লেট দেয়ার বি লাইট
১১৬২ সালে মঙ্গোলিয়ার ওনান নদীর তীরে ছোট্ট একটি ট্রাইবে চেঙ্গিস খানের জন্ম। উনার আসল নাম তেমুজিন । তার বাবার য়েসুকাই ছিলেন কিয়াদ ট্রাইবের প্রধান । জন্মের সময় তেমুজিনের হাতে রক্ত ছিলো , যা প্রাচীন মোঙ্গল বিশ্বাস অনুসারে বড় নেতা হওয়ার লক্ষণ । তেমুজিনের বাবা মারা যাবার পর তাদের গোত্র তাদের ছেড়ে চলে যায়।
তেমুজিনের প্রথম স্ত্রী বরটে মার্কিত গোত্র দ্বারা অপহরণ হয়। তেমুজিন তার বাবার বন্ধু তাঘ্রুল খানের সহায়তায় মার্কিত দের পরাজিত করে স্ত্রী কে উদ্ধার করেন। এইটা ছিলো ইতিহাসে তার প্রথম বিজয়। এরপর তেমুজিন অনেক যুদ্ধের মাধ্যমে ১২০৬ সালে সমস্ত মঙ্গল গোত্র গুলা কে একত্রিত করেন এবং চেঙ্গিস খান উপাধি নেন । গোত্র গুলো হলো মার্কিত , নাইমান, মোঙ্গল, তাতার এবং উইঘুরে .
ওনান নদী
প্রাচীন এশিয়া
চীন বিজয়
চীন তখন অনেক গুলা রাজ্যে বিভক্ত(সুং, জিন , জিয়া জিয়া, তিব্বত , দালি )।
১২০৬ সালে চেঙ্গিস উত্তর পূর্ব চীন (জিয়া জিয়া ) আক্রমণ করেন. ১২১০ সালে জিয়া জিয়া সাম্রাজ্য আর্তসমর্পন করে । এর পর মোঙ্গলরা জিন রাজ্য আক্রমণ করে.এই যুদ্ধ ১২৩৪ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয় । চিনের প্রাচীর কোনভাবেই চিনকে রক্ষা করতে পারে নাই । ততদিনে অবশ্য চেঙ্গিস খান মারা যান। জিন দের রাজধানী হচ্ছে বর্তমান বেইজিং।
চেঙ্গিস খান হয়তো তার নিজের জীবন দশায় পুরা চীন দখল করতে পারতেন । কিন্তু একটি ছোট ঘটনায় তিনি তার সেনা বাহিনী পারস্য অভিমুখী করেন।
পারস্য
পারস্য বিজয়
১২১৯ সালে তার নিয়ন্ত্রিত বানিজ্য কাফেলা পারস্য সাম্রাজ্য কর্তিক আক্রান্ত হয়। ফলশ্রুতিতে বিশাল পারস্য ৩ বছরের মাথায় ধ্বংস হয়ে যায় । বলা হয় যে মাত্র ৫০০০০ সেনা বাহিনী নিয়ে পারস্যের ৫০০০০০ সেনা বাহিনী কে পরাজিতকরে।
কথিত আছে যে পারস্যের রাজধানীতে মোঙ্গলরা মানুষর মাথা , ঘোড়ার মাথা , হাতির মাথা , কুকুর বিড়ালের মাতা দিয়ে আলাদা আলাদা পাহাড় বানায়। ১ মাস রাজধানীতে উপর দিয়ে কোন পাখী উড়ে নাই। এই দিকে জিয়া জিয়া সাম্রাজ্য যুদ্ধে সহায়তা না করায় চেঙ্গিস খান তা দখল করে নেনে। তবে সম্পূর্ণই দখল হয় তার মৃত্যুর পর।
মোঙ্গলদের গতিপথ
অনন্য বিজয়.
চেঙ্গিস খানের দুই সেনাপতি সবুতি এবং জেবে ১২২৩ সালের মধ্যে ককেশাস , ইন্ডিয়া , আফগানিস্তান , জর্জিয়া দখল করে নেন ।
তাদের যাত্রা পথে সকল সেনা বাহিনী তারা নির্মম ভাবে পরাজিত করে। ১২৪০ সালে চেঙ্গিসের পুত্ররা বুলগেরিয়ার কিছু অংশ দখল করে নেয়। শেষ পর্যন্ত এই সাম্রাজ প্রশান্ত মহাসাগর থেকে আড্রিয়াটিক সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
মোঙ্গল সাম্রাজ্য
দুধর্ষ মোঙ্গল বাহিনী
সামরিক শক্তি
মোঙ্গলরা প্রথম সেনাবাহিনীতে দশমিক সিস্টেম চালু করে। ইউনিট গুলা হত ১০, ১০০ , ১০০০০ ।
মোঙ্গল সেনাবাহিনী ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে সুশৃংখল এবং দক্ষ। প্রতি মোঙ্গল সেনার ৫ টি করে ঘোড়া থাকতো.। ফলে চোখের পলকে তারা এক জায়গা থেকে আরএক জায়গায় চলে যেত । প্রতিপক্ষ যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার আগেই মোঙ্গলরা সেখানে পৌছে কচুকাটা করতো। তারা ক্রস ব্রিডিং আর মাধ্যমে দ্রুতগামী ঘোড়া জন্ম দেয়।
মোঙ্গলসেনা বাহিনী নির্ভর করতো তীরন্দাজী এবং ঘোড়ার উপর। কোনো বড় সেনা বাহিনীর সামনে পারলে তারা দ্রুতু তীর ছুরে পালিয়ে যেত। এই সময় প্রতিপক্ষ তাদের তাড়া করলে মঙ্গল রা ঘোড়ার পিঠে থেকে ঘুরে তীর মারতো। ( এই কৌশল ছিলো অনন্য ).। একসময় পরিশ্রান্ত প্রতিপক্ষকে নানা ভাবে ঘুরিয়ে কচুকাটা করা হত.।
চীন আক্রমনের সময় চেঙ্গিস খান সমস্ত গরু যোগার করে প্রতিপক্ষের উপর স্টামপিড করে এবং এই ঘোষণা দেয় যে কেও যদি তাদের বাধা দেয় তবে সেই এলাকার নারী, পুরুষ, শিশু, পশুপাখি সব মেরে ফেলা হবে. এবং সত্যিই মোঙ্গল তা করতো। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। ফলে মোঙ্গল রা আসার আগেই সবাই আতংকিত হয়ে পালিয়ে যেত.। চেঙ্গিস খানের সাফল্যের আর একটি কারণ ছিলো দক্ষ প্রশাসন। সমগ্র সিল্ক রুট একক নিয়ন্ত্রনের ফলে মঙ্গলদের সময় ব্যাবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটে।
মৃত্যু
১২২৭ সালে চেঙ্গিস খান ঘোড়ার পিঠ থেকে পরে মারা যান। তাকে ওনান নদীর তীরে অত্যন্ত গোপনে সমাহিত করা হয়। কথিত আছে যে তাকে যারা সমাহিত করে একদল প্রথমে তাদের মেরেফেলে। এর পর এক জন আর একজন কে মারতে থাকে এবং সর্বশেষ জন আত্ত্বহত্যা করে.
সুত্র: ইন্টারনেট
পরবর্তি পর্ব কিভাবে মোঙ্গল সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়.
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।