সাংবাদিক
মার্কস দেখছেন
শান্তনু দে
‘দুনিয়ার ব্যাঙ্কার এক হও ! মহার্ঘ বোনাস, এসহারে ঝাঁচকচকে বাড়ি, ক্যারিবিয়ানে ধামাকা উইকএন্ড, কেতাদুরস্ত জেরমিন স্ট্রিট শার্টের অমোঘ আকর্ষন ছাড়া আপনার হারানোর আর কিছু নেই। বিপরীতে, অবশেষে আপনার কাছে আছে সময়, কার্ল মার্কসের সম্পূর্ণ রচনা পড়ার জন্য। ’
— দ্য টাইমস
‘ফিরে এসেছেন কার্ল মার্কস।
আর্থিক সঙ্কট যখন দাঁত বসাচ্ছে জার্মানিতে, বইপ্রেমীরা তখন মুখ লুকোচ্ছেন কার্ল মার্কসে। ’
শিরোনাম ব্রিটিশ গার্ডিয়ান পত্রিকায়।
প্রতিবেদনে জার্মান ‘প্রকাশক ও বই দোকানের মালিকরা জানিয়েছেন, তাক থেকে হু হু করে উড়ে যাচ্ছে তাঁর বই। ’ কারণ, মানুষ ‘অভিজ্ঞতায় বুঝেছেন, সুখের নয়া-উদার প্রতিশ্রুতি আদৌ সত্যি বলে প্রমাণিত হওয়ার নয়। ’
সঙ্কট ওয়াল স্ট্রিটে, আর বার্লিনের রাস্তায় হুহু করে বিকোচ্ছে মার্কসের ‘দাস ক্যাপিটাল’। বিক্রি বেড়েছে এক ধাক্কায় তিনগুণ।
এমনকী জার্মানির অর্থমন্ত্রী পির স্টেইনবার্ক পর্যন্ত যথেষ্ট বিরক্তি আর হতাশার সঙ্গে স্বীকার করেছেন, ‘মার্কসের তত্ত্বের কিছু অংশ সত্যিই ততটা খারাপ নয়।
’
মে থেকে অক্টোবর — এই ছ’মাসে কমিউনিস্ট ইশ্তেহারের বিক্রি বেড়েছে ৯০০ শতাংশ।
চীনের সিনহুয়া, কিংবা কিউবার প্রেনসা লাতিনা নয়, এখবর জানিয়েছে ব্রিটেনের সংবাদ সংস্থা বি বি সি।
রাইন নদীর শাখা মাসেলের কোলে জার্মানির সবচেয়ে পুরনো শহর ত্রিয়ের। এই শহরেই ১৯১ বছর আগে কার্ল হাইনরিখ মার্কসের জন্ম। এখন সেই জন্মস্থান দেখতে উপচে পড়া ভিড়।
‘কার্ল মার্কস কখনও এত নির্ভুল ছিলেন না, এখনকার মতো’, বলেছেন নোবেল জয়ী পর্তুগীজ সাহিত্যিক জোসে সারামাগো। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বর্তমান সঙ্কট প্রসঙ্গে। লিসবনে তাঁর উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি একটি ছবির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর সতর্কবার্তা, ‘প্রলয় আসার এখনও বাকি। ’ বেসরকারী লোকসানের জাতীয়করণের লক্ষ্যে বুশের ত্রাণ প্রকল্পের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ৮৫-বছর-বয়েসী সারামাগো সখেদে বলেছেন, ‘কোথায় লুকনো ছিল এই কাড়ি-কাড়ি ডলার ? হটাৎ কীসের জন্যই-বা তারা বেরিয়ে এলো ? কাদেরকে বাঁচাতে ? জীবনকে ? না ব্যাঙ্ককে ?’
রেগান বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্র কোনও সমাধান নয়, সমস্যা’। থ্যাচার শুনিয়েছিলেন, বাজারের ‘কোনও বিকল্প নেই’।
বাজারের হাতে সব ছেড়ে দাও। বাজারকে নিজের মতো চলতে দাও। নিজের যত্ন নিজেকে নিতে দাও। বাজারকে দাও স্বাধীনতা। ব্যবসা-বানিজ্যকে বুঝে নিতে দাও নিজেদের ষোলআনা।
উদারীকরণ করো। হাট করে খুলে দাও বাজার। দেখবে বাগে আসবে মুদ্রাস্ফীতি। নেমে আসবে তলানিতে। সরকারের ভূমিকা যতটা সম্ভব কাঁট-ছাট করো।
ন্যূনতম ভূমিকা থাকুক সরকারের। দেখবে বিকাশ লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়ছে। ঢালাও বেসরকারীকরণ করো। দেখবে অপচয় কমছে। লাভ হচ্ছে সরকারের।
কমছে দারিদ্র্য, কমছে বেকারি। সমৃদ্ধি আসছে অর্থনীতিতে।
প্রায় এক প্রজন্ম আগে সোভিয়েতে মার্কসবাদের বিপর্যয়ের পর ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা ঘোষণা করেছিলেন, ‘ইতিহাসের অবসান। ’ জিতেছে পশ্চিমের পুঁজিবাদ। ধনতন্ত্রই ‘সার-সত্য’, এর কোনও বিকল্প নেই।
সমাজতন্ত্রের অবসান মানে দ্বন্দ্বের অবসান। সঙ্কটের স্থায়ী অবসান। আরও সুনির্দিষ্ট করে পরে টমাস ফ্রিডম্যান ঘোষণা করেছিলেন, ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ ফ্ল্যাট’। বিশ্ব সমতল। ঠান্ডা যুদ্ধের বিজয়ী হিসেবে এই বিশ্বে উঠে এসেছে মুক্ত বাজার।
এবং যেখানে ভবিষ্যত মানে — অর্থনীতিতে ন্যূনতম সরকারী হস্তক্ষেপ। জয়ী হবে সেই সমতল অর্থনীতি, যারা বাজারের সঙ্গে নিজেদের পুরোপুরি জুড়তে পারবে। আর হারবে তারা, যারা নিজেদেরকে এই মুক্ত বাজারের থেকে বাইরে রাখবে। পুঁজিবাদের উত্থাণ ও বার্লিনের পতন প্রমান করেছে মার্কস ভুল।
নিও-লিবারেল মিডিয়া শুনিয়েছিল, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ইতিহাসের ‘একটি দুর্ঘটনা।
’ পুঁজিবাদেরই একটি ‘অস্থায়ী উত্তরণ পর্ব’ মাত্র। ঘোষণা করা হয়েছিল ‘সমাজতন্ত্র হচ্ছে পুঁজিবাদ থেকে পুঁজিবাদে রূপান্তরের দীর্ঘতম উত্তরণ পর্ব। ’ নিও-লিবারেল অর্থনীতিবিদরা আমাদের শুনিয়েছিলেন, ‘বাজার’, ‘ব্যক্তি মালিকানা’ ঈশ্বরের মতো পবিত্র। কোনও অর্থনীতি ও সমাজকে সীমাহীন বিকাশের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য এদের হাতে রয়েছে সর্বময় ক্ষমতা। বলা হয়েছিল, ‘নো লাঞ্চ ইজ ফ্রি।
’ অর্থনীতি কখনোই বিনামূল্যে বা ভরতুকি দিয়ে চালানো উচিত নয়।
সেই লক্ষ্যেই ওয়াশিংটন সহমত।
বার্লিনের ভাঙা প্রাচীরের ওপর দাঁড়িয়ে ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা যেদিন ঘোষণা করেছিলেন ‘ইতিহাসের অবসান হয়েছে’, সেদিনই মার্কিন অর্থনীতিবিদ জন উইলিয়ামসন জন্ম দিয়েছিলেন মহার্ঘ পরিশব্দ — ওয়াশিংটন সহমত।
দশ-দফা প্যাকেজ।
দাওয়াই নম্বর (এক) কোষাগারীয় শৃঙ্খলা — অর্থাৎ আর্থিক অনুশাসন।
আর্থিক ঘাটতি কমাও, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাও। এক কথায়, ভরতুকি তুলে দাও। (দুই) অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সরকারী ব্যয়ের ক্ষেত্র ঠিক করো — দেখো সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সুবিধা কোথায়। (তিন) কর সংস্কার করো — মানে করের হার কমাও, করের পরিধি বাড়াও। (চার) সুদের হারের উদারীকরণ — সুদের হারের ওপর নিয়ন্ত্রন তুলে দাও।
(পাঁচ) প্রতিযোগিতা মূলক বিনিময় হার — বিদেশী মুদ্রার বিনিময় হারের ওপর তুলে দাও নিয়ন্ত্রন। বিদেশী মুদ্রাকে পূর্ণ বিনিময়যোগ্যতা দাও। (ছয়) বানিজ্যের উদারীকরণ। (সাত) প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের জন্য উপযোগী পরিবেশ। (আট) বেসরকারীকরণ।
(নয়) বিনিয়ন্ত্রন। এবং (দশ) সম্পত্তির অধিকার সুরক্ষা।
কে জানতো এত দ্রুত খসে পড়তে শুরু করবে অ-বিকল্প বলে ঘোষিত বিশ্বায়িত পুঁজিবাদের এহেন বাহারি পলেস্তারা।
ওয়াল স্ট্রিটের সেই ‘সোনালি দিন’ আর নেই।
নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ পল স্যামুয়েলসনের ভাষায়, ‘এ আসলে পুঁজিবাদের বিপর্যয়, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন যেমন ছিলো কমিউনিজমের ক্ষেত্রে’।
‘সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলি অচিরেই ডেকে আনবে বাজার মৌলবাদের পতন। ঠিক যেমন কমিউনিজমের পতনের আগে ধসে গিয়েছিল বার্লিন দেওয়াল। ’ সতর্ক করেছেন নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ জোশেফ স্টিগলিৎজ। ‘একটি অদৃশ্য হাতের কাজ’ শিরোনামে লেখা নিবন্ধে।
আজ ফ্রিডম্যান, গ্রিনস্প্যানের ‘বাজার’ যখন টালমাটাল, মার্কিন অর্থনীতির যখন ঘোর দুর্দিন, তখন পল ক্রুগম্যান কী বলছেন ?
নোবেল জয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ ক্রুগম্যানের অকপট মন্তব্য, চলতি সঙ্কট চিন্তার মারাত্মক পরিবর্তন ঘটাবে।
বাজারের আধিপত্যে যাঁদের বিশ্বাস ছিলো, যাঁরা বলতেন বাজারেই কাজ হয়, মুনাফার লক্ষ্যে বেসরকারী উদ্যোগ সর্বসময়ে সুফল দেয়, তাঁরা বিপুলভাবেই ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছেন।
ঠিক। তবে সম্পূর্ণ নয়।
একদিকে যখন নয়া উদারবাদের ব্যর্থতা প্রকট, অন্যদিকে তখন ন্যয়-নীতি, নৈতিক মূল্যবোধের ভাঙন স্পষ্ট। কারণ, সঙ্কট মোকাবিলায় আবারও প্রয়োগ করা হচ্ছে পুঁজিবাদের সেই মৌলিক সূত্র।
জাতীয় সম্পদের বেসরকারীকরণ। বেসরকারী লোকসানের জাতীয়করণ।
এই আর্থিক সঙ্কট অন্তত দু’টি কারণে ঐতিহাসিক।
প্রথমত, এটি আবারও প্রমান করেছে কার্ল মার্কস এখনও সমান প্রাসঙ্গিক। এবং তাঁর পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশ্লেষণ এখনই ইতিহাসের আস্তাকূঁড়ের জন্য প্রস্তুত নয়।
দ্বিতীয়ত, ব্যাঙ্ক ও খোলা বাজারকে তার নিজের থেকে বাঁচাতে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ, অন্তত নয়া উদারবাদের বৌদ্ধিক নির্মাণে এখনও যতটুকু অবশেষ রয়েছে — তৈরি করেছে নতুন বিশ্ব বীক্ষার জন্য একটি মঞ্চ — যা গত শতকের তিনের দশকের পর থেকে আর কখনও দেখা যায়নি।
এই গতকালও, কার্ল মার্কসের সমাধির ওপর দাঁড়িয়ে উদ্বাহু নৃত্য করেছেন ‘খোলা বাজারের’ তাত্ত্বিকরা। সঙ্গে চরম তাচ্ছিল্য আর বিদ্রূপ মেশানো চিলচিৎকার — ‘লোভ, লিপ্সাই ঈশ্বর’। পুঁজিবাদের ‘কোনও বিকল্প নেই। ’ এবং অতি উৎপাদনজনিত সঙ্কট নিয়ে মার্কসের সতর্কবার্তার প্রতি অট্টহাসি।
আর আজ রয়টার্সের প্রতিবেদনে অসহায়ের আর্তনাদ, ‘অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, পুঁজিবাদের ওপর তাঁর ১৮৬৭ সালের বিশ্লেষণ, দাস ক্যাপিটাল — প্রকাশনার সমাধিক্ষেত্র থেকে একলাফে উঠে এসেছে বেস্টসেলারে। ’
মার্কস তাঁর ক্যাপিটালে দেখিয়েছেন, প্রত্যেক পুঁজিপতিই চায় বাজারে তার পণ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে বেশি-বেশি মুনাফা করতে। আবার অন্যদিকে মুনাফা বাড়ানোর ‘লোভ, লিপ্সায়’ সে শ্রমিকের মজুরি কমিয়ে দেয়। কম শ্রমিককে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার চেষ্ঠা করে। এতে একদিকে শ্রমিকের আয় কমে।
অন্যদিকে বাজার সঙ্কুচিত হয়। কারণ, শ্রমিক যা উৎপাদন করে, তা কিনতে পারে না। সব পুঁজিপতি একই কৌশল নেওয়ার ফলে একটা সময় উৎপাদনের ক্ষেত্রে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। এবং বিপুল পরিমাণে পণ্য অবিক্রিত থাকায় উৎপাদনে বন্ধাত্ব নেমে আসে। মার্কস একেই অতি উৎপাদনজনিত সঙ্কট বলে অভিহিত করেছিলেন।
শুধু তাই নয়, মার্কস তাঁর ‘ক্যাপিটাল’ গ্রন্থে আরও লিখেছেন, ‘লাগামহীন পুঁজিবাদ হয়ে ওঠে এক ধরনের অলৌকিক তত্ত্ব, যা এমন সব বস্তুকে কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও প্রতিনিধিত্ব দেয়, যাদের নিজেদের মধ্যে কোনও প্রাণসত্ত্বা নেই। ’
এই সঙ্কট পুঁজিবাদের নিত্যসঙ্গী। এই সঙ্কট অনিবার্য। কারণ, পুঁজিবাদের জঠরেই রয়েছে এর বীজ। এই ব্যবস্থাই সঙ্কটের উৎস।
কারণ, শোষণই পুঁজিবাদের অস্তিত্বের ভিত্তি। ইউরোপ-আমেরিকায় প্রথম দেখা গিয়েছিল ১৮২৫ সালে। তারপর থেকে একাধিকবার।
এর সমাধান একমাত্র সম্ভব সমাজতন্ত্রে।
আজকের পুঁজিবাদের এই সঙ্কটজনক অবস্থা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় স্তালিনের কথা, ‘সঙ্কটগ্রস্ত পুঁজিবাদের অবস্থাটা হলো সেই কাদায় আটকে যাওয়া পাখির মতো।
কাদায় জড়ানো ল্যাজ ছাড়াতে গিয়ে ঠোঁট ডুবে যাচ্ছে কাদায়, আবার কাদা থেকে ঠোঁট তুলতে গেলে কাদায় জড়িয়ে যাচ্ছে ল্যাজ। ’
মনে রাখুন, এই স্তালিনের নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত অর্থনীতিকে কিন্তু বিন্দুমাত্র স্পর্শ করতে পারেনি ১৯২৯-৩০’র বিশ্বব্যাপী মহামন্দা ! এবং এটা নেহাতই কাকতালীয় ছিল না। বরং, এটি ছিল দু’টি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মতাদর্শগত ভিন্নতার অনিবার্য প্রতিফলন। স্তালিনের সোভিয়েতে অর্থনীতিটা ছিল পরিকল্পিত অর্থনীতির ভিত্তিতে সমাজতন্ত্র।
ইদানীংয়ের এই প্রলয়কে ঠেকাতে কী করা উচিত ?
প্রশ্ন করা হয়েছিল অর্থনীতিবিদ ডেভিড ম্যাককে।
তাঁর জবাব ছিল, ‘দিনের শেষে, আপনি যদি আর্থিক ব্যবস্থাকে যথেষ্ট পরিমাণে সোশ্যালাইজেশান (সামাজিকীকরণ) করতে পারেন, তবে ফল দেবে। ’ হটাৎই বিপর্যয় মোকাবিলায় জরুরী হয়ে পড়েছে ‘সমাজতন্ত্র’। এবং কে এই ডেভিড ম্যাক? আদৌ এলেবেলে অর্থনীতিবিদ নন ম্যাক, বিশ্বের ডাকসাইটে বহুজাতিক ব্যাঙ্ক জে পি মর্গানের অর্থনীতিবিদ তিনি।
যদিও, ম্যাকের ‘সমাজতন্ত্রের’ সঙ্গে মার্কসের দৃষ্টিভঙ্গীর কোনও মিল নেই। থাকার কথাও নয়।
মার্কস বলেছেন, উৎপাদনের উপায়ের ওপর সামাজিক মালিকানা কায়েম করতে হবে। আর এটাই হলো, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক ভিত্তি।
মার্কস দেখিয়েছেন, পুঁজিবাদ যতই বিকশিত হচ্ছে, ততই তার উৎপাদন পদ্ধতি সামাজিক চরিত্র অর্জন করলেও, উৎপাদিত পণ্যের ওপর অধিকার একমাত্র মালিকের। কারণ, উৎপাদনের উপায়ের ওপর মালিকানা ব্যক্তিগত। উৎপাদনের সামাজিক চরিত্রের সঙ্গে উৎপাদনের উপায়ের ব্যক্তিগত মালিকানার এই যে দ্বন্দ্ব, তাই পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শ্রেণী সংগ্রামের জন্ম দিচ্ছে।
যার একদিকে শ্রমজীবী মানুষ। আর অন্যদিকে উৎপাদন উপায়ের মালিক, পুঁজিপতি। আর যতদিন উৎপাদনের উপায়ের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা থাকবে, ততদিন দ্বন্দ্বের মীমাংসা অসম্ভব।
অন্যদিকে ম্যাক চেয়েছেন অনাদায়ী ঋণকে ‘সামাজিকীকরণ’ করতে। ওয়াল স্ট্রিটের লোকসানের দায় যথারীতি তিনি চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন আমজনতার ঘাড়ে।
লক্ষ-কোটি মানুষকে বেঘর-নিরাশ্রয়, বেকার করে, স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে অবসরের সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নেওয়ার পরেও যাতে মুনাফার প্রবাহ বহমান থাকে ধণীদের তহবিলের দিকে।
আজ খোলা বাজারের চিয়ারলিডার নিউ ইয়র্ক টাইমসে উত্তর সম্পাদকীয় — ‘দ্য আইস স্টর্ম’। আর তাতে আইল্যান্ডের প্রতিবেদকের আর্তনাদ, ‘কী করতে হবে, কেউ জানেন না — রাজনীতিক, ব্যাঙ্কার, টাইকুন কেউ না, তবে এরমধ্যেই আমি শুনেছি, এই হেমন্তেই এখানে প্রকাশিত হবে কমিউনিস্ট ইশ্তেহারের নতুন সংস্করণ। ’
অবিশ্বাস্য হলেও দস্তুরমতো সত্যি। মিউনিখের আর্চ বিশপ কার্দিনাল রাইনহার্ড মার্কস ডাকসাইটে জার্মান সাপ্তাহিক ‘দ্য মিরর’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘পুঁজিবাদ নিয়ে কার্ল মার্কসের ব্যাখ্যা নির্ভুল।
’
চার্চের এই মার্কস পুঁজিবাদের ঘোর সমালোচক। ‘কারণ, পুঁজিবাদে মূল্যবোধের কোনও জায়গা নেই। পুঁজিবাদ মানবতার শত্রু। ’ এই শীতেই বই দোকানে পাওয়া যাবে তাঁর নতুন বই — ‘দাস ক্যাপিটাল : এ প্লি ফর ম্যান’। যাতে তিনি লিখেছেন ‘কার্ল মার্কসের মৃত্যু হয়নি, যাকে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত।
’ তিনি বলেছেন, ‘আজ আমাদের ফিরে যেতে হবে মার্কসের কাছে, যা আমাদের পুঁজির কেন্দ্রীভবনের তত্ত্বায়নকে বুঝতে সাহায্য করবে। ’
আসলে দাস ক্যাপিটাল — একটি আদর্শের ভাস্কর প্রতীক। যে আদর্শ অব্যয়। যে আদর্শ ঘোষণা করে বহুতর বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে মানুষ একদিন শ্রেণীহীন সংঘাতহীন অমরাবতীতে পৌঁছবে। যেখানে সে, পরিণতির উপান্তে, মহত্তম, বৃহত্তম, উদারতম।
এই ১৪০ বছরেও এই আদর্শে সামান্যতম ফাটল ধরেনি। তাই দাস ক্যাপিটাল যেমন উত্তুঙ্গ বিজ্ঞান, তেমনি নিখাদ মহাকাব্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।