"We know only a single science, the science of history. One can look at history from two sides and divide it into the history of nature and the history of men. The two sides are, however, inseparable; the history of nature and the history of men are dependent on each other so long as men exist. The history of nature, called natural science, does not concern us here; but we will have to examine the history of men, since almost the whole ideology amounts either to a distorted conception of this history or to a complete abstraction from it. Ideology is itself only one of the aspects of this history".
--------Karl Marx, German Ideology 1845
গত কিছুদিন ধরে 'মার্ক্সবাদ কি বিজ্ঞান?' অথবা 'Is Marxism Scientific?'
শিরোনামে http://www.muktopran.org/avijit/18023#comment
এবং
"বিজ্ঞান-অবিজ্ঞান কিম্বা কুবিজ্ঞানের তর্ক" শিরোনামে
Click This Link
এই দুটো ব্লগপোষ্টে একটা তর্ক চলছে। muktopran বা সচলায়তনের ব্লগে এ'প্রসঙ্গে আমার কিছু মন্তব্য থাকলেও বিজ্ঞান বিষয়ে ওখানে আমি প্রবেশ করি নাই, কোন মন্তব্যও করি নাই। তবে লক্ষ্য করছিলাম দুই ব্লগেই বিজ্ঞান প্রসঙ্গে এসে সবার আলোচনা বারবার হোঁচট খাচ্ছে, আটকে যাচ্ছে। আগাতে পারছে না। এই সমস্যার কোন হাল করা যায় কী না - এই ভাবনা থেকে কিছু করার চেষ্টাই এখানে এই পোষ্টের উদ্দেশ্য।
উপরের দুই ব্লগপোষ্টের মত "মার্কসবাদ" বলে আলোচনাটা শুরু করতে গিয়ে একটা বিপদ লক্ষ্য করছি। মার্কসবাদ কী অর্থে? মার্কস কি বলেছেন, তাঁর মৌলিক রচনাগুলোর মূলকথা কী - এই অর্থে? আবার মার্কসের কথাগুলো যারা প্রয়োগে নিয়ে গেছেন; সাফল্য, ব্যর্থতা, ভুলত্রুটি মিলিয়ে চর্চার ভিতর দিয়ে যা দাঁড়িয়েছে তাকেও তো মার্কসবাদ বলে সবাই চিনে। নাকি এই অর্থে?
অর্থাৎ Marxism as said ও Marxism as practiced বলে একটা ভাগ আছে তা স্পষ্ট মনে করিয়ে রেখে বলবার দরকার আছে কোন্ মার্কসবাদ নিয়ে আমি কথা বলছি। কোনটাকে ছোট বা কম গুরুত্ত্বপূর্ণ করার জন্য না, আর তা নয়ও। 'মার্ক্সবাদ কি বিজ্ঞান?' -মানে প্রয়োগটা বিজ্ঞানসম্মত না মূল বক্তব্যটা বিজ্ঞানসম্মত - কোন প্রশ্নটা নিয়ে আমি নাড়াচাড়া করবো আগেই পরিষ্কার রাখাটা জরুরী।
আমার মনে হয়, প্রশ্ন প্রয়োগটাকে নয়, মূলবক্তব্যকে করাটাই যুক্তিসঙ্গত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্যর্থ কীনা এটা এখন আর কোন তর্কের বিষয় নয়। ওটা ভেঙ্গে পরে বাস্তবে তা প্রমাণ করেছে। এই ব্যর্থতার কারণ আমরা অনুসন্ধান করতেই পারি। কিন্তু মার্কসবাদের প্রয়োগ ওখানে বিজ্ঞানসম্মত না হওয়ার কারণে ঐ বিপর্যয় ঘটেছে কীনা খুজতে যাওয়া -এটা অতি-বিজ্ঞানবাদিতা হবে।
কারণ সবার আগে বিচার করতে হবে গলদটা মূলবক্তব্যে কী না?
অতএব 'মার্ক্সবাদ কি বিজ্ঞান?' বলতে মার্কসের মূলবক্তব্যগুলো বিজ্ঞানসম্মত কী না - এটাই প্রশ্ন করা হচ্ছে। এটা ধরে নিয়ে আমি তাই এই প্রশ্নের উত্তর খুজবো মার্কসের মূল লেখায়; ষ্টালিনের কর্মদোষ, চিন্তা বা বক্তব্য এমনকি এসব নিয়ে নিস্পেষিত কোন সোভিয়েত নাগরিকের অভিযোগের মধ্যেও না।
বিজ্ঞান প্রসঙ্গে আমাদের অনেকের মধ্যে অদ্ভুত সব ধারণা আছে। বেশীর ভাগেরই ধারণাটা হলো, একটা ল্যাবরেটরী-বিজ্ঞান বা নিউটনিয়ান-বিজ্ঞান জাতীয়। আমাদের পাবলিক শিক্ষা পাঠ্যক্রমে সাইন্স আর আর্টসের ভাগাভাগিতে যেটা আর্টস, ওটার মধ্যে আর সাইন্স বা বিজ্ঞান নাই - এই ধারণা ক্রমাগত প্রচার হয়ে চলছে।
আবার যারা সাইন্সে ঢুকছে তাঁদের মাথায় বিজ্ঞান মানে ল্যবরেটরী-বিজ্ঞান। ওদিকে, আর্টসের ছাত্র পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় সোসিওলজি পড়তে যেয়ে আবিষ্কার করে সে না কী আবার বিজ্ঞান (সমাজ বিজ্ঞান) পড়ে। এ কোন বিজ্ঞান? আবার আর্টসের বন্ধুদের ছেড়ে যারা বিজ্ঞান পড়তে পড়তে বিশ্ববিদ্যালয় এসে ঢুকলো এদের মাথার "বিজ্ঞান মানে ল্যবরেটরী-বিজ্ঞান" ধারণা আরও পোক্ত হয়ে এবার দাঁড়ালো নিউটনিয়ান-বিজ্ঞান জাতীয় ধারণা। নিউটনিয়ান-বিজ্ঞান অর্থাৎ বস্তুর গতিবিদ্যা নিয়ে যার কায়কারবার। ওদিকে তার ছোটবেলাকার বন্ধু যে সমাজ বিজ্ঞান, পুষ্টিবিজ্ঞান বা লাইব্রেরী সাইন্সে ঢুকেছে এসব বিজ্ঞানের সাথে তাঁর বিজ্ঞানের ফারাক-জটলার কোন এতে সুরাহা হলো না।
এরই ভিতর 'মার্ক্সবাদ কি বিজ্ঞান" এ জাতীয় প্রশ্নের মোকাবোলা করতে নেমেছি আমরা।
বিজ্ঞান ধারণার সমস্যাটা গোড়াটা আসলে কোথায়?
প্রথম যেটা আমাদের মাথা থেকে তাড়াতে হবে তা হলো বিজ্ঞান বলে জ্ঞানের কোন শাখা নাই বা বিজ্ঞান জ্ঞানের কোন শাখা নয়। বরং উল্টা জ্ঞানের সব শাখাই বিজ্ঞানের সাহায্যে (বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে, তা মেনে) নিজেকে বিকশিত করে জ্ঞান হয়ে উঠে। এখন এই যে জ্ঞানের শাখা বললাম এটাই বা কী? বা অন্যভাবে বড় করে করা প্রশ্ন, জ্ঞানের বিষয় (object) কী? কী নিয়ে কার সম্পর্কে আমরা জ্ঞানলাভের, জ্ঞানসঞ্চয়ের চেষ্টা করি?
আমি অনুমান করি আমাদের বেশীর ভাগই বলবে - আমার বাইরের জগৎ, মানুষ দিক থেকে যা কিছু তাঁর সামনে হাজির, বাইরের তার সব। আর একটু বুদ্ধিমান যারা তাঁরা এর সাথে যোগ করতে পারেন- নিজের সম্পর্কেও।
আপাতত এটুকু বোঝাবুঝির উপর ভরসা করে জ্ঞানের বিষয়ের সব কিছুকে এককথায় যদি প্রকৃতি বলি তাহলে দাঁড়াচ্ছে আমাদের জ্ঞানের বিষয় (object) হলো প্রকৃতি, প্রকৃতির সব কিছু।
এখন এই ধরণের প্রক্বতি ভাবনায় ভিতরে আবার এক সমস্যা তৈরী হয়ে গেল। যে আমি, মানুষ - জ্ঞানলাভের কর্তা, আমি subject - এই আমি কী আমার প্রক্বতির ধারণার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। না কী আমি বাইরের? এতে প্রথমে একটু থতমত খেলেও পরে আমরা দ্রুত সামলে নিয়ে বলবো, আমরা মানুষ প্রক্বতির বাইরে নই, ভিতরে। অর্থাৎ জ্ঞানের বিষয় (object) নিয়ে যে কথা তুলেছিলাম আপাতত তার উত্তর দাঁড়ালো, আমাদের জ্ঞানের বিষয় (object) হোল প্রকৃতি (তবে মানুষসহ জ্ঞান করে) আর যে জানবে সেই subject মানে হলো জ্ঞানের কর্তা বা মানুষ ।
কিন্তু এরপরও আর একটা প্রশ্ন থেকে গেল। জ্ঞানের বিষয় (object) হলো প্রক্বতি, মানুষ ইনক্লুডেড ধারণার প্রকৃতি (এখন থেকে একে আমি শুধু প্রক্বতি বলে বুঝাবো। ) - এটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু জ্ঞান নিজে? নিজের কী অবস্হা? নিজেও তো সে নিজের জ্ঞানের বিষয় (object) নয়। অর্থাৎ subject একইসাথে নিজেই নিজের object, নিজের জানার বিষয়ও বটে।
এটা গণ্য না করা মানে কোন জ্ঞান যে জ্ঞান হয়েছে তার নিশ্চয়তা নাই। জ্ঞানের নিশ্চয়তার জন্যই কর্তাকে জানতে হবে, নিজেকেই একজামিনের বিষয়, জানার বিষয় বানাতে হবে। "knowing subject has to make itself its `object’ "। পাঠক এসব নিয়ে ভাবতে থাকুন। ইতোমধ্যে আমি জ্ঞানের বিষয় (object) প্রকৃতি এতটুকু বুঝে কথা আগাই।
উপরে যে প্রকৃতির কথা বললাম, তা বুঝতে জ্ঞান লাভ বা চর্চা করে কারা? দার্শনিকেরা। জ্ঞানী আর দার্শনিক (philosopher) শব্দ দুটোর অর্থ কাছাকাছি। [philosopher= philos "loving" + sophia "learning, wisdom"]। সারকথায়, সব মানুষই জ্ঞানী দার্শনিক হবার জন্য পোটেনশিয়াল তবে, যারা wisdom কে ধ্যানজ্ঞান করেছে তারাই দার্শনিক।
এদিকে আবার, জ্ঞান চর্চার ধারায় প্রক্বতি সংক্রান্ত (natural) ও সমাজ বা মানুষ সংক্রান্ত (social) - এভাবে মোটা দাগে দুটো ভাগ করে জ্ঞান বা দর্শন চর্চাকে করতে আমরা দেখছি বটে; কিন্তু দার্শনিকের কাছ জ্ঞান একটাই।
একই জ্ঞানের ধারায় সে দুটোকেই ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ সে অর্থে সবকিছুকে এবং তা অবশ্যই systematic examination of basic concepts অর্থেও। এজন্য, সব জ্ঞানের জ্ঞান হলো দর্শন। ঐ systematic examination of basic concepts এর খাস মানে হলো পদ্ধতির প্রশ্ন, যেটাকে আমরা বৈজ্ঞানিক বলে চিনি। আর পদ্ধতি ঠিক না হলে ওটা জ্ঞান বা দর্শন হিসাবে টিকে থাকতে পারবে না, কোন কিছু ব্যাখ্যাও করতে পারবে না।
আমি এভাবে এখানে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও দর্শন - শব্দ তিনটাকে পাশপাশি রেখে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলাম বটে, তবে বাক্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক সময় শব্দ তিনটাকে সমার্থক (synonymous) শব্দ অর্থে ব্যবহার করতে দেখা যায়। যেমন উপরে মার্কসের লেখা থেকে যে উদ্ধ্বতি "We know only a single science, the science of history" নিয়েছি, ওখানে science এর অর্থ জ্ঞান বা দর্শন। এর আরও বিস্তারে যাবার আগে চলতি প্রসঙ্গ শেষ করে নেই।
পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্কে দুনিয়ায় উৎপাদন শুরু হবার আগে বিজ্ঞান চর্চা বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জ্ঞান চর্চা ছিল, তবে কারখানা এর পৃষ্টপোষক হবার পর থেকে উৎপাদনে পেশাদার লোক তৈরীর প্রয়োজনে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জ্ঞানকে যখন নামিয়ে আনা হলো, এবার জ্ঞানের নাম হলো শিক্ষা। এইভাবে সর্বোচ্চ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের নাম বিশ্ববিদ্যালয়।
একে ফ্যাকাল্টিতে বিভাগে ভাগ করতে গিয়ে - প্রক্বতি সংক্রান্ত (natural) বিজ্ঞান ও সমাজ বা মানুষ সংক্রান্ত (social) বিজ্ঞান - এভাবে ভাগটা বজায় থেকে যায়। প্রক্বতি সংক্রান্ত (natural) বিজ্ঞান যার মধ্যে ইনজিনিয়ারিং, চিকিৎসাশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, উদ্ভিদ ও প্রাণী বিদ্যা, গণিত ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত - এটাই আকার ইঙ্গিতে একমাত্র বিজ্ঞান বলে এক ধারণার আধিপত্য সৃষ্টি করে। আর বিপরীতে সমাজ বা মানুষ সংক্রান্ত (social) বিজ্ঞান বিজ্ঞানের দাবীদারী হারায়। মানে দাঁড়ায় যেন, এই জ্ঞান অর্জন বা চর্চার ক্ষত্রে systematic examination of basic concepts অর্থে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নাই বা অনুসরণ করা হয় না। এর মূল কারণ এক্ষেত্রে এখানে পরীক্ষা করার পদ্ধতি ভিন্ন; প্রক্বতি সংক্রান্ত (natural) বিজ্ঞানের মত এটা ল্যাবরেটরী নির্ভর নয় বলে এবং ল্যাবরেটরী নির্ভরতাই একমাত্র বিজ্ঞানের মাপকাঠি - এই ধারণা চেপে বসেছে।
এছাড়া , চোখে-দেখা ভিত্তিক বিজ্ঞান এই জ্ঞানতাত্ত্বিক সমস্যাও কম দায়ী নয়। আবার মজার কথা হলো, সমাজ বা মানুষ সংক্রান্ত (social) বিজ্ঞানকে বিজ্ঞানের খাতা থেকে খারিজ গণ্য করার পর আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী দেবার বেলায় যে যে ফ্যাকাল্টি থেকে আসুক না কেন ওকে বলা হচ্ছে, পিএইচডি, মানে ডক্টর অফ ফিলোসফি। কেন? প্রযুক্তিবিদের বা ইনজিনিয়ারিং এর সাথে দর্শনের কী সম্পর্ক? ডক্টর এর আদি মানে রোমান ক্যাথলিক চার্চের সূত্রে প্রখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ। ওটা না হয় বাদ দিয়ে, এর অর্থ এই জমানার knowledgeable বা বিদ্যাধর ধরি তবু এই প্রযুক্তিবিদ বিদ্যাধরের সাথে দার্শনিকের সম্পর্ক বের করা সত্যিই জটিল কাজ। মস্করা থাক, জ্ঞানের শাখা, উপশাখায় ভেঙ্গে যত নিচেই যাই না কেন সব জ্ঞানে জ্ঞানের চূড়া - দর্শনে সবার ফিরে আসা বা ছুতে চেষ্টা বা তাগিদটাই এখানে লক্ষণীয় এবং গুরুত্ত্বপূর্ণ।
এত কিছু প্রাতিষ্ঠানিকতা (কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়) পর্ব সত্ত্বেও ওদিকে অপ্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান চর্চার ধারা সব সমাজেই পাশাপাশি নিজেকে টিকিয়ে চালিয়ে নিতে পেরেছে। সব সামাজিক বিপ্লবের চিন্তা, তত্ত্ব এসব প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে এসেছে এবং ঘটেছে। এটাই হতে বাধ্য। এখন এই বিপ্লবের দর্শনগুলো বৈজ্ঞানিক ছিল কী না তা কী দিয়ে মাপবো? এর উত্তরে একটু পরে আসছি।
শুরুতে দেয়া মার্কসের কোটেশনে যাবো এখন।
মার্কসের বিজ্ঞান বিষয়ে দাবী হলো জ্ঞান বা দর্শন অর্থে, বিজ্ঞান একটাই, আর সেটা হলো ইতিহাসের বিজ্ঞান। এ'আবার কোন ইতিহাস? এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ইতিহাস নয় তা ভাবে বুঝি। এটা বায়তুল মোকার্রমের কোন "ঐতিহাসিক জনসভার" মাইকিংয়ে যেমন বলা হয় সেই ইতিহাস নয় - এটাও বোধহয় একটু একটু অনুমান করি। তাহলে একোন ইতিহাস বা ঐতিহাসিকতা?
ধরা যাক, আমি বললাম, মানুষ ধারণাটা ঐতিহাসিক। মানে কী? মানুষের একটা ইতিহাস আছে, তাই?
না।
আজ পর্যন্ত দুনিয়ার দেখা সমাজে সবসময় মানুষ একরকম ছিল না। আমার আজ মানুষ বলতে যাকে সামনে দেখছি সে সবসময় এরকম নয় বা ছিল না। মানুষ ব্যক্তি হয়েছে তাঁর ইতিহাসের একটা পর্যায়ে। একই রকম চিন্তা করা এমনকি নিজের সম্পর্কে চিন্তা করা, বেঁচে থাকার উপায় সংগ্রহ, জীবনযাপন পদ্ধতি, অন্য মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্হাপন, প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক, উৎপাদন, শ্রমে নিয়োজিত হবার ধরণ, হাতিয়ার প্রয়োগের ধরণ - এরকম সবকিছুতে মানুষ একরকম ছিল না। তাহলে মানুষ সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা করতে গেলে ওটা ওর বেড়ে উঠার ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যেই অনুসন্ধান করে একএকটা করে পেতে হবে।
এটা সবচেয়ে ভালো ভাবে ধরা যাবে ওর উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে। ওটা বাকি সব কিছুর নির্ধারক। তাহলে উৎপাদন সম্পর্ক মানে আবার কী? মানে হল - মানুষে মানুষে ও মানুষে-প্রকৃতিতে উৎপাদন বিনিময় সম্পর্ক, আর এর ভিতর দিয়ে বদল ঘটা সম্পত্তির রূপ-সম্পর্ক। মানুষের ইতিহাসে এসব সম্পর্কের ভিতর দিয়ে মানুষ সম্পর্কে একটা ঐতিহাসিক ধারণা লাভ করা সম্ভব। এতে এখনকার দৃষ্টিভঙ্গি আগের ঘাড়ে চাপিয়েও বুঝা যাবে না।
এই অর্থে মানুষ মাত্র ঐতিহাসিক মানুষ।
তো মানুষের ইতিহাসকে দেখার এই পদ্ধতিকে তিনি ইতিহাসের বিজ্ঞান দাবী করছেন ইতিহাসকে আবার মানুষের ইতিহাস আর প্রকৃতির ইতিহাস বলে দুভাগে ভাগ করে দেখার চেষ্টাকে তিনি নেহায়েতই দুটো আলাদা দিক থেকে দেখার চেষ্টা মনে করেন। কারণ পরখ করে দেখার সুবিধার জন্য ভাগ করে দেখলেও এরা অবিভাজ্য; মানুষ যতদিন আছে ততদিন মানুষের ইতিহাস আর প্রকৃতির ইতিহাস একে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়েই ইতিহাস হয়েছে। প্রকৃতির ইতিহাস যাকে আমরা তথাকথিত প্রকৃতি বিজ্ঞান বলি - সেটা এখানে তাঁর বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে মানুষের ইতিহাস আমাদেরকে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
এই হলো মার্কসের ইতিহাসের বিজ্ঞান আর সেই সূত্রে natural science ও social science কে দেখার ক্ষেত্রে মার্কসের মনোভাব।
কিন্তু প্রকৃতি বিজ্ঞান বা natural science কে মার্কস তথাকথিত বললেন কেন?
এর উত্তর আমি আগে দিয়েছি, জ্ঞানের বিষয় (object) আর কর্তা (subject) আলোচনায় । অনেকে ধরতে পারেননি হয়তো। আবার ধরিয়ে দেই।
প্রকৃতি বিজ্ঞান বা natural science: বিজ্ঞান মানে - systematic examination of basic concepts - বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রকৃতিকে জানা।
প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান বা দর্শন।
পাঠক লক্ষ্য করুন, এখানে অবজেক্ট বা জ্ঞানের বিষয় হলো প্রকৃতি। আর সাবজেক্ট বা জ্ঞানের কর্তা হলো মানুষ বা চিন্তা।
এখন এই প্রকৃতি মানে কী? মানুষ কী এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত? এর অংশ ধারণা করেছি? কী না?
আগেই বলেছি, আমরা প্রথমে থতমত খেয়ে হলেও স্বীকার করবো, হ্যা মানুষ অন্তর্ভুক্ত, মানুষ প্রকৃতির অংশ। অথবা একটু বুদ্ধিমানেরা বলবে, মানুষ একই সঙ্গে প্রকৃতিও; মানুষ ও প্রকৃতি অবিচ্ছেদ্য।
কিন্তু প্রকৃতি বিজ্ঞান বা natural science যে বিজ্ঞানের দোকান খুলেছে ওখানে তো এই অবিচ্ছেদ্য জ্ঞান করে প্রকৃতি বিজ্ঞানকে সাজানো হয় নাই। মানুষ তো ওখানে দর্শক বা কর্তা মাত্র। তাহলে কাকে একজামিন করবো? কাকে একজামিন করে প্রকৃতি বিজ্ঞান বা natural science তার সৌধ গড়েছে? মানুষ কী স্রেফ বায়োলজিক্যাল এলিমেন্ট? অথবা মানুষ ছাড়া এক প্রকৃতির কল্পনা করবো? এ'আবার কেমন প্রকৃতি? সাবজেক্ট সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কার systematic examination of basic concepts নিব? অতএব, দেখা যাচ্ছে এই জ্ঞান অসম্পূর্ণ। প্রকৃতি বিজ্ঞান বা natural science একটা অসম্পূর্ণ জ্ঞান ও দর্শন। এজন্যই মার্কস একে তথাকথিত প্রকৃতি বিজ্ঞান বলেছেন।
বলছেন বিজ্ঞান একটাই। মানুষের ইতিহাসের বিজ্ঞান। ঐতিহাসিক মানুষের বিজ্ঞান। জ্ঞান বা দর্শনও। বিজ্ঞানের বড়াইকারীরা এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের পরই কেবল তারা আলাপ করতে পারে "মার্কসবাদ কী বিজ্ঞান?"।
অনেক প্রসঙ্গ এখানে বাদ পড়লো জানি এবং মানি। কিন্তু শেষ করতে হচ্ছে। যারার আগে একটা scoop দিয়ে শেষ করছি। মানুষ মানে, মানুষের দেহ যেখানে মানুষ ও প্রকৃতির মহামিলন প্রতীকায়িত হয়ে আছে। ওকে আলাদা করা এক অসম্ভব কল্পনা।
জয়গুরু!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।