আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'রাতের ঢাকা'র মাদকতা আর কিছু নারী

আল বিদা

রাতের ঢাকার একটা আলাদা মাদকতা আছে। আমি একটু ভীতু টাইপ মানুষ। তাইবেশী রাতে বাইরে থাকি না। যখনই থাকি তখনই ভয়ে ভয়ে থাকি। বারবার মোবাইল, মানিব্যাগ চেক করি আর সাথে কেউ থাকলে তার কেয়ার নিতে নিতে আসি।

বেশ কিছুদিন ধরে আমার রাতে কিছু কাজ করতে হচ্ছে। মতিঝিল এলাকায় প্রায়ই আমি রাত ১২/১ টা পর্যন্ত একলা থাকি। পকেটে তেমন টাকা রাখি না। আর মোবাইলটার মায়াও কমে এসেছে। তাই খুব মনযোগ দিয়ে রাতের ঢাকা দেখি।

আমি যখন রাত ১২ টার পর ফিরি তখন বিভিন্ন ভবনের সামনে গার্ডরা রাত পার করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে। আগুন জ্বালিয়ে মশা আর ঠান্ডা দূর করার চেষ্টা চালায়। ফুটপাথের মানুষেরা কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকে। পলিথিন বা মশারী দিয়ে নিজেদের যতটুকু সম্ভব সেফ রাখে। কখনও কখনও এই ঘর থেকে খুব চাপা গলার ঝগড়ার আওয়াজ পাওয়া যায়।

রাস্তার এত আওয়াজে তারা কিভাবে ঘুমায় কে জানে? ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা তাদের দামী গাড়ী হাকিয়ে বাড়ী ফিরে। কি জানি, হয়ত তখন অন্য কোন ব্যবসার খোজে বা মধুর খোজে ছোটে। লোকাল বাসের হেলপাররা ক্লান্ত হয়ে প‌্যাসেন্জার ডাকতে থাকে। লোকজন কম থাকাতে বাসও ধীরে ধীরে যায়। সবচেয়ে বেশী যা আমি দেখি তা হচ্ছে 'দেহপসারীনি'।

তারা দেহের পসরা সাজিয়ে রাস্তার পাশে অপেক্ষা করে। কিছু লোকজন তাদের পাশে ঘুরঘুর করে কিন্তু সামনে আগাতে ভয় পায়। রিক্সাওয়ালারাও তাদের ঘিরে চক্কর মারে। এই মেয়েদের চোখের একটা ভাষা আছে। তারা তো আর ফেরিওয়ালার মত ডাকবে না।

চোখের একটা ভাষা দিয়ে ডাকে। আমার মত অনেকেই তাদের ভাষা বুঝতে পারে। আর আরও একটু বুঝার জন্য এগিয়ে যায়। কিছু কিছু মেয়েকে দেখলে সত্যিই অবাক লাগে। ভেবে পাইনা এ মেয়ে এখানে কেন? সে যে কোন ঘর আলো করে থাকতে পারত।

এমনকি কোন সিনেমার নায়িকাও হতে পারত। আবার কোন শিল্পীর তুলির বিষয়ও হতে পারত। কিন্তু তারা কোন রাস্তার পাশে জটলা করে দাড়িয়ে থাকে। বা গলির মধ্যে অপেক্ষা করে। আর যখন আগ্রহী কাওকে পায় তখন তার ঐ চোখের ভাষা দিয়ে ডাকে।

কেউ হয়ত খারাপ মেয়ে বলে তাদের দিকে অন্য কোন দৃষ্টি দিয়ে থাকেন। কেউ হয়ত পাপ-পূন্য হিসাব নিয়ে তাদের দুর দুর করেন। পাপ-পূন্যের হিসাব আসে ধর্মের কারনে। ঐ মেয়ে যদি বলে সে কোন ধর্ম মানে না বা ধর্ম বলে যদি কিছু না থাকত তাহলে তো আর কোন পাপ-পূন্যর হিসাব আসে না। তারা অন্যের ক্ষতি করে না।

শুধু তাদের দেহ কিছুক্ষনের জন্য বিক্রি করে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এক বইয়ে লিখেছিল 'এক মেয়ে তার দেহের বিনিময়ে ভালবাসা চাইবে না টাকা নিবে তা একান্তই তার সিদ্ধান্ত'। কোন মার্কেটিং গবেষক যদি তাদেরকে পন্য হিসেবে, আমাদেরকে কাস্টমার, রাস্তাকে তাদের মার্কেট আর আহবানকে বিক্রয় অফার হিসেবে ধরে নেয় তাহলে হয়ত একটা ইক্যুইশন দাড়িয়ে যায়। আমি এই পোস্টে তাই বলেছি যা আমি রাস্তায় দেখেছি। আমি কোন সেন্টিমেন্ট বা ইমোশন দেখাতে চাই নাই।

বা কাওর ইমোশনে আঘাতও করতে চাই নাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।