‘৭১-এ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ব্লগার এন্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের কর্মীরা যে আন্দোলনের সূচনা করেছেন সেই আন্দোলন আজ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সমস্বরে একটাই দাবি উঠেছে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি। এ দাবি বাংলাদেশের সকল ধর্ম, বর্ণ, জাতিরই(যুদ্ধাপরাধী বাদে) দাবি। কিন্তু আন্দোলনের সূচনাকারীরা কতটুকু এ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন তা এখনো বোধগম্য নয়। কারণ গত শুক্রবার শাহবাগে যে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল সে মহাসমাবেশের মাধ্যমে এটা কিছুটা হলেও প্রমাণিত হয়েছে যে, আন্দোলনটা ছিনতাই করার জন্য একটা শক্তি যুক্ত হয়ে পড়েছে।
এ শক্তিকে আপাত দৃষ্টিতে দেখা না গেলেও মনে রাখতে হবে এ আন্দোলনকে ছিনতাই করে সে শক্তি উঠে দাঁড়ানোর খেলায় মত্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আন্দোলনকারী তরুণ প্রজন্ম তথা জনগণকে সতর্ক ও সাবধান হতে হবে।
তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনের উপর পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি তরুণ প্রজন্মও চোখ রাখছে নিবিড়ভাবে। অনেকে ইতিমধ্যে এ আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছেন, আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে শ্লোগানের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়েছেন। কিন্তু দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও কাজ করছে পাহাড়ি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে।
কেন এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব?
আন্দোলনের সূচনাকাল থেকে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে শাহবাগ এলাকা। তার মধ্যে একটি শ্লোগান বার বার ধ্বনিত হয়ে উঠেছে ‘তুমি কে, আমি কে, বাঙালি বাঙালি। এই শ্লোগানটি স্বভাবতই পাহাড়ি তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলনে অংশগ্রহণে অনুৎসাহিত করছে। ১৯৭২ সালে যখন সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়ে এদেশে নতুন সংবিধান রচনা করা হয় তখনও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ তা মেনে নেয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে তৎকালীন নির্বাচিত সাংসদ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, “একজন পাহাড়ি কখনো বাঙালি হতে পারে না, অনুরূপ একজন বাঙালিও কখনো পাহাড়ি হতে পারে না। ” এরপর ‘৭৩ সালে রাঙামাটিতে এক জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান যখন পাহাড়িদেরকে বাঙালি হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তৎসময়ের তরুণ প্রজন্মও তা মেনে নেয়নি। এরপর ২০১১ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে যখন ‘বাংলাদেশের জনগণ সবাই বাঙালি বলিয়া পরিচিত হইবেন’ অন্তর্ভুক্ত করেন তখনি পাহাড়ি জনগণ এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। শাহবাগের চলমান আন্দোলনেও ‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি’ এই শ্লোগানের ধ্বনি শুনে পাহাড়ি তরুণ প্রজন্ম যারপরনাই হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। পাহাড়ি তরুণ প্রজন্ম এই আন্দোলন থেকে এটি কিছুতেই আশা করেনি।
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে যুগ যুগ ধরে এদেশে বসবাস করে আসছে। কিন্তু যখন রাষ্ট্র তার সংবিধানে এসব জাতিগুলোকে অস্বীকার করে, যখন বামপন্থী সংগঠনগুলো ‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি’ বলে শ্লোগান দেয় তখন মনটা দুঃখ, ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে। প্রশ্ন জাগে এদেশ কি শুধু বাঙালিদের, এদেশে কি শুধু বাঙালিরাই বসবাস করে? সংখ্যায় কম বলে বাঙালি ভিন্ন অন্য জাতিগুলোকে কি বাঙালি পরিচয ধারণ করতে হবে? জানি না এ প্রশ্নগুলোর উত্তর আমি কার কাছ থেকে পাবো।
যাই হোক, তরুণ প্রজন্ম যে চেতনা নিয়ে শাহবাগের আন্দোলন সূচনা করেছে সে আন্দোলন সফল পরিণতি লাভ করুক এই কামনা করছি। একি সাথে এদেশ শুধু বাঙালির নয়, এদেশে যে আরো ৪৫টির অধিক সংখ্যালঘু জাতির বসবাস রয়েছে তাদের কথাও মনে করার আহ্বান জানাচ্ছি।
শেষে লাখো তরুণের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে দাবি জানাই সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিয়ে এদেশকে কলঙ্কমুক্ত করা হোক।
জয় হোক তরুণ প্রজন্মের, জয় হোক জনতার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।