বনলতা, নামটার মধ্যে কেমন একটা মাদকতা আছে, বেশ রোমান্টিক নাম। হাবিব চ্যাটিং করার জন্য মেয়েটিকে নক করলো। দেখা যাক, কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়।
--হাই, বনলতা।
---কাঁঠালপাতা? আপনার নামটা বেশ মজার।
আমাকে আবার ছাগল ভাবছেন নাতো?
--- কি যে বলেন অমন ভাবলে আপনাকে নকই করতাম না। প্রাণের মায়া সবারই আছে।
-- হা হা হা। এত নাম থাকতে আপনার নাম কাঁঠালপাতা রাখলেন কেন? কাঁঠালের কি ফুল হয় না?
-- কাঁঠালের ফুল হয় কি না জানি না, তবে মুচি হয়।
--হিহিহি।
--দেখেছেন, কেমন বৃষ্টি হচ্ছে
--আপনাদের ওখানেও বৃষ্টি হচ্ছে নাকি?
--হ্যাঁ। আমার কী ইচ্ছে হচ্ছে জানেন?
--কী? গার্লফ্রেন্ডের হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে? একটা দাঁত বের করা হাসির ইমো
-- ঠিক আমার মনের কথাটা বলে দিলেন।
-- আমি কিন্তু মাইন্ড রিডার। আবারও দাঁত বের করা হাসির ইমো
--তাই নাকি, তাহলে আমার মনটা আরেকটু পড়ুন না।
--খেয়ে দেয়ে আমার কাজ নেই নাকি? আপনার মন পড়বো?
-- ঠিক আছে, তাহলে আমিই বলে দিই।
আহা, এই সময়ে আপনি যদি আমার পাশে থাকতেন
-- তো?
-- শুনুন, আমি কিন্তু সিংগেল।
-- তো?
--এই বুঝি আপনার মাইন্ড রিডিং?
-- আমি সিংগেল না হয়ে ডাবল হলে কোন সমস্যা? আবারও দুষ্টুমি হাসির ইমো
-- আমার ভাগ্যটা কত ভাল দেখুন দেখি? আপনার মত একজন সিঙ্গেল বনলতা সেন, এই বৃষ্টিতে, আমার হাত ধরে হাঁটছে। ভাবতেও ভাল লাগছে। আপনার মাথায় কি অনেক চুল?
-- জ্বী না, আমার বয়কাট।
কাঁঠালপাতা ও বনলতার ভারচুয়াল সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কতদূর গেল, তা আমাদের জানা নেই।
হয়ত তাদের সম্পর্ক ভার্চুয়াল থেকে বাস্তবে রূপ নিয়েছে, আবার হয়ত এর পরে তাদের আর কখনো কথা হয় নি। অনেক কিছুই ঘটতে পারে। প্রযুক্তির ব্যবহারে আমাদের জীবনে এখন নানা রকম ভার্চুয়াল সম্পর্কের আনাগোনা। অনেকটা সময় ইন্টারনেটে চ্যাটিং করতে গিয়ে, সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে নেটওয়ার্কিং করতে, এমন কি মোবাইলে অনেক অচেনা মানুষের সাথে আমাদের পরিচয় হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তব জীবনে স্কুল, কলেজ, অফিসে তৈরি হওয়া সম্পর্ক আর ভার্চুয়ালি তৈরি হওয়া সম্পর্ক এক রকম নয়।
একই ব্যক্তির বাস্তব ও ভার্চুয়াল রূপ একই রকম নাও হতে পারে। ভার্চুয়াল সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় ৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের উপর নির্ভর করে চলতে হয়। কেন না, ভারচুয়ালি ব্যক্তিটির সাথে যোগাযোগ হলেও তার অভিব্যক্তি আমাদের অজানা থেকে যায়। যে ইমোটিকন ব্যবহার করে আমাদের অভিব্যক্তিগুলো আমরা প্রকাশ করতে চাই, সেগুলোও অনেক সময় আমাদের সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করে না। এছাড়াও ভার্চুয়াল সম্পর্কে আমরা নিজেদের খুব সহজে গোপন রাখতে পারি।
খুব স্ফুর্তিতে থাকলেও ব্যথিত মন নিয়ে কথা বলতে পারি। আবার অনেক হয়ত খুব ভাল কথা বলে নিজের ভাব প্রকাশ করতে পারে, চ্যাটিং এর মাধ্যমে লিখে প্রকাশ করতে পারে না। এমনি আরো নানা কারণে দুজন ব্যক্তির মাঝে অনেক বড় একটা ইনফোরমেশন গ্যাপ থেকেই যায়।
আজকাল ব্ল্যাঙ্ক ডেটের কথা খুব শোনা যায়। কিন্তু এর ফলে অনেক অঘটনও ঘটছে।
হয়ত ছেলেটি এতদিন মেয়ে ভেবে যার সাথে চ্যাট করেছে, সে আদতে কোন মেয়েই ছিল না। ডেট করতে গিয়ে নিজের দামী মোবাইল, টাকা পয়সা খুইয়েছে। পরকিয়ার মত অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। মোবাইলের মাধ্যমে তৈরি হওয়া সম্পর্কগুলোর ফলে মেয়েরা অনেক সময় যৌন নির্যাতনের শিকারও হয়ে থাকে। হতে পারে ব্ল্যাক মেইলিং-এরও শিকার।
পত্রিকায় খুন বা আত্নহত্যার খবর হিসেবে প্রকাশিত হলে আমরা সেগুলো জানতে পারি। মোবাইল বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তৈরি হওয়া সম্পর্ক নিয়ে আমাদের মধ্যে সচেতনতা নেই বলেই এ ধরনের কিছু অঘটন ঘটে থাকে।
ভার্চুয়াল সম্পর্কের যে সবটাই আমাদের জন্য কুফল বয়ে আনে তা নয়। এই ভার্চুয়াল সম্পর্কের ফলে আমাদের তৈরি হয় দারুন কিছু বন্ধু, যাদের সাথে হয়ত আমাদের কোনদিন পরিচয় হবার সম্ভাবনাই ছিল না। সমমনা বন্ধুদের নিয়ে ভার্চুয়ালিই তৈরি হয় নানারকম পজিটিভ সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলক অথবা ব্যবসায়িক উদ্যোগ, যা পরে রূপ নেয় বাস্তবে।
বাস্তব বা ভার্চুয়াল, সম্পর্ক যেমনই হোক, তা রক্ষায় আমাদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।