তোমার অস্তিত্বে সন্দিহান, তবু্ও সদাই তোমায় খুঁজি
মাননীয় নেত্রী, বঙ্গবন্ধূর কন্যা হিসেবে দেশের মানুষের প্রতি আপনার যে দায় আছে এবং যা পালনে আপনি সর্বদাই সচেষ্ট থাকেন সে বোধ থেকেই আমার এ লেখাটির উৎপত্তি। দু'বার জনগণের রায়ে নির্বাচীত একজন প্রধানমন্ত্রীএবং দেশের গণমানুষের একজন নেত্রীকে এদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করার মত দৃষ্টতা আমার নেই। সে বিশ্বাস থেকেই আমি নিশ্চিত যে এদেশের সরকারি চাকরিজীবীদের হাল অবস্থা সম্পর্কে আপনি সম্যক অবহিত আছেন। সে কারণেই আপনি জানেন যে এদেশে সাধারণত নিম্ন-মধ্যব্ত্তি অথবা মধ্যবিত্ত ছেলেরাই সরকারি চাকরি-তে ঢুকে। বর্তমান অবস্থার আলোকে এটাও আপনি অবহিত আছেন যে যদি কেউ সৎভাবে জীবনযাপন করেন তবে সে প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা সচিবই হোক অথবা সর্বনিম্ন কর্মচারি পিয়নই হোক তার নুন আনতে পান্তা ফুরাবে।
তাকে নির্ভর করতে হয় চাকরি শেষে পেনশনের ওপর। তার একমাত্র স্বপ্ন-সাধ বা অবলম্বন বলতে ঐ পেনশনই। এই পেনশনের টাকা দিয়েই সে মেয়ের বিয়ে, ছেলের ভবিষ্যৎ কিংবা বৃদ্ধ বয়সে কোন রকমে দিনযাপনের পরিকল্পনা করে। কিন্তু এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন খুব কমসংখ্যক কর্মচারীই সঠিকভাবে করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। বিভিন্ন আনুষ্ঠানীকতা, অযথা হয়রানি, পেনশনের সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তর/কর্মচারীদের দূর্নীতির কারণে খুব কম লোকের ভাগ্যেই ঝামেলা বিহীনভাবে এ কার্যটি সমাপ্ত করতে পারেন।
মাননীয় নেত্রী, বিপুল পরিবর্তন এবং একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আপনি ক্ষমতায় এসেছেন। এদেশের মানুষের অগাধ বিশ্বাস যে আপনি আপনার প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন। সে কারণেই আমরা আশা করতে পারি বর্তমানে পেনশন প্রাপ্তিতে যে দীর্ঘসূত্রিতা আছে তা দূর করে আপনি একটি কাংখিত ব্যবস্থার প্রচলন করবেন। যার মাধ্যমে এ দীর্ঘসূত্রিতার অবসান ঘটবে এবং একজন সরকারি কর্মচারি তার সারা জীবনের দেশসেবার ফল হিসেবে বিনা হয়রানি এবং স্বল্পতম সময়ে পেনশন উত্তোলন করতে পারবে।
এক্ষণে, পেনশন প্রাপ্তিতে যে বিষয়গুলো প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে তা আপনার সদয় অবগতির জন্য আলোচনা করব।
এটা কোন বিশেষজ্ঞের মতামত নয়। সাদা চোখে দেখা ভুক্তভোগীদের একজন না হলেও ভবিষ্যতে হতে পারেন এমন একজনের সরল বিশ্লেষণ।
১. বিভাগীয় মামলা: পেনশন কেইসগুলো নিষ্পত্তির জন্য এ বিভাগীয় মামলাগুলো প্রধান বাধা। প্রচলিত বিচারের ভাষা হচ্ছে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি নির্দোষ। কিন্তু সরকারি চাকুরীতে বিচারের ভাষা ভিন্ন।
কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হলে তিনি নির্দোষ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত সিলেকশন গ্রেড, টাইমস্কেল, পদোন্নতি এবং পেনশন থেকে বঞ্চিত হন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে নির্দোষ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তিনি দোষী। আর দেশের সাধারন আদালতের মতো এ বিভাগীয় মামলাগুলোও বছরের পর বছর স্থায়ী হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তার অবহেলা, তদন্ত কর্মকর্তার বদলি এবং আনুষ্ঠানীক নিয়মের মারপ্যাচ এ দীর্ঘসূত্রিতার জন্য দায়ী। তদন্তকারী কর্মকর্তার জন্য এটা হয়তে এটা কোন সমস্যা নয়।
কিন্তু ভুক্তভোগীর জন্য এটা জীবন-মরণ সমস্যা। আর ভুক্তভোগী ব্যক্তি যদি অবসরের কাছাকাছি পর্যায়ে থাকেন তবেতো সেটা কফিনে শেষ পেরেক ঠুকার মতো। অভিযুক্ত ব্যক্তি এলপিআরে গমনের পূর্বেই তাকে অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে হবে। এলপিআরে গমন করলে কোন কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চালানো যায়না। এক্ষেত্রে তার মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য সাধারণ আদালতে (বর্তমানে দূনীতি দমন কমিশনে) প্রেরণ করা হয়।
আর একবার মামলাটি অন্যত্র স্থানান্তরিত হলে সে ব্যক্তি কবরে যাওয়ার পূর্বে যে পেনশনের মুখ দেখে যেতে পারবেন না তার নিশ্চয়তা দেয়ার জন্য কোন বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন পরবে না।
এ অবস্থার উত্তরণে বিভাগীয় মামলাগুলো যাতে তদন্তকারী কর্মকর্তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে বাধ্য থাকেন তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয় মাস সময় দেয়া যেতে পারে। তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলি হলেও তিনি যাতে সংশ্লিষ্ট মামলাটি নিষ্পত্তি করতে বাধ্য থাকেন তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পেনশন প্রার্থীর ক্ষেত্রে মামলাটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এলপিআরে গমনের পূর্বেই যাতে নিষ্পত্তি হয় তার বিধান করা যেতে পারে।
অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী হলে তার দোষের মাত্রা অনুয়ায়ী তিনি অবশ্যই শাস্তি পাবেন। কিন্তু এ কারণে তিনি বছরের পর বছর শাস্তি পাবেন, সামাজিকভাবে নিগৃহীত হবেন তা কোন অবস্থায়ই সমর্থনযোগ্য নেই। এদেশের মাটি ও মানুষের নেত্রী হিসেবে আপনি এ বিভাগীয় মামলাগুলো দ্রুত সম্পাদনে ভূমিকা রাখবেন তা ভুক্তভোগীরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে।
২. অডিট আপত্তি: সরকারি কর্মচারীদের পেনশন প্রাপ্তিতে অডিট আপত্তি একটি বড় প্রতিবন্ধক। সাধারণত দেখা যায় যেসব কর্মকর্তাগণ অর্থছাড় অথবা সরকারি কেনাকাটার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকেন তাদের এ সমস্যায় পরতে হয়।
সরকারি কেনাকাটায় অথবা অর্থছাড়ে স্বচ্ছতা আনয়ন এই অডিট নিরীক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য হলেও প্রায়শই অডিট কর্মকর্তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে অপারগতার কারণে অর্থছাড়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এ সমস্যায় পরতে হয়। অডিট আপত্তিগুলো বছরের পর বছর চলে। পেনশন প্রার্থীর প্রাপ্ত অর্থ থেকে অডিট আপত্তি না হওয়া পর্যন্ত যে পরিমান টাকার আপত্তি আছে তা কেটে রাখা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যায় পেনশন প্রার্থীর প্রাপ্য অর্থ এই অডিট আপত্তির চাইতে বেশি হয়। সেক্ষেত্রে তিনি পুরো পেনশন প্রাপ্তি থেকেই বঞ্চিত হন।
তাকে অডিট আপত্তিগুলো নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় নিষ্পত্তির পূর্বেই পেনশন প্রার্থী এ দ্বার হতে ও দ্বারে ঘুরে অবশেষে অসুস্থ হয়ে পরলোকে গমন করেন।
এ অবস্থার উত্তরণে অডিট আপত্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি (অনুর্ধ্ব ছয় মাস) করণে অডিট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ যাতে বাধ্য থাকেন তার বিধান করা যেতে পারে। প্রকৃত নিয়ম ভঙ্গকারী ব্যক্তির অবশ্যই শাস্তি পাওয়া উচিত। তেমনি কেউ যদি অপরাধী না হয়ে থাকে তার নিস্কৃতিও দ্রুত হওয়া বাঞ্চনীয়।
একজন ব্যক্তি অপরাধী না হয়েও বছরের পর বছর পেনশনের জন্য সরকারের এক দপ্তর থেকে এক দপ্তর, এক রুম থেকে আরেক কক্ষে ঘুরে বেড়ানো শুধু অমানবিকই নয়, রাষ্ট্রীয় অনাচারের শামিল। আর আপনি রাষ্ট্রকে এ অনাচারের হাত থেকে রক্ষা করবেন এমন আশা রেখেই জনগণ আপনাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে।
এজি অফিসের দূর্নীতি: সরকারের হিসাব, অডিট এবং সেই সূত্র ধরে পেনশনের সাথে সংশ্লিষ্ট এই অফিসটির বাস্তবরূপ যে ক্যামন তা শুধু ভোক্তভোগীই বলতে পারবেন। একটা বিশেষ কথা প্রচলিত আছে যে এজি অফিসের দেয়ালেও নাকি ঘুষ চায়। নির্দিষ্ট পার্সেন্টিজ ছাড়া এখানে কোন বিলই অনাপত্তির মুখ দেখেনা।
মানুষ ঠাট্টার ছলে বলে যে এজি অফিসের সামনে যে ফল বা মনোহারী দ্রব্যাদি থাকে তার দর তুলনামূলকভাবে অন্যান্য স্থানের তুলনায় অনেক বেশিই থাকে। যদিও বিক্রেতার তা বিক্রি করতে কখনও বেগ পেতে হয়না।
এজি অফিস যাতে স্বল্পতম সময়ের মাঝে যেকোন বিল নিষ্পত্তি করতে বাধ্য থাকে তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মনগড়া বা সুবিধা না পেয়ে অনাবশ্যক কোন আপত্তি যাতে তুলতে না পারে তার নিশ্চয়তা বিধান করা আবশ্যক। বিগত তত্বাবধায়ক সরকার বিভিন্ন দূনীতিগ্রস্থ অফিসের দূর্নীতি রোধে সে সমস্ত অফিসগুলোতে টাস্কফোর্স বসিয়েছিল।
এজি অফিসের কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের জন্য বর্তমান সরকার সেখানে একটি স্থায়ী টাস্কফোর্স বসাতে পারে। তবে টাস্কফোর্স সংশ্লিষ্টদেরও ঘন ঘন বদলি করা আবশ্যক। তা নাহলে দেখা যাবে সময়ের ব্যবধানে টাস্কফোর্সের সদস্যগণ সেখানকার কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাথে এক হয়ে দ্বিগুণ দূনীতিতে লিপ্ত হয়েছে।
না-দাবী প্রত্যয়ন পত্র: পেনশন প্রাপ্তির জন্য কর্মচারীকে তার কর্মরত সময়ের না-দাবী প্রত্যয়ন পত্র সংগ্রহ করতে হয়। না দাবী বলতে আমরা তার কাছে সরকারের কোন পাওনা নেই তা বুঝে থাকি।
যেমন: বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুত বিল, টেলিফোন বিল ইত্যাদি। না-দাবী প্রদান করা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের রুটিন কাজ হলেও এগুলো সংগ্রহ করতে পেনশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে হয়রানির শিকার হতে হয়। দিনের পর দিন এক টেবিল হতে অন্য টেবিলে ঘুরাঘুরি করতে হয়।
এ হয়রানি বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিস যাতে (প্রয়োজনে কর্তন সাপেক্ষে) অনুর্ধ্ব সাত দিনের মধ্যে না-দাবী পত্র দিতে বাধ্য থাকেন তার বিধান করা যেতে পারে।
সবশেষে বলতে পারি সবার কাছে চাওয়া যায়না।
চাওয়ার জন্য অধিকার লাগে। আমার বিশ্বাস বঙ্গবন্ধুর কন্যার কাছে আমাদের সে অধিকার আছে। এ অধিকারের সাথে যে ব্যাপক পরিবর্তনের আশ্বাস দিয়ে আপনি ক্ষমতায় এসেছেন তার সংমিশ্রণে আমাদের অন্তরে একটি বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে যে আপনি পেনশনজনিত সমস্যাগুলো সহজে সমাধানের লক্ষ্যে দীর্ঘমেযাদী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যার ফলে কোন ব্যক্তি মারাত্বক কোন অপরাধে অপরাধী না হলে তাঁর পেনশনের টাকাটি এলপিআরে গমনের অনুর্ধ্ব তিন মাসের মধ্যে কোনরূপ হয়রানি ছাড়াই উত্তোলন করতে সক্ষম হবেন। আপনার ও আমাদের সকলের স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে এটা হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।