আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কার্ল মার্কস

মার্কসবাদ এমনই একটা বিপ্লবী বিশ্ববিক্ষা যা প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলে, বিকশিত হয়। মার্কসবাদ তাই শুধু মার্কস-এই থেমে থাকেনি, বিকশিত হয়েছে লেনিনবাদে, সেখান থেকে মাওসেতুং চিন্তাধারায়। মার্কসের বিজ্ঞান বিষয়ে দাবী হলো জ্ঞান বা দর্শন অর্থে, বিজ্ঞান একটাই, আর সেটা হলো ইতিহাসের বিজ্ঞান। ছোট থেকেই কার্ল মার্কস ভালো ছাত্র ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন স্বভাব কবি।

প্রেমিকা জেনি ভন ভেস্তফালেন-কে নিয়ে লেখা প্রেমের কবিতাগুলো পড়লে আজও অনুভব করা যায় সেদিনের সেই passion!মার্কস ও জেনি মোট ছয় সন্তানের জন্ম দেন ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের সঙ্গে কার্ল মার্কস যৌথভাবে রচনা করেন শ্রমিকশ্রেণীর অমোঘহাতিয়ার ‘কম্যুনিস্ট ইস্তাহার’। এতে তাঁরা দেখান যে ‘রাজনৈতিক ক্ষমতা হচ্ছে অপর এক শ্রেণীকে দমন করার জন্য এক শ্রেণীর হাতে সংগঠিত ক্ষমতা’। ১৮৪৮ সালে প্রকাশিত এই ছোট্ট পুস্তিকা গোটাইউরোপ-এ আলোড়ন তোলে। ১৮৬৪ সালে মার্কস এবং এঙ্গেলস তৈরি করেন শ্রমজীবী মানুষের আন্তর্জাতিক সংঘ। তাঁর চিঠিপত্রের সংকলন এবং গাণিতিক পাণ্ডুলিপিটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতবর্ষ নিয়েও মার্কস ছিলেন অত্যুৎসাহী। ভারতের প্রথম স্বাধীনতার যুদ্ধ, ব্রিটিশ শাসনের চরিত্র ইত্যাদি নিয়ে তিনি গভীর ভাবে চর্চা করেন এবং কিছু কালজয়ী নিবন্ধ রচনা করেন। মার্কস এবং এঙ্গেলস-এর যৌথ সংগৃহীত রচনাবলীর সংখ্যা মোট ৫০। ১৮১৮ সালের ৫ই মে তৎকালীন প্রাশিয়ার ত্রিভস (ত্রিয়ের) শহরেকার্ল মার্কস জন্মগ্রহণ করেন। মার্কসরা ছিলেন সমৃদ্ধশালী এবং সংস্কৃতিবান।

তাঁর জীবনাবসান ঘটে ১৮৮৩ সালের ১৪ মার্চ, জার্মানি থেকে নির্বসিত অবস্থায় লন্ডনে। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৬৫ বৎসর। তাঁর বাবা হার্শেল মার্কস পেশায় ছিলেন একজন অ্যাডভোকেট। ১৮৪৩ সালের ১৯-এ জুন জেনির সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন কার্ল। জেনি ছিলেন একজন বিখ্যাত ব্যারনের কন্যা।

এর পর তাঁরা চলে আসেন প্যারিস-এ। প্যারিস থেকেই শুরু হয় অপরিসীম দারিদ্র্য ও ইউরোপীয় রাষ্ট্রশক্তির প্রবল বাধার মুখে দাঁড়িয়ে তাঁদের লড়াই, যা জীবনের শেষ দিন অবধি ছিল তাঁদের নিত্যসঙ্গী। এই সংগ্রামে মার্কস এবং জেনির পাসে এসে দাঁড়ান তাঁদের অকৃত্রিম বন্ধু কমরেড ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস। সাধারণ মানুষের মধ্যে মার্কস পাঠের তুমুল আগ্রহ জেগে ওঠা ছাড়াও রাজনীতিক এমনকি ধর্মগুর”দের মুখ থেকেও শোনা যাচ্ছে পুঁজিবাদ বিষয়ে মার্কসের বিশ্লেষণসমূহের প্রশংসা । মার্কসীও বস্তুবাদ শেখায় যে এক মাত্র বস্তুজগতেরই অস্তিত্ব আছে এবং আমাদের চেতনাও বস্তুজাত।

তাই মন বা ভাবের অস্তিত্ব বস্তু ছাড়া সম্ভব নয়, এবং এই বস্তু সদাই গতিশীল (এর ফলে বস্তুজাত জ্ঞানও গতিশীল)। পরবর্তীকালে এঙ্গেলস দেখান যে শুধু সমাজ বিজ্ঞানেই নয়, মার্কসীও দ্বন্দ্বমূলক মতবাদ প্রকৃতি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। একজন ইংরেজ ইতিহাসবিদ বলেছেন, 'আমি এখন মার্কস পড়ছি, তাঁর বক্তব্যে কতগুলো আগ্রহ জাগানিয়া ব্যাপার আছে'। এরিক হবসবাউন (Eric Hobsbawn) আরো বলছেন, 'বুদ্ধিমান পুঁজিপতিরা বিশেষত আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজির কারবারিরা যখন মার্কস পড়ছেন তা দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ যে পুঁজিবাদী অর্থনীতির তারা অংশীদার, ওই অর্থনীতির অনিশ্চয়তা-অস্থিতিশীলতা সম্পর্কে তারা নিজরাও অত্যন্ত সচেতন।

' এরা অবশ্য সমাজতন্ত্র সম্পর্কে জানার উদ্দেশ্য নিয়ে মার্কস পড়ছেন না, মার্কস পড়ছেন তাদের ব্যর্থ-ভেঙে পড়া-অচল পুঁজিবাদী অর্থনীতির 'গলদ'গুলো খুঁজে বের করে তা সারাই করার উদ্দেশ্যে, পুঁজিবাদী শোষণটাকে নতুনভাবে সচল করার, ঢেলে সাজাবার উদ্দেশ্যে। সাম্প্রতিক সময়ে কার্ল মার্কস ও ফ্রেডারিক এঙ্গেলসের রচনাবলীর বিক্রি পূর্বের তুলনায় তিনগুণ হয়ে পড়েছে। প্রকাশক জানিয়েছেন, ২০০৫ সালে তিনি ডাস ক্যাপিটালের মাত্র ৫০০ কপি বিক্রিতে সমর্থ হয়েছিলেন। উৎপীড়কদের একদিন উচ্ছেদ করবেই এইসব সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, আর আগের মতোই সেই সংগ্রামের বাতিঘর হবেন এক বৃদ্ধ দার্শনিক, যার নাম কার্ল মার্কস। মার্কসের দর্শনকে বলা হয়, দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ।

১৮৬৭-তে প্রকাশিত হয় তাঁর শ্রেষ্ঠ কাজ ‘পুঁজি’(প্রথম খণ্ড)। এখানে মার্কস পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রতিষ্ঠানগুলোকেকাটা-ছেঁড়া ক’রে তার শোষণের দিকগুলো উন্মোচিত করেন। তবে মার্কস পুঁজি শেষ ক’রে যেতে পারেননি। মার্কস-এর পাণ্ডুলিপির থেকে বই-এর পরের দুই খণ্ড সম্পাদনা করেন এঙ্গেলস। পুঁজিবাদী সমাজের গতিধারা উদঘাটন করেন মার্কস।

তিনি দেখান কিভাবে মূল্যতত্ত্বের সাথে উদ্বৃত্ত মূল্যের ব্যপারটা জড়িয়ে থাকে। এডাম স্মিথ ও ডেভিড রিকার্ডো যে মূল্যের শ্রমতত্ত্ব আবিষ্কার করেন। মার্কস তাকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যান এবং বিকশিত করেন। ‘তিনি দেখান যে পণ্য (পুঁজিবাদী সমাজে পণ্য উৎপাদনই প্রধান। মার্কস-এর ‘পুঁজি’ গ্রন্থও তাই শুরু হয়েছে পণ্যের আলোচনা দিয়েই) উৎপাদনে সামাজিক ভাবে যে আবশ্যক শ্রম-সময়ের ব্যয় হয়েছে, তা দিয়েই তার মূল্যের নির্ধারণ হয়’।

মার্কসের প্রথম জীবনের রচনা সমূহের মধ্য উল্লেখযোগ্য হলো ‘হেগেলের ন্যায় নীতির সমালোচনা’ (১৮৪৫), ‘ইহুদি প্রশড়ব প্রসঙ্গে (১৮৪৬), ‘অর্থনৈতিক দার্শনিক পান্ডুলিপি’ (১৮৪৪)। মার্কসবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছেএমনএকমাত্র framework যে তার থেকেই এবং তার ভিতরেই বিপ্লবী তত্ত্ব বিকশিত হতে পারে,যদিও তা কোন নিশ্চল সীমাবদ্ধ মতবাদ তো নয়ই,বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত এবং শ্রেণীসংগ্রামের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও সজীব সম্পর্কের ভিত্তিতে ক্রমাগত নিজেকে সম্প্রসারিত এবং অতীতের তাত্ত্বিক সংগ্রামের সমস্ত সাফল্যকে অঙ্গীভূতকরে বিকশিত ও সমৃদ্ধ করে তুলেছে। মার্কসবাদী মতাদর্শকে ধারণ করেই প্রথমে রাশিয়ায় (১৯১৭) সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠিত হয়েছিল। একই মতবাদকে ধারণ করে পরে চীন, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া, পূর্ব ইউরোপ ও কিউবায় বিপ্লব ও সমাজাতান্ত্রিক সমাজ গড়ে উঠেছিল। লেনিন বলেছেন যে, মার্কসবাদের তিনটি উৎস (১) জার্মান চিরায়ত দর্শন, (২) ব্রিটিশ রাজনৈতিক অর্থনীতি (৩) ফরাসী সমাজতন্ত্রবাদ।

একজন মানুষকে কল্পনা করো, যার মধ্যে রুশো, ভলতেয়ার, হলবাস, শেলিং, হাইনে ও হেগেল মিলেমিশে গেছেন আমি বলছি মিশ্রিত হয়েছে, নিজস্ব স্বতন্ত্র নিয়ে পাশাপাশি অবস্থান করছে না তিনিই হলেন ডক্টর মার্কস। ’১৮৪৮ সালে ফ্রান্সে বুর্জোয়া বিপ্লবের অভিজ্ঞতা এবং ১৯৫০ সালে প্রতিবিপ্লবী কুদেতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মার্কস লিখেছিলেন দুইটি অতি মূল্যবান গ্রন্থ ‘ফ্রান্সের শ্রেণী সংগ্রাম ১৮৪৮-৫০’ এবং ‘লুই বোনাপার্টের অষ্টাদশ ব্রুমেয়ার’। দেশে দেশে কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদের সারা দুনিয়া থেকে সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদ তথা সব রকম শোষণ নিপীড়নের অবসান ও প্রকৃত মানবমুক্তি না আসা পর্যন্ত মাকর্সবাদ প্রাসঙ্গিক থাকবে। ডারউইন যেমন জৈব প্রকৃতির বিকাশের নিয়ম আবিষ্কার করেছিলেন তেমনি মার্কস আবিষ্কার করেছেন মানুষের ইতিহাসের বিকাশের নিয়ম, মতাদর্শের অতি নিচে এতদিন লুকিয়ে রাখা এই সহজ সত্য যে, রাজনীতি, বিজ্ঞান, কলা, ধর্ম ইত্যাদি চর্চা করতে পারার আগে মানুষের প্রথম চাই খাদ্য, পানীয়, আশ্রয়, পরিচ্ছদ, সুতরাং প্রাণধারণের আশু বাস্তব উপকরণের উৎপাদন এবং সেইহেতু কোনো নির্দিষ্ট জাতির বা নির্দিষ্ট যুগের অর্থনৈতিক বিকাশের মাত্রাই হল সেই ভিত্তি যার ওপর গড়ে ওঠে সংশ্লিষ্ট জাতিটির রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, আইনের ধ্যান-ধারণা, শিল্পকলা, এমনকি তাদের ধর্মীয় ভাবধারা পর্যন্ত এবং সেই দিক থেকেই এগুলির ব্যাখ্যা করতে হবে, এতদিন যা করা হয়েছে সেভাবে উল্টো দিক থেকে নয়। মার্কস ও এঙ্গেলসের রচনা থেকে দেখা যায় যে, তাঁদের মধ্যে একটি অনড় মানবিক নৈতিকতার অবস্থান রয়েছে৷ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় যে অমানবিকতা ও বি-মানবিকীকরণ ঘটে তার বিরোধিতা করেন তাঁরা৷ এই বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে তাঁদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ বা নৈতিক বোধ ক্রিয়াশীল ছিল৷ আজও বিশ্ব জনগণের সত্য অন্বেষণ ও আদর্শ সমাজ গড়ে তোলার পথে মার্কসবাদের পথনির্দেশক প্রদীপের ভুমিকার পরিবর্তন হয় নি।

মার্কসবাদের মধ্যে নৈতিকতার অবস্থান নিয়ে বিশ্লেষকরা প্রধানত দ্বিধাবিভক্ত৷ এক পক্ষ মনে করেন যে, মার্কসবাদের মধ্যে কোনো নৈতিক অবস্থান নেই৷ অপরপক্ষ মনে করেন যে, মার্কসবাদের অবশ্যই একটা নৈতিক ভিত্তি রয়েছে৷ বিশ্লেষণী মার্কসবাদী ধারা মার্কসবাদের ধারণাগত পরিচ্ছন্নতা, অদ্ব্যর্থকতা ও যৌক্তিক সঙ্গতি প্রদানের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করলেও বিশ্লেষণের উপর অত্যধিক গুরুত্ব প্রদানের ফলে তাঁরা সমাজ বাস্তবতা ও সামাজিক প্রাসঙ্গিকতা থেকে অনেকটা দূরে সরে পড়েন৷ মার্কস কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে একটা মানবিক সমন্বয় ঘটানোর কথা ভাবেন৷ কমিউনিজমে মানুষ একই সাথে তার নিজেকে এবং 'অন্য মানুষকে' ধারণ করবে৷ এর মধ্যে দিয়েই ব্যক্তির নিজের অস্তিত্ব একই সাথে তার নিজের জন্য ও অন্যের জন্য হয়ে উঠবে৷ প্রথম জীবনে মার্কস দর্শন চর্চা শুরু করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এশিয়ার চরম প্রতিক্রিয়াশীল সরকার তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেয়নি। তিনি তখন সাংবাদিকতার কাজ শুরু করেন। সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছিলেন কিছুকাল।

রাশিয়া একসময় জেনেটিক্সের গবেষণায় শীর্ষস্থানে ছিলো, অথচ স্ট্যালিনের আমলে রাশিয়ায় 'জেনেটিক্স' এর উপর গবেষণার লালবাতি কিভাবে জ্বলে গিয়েছিল আমরা তা সবাই আজ জানি। বাম ঘরণার অনেকেই একটা সময় জেনেটিক্স বা বংশগতিকে পাত্তা না দিয়ে কেবল পরিবেশ নির্ণয়বাদকে আদর্শ হিসেবে করতেন, কারণ তা তাদের 'সাম্যবাদের বাণী' প্রচারে সহায়তা করে। আর এ কারণেই মার্ক্স কিংবা তার পরবতী তাত্ত্বিক কমিউনিস্টরা তাদের অনেক বাণীতেই এটাই জোরের সাথে বলেছিলেন যে মানুষের সকল বৈশিষ্ট্যই পরিবেশের ফল, এর সাথে বংশের কোন যোগ নেই। লেলিন এবং তার সমসামিয়ক নেতারা ভাবতেন, সাহিত্য, বিজ্ঞান সব কিছুই ‘মার্ক্সিজমের ছাকুনি'র মধ্য দিয়ে যেতে হবে, নইলে পরিশুদ্ধ হবে না! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.