আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চেঙ্গিস খান।



চেঙ্গিস খান নিজে পরাক্রান্ত শাসক ছিলেন সত্য,কিন্তু অনেকেই যেটা জানে না তা হলো তার কয়েকজন উৎকৃষ্ট সেনাপতি ছিলো যারা বীরত্বে,ধুর্ততায় আর নিষ্ঠুরতায় তার সমকক্ষই ছিলেন। এক চোখ কানা সুবুদাই বাহাদুরের কথাই বলা যাক,সে ছিলো চেঙ্গিসের ডান হাত। তারা দুজনেই একই উপজাতির,দুজনেই অনোন নদীর পারে মঙ্গোলিয়ায় জন্মেছেন। সুবুদাই সবচেয়ে কুখ্যাত। তার ধুর্ততা ও নিষ্ঠুরতার কোন সীমা ছিলো না।

সে ভালো চোখটা দিয়ে কোন উচু একটা পাহাড় বা গাছে চড়ে শত্রুকে লক্ষ্য করে নিজের মতো করে একটা সমর পরিকল্পনা করতো। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই যা লক্ষ্য হিসেবে অব্যর্থ্য হতো। অনেকটা সাপের মতো ঠান্ডা মেজাজে থেকে হঠাত করে ছোবল হানতো। আর চেঙ্গিসের অন্য সেনাপতিদের জন্য চ্যালেঞ্জ রেখে যেতো,কিন্তু অন্যরা কখনো তাকে টক্কর দিতে পারেনি। যুদ্ধে যাওয়ার কালে সে কখনোই ভরাপেটে যেতো না,এবং যোদ্ধাদেরও তাই করতে নির্দেশ দিতো।

তারমতে ভরাপেটে যোদ্ধার ক্ষিপ্ততার ধার কমে যায়। আলস্য শরীরে ভর করে। সে নিজে যুদ্ধে যাওয়ার প্রাক্কালে তাবু থেকে বের হয়ে এসে তার বাহিনীর দিকে তাকিয়ে থাকতো। এসময় তার কাছে একটি সাদা ঘোড়া আনা হতো। সে ওটার ঘাড়ে ছোট একটা ছিদ্র করে সেখানে মুখ লাগিয়ে ওটার রক্ত পান করতো,তারপর কিছু রক্ত তার মুখে মেখে একটা হুংকার দিতো।

সেটাই যুদ্ধ শুরু করার তার ইশারা। শেষ বয়সে সে চেঙ্গিসের নির্দেশে বড় ছেলে জুচির কাছে চলে যায়,জুচি আততায়ীর হাতে নিহত হলে(অনেকেই মনে করেন এতে চেঙ্গিসের হাত ছিলো,কারন জুচি প্রায়ই তার বাবার সিদ্ধান্তের উলটো কাজ করতো)তার ছেলে বাটুর শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেয়। একেবারে পরিনত বয়সে তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। দ্বিতীয় জন ছিলো জেবে নোইয়ন। একেবারে কমবয়সী(২০-২২ বছর)এ সেনাপতি ছিলেন একেবারে ডাকাবুকো।

সে চেঙ্গিস ছাড়া কারো কমান্ড মানতো না। সুবুদাই ও জেবে নোইয়ন এই দুই জনের হাতেই বলতে গেলে পুরো এশিয়া ধবংস হয়। সুবুদাইয়ের শয়তানি বুদ্ধি আর জেবের বল্গাহারা সাহস এই দুইয়ের মুখোমুখি হওয়ার মতো বাহিনী বলতে গেলে সেই আমলে ছিলো না। জেবেকে চেঙ্গিস যেভাবে পায় তা হলো,জেবের ১৩-১৪ বছর বয়সে চেঙ্গিস জেবের উপজাতির লোকদের লুট করে তাদের সবাইকে হত্যা করে। কিন্তু হঠাত করে একটা অবর্থ্য তীর এসে চেঙ্গিসের ঘাড়ে বিদ্ধ হয়।

চেঙ্গিস মরতে মরতে বেঁচে যায়। কিন্তু জেবের উপজাতির জীবিত বন্দীদের কেউ স্বীকার করে না কে এটা নিক্ষেপ করেছে। তাই চেঙ্গিস তাদের সামনে এনে বলে,বলো তো তোমাদের মধ্যে কে এতো নিঁখুত করে তীর ছূড়তে পারে,যেটা আমার ঘোড়ার ঘাড়ে বিদ্ধ হয়। তখন কিশোর জেবে বলে,সেটা আপনার ঘোড়া নয়,আমিই আপনার ঘাড়ে তীর মেরেছি। কিন্তু আপনি যদি আমার প্রান ভিক্ষা দেন তাহলে আমি আমৃত্যু আপনার সেবা করে যাবো।

চেঙ্গিস বীরত্ব পছন্দ করতেন। তখনই সুবুদাইকে ডেকে তার হাতে জেবে নোইয়নকে তুলে দেন। পরবর্তী জীবনে জেবে তার বীরত্বের প্রমান রেখেছিলো। কিন্তু চেঙ্গিসের মৃত্যুর বছরই সে এক অভিযানে নিহত হয়। জেবের নামের অর্থই হলো তীর।

আরেকজন ছিলো,তখুচার নোইয়ন। সেও জেবের পড়ে নাম করেছিলো। সুবুদাই,জেবে নোইয়ন এদের দ্বারাই সমগ্র মধ্য এশিয়া ধবংস হয়। এরা তখনকার সমরকন্দ,বুখারা মাটিতে মিশিয়ে খোরেজম শাহর রাজধানী উরগঞ্জে হাজির হয়। আমু দরিয়ার বাধ ভেঙ্গে উরগঞ্জকে প্লাবিত করে ধবংস করা হয়।

সেখান থেকে সুবুদাই আর জেবে আজকের তুর্কমেনিস্তান হয়ে ইরানের কাজবিন হয়ে আজার বাইজানের মধ্যে দিয়ে আর্মেনিয়া হয়ে পুরো কাস্পিয়ান ঘুরে গিয়ে উত্তর পুব মোড় নিয়ে আবার মধ্য এশিয়ার স্তেপে ফিরে আসেন। আর বলাবাহুল্য পুরো ভ্রমনে তারা সমস্ত লোকালয়কে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে যান। তাদেরকে পশ্চিমে পাঠিয়ে চেঙ্গিস তখুচারকে নিয়ে পুবে একেবারে তের্মেজের কাছে আমু দরিয়া পেরিয়ে খোরেজম শাহ মোহাম্মদের পুত্র জালাল উদ্দীনকে ধরতে আফগানিস্তানে ঢুকে পড়েন। জালাল তখন বীরের মতো এখানে সেখানে গেরিলা আক্রমনে মঙ্গোলদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলছিলেন। একেবারে সিন্ধু নদীর ধারে এসে চেঙ্গিস তার অভিযানের রাশ টেনে ধরেন।

কারন জালাল তার চোখের সামনে উচু পাহাড় থেকে সিন্ধুতে ঘোড়াসহ ঝাপিয়ে পড়ে অপরপাশে গিয়ে পৌছান। সেখান থেকে তাকে তরবারি উচিয়ে ইশারা দেন,বেঁচে থাকলে সে আবার এসে মঙ্গোলদের খতম করবে। কিন্তু সেই সুযোগ আর আসে নাই। জালাল অনেক বছর পর আজারবাইজানের কাছে দিয়ারবাকী আততায়ীর হাতে নিহত হন। ওদিকে সুবুদাই আর জেবে ও যুদ্ধে হেরে পালিয়ে যাওয়া খোরেজম শাহ মোহাম্মদকে আর খুজে পায়নি।

তারা আশাহত হয়ে চেঙ্গিসকে খবর পাঠায় তারা আর কতটুকু যাবে?চেঙ্গিস ক্রুদ্ধ হয়ে জবাব পাঠায়,খুজে না পেলে তাদের আসার দরকার নাই। এতে তারা আরো যতোবেশী খুজে ততো জনপদ ধবংস হতে থাকে। শাহ মোহাম্মদ পলাতক থাকা অবস্থায় কাস্পিয়ান সাগরের এক দ্বীপে মারা যায়। এজন্যই তারা তাকে খুজে পায়নি। কারন তিনিও জানতেন মুল ভুখন্ডে থাকলে তার আর রক্ষে ছিলো না।

অবশেষে চেঙ্গিসের রাগ কমে,কারন তিনি নিজে ও তার বাহিনীও দীর্ঘ রনযাত্রায় ক্লান্ত হয়ে মঙ্গোলিয়া ফিরতে চায়। সুবুদাই আর জেবেকেও বলা হলো,স্তেপ পেড়িয়ে মঙ্গোলিয়া আসার জন্য। এরপর পরবর্তী ১৫০ বছর পর্যন্ত মঙ্গোলরা তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছিলো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.