আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন কৃষকের খোলাচিঠি-১

কেউ কেউ একা

আমরা কৃষকরা ভাল নেই। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে পান্থা, কাঁচা মরিচ পেঁয়াজ দিয়ে খেয়ে জমিতে যাই ফসল ফলাতে। ফসলের মাঠে গিয়ে ভুলে যাই ছেলেমেয়ে না খেয়ে আছে, ভুলে যাই স্ত্রী অসুখের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। মনে থাকে না মহাজনের কাছ থেকে সুদ করে টাকা এনে জমি চাষ করেছি। ভুলে যাই এই সোনালি ফসলের বেশিরভাগ যাবে মহাজনের ঘরে সুদের দায় হিসেবে।

সবুজ ফসল যখন বাতাসে মাথা দোলায় তখন শত অভাবে থাকলেও আমাদের অর্থাৎ কৃষকদের মুখে ফুটে ওঠে হাসি। মন নেচে ওঠে ডাগর ধান দোলার মত। সংসারের অভাবের কথা বেমালুম ভুলে যাই। আমারই শুধু এমন হয়, তা নয়। সব কৃষকেরই হয়।

ধানের ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে মন হয়ে যায় আত্মহারা। এদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। আর যারা গ্রামে বাস করে তাদের বেশিরভাগই কৃষক। কৃষকের মধ্যে আবার শ্রেণী বিভাগ আছে। কোন কৃষকের জমি আছে।

কোন কৃষকের জমি নেই। তারা বর্গা চাষি নামে পরিচিত। কোন কোন কৃষকের আবার অনেক অনেক জমিজমা আছে। তারা তাদের মাঠে কামলা রেখে কৃষি কাজ করায়। তবে গ্রামের অধিকাংশই বর্গা চাষি।

গরিব চাষি। তাদের নুন আনতে পান্থা ফুরায় এমন অবস্থা। সরকার নানাভাবে নানা সময়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়ায়। সারে ভতূর্কি দিয়ে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়। মিডিয়াগুলোতে নানাভাবে কৃষি সংবাদ, কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করে কৃষকদের সুবিধার জন্য।

প্রতিটি থানা পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস আছে কৃষকদের নানাবিধ সাহায্য করার জন্য। উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা নানাভাবে সহযোগিতা করে থাকেন কৃষকদের। সরকার কৃষকদের জন্য প্রতিবছর বাজেট করে। এক কথায়, সরকারের সদিচ্ছা আছে। কিন্তু তারপরও কৃষিপ্রধান বাংলাদশের জন্য তা যথেষ্ট নয় বলে আমি মনে করি।

অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কৃষি আজ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেটা কোন কৃষকের কাক্সিক্ষত নয়। একটা কথা, কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক সেটা কৃষির উন্নতি হয়েছে, কৃষকের উন্নতি হয়নি। ভবিষ্যতে হবে বলেও আমার মনে হয় না। কৃষিতে অনেক নতুন নতুন জিনিস এসেছে। লাঙলের বদলে এসেছে ট্রাক্টর, ধান কাটার যন্ত্র, ধান রোপার যন্ত্র, গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের যন্ত্র।

এসেছে হাইব্রিড ধানসহ নানাবিধ কৃষিপণ্য। কৃষির সেই আগের চিত্র আর দেখা যায় না। তারপরও উন্নত দেশের তুলনায় আমরা অনেক পেছনে পড়ে আছি। চলছে বেরো ধানের মৌসুম। ধান কাটা ও বিক্রি শুরু হয়ে গেছে কোথাও কোথাও।

কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। মাঠের ফসলের অধিকাংশ মহাজনকে দিয়ে বাদ বাকি ফসলের ন্যায্যদাম তারা পাচ্ছে না। ফসল উৎপাদন করতে যা খরচ হচ্ছে লাভ তো দূরের কথা আসলই উঠছে না। এক মণ ধান উৎপাদন করতে সবকিছু দিয়ে খরচ হচ্ছে ৫১০ থেকে ৫২০ টাকা। অথচ সেই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা করে।

এই চিত্রটা কোন একটি অঞ্চলের চিত্র নয়। সারা বাংলাদেশের এই একই চিত্র। কৃষক এখন কী করবে? কোথায় যাবে? সরকার ইচ্ছে করলেই একটা নির্দিষ্ট দাম বেধে দিতে পারে। কৃষকের লোকসান যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে পারে। গ্রামের এই সামান্য একজন খেটে খাওয়া কৃষকের কথা আজ বাংলাদেশের সব কৃষকের কথাই এক।

দয়া করে আমাদের মত হতদরিদ্র কৃষকের পাশে দাঁড়াতে সরকারকে অনুরোধ করছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.