কানামাছি
মধ্যরাত, সবাই ঘুমিয়ে। নেট এ বসে অলস সময় পার করছি। হঠাৎ মোবাইল ফোন বেজে উঠলো। ভয়ে ফোনটি ধরতে পারলাম না। প্রিয়জনের ফোন, এভাবে কেউ ভয় পেতে পারে জানা ছিল না।
মোবাইলটি হাতে নিয়ে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকলাম অনেকক্ষন। আবারো বেজে উঠলো। অনেক দিন পর প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে ফোন আসছে, কোথায় আমার আনন্দিত হবার কথা, তা না হয়ে আমার গলা কেবলই যেন শুকিয়ে আসছে, প্রচণ্ড পানির পিপাসা।
ফোনটি ধারার সাহস হলো না। এসএমএস দিলাম, "ভালো আছো তো?..."
ফিরতি এসএমএস-
"ভালো আছি, ভেবেছিলাম আমার বাবাকে অনেক পছন্দ কর, তোমার প্রিয় মানুষদের তালিকায় নাকি আমার বাবার নাম রয়েছে, কোন একদিন বলেছিলে মনে পরে।
আমার বাবার ব্যবসা বসুন্ধরায়, তা তুমি ভালো করে জানো। এতকিছুর পরও কেন জানি আমি তোমার কাছ থেকে একটা ফোন আশা করেছিলাম, সারাটা দিন অপেক্ষায় ছিলাম, বলবে "বাবা কেমন আছে? তার তো কোন সমস্যা হয়নি?" কিন্তু হায়, অনেক বদলে গেছো তুমি। ভালো থেকো..."
এসএমএস দিলাম-
"মনে পরে? গত দু'বছর আগে প্রথম যে দিন কারফিউ হলো, তোমার সে কি উৎকণ্ঠা। আমি কোথায় আছি, কিভাবে আছি? অফিস থেকে বের হয়ে যেন সোজা বাসায় চলে আসি। তারপর প্রতি ৫ মিনিট পর পর তোমার ফোন।
কতটুকু আসলাম? রিক্সা পেলাম কিনা? কেন রিক্সা পাচ্ছি না এ নিয়ে তোমার সে কি কান্না। অফিস থেকে সেদিন বাসায় ফিরতে আমার ৪ ঘণ্টা সময় লেগেছিল। এই ৪ঘন্টায় তুমি চোখের জলে ভিজিয়ে দিয়েছিলে জায়নামাজ। আমি বাড়ি ফেরার পর শোকরানা নামাজ আদায় করেছিলে। ২৫ ফেব্রুয়ারী বিডিয়ার বিদ্রোহের দিন অনুভব করলাম, আমি কি হারিয়েছি।
সবার ফোন বেজে ওঠে শুধু আমারটি ছাড়া। বোবার মত সেদিন অফিস থেকে বের হয়ে শুধু অনুভব করলাম তোমার আমার প্রতিটি মুহুর্ত। ক্ষমা কর, ক্ষমা কর আমায়। ভালো থেকো। "
ফিরতি এসএমএস-
"আমি দুঃখিত, তোমায় কষ্ট দেবার জন্য।
কেমন আছো শুটকা মামা?"
আবারো ফিরতি এসএমএস-
"তুমি কেন আমার জীবন থেকে চলে গেলে? আমার তো আর সহ্য হয় না বাবু। কেন এমন করলে তুমি?"
এসএমএস দিলাম-
তুমি এত কেঁদছো যে আজ তোমার চোখের জল শেষ হয়ে মরুভুমি হয়ে গেছে, আমার তো আজও শেষ হয়নি, ভালো থেকো"
আবারো এসএমএস দিলাম-
"ক্ষমা করো কাঁঠবিড়ালি। আমি ছাড়া আমার বাবাকে দেখার আর কেউ নাই। দোয়া করো, ভালো থেকো"
তারপর আবারো নিরবতা সময় পেরিয়ে কখন যে ভোর হলো? টের পেলাম ফজরের আজানের শব্দ শুনে। এলিয়ে দিলাম ক্লান্ত শরীরটাকে বিছানায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।