আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছিটমহল বিনিময়: বিজেপির নরম সুর

মঙ্গলবার রাতে এনডিটিভিতে সম্প্রচারিত এক আলোচনায় বিজেপির মুখপাত্র তরুণ বিজয় স্বীকার করে নেন যে ভারতের ‘জাতীয় স্বার্থেই’ ওই চুক্তির বাস্তবায়ন প্রয়োজন।  
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়, যার আওতায় দুই দেশের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় এবং ছয় দশমিক এক কিলোমিটার অমীমাংসিত সীমানা চিহ্নিত হওয়ার কথা।
এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হলে ভারতের সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। কিন্তু এর জন্য পার্লামেন্টে বিল পাস করতে হলে রাজ্যসভা ও লোকসভায় দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন দরকার, যা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকারের নেই।
কেন্দ্রীয় সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ তিন দফা বিল তোলার উদ্যোগ নিলেও দুইবার বিজেপি ও আসাম গণ পরিষদ এবং একবার পশ্চিমবেঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী  মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিকায় তা সম্ভব হয়নি।


টিভি টক শোতে বিজয় বলেন, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বর্তমান বাংলাদেশ সরকার নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ প্রশমনে সাড়া দিয়েছেন। এখন বাংলাদেশের মানুষকে ‘সঠিক বার্তাটি’ পৌঁছে দিতে’ ভারতেরও উচিৎ ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নের পাশাপাশি তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিতে সই করা।   
পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বরুণ গান্ধীও গত মাসে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে মত দেন।    
তবে এনডিটিভির টক শোতে বিজয় আবারো বলেছেন, মনমোহন সিং নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের উচিৎ ছিল, বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি করার  আগে বিরোধী দলের মতামত নেয়া।   
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা এ চুক্তির বিষয়ে যে উদ্বেগের কথা বলে আসছেন, তাও কেন্দ্র সরকারের আমলে নেয়া উচিৎ বলে মনে করেন এই বিজেপি নেতা।


তবে তৃণমূল সাংসদ স্বাগত রায় এই আলোচনায় বলেছেন, বাংলাদেশের সরকারে কে আছে তা দেখা ভারত সরকারের কাজ নয়। বাংলাদেশে যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের সঙ্গেই দর কষাকষির জন্য প্রস্তুত হতে হবে ভারতকে।    
কংগ্রেসের মন্ত্রী শশী থারুর ও বাংলাদেশে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত বিণা সিক্রি এ চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতে জনমত গড়ে তোলার পক্ষে জোরালো মত দেন।  
শশী থারুর বলেন, “ঢাকা আমাদের বড় বন্ধু। এখন আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি অঙ্গীকার রাখতে না পারলে তা হবে একটি বিপর্যয়।


বিণা সিক্রি বলেন, “ভারত যদি বিশ্বের কাছে গুরুত্ব আশা করে, তাহলে কোনো দেশের সঙ্গে করা চুক্তি বাস্তবায়নের সামর্থ্য তার থাকা উচিৎ। ” 
স্থল সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন করতে গেলে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম ভূমি হারাবে বলে যে অভিযোগ তৃণমূল ও আসাম গণ পরিষদ করে আসছে, তাও নাকচ করেন এই সাবেক রাষ্ট্রদূত।
শশী থারুর ও বিণা সিক্রির সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রবীণ সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক বলেন, ভারতের ভবিষ্যত এর পূর্ব সীমান্তের নিরাপত্তা ও প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে যোগযোগের ওপর অনেকখানি জড়িত। আর এ দুটো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার সহযোগিতা দিয়ে আসছে।   
তার মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়েই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে।

আর সম্পর্ক উল্টে গেলে ক্ষতিও হবে একই মাত্রার।
আলোচনার এই পর্যায়ে বিজেপি নেতা তরুণ বিজয় বলেন, “আমি সুবীর ভৌমিকের সঙ্গে একমত। ” 
আলোচকদের অধিকাংশই চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের পক্ষে মত দেয়ায় একপ্রকার কোনঠাসা স্বাগত রায় ‘কূটনৈতিক কৌশলের’ আশ্রয় নেন।   
তিনি বলেন, একজন মন্ত্রী হিসাবে শশী থারুরের এমন কিছু বলা উচিৎ নয়, যাতে মনে হয় যে দিল্লি ঢাকাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
জবাবে স্বভাবসুলভ রসিকতার সুরে শশী বলেন, “কার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হবে- মিস্টার রায় এবং তার নেত্রী (মমতা) কি তা নিয়ন্ত্রণ করতে চান? তারা কি ভাবছেন যে কে আমার বন্ধু আর কে তা নয়- এটা বোঝার মতো বুদ্ধিও আমার নেই?”


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.