কিছু দিন আগে মিরশ্বরাইতে "নাহার এগ্রোগ্রুপ" নামে একটা পোলট্রি ফার্মে চার
বন্ধু মিলে গিয়েছিলাম। একেক জনের উদ্দেশ্য ছিল একেক রকম। তবে আমার উদ্দেশ্য ছিল ঐ ফার্মটার সেট আপ দেখার জন্য। আরেকটা ব্যপার ছিল ঐটা আমার এক স্যারের। স্যারের ইচ্ছেতে যাচ্ছি তাই মজা করার ব্যপারটা কিন্তু একটু বেশি ছিল।
যাইহোক পরে বুঝলাম ঐ এগ্রোইনডাসট্রিটা তিন জনের স্যার, স্যারের ভাই আর ওনার মায়ের। ঐখানে ডুকামাত্রই আমাদের জীবানু মুক্ত করার নানা আয়োজন করা হল। একপর্যায়ে আমাদের পোষাক-আশাক পরিবর্তন করা হল। ফার্মের নিজস্ব পোষাক দেয়া হল।
ফার্মটা কাহিনী হচ্ছে ১৯৮৭ সালে ঐ স্যারের ভাই ৩৬টা মুরগী নিয়ে শুরু করেন, তখন
তিনি ক্লাস নাইনে পড়তেন।
বিকম পর্যন্ত পরাশুনা করেছেন। খুব সম্ভবত একটা
এমবিএ ডিগ্রি নিয়েছের ব্যবসায়ের স্বার্থে। বর ব্যস্ত পাবলিক। তিনি নাকি ১লক্ষ টাকাকে ১কোটি টাকা চিন্তা করেন। বাকি ৯৯লক্ষ টাকা মুনাফা! ইতিহাস বলতে এতুটুকুই জানলাম।
আজ এই জায়গার বিশাল অবস্থা, ২৫ একর জায়গাতে স্বপ্ননের জগৎ। বিনিয়োগ দেখে মনে হল ভূমি ছারাই ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা হবে। মূলত এটা বানিজ্যিক ভাবে বিভিন্ন ডিলারের মাধ্যমে মুরগির বাচ্ছা বিক্রি করে, তবে আমার দেখে মনে হচ্ছিল এদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মারাত্নক। এখনও ২/৩ ভাগ কাজ বাকি রয়ে গেছে। গরু, মাছ, শাকসবজ্বি, ফলমুল, মুরগি সেজা কথায় মানুষকে চালানোর জন্য যে তেলের দরকার হয় ঐ গুলার ঊৎপাদনখানা।
আমার ঐ স্যারের ভাই ব্যবহার করছেন বিভিন্ন দেশীয় প্রযুক্তি। তিনি তার খামারের কর্মচারিদের মাঝে মাঝে নাকি থাইল্যান্ড নিয়ে যান ওদের ধারনা গুলে দেখানোর জন্য।
ঐখানের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার জানালেন তাদের ফার্মে মোট যেসব শেড আছে, তার ধারন ক্ষমতা ১৭০০০০ মোরগ মুরগী। গরুর খামারের গিয়ে দেখলাম ১৫০-২০০ গরু বড় থেকে ছেট আকারে সাজানো। এবং একটি থেকে অন্যটির দুরুত্ব ছিল মাপা মাপা।
গবুর গোসল হতে শুরু করে তার খাদ্যাভাস, দূরুত্ব সব কিছুতে আধুনিকতার ছোঁয়া।
ফার্মটার ভিতরের কোন গাছের ডাল ছিল না, যাতে পাখি বসতে না পারে। জানেনত ওনাদের বিষ্ঠার মাধ্যমে জীবানু ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। পুকুরগুলো ছিল চোখে পরার মত। যদিও ঐগুলো নাকি বর্তমানে লস প্রোজেক্ট।
তারপর গেলাম একটা সেডে, প্রতিশেডে ঠুকার আগে কিমিকেলের মধ্যে পা ধুয়ে নিতে হয়। শেডের মোরগ-মুরগি দেখে চোখে রড় হয়ে গেল। মনে হচ্ছিল অনেক সুশৃঙ্খল কোন ইউনিফর্ম পরা এলিট বাহিনী! অসম্ভব সুন্দর এক দৃশ্য।
এরপর দেখলাম ডিম থেকে বাচ্ছা ফোটানোর পদ্বতি। আলমারির মত একটা স্থানে একসাথে ২৬০০০ হাজার ডিম রাখা হয়, যদিও এর মধ্যে ৮৪ থেকে ৯০ ভাগ ডিম থেকে বাচ্ছা ফুটানো সম্ভব হয়।
এটাকে খুব সম্ভবত ব্রিডার বলে। এখানে ডিমগুলেকে ১৮ দিন
রাখাহয় খুব সবধানতার সাথে। প্রতি মুহুর্তের তাপমাত্রা সংরক্ষন করা হচ্ছে।
এধরনের ৮টি যন্ত্র আছে এখানে। তারপর ডিমগুলোকে অন্য একটি জায়গাতে আরও তিন দিন রাখা হয়।
সব মিলিয়ে ২১ দিন। তারপর বাচ্ছা ফোটে।
দুপুরের গোসল সারলাম পুকুরে। একেবারে লাইফ জ্যাকেট পরে। অথচ পুকুরের
পানি গলা সমান।
পুকুরে নেমে মনে হচ্ছিল বয়স অনেক কমে গেছে। বন্ধুদের ফাইজলামি দেখে ঐখানকার সব কর্মচারিগুলে কেমন যেন মিটি মিটি হাসছিল।
কিছুক্ষন পর স্যারের ডাক আসল, ডাইনিংএ দুপুরের খাবার রেডি। খুব ক্লান্ত শরীরে খাবার টেবিলে গিয়ে বসলাম। তারপর ঘটল আসল ঘটনা।
এক্কেবারে সব ফ্রেশ জিনিস। মাছ, স্ববজি, মুরগি।
মুরগি স্বাদ ছিল অন্যরকম। ভাববেন না আমি জীবনে মুরগি খাই নাই। ব্যপারটা হচ্ছে মুরগির এরকম স্বাদ আমি আগে কখনই পাই নি।
আসলে ঐ টেবিলের সব ছিল "গ্রিন প্রেডাক্ট"। কোন ঝামেলা নাই। ঐদিন দুপুরে খাবার পর আমার বারবার মনে হচ্ছিল
এতদিন পর্যন্ত সব ভেজাল খেয়ে আসছিলাম অথবা ভেজাল না হলেও "গ্রিন প্রেডাক্ট"
ছিল না।
সবচাইতে মাজার ঘটনা ঘটল বিকালের কিছু আগে। আমারা চার বন্ধু আর স্যারকে আপ্যায়ন করা হল ৫টা পোচ করা ডিম।
সত্যি সত্যি ডিম। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে ৫টা ডিমই ডাবল কুসুমের! আচ্ছা বাজারে যদি সব ডাবল কুসুমের ডিম থাকত তাহলে ডজন কত হত?
বিকেলের কিছু আগে চ্ট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হোলাম। আসার সময় ঐ ফার্মের ছোট
বড় প্রায় ২৫০ কর্মীর চেহারাগুলো ভাসতে লাগল। ওরা কি জানে ওরা কি করছে? হয়ত জানে না, তবে এদের শিক্ষা বর বর ডিগ্রীধারিদের চেয়ে কম মনে হচ্ছিল না।
কি করব আমরা, বিবিএ এমবিএ ডিগ্রী নিয়ে হয়ত চাকর নামের চাকরিতে ডুকব।
কিংবা
ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হব? আসলে সমাজে সবারই প্রয়োজন আছে, কিন্তু এই সব একটু বেশি পচে যাচ্ছে না? অদূর ভবিষ্যৎ এ এগুলো কি আমাদের বিশাল ক্ষুদা মেটাতে পারবে?
পেট শান্তিত দুনিয়া শান্তি!
বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। পথে দেখলাম এক থাইল্যান্ড এর ফার্ম। স্যার আঙ্গুল
দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। এরা নামে কয়েকশ কোটি টাকা নিয়ে আর আমরা নামি নাম মাত্র মূলধন নিয়ে। আমাদের বিক্রয় মুল্য ৭টাকা হলে ওদের হয় ৩টাকা।
তাহলে আমাদের পন্য টিকবে কি করে?
কি দরকার এদের এদেশে আমন্ত্রন জানানোর? আমরা কি এ খাতটাও নিজেরাই ধ্বংস করে দিব? যে মানুষগুলো এতকিছু করেযাচ্ছেন জানি না কতদূর যেতে পারবেন তবে আগামীদিনগুলোতে খুব ভাল কিছু দেখাবেন যদি সব কিছু ঠিক থাকে, এতে কোন সন্দেহ নেই। স্যারের ভাই, ভদ্রলোকের নামটা আর স্যারকে জিজ্ঞাসা করিনি বা জানারও চেষ্টা করিনি, হয়ত ইচ্ছে করেই করিনি। একজন সফল উদ্যোক্তা। এটাইহোক তার বর পরিচয়।
এগ্রো বেইজড কোন বাস্তব সন্মত তথ্য থাকলে জানান...........অথবা সফল কোন ব্যবসায়ের খবর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।