই প্রকাশ করি তা আমাকে লজ্জিত ও আহত করে। আমি এখানে এসেছি স্বনাম ও স্বচিন্তা সম্বল করে।
আমার কোনো আবডাল বা চালাকি ছিল না। কিন্তু বেরিয়ে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছে, আমি আমার ওই সম্পদগুলোর প্রতি সুবিচার করিনি। আমার নাম, আমার পরিচয়, আমার চিন্তা আমার ব্যক্তিগত সম্পদ বলে মনে করি না। চিন্তা ও সক্রিয়তার চেষ্টাকে আমি মানুষের প্রতি শুভবৃত্তির বিনিয়োগ মনে করি। তার স্বার্থেই ব্লগপরিসরে আমার বর্তমান থাকার বিষয়টি আমি বিবেচনা করে দেখছি।
নিজের আহত-চেতনকে আরো আহত ও বিব্রত না করার অধিকার একজন ব্যক্তির থাকতেই পারে। আমি এখানে সেই অধিকারের এক বিন্দু বেশি কিছু দাবি করে থাকলে অন্যায় করেছি বলে মনে করবেন।
এই পোস্টে আমি কোনো কমেন্টের জবাব দেওয়া বিনয়ের সঙ্গে অপারগতা জানাচ্ছি। আশা করি, এই ত্রুটি সকলে মার্জনা করবেন। পাশাপাশি আমি সকল ব্লগারের সংহতি কামনা করছি।
বাংলা ব্লগপরিসর গণতান্ত্রিক, গতিশীল ও সাবলীল হোক এবং সকল ব্লগার অধিপতি মানসিকতার মডারেশনের কবল থেকে মুক্ত হোক। সকলের প্রতি শুভকামনা, আমার সচল বন্ধুদের প্রতি ভালবাসা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।