আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জেএমবি'র ব্রাদার বি.ই এম..



হঠাৎ করেই সারাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে চলছে। সরকারের শেষ সময়ে এসে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় জঙ্গি সংগঠনের নানান তৎপরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। গত সাড়ে চার বছরে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে জঙ্গি সংগঠনগুলোর কোনো খবরই ছিল না। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের শেষ সময়ে কিছু রাজনৈতিক ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তার যোগসাজশে নতুন করে মাথাচারা দিয়ে ওঠেছে জঙ্গিবাদীরা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল এসব জঙ্গিরা।

একযোগে তারা সারাদেশে বোমা হামলার মতো জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছিল। জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, হিজবুত তাহ্রীরসহ নানা নামে প্রসার ঘটেছিল এ জঙ্গিবাদের। এসব জঙ্গিদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বিচারক, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, কৃষকসহ সাধারণ মানুষ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানী’র উত্তরসূরিসহ হোতাদের সমূলে ধ্বংস করে দেশকে জঙ্গিবাদ মুক্ত করে সরকার। জঙ্গিবাদের উৎপাদন কেন্দ্র বলে পরিচিত সংগঠনগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করে সরকার।

দেশ ও জাতি জঙ্গিবাদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পায়। হাফ ছেড়ে বাঁচে সাধারণ জনগণ। সরকারের শেষ সময়ে এসে হঠাৎ করেই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্থিরতা দেখা দেয়। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দুই মেরুতে অবস্থান নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। নতুন করে দেখা দেয় সংকট।

নিষিদ্ধ জেএমবির আদলে জঙ্গি সংগঠন বিইএম’র আত্মপ্রকাশ ঘটে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের রাজনৈতিক ও কিছু সুবিধাভোগী কর্মকর্তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এসব জঙ্গিরা দেশকে নতুন করে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল করার পায়তারা করছে। হঠাৎ বেড়েছে জঙ্গি তৎপরতা সরকারের শেষ সময়ে দেশে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে গেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দেয়া তথ্য মতে, গত এক মাসে গোয়েন্দাজালে ধরা পড়েছে প্রায় অর্ধশত জঙ্গি নেতা। গ্রেপ্তারকৃত ওই জঙ্গিদের স্বীকারোক্তি অনুসারে তাদের শীর্ষ নেতারা কারাগারে বসেই নতুন নামে নতুনভাবে সংগঠিত করছেন জঙ্গিদের।

সম্প্রতি বরগুনা, ঝালকাঠি ও বগুড়াতে জঙ্গি অবস্থানের সন্ধান পান গোয়েন্দারা। ওই সব আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেশ কয়েকজন জঙ্গি এবং তাদের দলনেতাদের। উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্রও। গত ১২ আগস্ট বরগুনা জেলার সদর উপজেলার দক্ষিণ খাজুর তলা গ্রামের একটি বাড়িতে বৈঠক করার সময় বরগুনার পুলিশ গ্রেপ্তার করে মুফতি জসীম উদ্দিন ও তার ৩০ সহযোগীকে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, মুফতি জসীম উদ্দিন জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান।

এর আগে এ নামে বাংলাদেশে কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব ছিল না। পুলিশ জানায়, জসিম ওই নামে নতুনভাবে জঙ্গি সংগঠন গড়ে তুলছিলেন। বরগুনা জেলাতে তার কর্মকা- বিস্তৃত থাকলেও তিনি বসবাস করেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে। এখানকার একটি মাদ্রাসার প্রধান ছিলেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর ওই মাদ্রাসা থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

১৫ আগস্ট ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তা-আমীর উদ-দীন নামের জঙ্গি সংগঠনের ৯ জনকে। ওই ৯ জনের দলনেতা হচ্ছেন নলছিটি উপজেলার নাচন মহল গ্রামের মশিউর রহমান। তবে তাদের প্রধান নেতা মুফতি আবদুর রউফ বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে আছেন। গোয়েন্দাদের দাবি, তার নির্দেশিত পথে টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মশিউর রহমান। ২২ আগস্ট র‌্যাব সদস্যরা ৩ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে বগুড়ার জঙ্গি নেতা মাওলানা সানাউল্লাকে।

তার সংগঠনের নাম বিইএম। বরগুনায় গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গি এবং ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের দেয়া তথ্য অনুসারে গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়ে আরও ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে। নাম নতুন, সূত্র একই আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, তা-আমীর উদ-দীন ও বিইএম বর্তমানে নাম তিনটি হলেও তাদের সূত্র একই বলে দাবি করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। গোয়েন্দাসূত্র দাবি করেছে, এক সময়ে এসব সংগঠনের নেতারা ছিলেন জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতা। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বর্তমান নেতা মুফতি জসীমসহ তার সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃতরা অনেকে জেএমবির সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছেন।

কেউ কেউ পলাতক ছিলেন। জেল এবং পলাতক অবস্থা থেকে বের হয়ে তারা আবার নতুন নামে সংগঠিত হতে থাকেন। বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মাওলানা সানাউল্লাহ জেএমবির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে পলাতক ছিলেন দীর্ঘদিন। বছর খানেক আগে ভিন্ন নাম ধারণ করে বগুড়াতে এসে মাদ্রাসা খুলে আস্তানা গাড়েন। বিইএম নামে নতুন জঙ্গি সংগঠন গড়ে তুলে কার্যক্রম শুরু করেন।

ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার হওয়া তা-আমীর উদ-দীনের মূল নেতা মুফতি আবদুর রউফ জেএমবির সঙ্গে জড়িত ছিলেন; তবে তার আগে তিনি ছিলেন মুফতি হান্নানের সংগঠন হরকাতুল জেহাদের নেতা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি মুফতি হান্নানের বন্ধু। মুফতি হান্নান পলাতক থাকা অবস্থায় হরকাতুল জেহাদ থেকে মুফতি রউফ যোগ দেন জেএমবিতে। বরগুনা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীমসহ তার ৩০ সহযোগীকে চার দিনের রিমান্ড দিয়েছে পুলিশ। মুফতি জসীমের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়েছে বরগুনা সদর থানায়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, মুফতি জসীম একজন জঙ্গি নেতা, তিনি খুতবায় উগ্রপন্থি বক্তৃতা করে যুব সমাজ ও সাধারণ মানুষকে জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। মুফতি জসীম গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, তিনি এক সময় জেএমবির প্রশিক্ষক ছিলেন। তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরে জামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক থাকাকালীন জেএমবির সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে। দীর্ঘদিন তিনি গ্রেপ্তার এড়িয়ে পলাতক ছিলেন। বরগুনা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মুফতি জসীমের সহযোগী আলী হোসেন জেএমবির সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে গাজীপুরে গ্রেপ্তার হন।

গাজীপুর পুলিশ তাকে মামলা থেকে রেহাই দিলে আলী হোসেন বরগুনা চলে যান। মুফতি জসীম নতুনভাবে বরগুনার পল্লীতে সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিলে সেখানে যোগ দেন আলী হোসেন। মুফতি জসীমের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া ৩০ জনের মধ্যে ১০ জন ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট একযোগে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা মামলার আসামি। ওই বোমা হামলা হয়েছিল জেএমবির নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাই হিসেবে পরিচিত সিদ্দিকুল ইসলামের নেতৃত্বে। ২২ আগস্ট বগুড়াতে গ্রেপ্তার হওয়া মাওলানা সানাউল্লাহ এক সময়ে ছিলেন জেএমবির নেতা।

জেএমবির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইয়ের বাড়িও বগুড়াতে। জেএমবির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে দীর্ঘ চার বছর পালিয়ে থেকে ভিন্ন নাম ধারণ করে এলাকায় আসেন তিনি। এলাকায় এসে নিজেই ছোট আকারে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে সেখানে গড়ে তোলেন জঙ্গি সংগঠন বিইএম। ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার হওয়া তা-আমীর উদ-দীনের মূল নেতা মুফতি আবদুর রউফ। জেএমবির নেতা হিসেবে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অপরাধে ২০০৬ সালে গ্রেপ্তার হয়ে তিনি এখন কারাগারে বন্দি।

বর্তমানে আছেন কাশিমপুর কারগারে। তার অবর্তমানে তা-আমীর উদ-দীন নামের নতুন জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্বে দিচ্ছেন ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার নাচন মহল গ্রামের মশিউর রহমান। পুলিশের কাছে মশিউর রহমান জানিয়েছেন, তিনি কাশিমপুর কারাগারে মুফতি রউফের সঙ্গে কয়েকবার দেখা করে তা-আমীর উদ-দীন নামে সংগঠন গড়ে তোলার পরামর্শ পান। সে হিসেবেই তিনি সংগঠন গড়ে তোলেন। মশিউর রহমান আরও জানিয়েছেন মাঝে মধ্যে তিনি কারাগারে থাকা মুফতি রউফের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে তালিম নেন।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গিবাদের নেতা হিসেবে পরিচিত মুফতি রউফের বাড়ি মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামে। মুফতি রউফ জঙ্গি নেতা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে মুফতি হান্নানের সংগঠন হরকাতুল জেহাদের নেতা হিসেবে। ওই সময় মুফতি হান্নান ও মুফতি রউফ মিলে বৃহত্তর ফরিদপুর এলাকায় ব্যাপকভাবে হরকাতুল জেহাদের সংগঠন গড়ে তোলেন এবং গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর শহরে বড় আকারে দু’টি জনসভা করেন। ১৯৯৬ সালে গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তারা তিন বছরের মধ্যে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার ঘোষণা দিয়ে মুফতি হান্নানকে দেশের ভবিষ্যৎ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন। ওই ঘোষণাটি দিয়েছিলেন মুফতি আবদুর রউফ।

টুঙ্গিপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে বোমা পুঁতে রাখার ঘটনায় মুফতি হান্নান পলাতক হলে মুফতি রউফও এলাকা ছাড়েন। এলাকা ছেড়ে তিনি ময়মনসিংহ জেলার ভালুকার বনবিভাগের জায়গায় একটি মাদ্রাসা তৈরি করে সেখানে শিক্ষকতা শুরু করেন। এ সময় তিনি জড়িয়ে পড়েন জেএমবির সঙ্গে। গোয়েন্দা পুলিশের জালে ধরা পড়ে সেখান থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে কারাগারে আছেন।

জঙ্গি গ্রেপ্তার ও সাম্প্রতিক তৎপরতার বিষয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর অবস্থানের কারণে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা গোপনে চেষ্টা করছে নামে ও বেনামে তাদের তৎপরতা চালাতে। নিষিদ্ধ করার পরও কিছু সংগঠন নতুন নামে চলছে। সব ক্ষেত্রেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারি রয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি মাসুদুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ফেব্র“য়ারি মাসে ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যার খুনিদের গ্রেপ্তারের সময় থেকেই আমরা জঙ্গিদের কিছু কিছু কানেকশন পাচ্ছিলাম। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ আরও কিছু জঙ্গির সন্ধান পায়।

বলতে গেলে ওই সব তথ্যের ভিত্তিতে এখনও গ্রেপ্তার কার্যক্রম চলছে। তবে তিনি জানান, বর্তমান সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে হাল সময়ে হঠাৎ তাদের তৎপরতার বিষয়ে জানা যাবে। জঙ্গিদের অর্থায়ন বন্ধের তাগিদ মজিনার এশিয়ায় বিচারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল জঙ্গিবাদের শ্বাসরোধ করা। জনগণের জন্য, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য এটা জরুরিÑ কথাগুলো বলেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা। তিনি আরো বলেন, অর্থ আর জঙ্গিবাদ হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।

অর্থই জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক, অর্থই জঙ্গিবাদের শক্তি আর এই অর্থই জঙ্গিবাদের অক্সিজেন। জঙ্গিবাদকে রুখতে হলে এই অক্সিজেনের সরবরাহ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। গত ২৬ আগস্ট রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত মুদ্রা পাচার ও জঙ্গিবাদে অর্থায়ন শীর্ষক সার্ক আঞ্চলিক বিচার সংক্রান্ত সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সার্কভুক্ত দেশগুলোর বিচারক ও বিচারিক কর্মকর্তাদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাউন্টার টেরোরিজম ব্যুরোর সহায়তায় তিন দিনব্যাপী এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।

অন্যদের মধ্যে গুয়ামের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রবার্ট জে টরেস, টেক্সাসের ওয়েস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক ফ্রাংক মনতালভো বক্তব্য রাখেন। মজিনা তার বক্তব্যে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বিচারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো জঙ্গিবাদের শ্বাসরোধ করা। জনগণের জন্য, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য এটা প্রয়োজন। যদিও এটা সহজ কাজ নয়। জঙ্গিবাদ নির্মূলে অর্থ পাচার ও অর্থের সরবরাহ বন্ধ করতে হবে।

জনগণকে শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ দিতেই আমাদের এ কাজ করা দরকার। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বলেন, অর্থ সংক্রান্ত অপরাধ ও অর্থ জালিয়াতি বন্ধ করতে সংসদে আন্তর্জাতিক মানের আইন তৈরি করতে হবে। যাতে করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী ও বিচারকরা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র মানি লন্ডারিং বন্ধে কার্যকর ও শক্তিশালী আইন প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সংসদে এ আইন পাস হয়েছে এবং তা কার্যকর করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে মানি লন্ডারদের প্রতিহত করতে ভূমিকা রাখতে হবে। অর্থ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও জঙ্গিরা আগের তুলনায় অনেক বেশি চতুর বা দক্ষ হয়েছে। তাদের প্রতিহত করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীকে নতুন নতুন কৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। তিনি আরো বলেন, সরকারি আইনজীবীদেরও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। মানি লন্ডার ও জঙ্গিদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

একই সঙ্গে তিনি বলেন, মানি লন্ডারিং আইনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে নয় বরং সরকারকে দায়িত্বশীলভাবে এই আইন ব্যবহার করতে হবে। বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাধার মুখে পিছপা হলে চলবে না। আইন অনুযায়ী অপরাধ দমনে তদন্তকারী ও প্রসিকিউটরকে তাদের কর্মকা- চালানোর অনুমতি আপনাদের দিতে হবে। এ লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকেও স্বাগত জানাতে হবে। জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় ও অপরাধীদের এ ধরনের অপরাধ থেকে দূরে রাখার জন্য কী ধরনের শাস্তি দেয়া যেতে পারে সে বিষয়টি অবশ্যই আপনাদের বিবেচনা করতে হবে।

এক্ষেত্রে সম্পদ জব্দ করা সবচেয়ে কার্যকর শাস্তির উদাহরণ হতে পারে। যদিও এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে হতাশ হওয়া ঠিক হবে না। কারণ আপনারা শুধু একা এ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী নন। আপনাদের আশপাশের অনেক বিচারকও এ ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হচ্ছেন।

মজিনা বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে এ অঞ্চলের প্রত্যেকটি দেশের একে অপরকে সহায়তা করতে হবে, তথ্য আদান-প্রদান করতে হবে। তিনি বলেন, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জাতিগুলোর একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক সময় সমস্যা থাকে। কিন্তু অপরাধী ও জঙ্গিদের এ ধরনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। আমাদের সংকীর্ণতার জন্য জঙ্গিদের মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারি না। তাই শান্তিপ্রিয় জাতিগুলোকে মানি লন্ডারিং ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একে অপরকে সহায়তা করার বিষয়ে অঙ্গীকার করতে হবে।

এ সম্মেলনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং ও জঙ্গিবাদের অর্থায়ন বন্ধে কার্যকর পন্থা বেরিয়ে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। জেএমবির আদলে বিইএম নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) আদলে ‘বিইএম’ নামে নতুন এক জঙ্গি সংগঠনের তৎপর হওয়ার খবর প্রকাশ করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গত ২২ আগস্ট বগুড়া শহরের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এই সংগঠনের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১২’র একটি দল। গ্রেফতারকৃত তিনজন হলেন- ফিরোজ আলম (৩৫), মো. নাহিদ (২২) ও বারহা শেখ বাবু (২১)। উদ্ধার করা হয়েছে একটি একে ২২ রাইফেল, একটি এসএমজি, একটি পিস্তল, ৮০ রাউন্ড গুলি, সাতটি চাকু, দুটি চাপাতি, একটি টেলিস্কোপ ও বিপুল পরিমান জিহাদি বই।

পরদিন ভোরে বগুড়ার র‌্যাব অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রথমে আমরা তাদের জেএমবির সদস্য মনে করেছিলাম। কিন্তু তাদের কাছে পাওয়া কাগজপত্রে দেখা যায়, তারা জেএমবির আদলে বিইএম নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। ’ তিনি জানান, ঠনঠনিয়া এলাকার দুলাল মিয়ার বাড়িতে ১৮ জনের গোপন বৈঠকের খবর পেয়ে এই অভিযান চালায় র‌্যাব। তারা বাইরে থেকে দরজা তালাবদ্ধ করে রাখার ফলে র‌্যাব দরজার বাইরে অবস্থান নিলে পেছনের জানালা ভেঙে ১৫ জন পালিয়ে যায়। বাকি তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

হাবিবুর রহমান জানান, র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ফিরোজ আলম বাড়ির পিছনের একটি ঘর থেকে একটি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ধাস্তাধস্তির পর র‌্যাব সদস্যরা ব্যাগটি উদ্ধার করে। ওই ব্যাগের ভেতরেই অস্ত্র ও গুলি পাওয়া যায়। এই অভিযানের খবর পেয়ে র‌্যাবের আমন্ত্রণে রাতেই সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঢাকা থেকে বগুড়া পৌঁছান বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রায় পঁচিশ জন সংবাদকর্মী। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা যেটা খবর পেয়েছি তারা বড় কোনো সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল। ’ তবে সংগঠনের নাম বিইএম-এর অর্থ জানতে চাইলে তা বলতে পারেননি তিনি। ওই বাড়িতে পাওয়া বিভিন্ন বইয়ের পৃষ্ঠায় বড় হরফে ‘বিইএম’ লেখাটি দেখান তিনি। র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান বলেন, বিইএম’র অনেকগুলো ‘উইং’ আছে, বগুড়ায় গ্রেফতার হওয়া তিনজন দলের সামরিক শাখার সদস্য।

তবে কাদের অর্থে বা সমর্থনে সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে তা এখনো জানতে পারেনি র‌্যাব। গ্রেফতারকৃত নাহিদ সাংবাদিকদের সামনে দাবি করেন, শিবু নামের এক যুবক পাঁচ দিন আগে তাকে ঢাকার কমলাপুর থেকে বগুড়ায় নিয়ে আসে। খাবার এবং পোশাকের অভাব হবে না- এই প্রতিশ্র“তি দেয়া হয়েছিল তাকে। এই পাঁচদিন কি করেছেন জানতে চাইলে নাহিদ বলেন, ‘আমি শুধু বাজার করেছি। ’ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতার আশঙ্কা দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা করছে।

ইতোমধ্যে জানা গেছে জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে হামলার পরিকল্পনার কথা। জামায়াত-শিবিরের হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে দেশের বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ব্রিজ, সচিবালয়সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহ। এ লক্ষ্যে জামায়াত-শিবির গোপনে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর এক্ষেত্রে তারা সহযোগিতা নিচ্ছে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠির। শুধু তাই নয়, এ নাশকতা পরিকল্পনার সাথে বিদেশি একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতার তথ্য পেয়েছে এদেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলমান মানবতাবিরোধী বিচারকে বানচাল করতে দেশের একশ্রেণীর লোক ধর্মকে পুঁজি করে নানামুখী অপপ্রচারে লিপ্ত। ধর্মের নানা অপব্যাখ্যা দিয়ে তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এর পেছনে সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করেছে মানবতাবিরোধী শক্তি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। কারণ এ রাজনৈতিক দলটি নিশ্চিত হয়ে গেছে তারা সাধারণ মানুষের ভোটে আর কখনো রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে পারবে না। এ প্রেক্ষিতে তারা চাচ্ছে দেশে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে।

সংগঠনটি স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজয়ের পর থেকেই এদেশে নানাভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে উৎসাহ দিয়ে আসছে। আর তাদের এ কর্মকা-ে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা দিচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলেই সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলো সবচেয়ে বেশি শক্তি অর্জন করেছে। তখন দেশব্যাপী জেএমবি ও হুজির মতো দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনী এদেশ দাবড়ে বেড়ায়। সরকারের অংশীদার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতায় তখন শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই, মুন্সী আব্দুল হান্নান, জাভেদ ইকবাল প্রকাশসহ বিভিন্ন দুর্ধর্ষ জঙ্গিরা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়।

চলমান মানবতাবিরোধী বিচার কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে জামায়াতে ইসলামীর নানা ধরনের নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিকল্পনা সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে সরকারকে অবহিত করেছে। তবে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যকে গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার কিছুটা ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছে। এ সুযোগে গোপনে জামায়াত ও নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে নাশকতার নানামুখী পরিকল্পনায় লিপ্ত। এ পরিস্থিতিতে প্রকৃত আলেম সমাজের আশঙ্কাÑ দ্রুত জামায়াতী জঙ্গিবাদকে প্রতিরোধ না করা হলে দেশে বড় ধরনের রক্তপাতের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামী জঙ্গি সংগঠনের যেসব নেতা এখনো জেলখানায় বন্দি রয়েছে সেখানে বসেই তারা নানা পরিকল্পনা কষে বাইরের কর্মীদের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।

পাশাপাশি পলাতক জঙ্গি নেতারাও সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা, পলাতক নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামী জঙ্গি নেতারাই আত্মগোপনে থেকে দেশজুড়ে নানা নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে তাদের নাশকতা আরো বিস্তৃতি লাভের আশঙ্কা রয়েছে। তখন ওসব অপশক্তি দেশে বড় ধরনের নাশকতা ঘটাতে পারে। এ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একাধিকবার সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.