ক্লান্তি শেষে কবিতায় ফিরে যাই
কবি নাহার মনিকার কবিতা প্রথম ছাপা হয় কবি শামসুর রাহমানের হাত দিয়েই সাপ্তাহিক বিচিত্রায় আশি দশকের শেষের দিকে। লিখছেন স্কুল জীবন থেকেই। সে অর্থে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে কবিতার সঙ্গে বসবাস করছেন/লিখছেন। ৯০’র জটিলভাবনা থেকে নাহার মনিকার কবিতা অনেক দূরত্ব বজায় রেখেছে সচেতনভাবেই বলা যায়। তিনি স্পষ্ট দেখেন, স্পষ্টভাবে বয়ান করেন।
তিনি কবি। তিনি গাল্পিক। কবিতায়ও তিনি গল্পই বলেন। চন্দ্রের আলোর মতোই তার কবিতায় সাংকেতিক চরিত্রগুলো হেঁটে যায়। পাঠকের জন্য তার একগুচ্ছ কবিতা ‘চাঁদপুরে আমাদের বর্ষা ছিল’ গ্রন্থ থেকে তুলে ধরা হলো।
কবি নাহার মনিকা বর্তমানে মন্ট্রিয়ালে বসবাস করছেন।
সড়ক
যতো শব্দ তোমাদের সড়কে
এখানে ততটা নেই। যেখানে
বৃষ্টি নামলে মনে হতো আকাশ
ভর্তি মেঘের থই থই মাতলামি।
এখানে সড়কে ভেজার ভরসা নেই
শীতল কাঁপন। মাইক্রোওভেনে দেই
স্পর্শ সংকেত - কে কারে উষ্ণ করে।
ও বন্ধু কাজল ভ্রোমরা রে.. ..
তারচে’ আসো রেসিপি পড়ি
পড়ি আর গড়ি। ইলিশের চকমকি নাচ
আমাদের ফ্রাইং প্যানে
আমরাও বুঝতে চাই
মশলা ও মেঘের মানে।
জানালায় হাত দিয়ে বৃষ্টি ছোঁব
শীতের ছ্যাঁকা আজলা ভরা খামে
পোস্টাপিসে স্ট্যাম্প ভেজাবো
জিভের ডগায়। পাঠিয়ে দেবো
দু- এক দশক পেছন দিকে।
তোমাদের সড়ক ভর্তি দু:সাহসী
বাজ কি পড়ে?
স্নান
এক দাবানল ছড়ালো জল, সমুদ্দরে
দু’হাত খুলে নাইতে নামি,ডুব সাঁতারে
উৎরে গেলে গভীর খাদে আছড়ে পড়ি
মন্ত্রগুপ্তি সুপ্ত থাকে।
পিছলে পড়া
উচ্চ সুখে অঙ্গে অঙ্গে আগুন মেখে
নাইতে গেলাম। কিন্তু গভীর তল দেশে
করাত কলে কেটে যাচ্ছে হা হা হাসি
কর্দমাক্ত সিক্ত শমন জারি করছে
ত্রি -স্বৈরিণী। দু হাত ভর্তি শেওলা স্বেদের
সঙ্গে কিছু শুক্তি কুড়াই।
সমুদ্র জল গায় লাগে না। শীত বোধ নেই
অঙ্গে, কেবল আগুন লাগে।
ও স্বৈরিণী , সাধ করে কেউ
এই আগুনে ভেজে নাকি ?
ভ্রমন
দাঁড়িয়েছো জাগ্রত, শিরদাড়া সম্যক সোজা
আড়ালে-আবডালে প্রার্থনার ভাষা ভুলে যাই
অবাক তাকিয়ে দেখি নগ্নগাত্র সুন্দরী
শরীরের অক্ষর তার রঙিন পাপড়িতে বোজা।
অন্ধকার সহসাই ধার ক’রে এক টুকরো আলো
ঝকঝকে হাসি হেসে কাঁধ ফিরে পেছনে তাকালো
পেছনে ছড়ানো তার কাংখিত রুপকথা গুলি
আলোর ছোবল পেয়ে কাহিনীর চোখ ছলোছলো ।
ইর্ষাতুর না হলেও অবেলায় তীব্র ইর্ষা হয়,
এমন সটান,অধর নিদ্রাহীন ভ্রমনের আশনাই ছিলো।
আমাকে সঙ্গে নাও ,
দেখি তার প্রার্থনায় দিতে পারি কিনা
আলোর তুল্য অন্ধকার
সেই সঙ্গে সুন্দরীর শরীরের অক্ষরের বীনা।
শীতে কাঠবেড়ালী
নিষিদ্ধ ভক্ষন নয়।
খেয়ে নাও কাঠ বেড়ালী
যতেœ সাজিয়ে দেয়া মানচিত্র।
গাজর আর কচি পেয়ারার খোসা।
জলাধার দেখোনি বলে
পানিও ছোবেনা
এমন স্বাত্তিক হলে
চরিত্র চিত্রনের সময় দ্বিধাসহ
ঢুকে যাবে নখের সায়ক।
কিছুই খাবেনা কাঠবেড়ালী,
যতেœ সাজিয়ে দেয়া মানচিত্র
কৃতকার্য না হওয়া অদৃশ্য সৌরভ
অপমানে ডুবে ডাওয়া নীল নীল
লৌহবৎ ফুল।
সে শুধু অহংকারী ওড়াবে লেজ
পা ফেলবে ইষদুষ্ণ ভোররাতে।
তুমি তবে বরফ খাও ছঁফটে প্রানী
বরফের টুকরোকে বাতাসে ওড়াও।
জিভ দিয়ে চেটে পুটে দেখো তো
শৈত্যের রঙটাকে ফিকে করে দিতে পারো কিনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।