কত কিছু যে করতে চাই, তবুও কিছু করতে না পারার দায়ে মাথা খুঁটে মরি ।
ঘটনা১
২য় সেমিস্টারে উঠার পরে পড়াশোনা শিকেয় উঠায়া রাখছি। ওই দিকে পরীক্ষা একদম কাছে আগায়া আসছে। ক্লাসে যেতে যেতে সিড়ি দিয়ে তাই উঠার সময় ভাবতেছিলাম কী করা যায়! মনে মনে নিজেকে সান্তনা দিতেছি যে, কোন ব্যাপার না, ধুমধাম পড়ে সব শেষ করে দিব। দরকার হলে গেইমস খেলার সময় কমিয়ে দিব(আমার পক্ষে আসলে সম্ভব না), এইসব হাবিজাবি।
পাশে দেখি এক বান্ধবী, চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা হইছে।
আমি বলি, দোস্ত, কী হইছে রে ? সে বলে,” পাগলা, আমি ত শেষ। ” আমি মনে করলাম, বোধহয় ওই ঘটনা ঘটাইছে (আজকালকার দুনিয়ায় যেই অবস্থা!!)। আমি ওকে সান্তনা দিলাম, বললাম, এসব ব্যাপার না। হাসপাতালে গেলেই সব ঠিক করে দেয় এখন।
সে বলল যে, সেও একই চিন্তা করতেছে।
আমি আরও কিছুক্ষণ সান্তনা দিলাম, বুঝাইলাম যে এসব ব্যাপার না। কিন্তু, মেয়ে খুবই আপসেট। আমি বললাম, কোন মেডিসিন নিছে কী না! সে জানাল নিয়েছে, তাও কাজ হয় নাই। আমি বুঝলাম, দেশে সবই ভেজাল।
এখন মেডিসিনও ভেজাল। যাই হোক, বান্ধবীর মন খুবই খারাপ। আমার ক্লাস শুরু হচ্ছে, আমি যাওয়ার সময় বললাম, এখন টেনশন করে লাভ কী? বয়ফ্রেন্ডের সাথে থাকার সময় মনে ছিল না?
বান্ধবী চমকে উঠল। আর শুরু হল গালিগালাজ এবং এক ঝাঁক হুমকি !!!
ঘটনা যা বুঝলাম, তা হল, ওর শরীর খারাপ ছিল ২ দিন। এই ২ দিল ও কিছু পড়েনি।
এতেই তার ধারণা সে পরীক্ষায় ফেইল করবে !! তাই তার মন খারাপ। আর অসুস্থ ছিল বলেই আমি প্রথমে হাসপাতালের কথা বলায়, সে স্বাভাবিক ভাবে নিছিল।
আর,আমি ভাবি কী !!
ভাল ছাত্র কারা আর তাদের লেখাপড়ার নমুনা দেখে আমি আবারও বুঝলাম যে, এবার পরীক্ষায় আমার কোন আশা নাই।
ঘটনা২
কলেজে খুবই ভাবের সাথে চলতাম, কারণ আমার ছিল কলেজের সবচেয়ে বড় গ্রুপ। বলতে গেলে, সেই গ্রুপের লিডিং পজিশনেও আমিই ছিলাম।
তখন, আমার যে কোন সিদ্ধান্তে সবার আগে একমত পোষণ করত আমার খুব কাছের দোস্ত মামুন। ও খুবই ভাল ছাত্র। সারাদিন পড়াশোনা নিয়েই থাকত। ও এমনিতে রাগী ছিল। আর, কোন মেয়ের সাথে কথা বলার সময় একদম পাকা আপেলের মত লাল হয়ে যেত।
যাই হোক, দোস্ত এখন ঢাবিতে ফিজিক্স পড়ে। ২ মাস পড়ে দেখা। এখন ওকে দেখে আমি অবাক। চোখে মুখে ঢাবি ভাব। মানে, ওরে দেখলেই মনে হবে যে মিছিলে যাচ্ছে, পুরা জ্বালাও পোড়াও ভাব।
সে এখন রাজনীতিতেও জয়েন করছে। যাই হোক, তাকে নিয়ে উঠছি বাসে। লিংক রোডের দিকে যাওয়ার সময় বাসের গতি একটু বেশিই ছিল, সেই গতিতে এমনভাবে বাস টা মোড় ঘুরল যে আমরা সিটে বসেই পাল্টি খেলাম। আমি জানালার দিকে আর মামুন আমার পাশে। আমি ভাবতেছি,বাসের জড়তার ভ্রামকের কারণে আমার বিচ্যুতি হিসাব করে কোনভাবে বাসের গতি বের করা যায় কী না !! ফিজিক্সে পড়া মামুনের কোন সূত্র জানা আছে কীনা ।
ওর দিকে তাকিয়েই আমি চমকে উঠলাম। এতক্ষণে সে বাসের কন্ডাক্টরের দিকে ঘুসি বাগায়ে ফেলছে,আর গালিগালাজ ত আছেই। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি দেখি, সেখানে ও মনে মনে এই বাসে আগুন জ্বেলে দিছে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম, আর ভাবলাম দোস্তের এ কী অবস্থা ! যাই হোক, সবাই ধরে টরে যখন ঠিক করল ওকে, তখন ওর পাশের ছেলেটা একটা স্টপেজে নেমে গেল, আর সেখানে একটা মেয়ে এসে বসল।
এইবার দেখি দোস্ত ঠাণ্ডা।
সে লাজুক মুখে একবার ওইদিকে তাকায়, আর নিচে তাকায়। বাস কয়েকবার ঝাঁকি খাইল, আমি ভয়ে ভয়ে ওর দিকে তাকাই। দেখি সব ঠাণ্ডা। আমি আস্তে করে বললাম, দোস্ত তোর ডিপার্টমেন্টের মেয়েদের কথা কিছু বল ত। তার থেকে জানলাম, বেশির ভাগ ভিকারুন্নেসা থেকে আসছে, ওখানে চান্স পাওয়ার জন্য বাবা মা নাকি মেয়েকে আরেক জায়গায় ক্লাস ৪ পর্যন্ত পড়িয়ে আবার ওখানে ক্লাস২ তে ভর্তি পরীক্ষা দেয়াইছে।
এরপরে, আবার সবাই নাকি ইন্টার পাশের পর প্রথম বছর মেডিকেলে পরীক্ষা দিয়ে চান্স না পেয়ে ২য় বছর এখানে আসছে, তাই সবাই ওর অনেক সিনিয়ার। আর, এরপরেও সেইম এজের যে কয়জন আছে, তারা বুকড।
বন্ধু তাই পুরা খালি !! হা হা হা হা হো হো হো ।
সে এখন কথায় কারে মাইর দিবে, কার ঠ্যাং ভাংবে সেই কথা চিন্তা করে।
কিন্তু, পাশের মেয়েটার জন্য সে এখন ঠাণ্ডা।
সেই অজ্ঞাত মেয়ের জন্য আমার দোস্তকে কিছুক্ষণের জন্যেও হলেও আগের অবস্থায় ফিরে পাইছি। তাই তাকে ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।