.... তবুও আমি স্বপ্ন দেখি ... (স্বপ্ন, বাস্তব এবং ব্লগের সর্বস্বত্ব ব্লগার কতৃক সংরক্ষিত)
লিফির বুকে সূর্যাস্ত - ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।
এ ঘটনার একটা প্রেক্ষাপট রয়েছে। ২০০৭ সনে যখন আমি আয়ারল্যান্ড আসি তখন বঙ্গবাজার থেকে তিনটা ওভারকোট কিনেছিলাম। তার মাঝে একটা ছিল তুলনামূলক পাতলা কিন্তু দেখতে বেশ ভালো। ওভারকোটটার বুকের কাছে কিছু কাঠের পাত বসানো ছিল যা বঙ্গবাজারের লোকেরা খুলে ফেলেছিল।
আমাকে পাত সহটাও দেখিয়েছিল, তবে আমার পাত খোলা অবস্থাতেই ভালো লাগায় সেটা কিনে নিয়েছিলাম। আয়ারল্যান্ড আসার পর একদিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসায় যাচ্ছি, হঠাৎ দেখি বাসে এক ভদ্রলোক আমার ওভারকোটটার মতই একটা পরে আছে। কাঠের পাতগুলোও ছিল তাতে। দেখে বেশ মজা লেগেছিল। এরা যে জিনিস ডাবলিনে পরছে, সেটা আমি বঙ্গ দেশের বঙ্গবাজার থেকে কিনেছি!
যাইহোক, এখানে আসার পর মাস ছয়েক ওটা পরেছিলাম।
তারপর পেনিস/প্রাইমার্ক (একটা জনপ্রিয় আইরিশ ব্র্যান্ড) থেকে আরেকটা কিনে নিলে আর দেশের গুলো পরা হতো না। গত কয়েকদিন হঠাৎ হঠাৎ আসা বৃষ্টিটা জ্বালাচ্ছে খুব। আমার নুতন কেনা ওভারকোটটায় হুড ছিলনা। তাছাড়া ছাতাও আমার চোখের বিষ। তাই পুরানোটা (ওটায় হুড রয়েছে) বের করে ব্যাবহার করছিলাম সপ্তাহখানেক ধরে।
আজ সন্ধ্যায় নাফিস এবং ধ্রুবর সাথে সিনেওয়ার্ল্ড গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি আমার না দেখা ছবি আর নাই। এমন কি কিছু ছবি তিনবারও দেখা হয়েছে। তাই আর ভালো লাগছিল না। ওদের ছবি দেখতে লাগিয়ে দিয়ে আমি বের হয়ে আসি।
বার্গার কিং থেকে একটু খেয়ে এলোমেলো হাটতে হাটতে ও'কনেল স্ট্রিটের প্রান্তে এসে সিগনালে দাড়াই। উদ্দেশ্য রাস্তা পার হওয়া।
হঠাৎ এক ভদ্রলোক এসে জিজ্ঞেস করলেন, "হ্যোয়ার ডিড ইউ গেট দিস ওভারকোট? ইটস লাভলী। " ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম ভদ্রলোককে। মধ্যবয়সী।
উচ্চারন শুনেই বোঝা যায় আইরিশ। সাথে স্ত্রীও দাড়িয়ে আছেন। হেসে বললাম, "আই পার্চেইস্ড ইট ফ্রম মাই হোম কান্ট্রি। " ভদ্রলোক কৌতুকের স্বরে বললেন, "ইউ আর রেসিস্ট!" তারপরই হেসে বললেন, "জাস্ট কিডিং" আমিও হেসে ফেললাম। ভদ্রলোক আবার জিজ্ঞেস করলে, "হ্যোয়ার আর ইউ ফ্রম?"
ততক্ষনে সবুজ আলো জ্বলে উঠেছে।
রাস্তা পার হতে হতে আমি জানালাম আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। তিনি বেশ উৎসাহিত হয়ে উঠলেন। তারপর বললেন, "ওহ, বাংলাদেশ! সালামুয়ালাইকুম!" এবার আমি জোরে হেসে ফেললাম। ওয়ালাইকুম আস-সালাম বলে তাকে জানালাম আমি পেনিস থেকেও একটা ওভারকোট কিনেছি। সে পেনিসে খোঁজ নিলে হয়তো এরকম পেতে পারে।
তিনি তখন বললেন, "আই ইউল ডেফিনেটলি চেক পেনিস ফর ওয়ান ইনশাল্লাহ। " ভদ্রলোকের স্ত্রীও তখন একটু স্মিত হাসি দিলেন। রাস্তা পার হবার পর তারা যাচ্ছিল একদিকে, আমি ঠিক উল্টা দিকে। তাই বিদায় দিয়ে বললাম, "ইটস নাইস মিটিং ইউ স্যার। " ভদ্রলোক হেসে বললেন, "নাইস মিটিং ইউ টু।
খুদা হাফিজ!" স্বহাস্যে আমিও তাঁকে আল্লাহ হাফিজ জানিয়ে বাসের জন্য হাটতে শুরু করলাম।
হাটতে হাটতে একটা অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছিল। আমি এখানে আসার পর থেকে কয়েকটা জিনিস খুব চেষ্টা করি। প্রথমত আইরিশ একসেন্টে কথা বলা (বাসকে বস, ডাবলিনকে ডবলিন ইত্যাদি বলা) এবং আইরিশদের ব্যবহার করা কিছু বিশেষ শব্দযুগল বা প্যাটার্ন ব্যাবহার করা। এতে ওরা খুব খুশি হয়।
আজ যখন ওদের থেকেও এরকম খুশি করার চেষ্টা দেখলাম, বেশ ভালো লাগলো। যদি সে বাংলা বলতো, তাহলে আমার সবচেয়ে ভালো লাগতো। তবুও যতটুকু সে চেষ্টা করেছে, তাতে আন্তরিকতা ছিল ষোলআনা। সবচেয়ে বড় ব্যাপার এখন তারা বাংলাদেশটাকে চেনে। এই গোড়া আইরিশদের দেশে এটাও যে আশা করা অনেক বেশি!
লিফির জলে বিল্ডিংগুলোর আলো পড়ে চিকচিক করে খুব।
সেদিকে তাকিয়ে মনেমনে ভাবছিলাম; কত বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি এই দেশে এসে। সময়ওতো কম পার হয়নি। ২০০৭ গড়িয়ে ০৮কেও পেছনে ফেলে, এখন ০৯ চলছে। জীবনটাকে কেমন যেন পাগলা ঘোড়ার মত মনে হয়। ছুটেই চলছে, ছুটেই চলছে।
এ ছোটার যেন শেষ নেই। সেই পাগলা ঘোড়ার আরোহী হয়ে জীবনের পথে কত কিছু দেখলাম। হয়তো আরো কত কিছু দেখার বাকি রয়েছে। এভাবেই কেটে যায় জীবন, তাই না?
১০ মার্চ ২০০৯
ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।