আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভার্চুয়াল ও ননভার্চুয়াল ক্ষেত্র থেকে সামহোয়ারইনব্লগ কর্তৃপক্ষের ব্লগ রূপরেখা এবং এর ব্লগ, ব্লগার ও ক্রমঃবিবর্তিত পরিচালন পদ্ধতি

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

সামহোয়ারইনব্লগ এ পর্যন্ত রিটেন ও ওরালী তাদের ব্লগের রূপরেখা যা বয়ান করেছে এবং তার যতটুকু আমি পড়েছি ও শুনেছি, তার উপর ভিত্তি করে আমি যা বুঝেছি সেটা লেখার প্রয়োজন মনে করছি। প্রয়োজন মনে করছি কতিপয় কারণে। সামহোয়ারইনব্লগ নিয়ে পত্রিকায় আর্টিকেল লিখেছিলাম, ম্যাগাজিনে কভার স্টোরিটাও করেছিলাম - কিন্তু ব্লগে ব্লগকেই বিষয় করে বিশ্লেষণাত্মক ঢঙে কোন ব্লগ লেখা হয় নাই। বিচ্ছিন্নভাবে মন্তব্যে কখনও প্রকাশ করেছি, কিন্তু তাও আমার পছন্দ ছিল না। এখন যে হয়েছে তাও নয়।

কিন্তু ব্লগের বাইরে ব্লগবন্ধুদের সাথে এ নিয়ে আমার চুলচেরা পর্যালোচনা চলে, বিশ্লেষণ ঘটে। জামাল ভাস্কর তার মধ্যে অন্যতম। প্রকৃতপক্ষে ভাস্করদা ছাড়া অন্য কারো সাথেই আমি ব্লগ ও ব্লগারদের ক্রমঃবিবর্তন ও এর পরিচালন পদ্ধতি বিষয়ক আমার নিজস্ব চিন্তাভাবনা কখনও শেয়ার করি নাই। যথারীতি সামহোয়ারের পেইড ব্লগার হিসাবে একটা গোষ্টী আমার প্রচার চালিয়ে যাদেরকে প্রায় বিশ্বাস স্থাপনে সক্ষম করতে পেরেছেন - তাদের জন্য নিজেকে স্পষ্ট করার কোন প্রয়োজন আমি বোধ করি না, নইলে তেমন একটা গণসংযোগ ও প্রচারণা চালাবার মত সুযোগ ও সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করতাম। আসলে এই দায় বোধ করার জায়গা থেকে মুক্ত বোধ করা একধরণের ফ্রিডম..আমি সামহোয়ারে লিখতে শুরু করেছিলাম এই ফ্রিডমের স্বাদ পেতে পারি অনুমানেই।

এবং আমি পেয়েছিও। কিন্তু এজন্য আমি সামহোয়ারইনব্লগের রূপরেখা সম্বন্ধে আমার বিশ্লেষন তুলে ধরতে উৎসাহী হইনি। আমি উৎসাহী হয়েছি জামাল ভাস্করের সাথে এসব শেয়ার করার জন্য। প্রায়শই আমরা এসব বিষয় নিয়ে আলাপ করি, কিন্তু তার কোন লিখিত রূপ না থাকায় আমাদের ভাবনাগুলোর অনুসরণ, সম্মুখ ও পশ্চামমুখী, মাঝেমাঝে অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেজন্য এই প্রায়াস।

এই আলোচনায় প্রবেশের আগে আমি আমার আলোচনা-পদ্ধতির কিছু বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে উন্মুখ। যদিও আলোচনা চালাবার আগে কোন নিদৃষ্ট বৈশিষ্ট্য চিহ্নিতকরণের বিষয়ে জামাল ভাস্করের আপত্তি থাকবে, যতটুকু আমি চিনি, কিন্তু আমি প্রাক-আলোচনায় নিজের অবস্থান সুংসহত ও স্পষ্ট রাখতে আগ্রহী। বৈশিষ্ট্যগুলো এমন ক) আমি আলোচনাটা ভাস্করদার সাথে সীমিত রাখতে চাই, এর কারণ হিসাবে বলা যায় তার যৌক্তিক বিশ্লেষণে আমার বিশ্লেষণের মাত্রা পরিবর্তন ও পরিমার্জিত হয়। উপরন্তু আমরা একটা মিড-পয়েন্ট থেকে আলোচনা শুরু করতে পারি যার কিছুটা ওরালী হয়ে আছে, যার জন্য দু'জনের উদ্ধৃতি ও উৎস অনুসরণের লৈখিক কোন সূত্র না থাকায় অন্যদের কানেক্টিভিটি সময়ানুনগ নাও হতে পারে। এ বিষয়ে আমি আমার মত অবস্থানে থাকার প্রত্যাশী, ভাস্কর দা তার নিজস্ব নিয়মে।

তবে আগ্রহী যেকেউ অংশ নিতে পারেন, তবে অবশ্যই প্রসঙ্গের সাথে একদমই যায় না এমন মন্তব্য মুছে দেয়া হবে। খ) আমি এই আলোচনায় যেকোন ধরণের দৃষ্টান্ত প্রকাশ করতে পারি, যার জন্য কোন রকম প্রমাণ প্রদান করতে আগ্রহী নই। বিষয়টা অনেকটা সময়সাপেক্ষ এবং আলোচনায় কেন্দ্র থেকে অনাগ্রহে গমন ও ভাবনা হারিয়ে যাবার সম্ভাবনার আশংকায়। গ) আমি এই আলোচনার একটা গন্তব্য অন্বেষণে আগ্রহী এবং সেদিকেই আমার বিশ্লেষণ ও যৌক্তিক অবস্থানকে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। ঘ) এই আলোচনায় আমি সামহোয়ারকে পক্ষপাত করে তার কারণকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করবো।

ঙ) যৌথ বিশ্লেষণ থেকে আমার অবস্থানকে দুর্বল ও অঅনুসরণযোগ্য বলে আমার কাছেও যদি প্রতীয়মান হয় তবে আমি সেটা স্বীকার করবো কিন্তু শেষপর্যন্ত তালগাছ আমারই থাকবে এমন দাবী থেকে পিছু হটবো না। প্রকৃতপক্ষে বৈশিষ্ট্যগুলো আমার সীমাবদ্ধতা হিসাবে উল্লেখ করেছি। কারণ যেকেহই এমন আলোচনার একটা কারণ অন্বেষণে তৎপর হতে পারেন, সেক্ষেত্রে এটা ট্রান্সপারেন্ট থাকার একটা প্রচেষ্টা হিসাবে উল্লেখ থাকাই মনে হয় যৌক্তিক। তাছাড়া সেক্ষেত্রে আলোচনান্তে আমি বুঝতে পারবো কি বিষয়ে আমি কি দেখতে চেয়েছি এবং কতটুকু তার থেকে ভিন্ন কিছু হলো। তো যে বিষয়টা আমি বিশ্লেষন করতে শুরু করবো তার টাইটেল হচ্ছে, "ভার্চুয়াল ও ননভার্চুয়াল ক্ষেত্র থেকে সামহোয়ারইনব্লগ কর্তৃপক্ষের ব্লগ রূপরেখা এবং এর ব্লগ, ব্লগার ও ক্রমঃবিবর্তিত পরিচালন পদ্ধতি"।

আলোচনা সুবিধার্থে আমি সামহোয়ারের সময়কালকে তিনটা কালে বিভক্ত করতে চাই। সময়কালের নামই আসলে সেল্ফ এক্সপ্লানেটরী - কেন তাদের গুরুত্ব উল্লেখিত বিষয়ের বিশ্লেষণে জরুরী। কালগুলো হচ্ছে - ক) প্রাক-সচলায়তন; খ) সচলায়তন কাল; এবং গ) আমার ব্লগ কাল। এই তিনটা কালের ক্যালেন্ডার সময় চিহ্নিত করার কোন আগ্রহ নাই, আমাদের বিষয় সংশ্লিষ্ট আলোচনার জন্য তা জরুরীও নয়, কারণ সম্ভবত ভাস্করদা এবং আমি সময়কালের উল্লেখযোগ্য অংশগুলোকে দিয়ে চিন্থিত করতে পারবো। এসবই আমার প্রস্তাবিত, ভাস্করদা ইচ্ছে করলে এর ভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে আসতে পারেন।

প্রাক-সচলায়তনঃ আমি লেখার শুরুতে উল্লেখ করেছিলাম সামহোয়াইন কর্তৃপক্ষের রিটেন ও ওরাল রপরেখা যতটুকু শুনেছি ও পড়েছি তার আলোকে আমার বিশ্লেষণ। ২০০৬ এর ফেব্রুয়ারী মাসের ২১শে ফেব্রুয়ারী রাতে এটিভিতে নতুন ওয়েবসাইটের পরিচিতিমূলক একটা অনুষ্ঠানে সামহোয়ারইনব্লগ সম্বন্ধে যা বলা হয়েছিল যতটুকু তা মনে করতে পারি এমন ছিল - বাংলা ভাষায় সম্পূর্ণ ফ্রি নিজের একটা লেখালেখির সাইট তৈরী হয়েছে যেখানে আপনি ইচ্ছেমত যা খুশী তাই লিখতে পারেন। সাথে সাথে ওয়েবসাইটের নামটা আমি মেমরিস্থ করি। কারণ আমার সাহিত্যচর্চার একটা অভ্যাস আগে থেকেই ছিল, চাকুরীতে ঢুকে সেটা হয়ে গেলো রিপোর্টিং কারণ মূলত কমিউনিকেশন ব্রোসিয়ার নিয়ে আমার এক্সপার্টিজ তৈরী হয়েছিল ততদিনে। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ লেখার পারঙ্গমতাও যে আমার আছে এবং তা মানুষকে পড়তেও দিতে চাই সেটা মনে হলো নেচে উঠলো সামহোয়ারের খবর পেয়ে।

বিষয়টা বলছি এজন্য যে সামহোয়ার সবাইকে একটা নিজস্ব লেখার জায়গা দিচ্ছে যেখানে সে নিজের মত যা খুশী তাই লিখতে পারবে - এই ধারণাটা আমি সামহোয়ারে না ঢুকেই কেবল সেই টিভি প্রোগ্রামের উপস্থাপকের বয়ান শুনে বুঝে গেছিলাম। সামহোয়ারইনব্লগ এর উদ্দেশ্যও কি ছিল তাই? সামহোয়রকে পরের দিন দেখে, রেজিস্ট্রেশন করে, পোস্ট লিখে, অন্যদের ব্লগ পড়ে, মন্তব্য করে আমার তেমনই মনে হলো প্রাথমিকভাবে। সেইসাথে ব্লগ টার্ম এবং এর নিজস্ব একটা চরিত্র সম্বন্ধেও খানিকটা ধারণা জন্মালো। তখন পর্যন্ত আমি সামহোয়ারের কর্তৃপক্ষের কোন রিটেন ই-ব্রোসিয়ার পড়ি নাই। না পড়েও জানলাম এটা আসলে এমন, এখানে যেকেউ লিখতে পারে, যা খুশী লিখতে পারে, যে কেউ পড়তে পারে, যা কিছু মন্তব্য করতে পারে।

আমি সামহোয়ারইনব্লগের কর্তৃপক্ষ এমনই চাইছেন বলেই ধরে নিলাম। এবং ভালো লাগলো। সংগত কারণেই প্রেমে পড়ে গেলাম। ক্রমশঃ আমি দেখলাম এই সাইটটির নামের সাথে "কমিউনিটি" শব্দটার ব্যবহার, যা কর্তৃপক্ষ ও ব্লগারদের বিভিন্ন কমিউনিকেশনে উচ্চারিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই তা মেনে নেয়া যায়।

এই কমিউনিটি তৈরীর প্রধান টুল হিসাবে "কমন ফ্রন্টপেজ" এর গুরুত্বও তখন স্পষ্ট হয় যা কর্তৃপক্ষ ও ব্লগারদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে একটা এ্যাডভেন্টেজ বলে স্বীকৃত। প্রাক-সচলায়তন কালের সূচনালগ্নে বিশেষত আমি যখন প্রবেশ করেছি সেই সময়কেই কেবল আমি কমিউনিটি ব্লগ বলে চিন্থিত করতে পারি। এজন্য প্রাক-সচলায়নকালকেও কয়েকটা সময়কালে ভাগ করা চলে। যেমন প্রাক-প্রাপ্তি কাল। প্রাক-প্রাপ্তিকালের বৈশিষ্ট্য হলো এই সময়টাতে প্রথম একক কমিউনিটি তৈরী হয়েছিল এবং কমিউনিটি ভেঙে গেছিল।

তবে এর পুরোটাই ভার্চুয়াল। সময়টা গবেষণা করে বের করতে হবে। তবে ধরুন এটার ব্যাপ্তিকাল সামহোয়ারের আত্মপ্রকাশ থেকে প্রাপ্তি বিষয়ক অমি রহমান পিয়ালের প্রথম পোস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে যত ধরণের বিষয় নিয়ে ব্লগাররা আলোচনা করেছেন ও যত ধর্মী ব্লগারের উপস্থিতি সন্বিবেশিত হয়েছিল সেগুলো কিছু মোটা দাগে চিন্থিত করা সম্ভব। যেমন, ব্লগারদের প্রথম ওয়েভে যারা এসেছিলেন তারা কনটেমপরারী সময় নিয়ে লিখতেন, ব্লগারদের পারস্পরিক জানাপরিচয় নিয়ে লেখার চর্চা তখন অনুপস্থিত।

এসময়টাতে কর্তৃপক্ষ যেমনটা চেয়েছিলেন তেমন ব্লগারদেরই তারা দেখলেন তাদের ঘাটে নাও ভিড়াতে। কেউ রাজনৈতিক নিবন্ধ লিখছে, সরকারকে সমালোচনা করে, কেউ সমর্থন করে। কেউ ধর্ম নিয়ে পড়েছে, এর ব্যবচ্ছেদ করে শেষ, কেউ আবার শুরু করেছে ওয়াজ-মাহফিল। এই বিভিন্ন কিসিমের ব্লগাররা আবার তাদের পারস্পরিক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী থাকা সত্ত্বেও আলোচনামূলক সম্পর্ক বিনিময় করছে। যুক্তি দিয়ে কখনও আবেগ দিয়ে তার মন্তব্য সেধিয়ে দিচ্ছে।

প্রি-প্রাপ্তিকালের প্রথমভাগে কর্তৃপক্ষের ব্লগের রূপরেখার পূর্ব-পরিকল্পিত অবস্থানের পুরোপুরি বাস্তবায়ন দেখা যায়। এবং সেই রূপরেখা তখন পর্যন্ত আমি যা জানি তা হলো যে কেউ এখানে যা কিছু লিখতে পারে। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করাটাকেই কমিউনিটি ভাঙা কাল বলে চিন্থিত করতে পারি। তবে এসব আর পোস্টের মেইন বডিতে নয়, মন্তব্যে লিখবো। এরমধ্যে আশা করি এ পর্যায় পর্যন্ত বিশ্লেষণে কর্তপক্ষের ব্লগ রূপরেখার একটা ইন্ট্রো নির্মাণে অন্যদের ফিডব্যাকও মিশ্রিত হবে।

বানান ও ব্যকরণের ভুল ধরিয়ে দেয়াকে অপ্রসাঙ্গিক মন্তব্য হিসাবে মুছে দেয়া হবে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.