শুধুই দেখি...
মৃত্যুর পর নিম্নবর্ণিত কাজগুলো করতে হবে-
১. রূহ্ বের হবার পর একটি কাপড় দ্বারা মৃতদেহের থুতনির নীচ থেকে
মাথাসহ পেচিয়ে বেঁধে দিবে যাতে মুখ বন্ধ হয়ে থাকে।
২. বিস্মিল্লাহি ওয়া আ’লা মিল্লাতি রসূলিল্লাহ্ বলতে বলতে সযত্নে
মৃতদেহের চোখ বন্ধ করে দিবে এবং হাত পাগুলো সোজা করে দিবে।
৩. মৃতদেহের পেটের উপর কোনো ভারী বস্তু রেখে দিবে যাতে পেট ফুলে
না উঠতে পারে।
৪. নাপাক অবস্থায় কোনো পুরুষ অথবা মহিলাকে মৃতদেহের কাছে আসতে
নিষেধ করে দিবে।
৫. হায়েজ নেফাস অবস্থায় মহিলাদেরকে মৃতদেহের কাছে আসতে দিবে না।
৬. সঙ্গতি থাকলে আগরবাতি জ্বালিয়ে মৃতদেহের পাশে রেখে দিবে।
৭. গোসল করানোর আগে মৃতদেহের পাশে বসে কোরআন শরীফ পড়া
জায়েয নয়।
৮. কাফন দাফন যথাসম্ভব দ্রুত সম্পন্ন করবে।
৯. শুক্রবার দিন কারো ইন্তেকাল হলে জুমআর নামাজের আগেই জানাজার
নামাজের ব্যবস্থা করবে। বেশী লোক সমাগম হবে এই আশায় জুমাআর নামাজ
পর্যন্ত জানাজার নামাজ বিলম্ব করা মকরূহ্।
১০. মৃতের জন্য চিৎকার করে মাতম বিলাপ ইত্যাদি করা জায়েয নয়।
নিঃশব্দে ক্রন্দন জায়েজ। বরং সুন্নত।
মৃতদেহের গোসল করানোর নিয়মঃ
গোসল করানোর আগে মৃতের পরিধেয় খুলে ফেলে শুধু নাভি থেকে হাঁটু
পর্যন্ত একখানা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিবে। লাশ উত্তর দিকে মাথা রেখে শোয়াবে এবং গোসলের জায়গা পর্দা করে নিবে।
তারপর গোসলদাতা হাতে কিছু ন্যাকড়া জড়িয়ে কাপড়ের নীচে হাত প্রবেশ করিয়ে প্রথমে ঢিলা দ্বারা পরে পানি দ্বারা মৃতের এস্তেঞ্জা করিয়ে দিবে। তারপর অজুর স্থানগুলো ধুইয়ে দিবে। কুল্লি করানো, নাকে পানি দেওয়া, হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়ানো- এসব করার প্রয়োজন নেই। প্রথমে মুখ, তারপর ডান হাত, তারপর বাম হাত কনুইসহ ধুইয়ে দিবে। কিছু তুলা বা ন্যাকড়া হাতের আঙ্গুলে জড়িয়ে তিনবার দাঁতের উপর এবং নাকের ভিতর মুছে দেয়া যেতে পারে।
যদি গোসলের প্রয়োজন ছিলো এ অবস্থায় অথবা হায়েজ নেফাস অবস্থায় মৃত্যু হয়ে থাকে তবে মুখের ভিতরে এবং নাকের ভিতরে ভেজা তুলা বা কাপড় দিয়ে মুছে দেয়া জরুরী। এরপর মৃতের নাকে এবং মুখে কিছু তুলা গুঁজে দিবে যাতে গোসলের সময় নাকে ও মুখে পানি ঢুকতে না পারে। এরপর মৃতদেহকে ডান দিকে কাত করে শোয়াবে এবং বাম পাশের উপরে, মাথা থেকে পা পর্যন্ত পানি ঢেলে দিবে। তিনবার অথবা পাঁচবার এভাবে পানি ঢেলে দেওয়ার পর মৃতদেহকে বাম দিকে কাত করে শোয়াবে এবং তিনবার অথবা পাঁচবার মাথা থেকে পা পর্যন্ত পানি ঢেলে দিবে। এরপর গোসলদানকারী নিজের শরীরের বা অন্য কোনোকিছুর সঙ্গে মৃতদেহকে ঠেস দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় রেখে আস্তে আস্তে মৃতের পেটের উপরে মালিশ করবে।
এরকম করার পর যদি পেট থেকে কিছু ময়লা বের হয় তবে সেগুলো কুলুখের সাহায্যে মুছে পরিষ্কার করে দিতে হবে। মৃতকে পুনরায় অজু গোসল করাতে হবে না। এভাবে মৃতের গোসল শেষ করতে হবে।
এ সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন যে-
১. গোসলের পানি বরই পাতাসহ সিদ্ধ করে নেয়ার নিয়ম। বরই পাতা না
পেলে শুধু পানি গরম করে নেয়া যাবে।
গোসলের সময় পানি সামান্য গরম থাকলেই চলবে।
২. গোসলের পর সকল শরীর শুকনা কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে দিতে
হবে, যাতে কাফনের কাপড় পরালে তা ভিজে না যায়।
৩. গোসলের পর যত্ন সহকারে কাফন পরাতে হবে।
৪. কাফন পরাবার সময় স্ত্রীলোকদের মাথায় এবং পুরুষদের মাথায় এবং
দাড়িতে আতর লাগিয়ে দিবে।
৫. সেজদার সকল অঙ্গে অর্থাৎ কপালে, নাকে, দুই হাতের তালুতে, দুই
পায়ের হাঁটুতে এবং পায়ে কর্পুর লাগিয়ে দিবে।
৬. স্ত্রী স্বামীর কাফন পরাতে পারবে। মৃত স্বামীর চেহারা দেখতে পারবে।
তাকে গোসলও করাতে পারবে। কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মৃতদেহকে স্পর্শ করতে পারবে
না। গোসলও করাতে পারবে না।
তবে স্ত্রীর চেহারা দেখতে পারবে। কাপড়ের উপর দিয়ে স্ত্রীর মৃতদেহ স্পর্শ করতে পারবে। স্ত্রীর লাশও বহন করতে পারবে।
৭. মৃতকে গোসল করানোর আগে গোসলদাতার নিজের অজু করে নেয়া
ভালো।
৮. মৃতের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত দেখা জায়েয নয়।
খালি হাতে স্পর্শ করাও
জায়েয নয়।
৯. মৃতদেহকে গোসল করানো, কাফন পরানো, জানাজা দেয়া এবং দাফন
করা ফরজে কেফায়া।
১০. পুরুষ মহিলা সবার জন্য সাদা কাফন উত্তম।
১১. বেশী দামের কাপড় দিয়ে কাফন দেয়া উচিত নয়। কারণ কাফনের
কাপড় অল্পদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।