আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাষ্ট্রীয় স্বার্থের গোপনীয়তা ও সভ্যতার শত্রুপক্ষ



রাষ্ট্রীয় স্বার্থের গোপনীয়তা ও সভ্যতার শত্রুপক্ষ ফকির ইলিয়াস ======================================= পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বেশ কিছু ভিডিও চিত্র এখন সর্বত্র। অনলাইনে বিভিন্ন ব্যক্তি, গ্রুপ এসব ছবি বিতরণ করছেন। দেখানো হচ্ছে, সেই বীভৎস ছবিগুলো। কিভাবে এগুলো ঢালাওভাবে বাইরে বের হলো তা নিয়ে একটি প্রশ্ন উঠেছে। তেমন প্রশ্ন উঠতেই পারে।

কারণ, এগুলো বিডিআর হেডকোয়ার্টারের নিজস্ব গোপন ক্লোজ সার্কিট টিভি ক্যামেরায় ধারণ করা, যা রাষ্ট্রীয় গোপন সংরক্ষণেই থাকার কথা। কিছু ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে, যা ক্যামেরা দিয়ে তোলা। এর সত্র হিসেবে বিভিন্ন নাম আসছে। বলা হচ্ছে, কোন সাবেক ক্যাডেটের সৌজন্যে পাওয়া গেছে এ ছবিগুলো। এসব ছবি কি সে সময় সেখান থেকেই তোলা হয়েছিল? আর তা কিভাবে তোলা হয়েছিল? এনিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।

এখানে আরেকটি বিষয় নিয়ে কিছু আলোচনা বেশ দরকারি মনে করছি। বিডিআর সদর দপ্তরে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠকে মিলিত হন প্রতিরক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। সেই হত্যাযজ্ঞের পর সঙ্গত কারণেই খুব উত্তপ্ত ছিল সার্বিক পরিস্খিতি। ফলে সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষুব্ধ প্রকাশ ছিল, খুবই স্বাভাবিক বিষয়। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি খুব বিচক্ষণতার সমাধানের চেষ্টা করেছেন।

সেনা কর্মকর্তাদের প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন দক্ষতার সঙ্গে। এভাবে মতবিনিময় হতেই পারে। হতেই পারে বেদনার বহি:প্রকাশ। কিন্তু কথা হলো, সেই বক্তব্য আদান-প্রদানের অডিও সিডি বাইরে বের হলো কীভাবে? আমরা দেখেছি, ওই সংলাপ পর্বের কথোপকথনগুলো খুব কৌশলে দেশে-বিদেশে প্রচার করা হয়েছে। এ নিয়ে একটি মহল নানা ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে।

তারা প্রধানমìী এবং সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিন্দা মন্দ ছড়িয়েছে। এ সুযোগটা করে দেয়া হলো কেন? কাদের স্বার্থে তা করা হয়েছিল? এ ঘটনার পর সরকার দেশে কয়েকটি অনলাইন মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যদিও এই নিষেধাজ্ঞা কোন মতেই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক ছিল না। কারণ এ গ্লোবাল আইটির যুগে কোন সংবাদ, ভিডিও, অডিও কি আটকে রাখা সম্ভব? না, সম্ভব না। তা পুরো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট এবং হচ্ছেও তা-ই।

এ ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশের কোন রাষ্ট্রীয় গোপন সংলাপ পর্ণ নিরাপত্তা পাচ্ছে না। যদি পেত তবে প্রধানমন্ত্রীর ওই সংলাপের অডিওটি এভাবে ঢালাওভাবে বাজারে যেতে পারত না? বিষয়টি শঙ্কার তো বটেই! জাতি কী তবে ক্রমেই একটি চরম নিরাপত্তাহীনতার দিকেই এগুচ্ছে! এমনকি রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তাও এখন আর বজায় থাকছে না! আবার আসা যাক পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ছবিগুলো প্রসঙ্গে। জাতীয় দৈনিক, টিভি মিডিয়া, অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সেসব ছবি­ আমি মনে করি, এত বড় জঘন্য ঘটনাটির ভিডিও চিত্রের প্রকাশ এভাবে করা কোনমতেই সমীচীন হয়নি। এসব চিত্র গোয়েন্দা সংস্খাগুলোর সংরক্ষণে রেখে তদন্ত কাজে লাগানোই ছিল শ্রেষ্ঠ পন্থা। বিশ্বের কোন দেশে, এমন কোন জঘন্য ঘটনার ভিডিও চিত্র যত্রতত্র ছড়িয়ে দেয়ার কোন নজির নেই।

টুইন টাওয়ার ধ্বংসযজ্ঞের সরকারি কোন ভিডিও এভাবে প্রকাশ পায়নি। কারণ তাতে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা জড়িত। জড়িত, সংহত সার্বভৌমত্বের বিষয়টিও। দুই. পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সরকারি রিপোর্ট বের করতে আরও এক মাস সময় বাড়ানো হয়েছে। বলা দরকার, এ হত্যাযজ্ঞটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক ঘটনা।

এর মাধ্যমে পুরো জাতির ভিতকে কাঁপিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। এর জন্যই সুষ্ঠু তদন্তে সময়ের দরকার। তবে কথা হচ্ছে­ সে সময় ব্যয় যেন যথাযর্থ হয়। জাতি যে সুবিচার চাইছে, তা যেন পর্ণ হয়। তা যেন হয় অর্থবহ।

এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাককে! তার কাছ থেকে সঠিক কী তথ্য পাওয়া গেছে­ তা এখনও জানা যাচ্ছে না। তবে সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গুরুত্বপর্ণ তথ্যের সত্র ধরেই তারা এগোচ্ছেন। সিআইডি আরও জানিয়েছে, দরকার হলে তারা আরও অনেক বিশেষ ব্যক্তিত্বকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর যে কোন নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতেই পারে। তবে শুরুতেই আমরা লক্ষ্য করেছি, জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক সিআইডির আইনি জিজ্ঞাসা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন।

এর কারণ কী? জিজ্ঞাসাবাদে এত ভয় কেন ব্যারিস্টার রাজ্জাকের? দেশে একটি সশস্ত্র জঙ্গি গ্রুপকে নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। কারা তা করছে তা ক্রমেই পরিস্কার হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে। ভোলার চর বোরহান উদ্দিনে একটি মাদ্রাসা থেকে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করেছে র‌্যাব। একটি বাড়ির চারদিকে পরিখা তৈরি করে খুব কৌশলে সেখানে জঙ্গিবাদের ট্রেনিং চলছিল। বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে কোমলমতি শিশুদের জঙ্গি তত্ত্বে দীক্ষিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মাদ্রাসা শিক্ষার নামে পায়ে শিকল পরিয়ে শিশুদের বিকাশ সাধনকে ক্ষতিগ্রস্থ করা হচ্ছে। তেমনি একটি রিপোর্ট দৈনিক ‘সংবাদ’-এ ছাপা হয়েছে গত ৩০ মার্চ ২০০৯। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া তিস্তা কলেজ থেকে আড়াই কিলোমিটার দরে গড়ে উঠেছে ছোটখাতা দীঘিরপাড় দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা। এ মাদ্রাসায় কিছু ছাত্রকে পায়ে শিকল পরিয়ে রাখা হয়। এই যে লোমহর্ষক ঘটনা তা অহরহই ঘটছে বাংলাদেশে।

কিছু খবর পত্রপত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। অধিকাংশই হচ্ছে না। এটা পুরো মানবসভ্যতার বিরুদ্ধে অপরাধ। কোন ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে জানতে হলে তার সঠিক পাঠোদ্ধার দরকার। ব্যক্তিগত জীবনে তার প্রয়োগ প্রয়োজন।

পবিত্র কোরান তো হত্যা, শিশু নির্যাতন, পাশবিক অত্যাচার, লুটপাটকে অনুমোদন করেনি কখনই। তাহলে আজ ইসলামের দোহাই দিয়ে এসব করা হচ্ছে কেন? কেন শিকল পরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে পুরো মানবসভ্যতা-মানব সমাজের পায়ে? কেন হিংস্রতার আশ্রয় নেয়া হচ্ছে জিহাদের নামে? এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, জঙ্গিবাদী একটি দানব শক্তি বারবারই বিভিন্ন আবরণে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বাংলাদেশের নাকের ডগার ওপর দিয়ে। শুধু কওমি মাদ্রাসায় নজরদারি বাড়ালেই এদের তৎপরতা রোখা যাবে না। এদের রোখার জন্য সামাজিক বৈষম্য, দারিদ্র্য, বুর্জোয়া নিষ্পেষণও রুখতে হবে। আমরা জানি, বর্তমান সরকারের বয়স ৩ মাসের মতো।

কিন্তু আমার মনে হয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত মìণালয়গুলোর কর্মধারা পর্যালোচনা করা দরকার। প্রয়োজনে রদবদল করে মন্ত্রীপরিষদ ও সচিবালয়ের মাঝে কর্মতৎপরতা বাড়ানো উচিত যথাশিগগিরই। দলীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠার চেয়ে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়টিই এখন প্রধান বিবেচ্য হওয়া উচিত জরুরিভাবে। নিউইয়র্ক, ৩১ মার্চ ২০০৯ -------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ , ঢাকা। ৩ এপ্রিল ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.