আম্মা ব্যাপারটা যে কি সেটা বুঝতে আমার আঠারো বছর লেগেছে।
এবং বাসা ছেড়ে সাড়ে তিনশ মাইল দূরে আসতে হয়েছে।
আমার মা মোটেও অসাধারন কোন মহিলা নন, বাংলাদেশের আর বাকী লাখ লাখ গৃহিনীর মত মোটাসোটা ভদ্রমহিলা যিনি তার জীবনের বিশাল অংশ রান্নাঘরে স্বামী আর সন্তানদের রান্না বান্না করেই কাটিয়েছেন। আব্বা সারাদিন অফিসে থাকতেন তাই শাসনের কাজটিও তাকে করতে হতো। এবং এ কারনে আমাদের চরম শত্রুতে পরিনত হয়েছেন ছোটবেলায়।
তাই বলে অন্যায় আবদার করতে কখনো পিছপা হইনি এবং তিনিও তার সাধ্যমত মান সম্মান বজায় রেখে তা পূরন করার চেষ্টা করে গেছেন।
আম্মার সাথে মারামারি কমে গিয়ে শূন্যের কোঠায় দাড়াল যখন স্কুল পাশ করলাম। রাগারাগি বন্ধ হলো না, ষাড়ের মতো চিৎকার করে ঝগড়া করেছি বহুদিন। তারপর একদিন চলে এলাম বাসা থেকে। দুমাস ছ'মাসে একবার করে বাসায় যাই।
দুদিন চারদিন করে থেকে আসি, সারাদিন বাসায়ই কাটাই, কোথাও যাই না। আম্মার অধিকার আদায়ে সাহায্য করি। প্রতিদিনই একবার ফোন করে কথা বলার চেষ্টা করি, মাঝে মাঝে অনুযোগ - "কি আম্মা, কোন খোজ খবর নেন না!" আম্মা হাসেন, আমিও হাসি!
ছোট ভাইটিকে বলি আমার উপলব্ধির কথা, সে এখন আমার সেই স্টেজ পার করছে। বলি, একবার বাসা ছেড়ে বের হয়ে আস, তারপর বুঝবি। ছোট একটি খালাতো বোন আছে, তাকে বোঝাই, কেউ বুঝে না, আমি তাদের সঠিক সময়ের অপেক্ষায় থাকি।
আম্মা সারাজীবনই অসুস্থ্য। নানা সমস্যায় জর্জরিত হতে হতে নিজের দিকে তাকাননি, নানা রকম রোগকে বাসা বাধতে দিয়েছেন সযত্নে। এখন প্রতিদিনই কোন না কোন প্রবলেম থাকে, আজ মাথা ব্যাথা তো, কাল প্রেসার হাই, পরশু মাজায় ব্যাথা, নয়তো মাথা ঘুরায় ইত্যাদি ইত্যদি। এখন ভুগছেন এপেন্ডিক্সের ঝামেলায়। ওষূধ দিয়ে দমিয়ে রেখেছেন ডাক্তার।
সামনে অপারেশনের ডেট। প্রতিদিন একবার করে কথা হয়, তিনি ঘুমের জন্য কথা বলতে পারেন না। পাওয়ারফুল ঘুমের ওষুধ খেয়ে পেটের ব্যাথা কমান।
আমার খুব ভয় লাগে, হাবিজাবি স্বপ্ন দেখি ঘুমের ঘোরে। নানা আজেবাজে চিন্তা মাথায় ঘোরে।
আম্মার জন্য একটা সিল্কের শাড়ি কিনেছি মাসখানেক আগে, এখনো দেয়া হয় নাই, বাসায় যেতে ইচ্ছে করে, সময় পাই না। আর ভয় লাগে। আম্মার জন্য দোয়া করি, তিনি যেন সকল শংকা কাটিয়ে উঠেন।
আমার মেজ ভায়ের পচিশ বছর লেগেছিল মা কি জিনিস সেটা বুঝতে। যেদিন আম্মা বাসা ছেড়ে বাসে উঠেন, সে তখন সারা পৃথিবীকে কাপিয়ে চিৎকার করে কেদেছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।