আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কর্পোরেট লাইফ

আমি বলছি যাব যাব, ঘর বলছে না; অবাধ্য সেই দুয়ার আমার, আটকে রাখে পা...

সাড়ে বারোয় আটকে যখন ঘড়ির কাঁটা, তখন ভীড়ের মাঝে কোনমতে জায়গা করে নিতে পারা আমার কান্ত শরীর শতভাগ প্রস্তুত ডারউইনের বানর সাজতে। কোনমতে বাম্পার ধরে ঝুলে থাকা, ভরদুপুর। দম বন্ধ হয়ে আসা জ্যাম যখন ম্যাপ করতে পারে না কে মানুষ, কে ড্রাইভার, কে ট্রাফিক পুলিশ ঠিক তখন হাবল টেলিস্কোপের কোনোরকম সাহায্য ছাড়াই আমি তোমায় দেখতে পেলাম। আমি, তুমি পাশাপশি। তুমি আমায় দেখতে পেয়েছো কি পাওনি বুঝতে পারেনি আমার অনাহারী দুচোখ।

তাদের কালো লেন্স ব্যাস্ত তখন তোমার শরীরের নানান ভাঁজ উপভোগ করায়। তোমার মুখ, ঠোঁট, তোমার চুল, নখ, তারপর ছোট স্বচ্ছ পরিধানের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা হিমালয়ের মতোন তোমার সুউচ্চ স্তনযূগল... দেখলাম। উপভোগ করলাম তোমার প্রতি ভাঁজে ভাঁজে সাঁটানো কর্পোরেট বিজ্ঞাপন। হাত মুক্ত থাকলে হাত তালি দিয়ে তোমায় বাহবা দিতাম। সত্যিই তুমি এক দারুন জিনিস।

তুমি সামিনা চৌধুরীর আইকন। তুমি কর্পোরেট লাইফের রানী। তারপর আরো কিছু দেখতে পাবার আগে দেখি তুমি নেই। আমার এ্যাপেক্স এর উপর কার গুলিস্থানী জুতো উঠে জ্ঞান হারিয়েছে, খেয়াল হতেই সদ্য জন্ম লাভ করা শিশুর মতো চিৎকার করে উঠে বলি- -- অই মিয়া চোখ কি বাসায় রেখে এসেছেন? দেখলাম, কর্তা কপালে সের দুই ওজনের ভাঁজ ফেলে দিয়েছেন। তারপর, আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কোনমতে তার দিশেহারা দৃষ্টি সেট করে বললেন, 'এই বাসে চোখ নিয়ে এলেও কোনো লাভ নেই।

তাই বাসায় রেখে এসেছি!' কড়া রোদের ধাক্কা সামলে আমি ফের তোমায় দেখতে পেলাম। তুমি বসে ঠান্ডা হাওয়ায়। আরাম করে। পায়ের উপর পা তুলে। আর আমি ঝুলছি আগুনে, কোনোমতে, চারপাশে আমার মতো বহুজীবি মানুষ।

এরা কর্পোরেট লাইফ উপভোগ করতে জানেনা। এরা কেবল এই ৩-বি নং বাসের বাম্পার ধরে ঝুলে ঝুলে চাকরীর সন্ধানে যেতে জানে, কিংবা দিন ঠিকা কাজ, বা, মাসে বড় জোড় হাজার চারেক ওজনের গা খাটুনির চাকরী...; কর্পোরেট জীবন কি সেটা এরা জানেনা। তারপর আবার তুমি গেলে এগিয়ে। আবার এলে পাশাপাশি। মাঝখানে দুই মেরুর দূরত্ব।

এমনিতেই তোমাতে আমাতে তফাতের হরেক ছড়াছড়ি। তুমি কর্পোরেট লাইফের রানী। আমি শহুরে ক্রীতদাস। ইচ্ছেমতোন নিজেকে বিকিয়ে দেই। আজ এখানে তো কাল ওখানে।

মাইনে টেনেটুনে হাজার দশেক। তোমার ৩০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনী শরীর, অনায়াসে পায় লক্ষ লক্ষ। তোমার হাতা কাটা জামার ভেতর তুলতুলে হাত। বগল। তোমার ঠোঁটের খাঁজে বাঁকা উপহাস।

কাদের প্রতি? তোমার কপাল জুড়ে কক্সো বাজারী অভিলাস। আমার কপাল জুড়ে নোনা জল। গড়িয়ে যায় কান্তিহীন। আমাতে, তোমাতে তফাতের হরেক ছড়াছড়ি। তুমি বাংলা লিঙ্কের রানী।

আমি? হায়, যদি হতাম কালোমেধাবী। বুদ্ধিজীবি সাজতাম, ডিরেক্টর। তোমার জমিন জুড়ে আঁকতাম রঙিন ছবি। যেমন ইচ্ছে তেমন কিংবা উল্টে পাল্টে, খেলতাম। তারপর, টয়লেট পেপারের মতোন ছুঁড়ে দিতাম।

তুমি হতে তখন ফার্মগেটের ২৫০ মূল্যমানের বোরখাওয়ালী। তখনো কিন্তু তুমি কর্পোরেট লাইফের রানী। শরীরজীবি কিংবা পেশাজীবি!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.