আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধারাবাহিক ও জৈবিক বয়স

বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো ব্যক্তির বয়সকে দুইভাবে হিসাব করা হয়। ক্রমিক বা ধারাবাহিক (Chronological)  বয়স এবং জৈবিক (Biological) বয়স। ধরুন এক ব্যক্তির বয়স ৪০ বছর, এটাকে তার ক্রমিক বা ধারাবাহিক বয়স বলা হয়, যা তার জন্ম তারিখ হিসাব করে নির্ধারণ করা হয়। তবে যদি তার শারীরিক যোগ্যতা, কর্মতৎপরতা, যৌন ক্ষমতা, আচার-আচরণ, চালচলন দেখে মনে হয়, তার বয়স ৫০ বছরের ব্যক্তিদের মতো, তবে তার জৈবিক বয়স ৫০ বছর। মানুষের শারীরিক সুস্থতা, অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা, আয়ু ও মৃত্যুর ঝুঁকি ইত্যাদি সবকিছুই নির্ভর করে তার জৈবিক বয়সের উপর, ধারাবাহিক বয়সের উপর নয়।

যেহেতু মানুষের শারীরিক যোগ্যতার ভিত্তিতে জৈবিক বয়স নির্ধারিত হয় তাই হার্টের যোগ্যতাকে ব্যক্তির জৈবিক বয়সের মাপকাঠি হিসাবে ধরা হয়। কারণ ব্যক্তির হার্ট তার শারীরিক যোগ্যতার পরিচালক। শারীরিক অসুস্থতা, বংশগত কারণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, কায়িক শ্রম না করা, মাদক গ্রহণ, দুশ্চিন্তা, অত্যধিক মানসিক চাপ, অর্থ কষ্ট, ঋণগ্রস্ততা, কুসংস্কার, অশিক্ষা, অসচেতনতা, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি কারণে মানুষের হার্টের বয়স বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়ে থাকে, মানে বয়সের তুলনায় হার্ট বেশি দুর্বল হয়ে যায়।

প্রাকৃতিক নিয়মেই বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হার্ট বা হৃৎপিণ্ড তার কর্মদক্ষতা হারাতে থাকে, বিশেষ করে মধ্যবয়সের পর থেকে। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস হার্টের বয়স বৃদ্ধিকে রোধ করতে পারে।

বর্তমান বিশ্বে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির মাধ্যমে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশেও বসন্ত, কলেরা, ডায়াবেটিস, টাইফয়েড, বাতজ্বর, জন্ডিস, অ্যাজমা ইত্যাদি চিকিৎসার মাধ্যমে এসব রোগ প্রতিরোধ এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। আরও সম্ভব হচ্ছে অনেক প্রাণঘাতী অসুস্থতার অপারেশন করে চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে। এসব কিছুর ফলশ্রুতিতে মানুষ দীর্ঘায়ু হওয়ায় মানুষের মধ্যে হার্টের অসুস্থতা, ক্যান্সার, ব্রেইন স্ট্রোক, লিভার ও কিডনি ফেইলুর, বাত জাতীয় অসুস্থতার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতকিছুর মধ্যে হৃদরোগের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

মধ্যবয়সের পর থেকে বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সের পর থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির হার্ট দুর্বল হতে থাকে। তাই এ বয়সে আপনার হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে থাকে।

বিশেষভাবে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ, উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগ ও ডায়াবেটিকজনিত হৃদরোগের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যদি কারও কর্মক্ষমতা কমতে থাকে, কর্ম সম্পাদনে গতি হ্রাস পায়, উদ্যম, কর্মস্পৃহা কমতে থাকে, তবে বুঝতে হবে তার হার্ট দ্রুত দুর্বল হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে হার্টের চেক আপ করা প্রয়োজন।

যদি কারও অনিয়মিত ডায়াবেটিস বা রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল বিদ্যমান থাকে, তবে এর ফলশ্রুতিতে হার্টের দুর্বলতা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এসব রোগীরও ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি হার্টের চেক আপ ও চিকিৎসা গ্রহণ খুবই জরুরি এবং একই ভাবে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও উচ্চ চাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি হার্টের চেক আপ ও চিকিৎসা গ্রহণ করে হার্টকে দুর্বলতার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।

ডা. এম শমশের আলী, সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ফোন: ০১৯৭১৫৬৫৭৬১

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।