নিরপেক্ষভাবে লিখেযেতে চাই..
[১২ ডিসেম্বর ২০১৩ইং এর পোস্ট]
১৮ দলীয় জোটের ডাকে দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসুচি পালিত হচ্ছে বেশ ক’দিনযাবত। আমাদের ডিপার্টমেন্টে গত দেড় মাসে মাত্র ১টি কোর্সের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১২তারিখও ১টি কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। তাও আর হচ্ছেনা জেনে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়ী ফেরার। মন যে কোন প্রকার ‘অবরোধ’ মানছেনা।
ঠিক করলাম, ট্রেনে চড়ে চাঁদপুর; সেখান থেকে হুন্ডা বা রিকসায় লক্ষ্মীপুর যাবো। যেই ভাবনা সেই কাজ।
ইদানিংকার টানা অবরোধে সব ধরণের ট্রেন সিডুয়াল ভেঙ্গে পড়েছে। তাই চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিকেল ৫টার চাঁদপুরের ট্রেনটা রাত ১০টায় চাড়বে। গতকাল রাতের কথা।
৮টার দিকে বাসা থেকে বের হলাম। স্টেশন নেমে পকেটে হাত দিলাম; বাসের ভাড়া দিতে হবে তাই। সেই পকেট থেকে টাকা বের হলোনা। খালি হাতটাই বের হয়ে এলো। সেদিন আর বাসের ভাড়া দেয়া হলোনা।
চাঁদপুরও যাওয়া হলোনা। বাসায় ফিরে আসবো সেই টাকাও নেই। হেলপার বেচারা পকেট হাইজ্যাক হয়েছে শুনে মাফ দিলো।
রাত ১২টা ১মিনিটে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। চট্টগ্রামের সার্বিক পরিস্থিতি বেশী ভালো মনেহলোনা।
দ্রুত বাসায় ঢুকে পড়লাম। গত পরশু রাতে আমার নেটের ব্যলেন্স ফুরিয়েগেছে। ইচ্ছা ছিলো চাঁদপুর গিয়ে ১জিবি কিনে নেবো। এখন বাসায় ফিরে ভাবছি, আজ রাতটা নেট ছাড়া কীভাবে কাটাবো সেই কথা। লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও রংপুরসহ অনেকখানে অনেক বন্ধুকে ফোন দিলাম।
লোড লাগবে ৩৫০টাকার। কিছুতেই কিছু হলোনা। সবার মুখে একই কথা। সবগুলো দোকান বন্ধ হয়েগেছে, বাসা থেকে বেরুতে সাহস হচ্ছেনা ইত্যাদী। তখন রাত সাড়ে ১০টার কাছাকাছি।
কোন উপায় না দেখে কম্বল মুড়ী দিয়ে শুয়ে পড়লাম। যদিও প্রতিরাতে পড়া-লেখা, হিসাব-নিকাশ ও নেটের কাজ সেরে বিছানায় যেতে যেতে প্রায় দেড়টা দু’টা বেজে যায়। আজ মনটা খুব খারাপ; ঘুম আসছেনা। কারণ একটাই। ‘কাদের মোল্লার ফাঁসি’।
একজন নিরীহ আলেম ও জাতীয় পর্যায়ের নেতাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে এটা আমার বিবেক কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলোনা। যদিও আমি তার অনুসরী নই। তার সংগঠনও করিনা। এমনকি আক্বীদাগত কারণে অনেক ক্ষেত্রে সমর্থনও করিনা। তাহলে কেন আমার এই মাথাব্যথা? কারণ খুঁজতে শুরু করলাম।
খুঁজে পেলাম। তিনি আজ মজলুম। আমার একজন মুসলিম ভাই। সে যাইহোক, রাত পৌনে ১২টার দিকে হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। জানতে পারলাম, কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার আদেশ সকাল ১০টা পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
আপাতত স্বস্তি পেলাম। আর ঘুমের কোলে ঢলে পড়লাম।
মূল প্রসঙ্গে ফিরে যেতে চাই। আজকের কথা। খালি পকেট নিয়েই আমার সকাল হলো।
নেটে ব্যলেন্স নেই। পেটে ভাত নেই। মনে শান্তি নেই। নেই, নেই, নেই। তাই বলে কী কিছুই নেই? আছে।
আছে। নিশ্চয়ই আছে। মাথাভর্তি একগাদা টেনশন আছে। আর আছে ক্ষোভ। পেটে ক্ষুধা আছে; পকেট খালি আছে।
বাসায় ভাই আছে। তার কাছে টাকা চাইতে ইচ্ছা হলোনা। বাসার সামনে যে দোকানটায় সব সময় সদাই করি; ইচ্ছা হলো বাকীতে একটা পাউরুটি কিনে খাই। বিবেক বাধা দিলো। চেহারার পরিচয়ে কারো কাছে ছোট হতে চাইলামনা।
যে হোটেলটায় নগদ টাকা দিয়ে দৈনিক ৩বেলা খাবার কিনে খাই সেখানেও বাকী চাইতে পারলামনা। ঐ দিকে ক্ষুধায় ‘মধ্যপ্রাচ্যে’ (পেটে) আগুন লেগেগেছে। দাউদাউ করে জ্বলছে সে আগুন। ফায়ার সার্ভিসের বোতলটা অবশ্য হাতের ধারেই ছিলো। দফায় দফায় পানির স্কোয়াড প্রেক্টিস করছিলাম।
দুপুর নাগাদ প্রায় ৫লিটার পানির ক্ষয় করেছি। আর আমার অবস্থা...! মুতিতে মুতিতে দিশেহারা। বারবার বাথরুমের দরজা আর বাতির সুইচ টিপতে ভালো লাগছিলোনা। তাই দরজা খুলে বাতিটা অন করে রাখলাম।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো।
তখনো পেটে দানা পানি কিছু পড়েনি। ততক্ষণে ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির হয়ে পড়লাম। উপায় না পেয়ে ফোন দিলাম বন্ধু বোরহানকে। বেচারা দয়াকরে ৫০০টাকা পাঠালো। টাকাটা নিয়ে সোজা হোটেলে।
খেলাম। আস্ত করে খেলাম। সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার এক সাথেই খেয়ে নিলাম। বলতে পারি পেটের সাথে জেদ ধরেই এতো বেশী পরিমাণে খেয়েছি। লক্ষ করলাম, অশান্ত ‘মধ্যপ্রাচ্য’ ক্রমেই শান্ত হয়ে আসছে।
আমিও শান্ত হলাম।
আমার মাথায় চিন্তার উদ্রেক হলো। ভাবনার দুয়ার খুলেগেলো। মনেপড়লো সেই সব দুঃখী মানুষের কথা, যারা এভাবেই প্রতিদিন দু’বেলা না খেয়ে থাকে। কেউ আবার ঠিকমতো একবেলাও খেতে পায়না।
আমি আবেগ ধরে রাখতে পারলামনা। আমার দু’ চোখ বেয়ে অশ্রু নেমে এলো। কৃতজ্ঞতায় মাথা অবনত হলো। দু’রাকাত নফল নামায পড়ে মহান প্রভুর শুকরিয়া আদায় করলাম। তিনি যেন আমাকে এভাবেই প্রতিনিয়ত সুযোগ করে দেন জীবনকে উপলব্ধি করার।
দুঃখীজনের পাশে দাঁড়াবার...!
আজকের এই দিনটা আমার জীবনে অম্লান হয়ে থাকবে। স্মৃতির ফ্রেমে বাঁধা থাকবে ততোদিন; জীবন প্রদীপ জ্বলবে যতোদিন। এই আমি কতো টাকাই না নষ্ট করেছি প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে। আর সামান্য সময়ের ব্যবধানে সেই টাকা কতোটাই না অসহায় করে তুলেছে আমায়।
(বিঃদ্রঃ- আজ আবারও রওনা করেছি চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে।
ট্রেনে বসেই স্টেটাসটা পোস্ট করলাম। আজ আর টাকা হাইজ্যাক হয়নি। বাসের ভাড়া দিয়েছি। আল্লাহ চাহেতো চাঁদপুরও যাবো। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।